বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নগরজুড়ে খোলা ড্রেনের মরণফাঁদ, পড়ে নিহত শিক্ষক

  •    
  • ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:০৭

সোমবার সিলেট নগর ঘুরে দেখা যায়, নগরের জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, দরগাহ গেট, মজুমদারি, চৌকিদেখি, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার, শাহী ঈদগাহ, কুমারপাড়া, নাইওরপুল, মদিনা মার্কেট, সুবিদ বাজারসহ অন্তত ২২টি এলাকায় ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার চলছে। কোথাও নির্মাণকাজে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সিলেট নগরের জিন্দাবাজার-জল্লারপাড় সড়ক। সেই সড়কের পাশের ড্রেনের সংস্কার চলছে। সপ্তাহের বেশি হয়েছে। কিন্তু খুঁড়ে রাখা ড্রেনটির বিষয়ে নেই কোনো সতর্কবার্তা। তেমনই উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে সেটি।

সংস্কারে ব্যবহার করা রড নানাভাবে বেরিয়ে আছে বিপজ্জনকভাবে। আর খুঁড়ে রাখা নালার কাদামাটি স্তূপ করে রাখা হয়েছে পাশেই সড়কে।

খুঁড়ে রাখার পর থেকে নালায় প্রতিদিনই ঘটছে একাধিক দুর্ঘটনা। অসতর্ক অবস্থায় উন্মুক্ত নালায় পড়ে যাচ্ছেন পথচারীরা। রাতের অন্ধকারে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি।

কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সিলেট নগড়জুড়েই ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে। সংস্কার করা ও কাজ চলমান এসব ড্রেনের বেশিরভাগই ফেলে রাখা হয়েছে উন্মুক্তভাবে। নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কাজ চলা এলাকায় নেই সতর্কবার্তাও।

গত ৭ ডিসেম্বর নগরের আম্বরখানা এলাকায় নির্মাণাধীন এ রকম একটি ড্রেনে পড়ে যান প্রবীণ শিক্ষক ও ছড়াকার আবদুল বাসিত মোহাম্মদ। সেই ড্রেন থেকে বেরিয়ে থাকা রড পেটে ঢুকে গেলে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

আব্দুল বাসিতের মৃত্যুকে হতা দাবি করে ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’ সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম বলেন, ‘এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটি হত্যাকাণ্ড। সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত ও দায়সারা উন্নয়ন কাজের বলি হয়েছেন আবদুল বাসিত।’

ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ হচ্ছে। তাই এমন মৃত্যুকে সিটি করপোরেশনের হত্যাকাণ্ড বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সোমবার সিলেট নগর ঘুরে দেখা যায়, নগরের জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, দরগাহ গেট, মজুমদারি, চৌকিদেখি, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার, শাহী ঈদগাহ, কুমারপাড়া, নাইওরপুল, মদিনা মার্কেট, সুবিদ বাজারসহ অন্তত ২২টি এলাকায় ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার চলছে।

কোথাও নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দেয়া নেই কোনো সতর্কবার্তা। ড্রেনের জন্য গর্ত খুঁড়ে দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত ফেলে রাখা হয়েছে। এসব গর্তে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী।

নগরের শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা হিতাংশু কর বাবু বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে দেখছি আমাদের এলাকায় ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। নির্মিত ড্রেন অনেক জায়গায় খোল ফেলে রাখা হয়েছে। অনেক জায়গায় মাটি খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই এসব খোলা নালা কেউ না কেউ পড়ে যাচ্ছেন।’

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর বলেন, ‘নগরজুড়ে ভাঙাগড়ার খেলা চলছে। উন্নয়নে কোনো পরিকল্পনা নেই। অপরিকল্পিতভাবে পুরো নগরের সব সড়ক একসঙ্গে খুঁড়ে ফেলায় কোনো কাজই শেষ হচ্ছে না।

‘ধুলোয় ধুসর হয়ে আছে নগর। নালা খুঁড়ে উন্মুক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। সড়ক জুড়ে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা। এসবে নগরবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ড্রেন নির্মাণের জন্য গভীর গর্ত করা হলেও সেখানে বেষ্টনী করা হয়নি। এতে অন্ধকারে ফুটপাত ঘেঁষে হাঁটতে গিয়ে অনেকেই সেসব গর্তে পড়ে যাচ্ছেন। এই গর্তগুলো একেকটা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।’

তবে আবদুল বাসিতের মৃত্যুর পর নগরের কয়েকটি এলাকায় নির্মাণাধীন ড্রেনের আশপাশে লাল কাপড় বেঁধে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরে ৯৭০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭০ কিলোমিটার অংশ উন্মুক্ত। বর্তমানে ৮০ কিলোমিটার অংশের নির্মাণ চলছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ২০০ কোটি টাকা।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘আবদুল বাসিতের দুর্ঘটনার পর ঠিকাদারদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

আবদুল বাসিতের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গত রোববার নগরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর