বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম’

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৮:০৪

রতন কুমার বিশ্বাসের কোনো সন্তান নেই। এক সময় সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের কালদিয়া গ্রামে জায়গা-জমি সবই ছিল। এলাকার প্রভাবশালীরা সব দখল করে নিয়েছে। এরপর কাড়াপাড়া ইউনিয়নের গোবরদিয়া গ্রামে ঘর বানিয়ে ছিলেন। রাস্তা বানানোর জন্য তার সেই ঘরও চলে যায়। তারপর ১০ বছর ধরে এই খুপরি ঘরেই থাকেন।

বাগেরহাট শহরের জোড়া মেগনিতলা এলাকায় ব্যস্ততম সড়কের পাশে টিনশেডের ছোট্ট খুপরি ঘর। ঘরের বেড়াতে লেখা ‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম’।

এই ঘরেই স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রতন কুমার বিশ্বাস। এখানে বসেই করেন রিকশা ও সাইনবোর্ডে রং তুলির কাজ। তবে বয়সের ভারে এখন আর ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না।

সাংবাদিক পরিচয় দিতেই এগিয়ে এলেন ৮০ বছরের রতন। কথা বললেন নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে।

জানান, তার কোনো সন্তান নেই। এক সময় সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের কালদিয়া গ্রামে জায়গা-জমি সবই ছিল। এলাকার প্রভাবশালীরা সব দখল করে নিয়েছে। এরপর কাড়াপাড়া ইউনিয়নের গোবরদিয়া গ্রামে ঘর বানিয়ে ছিলেন। রাস্তা বানানোর জন্য তার সেই ঘরও চলে যায়। তারপর ১০ বছর ধরে এই খুপরি ঘরেই থাকেন।

‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম’ লেখার কারণ জানতে চাইলে রতন কুমার জানান, তিনি বাগেরহাট সদরের মুক্ষাইট, গোটাপাড়া গ্রামে যুদ্ধ করেছেন। তার কমান্ডার ছিলেন রফিকুল ইসলাম খোকন। মুক্তিযুদ্ধের ‘ওসমানী সনদ’ (সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদ) ছিল তার। কিন্তু সেই সনদ হারিয়ে ফেলেছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম ওঠানোর চেষ্টা করেননি কখনও, সহযোদ্ধাদের অধিকাংশই আর বেঁচে নেই। এখন আর কেউ তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মানতে চান না।

কথা জড়িয়ে আসে রতনের। বুঝতে কষ্ট হয়। তবুও তিনি বলতে থাকেন।

‘দেশের পোরোয়োজনে অস্ত্র ধরলাম। এলাকায় এট্টাও রাজাকারের বাচ্চা টিকতি দিইনি। দেশেরে ভালোবাসলাম বলে অস্ত্র ধরলাম । কোনো কিছু পাওয়ার জন্যি না। তা সেই আমি আবার কেন হাত পাতপো, কার কাছ হাত পাতপো, কিসের জন্যি হাত পাতপো?’

কালদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার সফিউর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, রতন তার এলাকার, সমবয়সী। তিনিও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজে অস্ত্র জমা দেয়ার দিন তিনি সেখানে রতনকে দেখেছেন। ‘ওসমানী সনদ’ নেয়ার দিন লাইনে তার সামনেই ছিলেন রতন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গত কমিটির সদস্য সচিব আকবর আলী মল্লিক জানান, তিনি রতনকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে প্রায় তিন হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেছেন। তাদের সবাইকে চিনে রাখা সম্ভব নয়।

কালদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট জুবায়ের শেখ বলেন, ‘এলাকার বয়স্কদের কাছে শুনেছি তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়।’

রতন বিশ্বাসের সহযোদ্ধাদের খুঁজতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবেদকের দেয়া পোস্ট নজরে পড়ে বাগেরহাট সদর আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের।

তন্ময় মুঠোফোনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তার খোঁজ নেন।

এরপর রোববার রাত ১০টার দিকে বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, তন্ময়ের একান্ত সচিব এইচএম শাহিন, সহকারী সচিব চয়ন আহমেদ, বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আহাদ উদ্দিন হায়দার, যুবলীগ নেতা মীর জায়েসী আশরাফি জেমসসহ যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মী রতনের খুপরিতে যান। সেখানে তাকে টাকা ও কম্বল দেয়া হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির জানান, উনি বীর মুক্তিযোদ্ধা কি না সেটি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি তার জায়গা-জমি উদ্ধারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ছাড়া তাকে একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হবে।

চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের এমপি জননেতা শেখ তন্ময়ের এলাকায় একটি মানুষও বস্ত্র ও গৃহহীন অবস্থায় থাকবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর