বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই ভাস্কর্য ফিরে চায় বগুড়াবাসী

  •    
  • ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ২৩:২৮

রণাঙ্গনে যুদ্ধ শেষে বিজয়-সন্ধিক্ষণে কাঁধে রাইফেল নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা ডান হাত দিয়ে শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিচ্ছেন, এমন থিমের ভাস্কর্যটি রড-সিমেন্ট-বালু দিয়ে তৈরি। প্রায় নয় ফুট উঁচু মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ১৯৯১ সালে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় স্থাপন করেছিল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

বগুড়া শহরের বনানী গোল চত্বরের ভাস্কর্য ‘বীর বাঙালি’ সংস্কার করে বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এটি মৌলবাদী গোষ্ঠীর পরিকল্পিত কাজ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি স্বাধীনতার বিরোধী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন এর ভাস্করও।

রণাঙ্গনে যুদ্ধ শেষে বিজয়-সন্ধিক্ষণে কাঁধে রাইফেল নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা ডান হাত দিয়ে শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিচ্ছেন, এমন থিমের ভাস্কর্যটি রড-সিমেন্ট-বালু দিয়ে তৈরি। প্রায় নয় ফুট উঁচু মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ১৯৯১ সালে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় স্থাপন করেছিল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ধূসর বর্ণের ভাস্কর্যটি ছিল যুবক মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি। পরে বগুড়া শহরের রাস্তা সংস্কার করতে গিয়ে ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়া হয় শহরের বনানী এলাকায়। ২০১৬ সালে ‘ট্রাকের ধাক্কায়’ ভাস্কর্যটি ভেঙে যাওয়া নিয়ে ফের শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। বগুড়া পৌরসভা ভাস্কর্যটি ‘পুনর্গঠন’ করে। এর মাধ্যমে ‘বীর বাঙালি’ ভাস্কর্যের বিকৃতি ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে।নতুন ভাস্কর্যের হাতে শান্তির পায়রার জায়গায় স্থান পায় ‘হাঁস’। খালি পায়ে পরানো হয় বুট। পরনের পোশাক আর কাঁধে রাইফেলের বেল্ট বদলে যায়। চেহারাতেও বিকৃতি ঘটে। এতে ‘বীর বাঙালি’র জায়গায় চলে এসেছে এক জন পাকিস্তানি সেনার আদল।বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতা রেজাউল করিম মন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক, মুক্তচিন্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারকদের কাছে ‘বীর বাঙালি’ ভাস্কর্যটির পাদদেশ ছিল আন্দোলনের মিলনস্থল। নব্বই দশকের শুরুতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গণআদালতের আন্দোলনসহ সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সব ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশস্থল ছিল এই ‘বীর বাঙালি’ ভাস্কর্যের পাদদেশ।

‘ভাস্কর সুলতানুর ইসলাম ওই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে বিসিক শিল্প নগরীতে রাখেন। পরে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার প্রয়াত ইলিয়াস হোসেন সাতমাথায় নিয়ে আসেন। পরে এটির নাম রাখা হয় ‘বীর বাঙালি’। ১৯৯৩ সালে গণআদালতকে কেন্দ্র করে জামায়াত বগুড়ায় হরতাল ডাকলে ছাত্রসমাজ প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। সাতমাথায় দিনব্যাপী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।’

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম মন্টু নিউজবাংলাকে আরও জানান, জামায়াতের হরতালের সময় ভাস্কর্যের হাত ভেঙে নিয়ে যায়। শহরের কামারগাড়ী থেকে উদ্ধার করে আবার হাতটি প্রতিস্থাপন করা হয়। পরে ভাস্কর্যটির বিষয়ে সবাইকে অবহিত করার জন্য লিফলেট প্রকাশ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের তখনকার সভাপতি ফিরোজ হামিদ খান রেজভী বলেন, ‘মৌলবাদীরা সদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে ভাস্কর্যটি বিকৃত করতে পারে। তাদের সুপরিকল্পিত বিষয় এটা। ‘বীর বাঙালি’ নাম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতির মাধ্যমে শান্তির পায়রা বহন করছে এটা মৌলবাদীরা হয়তো চায়নি। এ কারণে এটাকে বিকৃতি করে খেলনা জিনিসে পরিণত করা হয়েছে। আর খেলনা জিনিসের তেমন আবেদন থাকে না। তখন মনে হতে পারে তাহলে এমন ভাস্কর্য রাখার দরকার কী?’মূলত ভাস্কর্য দেখাশোনা করে বগুড়া পৌরসভা। সাবেক ছাত্রনেতা রেজভী বলেন, ‘পৌরসভার উদাসীনতার কারণে এমন হয়েছে। একজন ভাস্কর যখন ভাস্কর্যটি তৈরি করেন তখন সেটা অনেক গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু যেনতেনভাবে এটা সংস্কার করা হটকারী সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে একটা ষড়যন্ত্র আছে বলেও আমার মনে হয়।‘নব্বইয়ের দশকে ভাস্কর্য ভাঙচুরের দিন সাবেক মেয়র রেজাউল করিম মন্টু ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল মৌলবাদীরা। করা হয় মামলাও। এতে আমিসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস জামান মুকুল, সাবেক মেয়র ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম মন্টু, তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুর রহমান দুলু, তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগে সাধারণ সম্পাদক বর্তমান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ আলম ঝুনুকে আসামি করা হয়।’ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাস্কর্য বিকৃতি স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির চক্রান্ত হতে পারে। বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা দরকার। একই সঙ্গে ভাস্কর্যটি স্বরূপে দৃশ্যমান স্থানে প্রতিস্থাপিত হোক। যেহেতু ভাস্কর সুলতান এখনো বেঁচে আছেন। তাকে দিয়ে আবার তৈরি করা হোক। একই সঙ্গে এই বিকৃতির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’‘বীর বাঙ্গালি’র ভাস্কর সুলতানুর ইসলাম জানান, ‘আমার বাড়ি বগুড়ার গাবতলীর দুর্গাহাটায়। আমি বগুড়ার সন্তান। আমাকে বললে আগের সব অবয়ব ঠিক রেখে ভাস্কর্য তৈরি করে দিতে পারব। আমি বাণিজ্যিকভাবে ওই ভাস্কর্য তৈরি করিনি। অনুভূতি এবং চেতনা থেকেই বিসিক শিল্প নগরীতে তৈরি করেছিলাম। ভাস্কর্য বিকৃতির বিষয়টি শুনেছি। এটা আমার জন্য কষ্টদায়ক।’বগুড়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আবু জাফর মো. রেজা জানান, ২০০৫ সালে সড়ক সম্প্রসারণের সময় সড়ক ও জনপথ ভাস্কর্যটি নিয়ে বনানী এলাকার প্রতিস্থাপন করে। তখনও মেয়র ছিলেন একেএম মাহবুবুর রহমান। পরে ২০১৬ সালে গাড়ির ধাক্কায় ভাস্কর্যটি ভেঙে গেলে পৌরসভা থেকে মাত্র আট হাজার টাকা খরচ করে আবার বসানো হয়। তখন প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন আমিনুল হক ও মেয়রও ছিলেন মাহবুবুর রহমান। তবে আমার জানা মতে, কোনো ভাস্কর দিয়ে বীর বাঙালি মেরামত করা হয়নি।’এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বগুড়ার পৌর মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসের উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমানের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জানান, ‘এই ভাস্কর্য আগের আদলে নেই বলে বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে। এটি আগের অবয়বে করার গণদাবি উঠেছে। আমি পৌরসভা মেয়রের সঙ্গে কথা বলে ভাস্কর্য আগের অবয়বে নিয়ে আসার জন্য কাজ করব।’

এ বিভাগের আরো খবর