পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের দুই দিন আগেই মুক্ত হয় ঢাকার উপকণ্ঠ সাভার।
১৪ ডিসেম্বর এই দিনে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটোর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মুক্তির লড়াই শুরু হয়। পরে টিটোকে সমাহিত করা হয় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি গেট এলাকায়।
১৯৭১ সালে সাভারে বিভিন্ন সময় খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ হয়। ঢাকার প্রবেশমুখ হওয়ায় সবসময় পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল ছিল সেখানে।
২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের ও মুক্তিযোদ্ধা আজগর হোসেনের জানিয়েছেন তাদের যুদ্ধ জয়ের গল্প।
কাদের মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের শেষে ভারতের মেলাঘর থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসার পর প্রতিটি গ্রুপে ভারী অস্ত্র দিয়ে আমাদের সম্মুখ যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। প্রত্যেককে এলএমজি, মর্টার, গ্রেনেড, মাইন দেয়া হয়।
‘একেকজন মুক্তিযোদ্ধার পিঠে ৫০ কেজির মতো অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিলো। ছয়শ থেকে সাতশ মুক্তিযোদ্ধা এক রাতেই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে সালদা নদী পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। প্রথমে সাভারে আনসার ক্যাম্পে আক্রমণ করি।’
(বা থেকে) বীর মুক্তিযোদ্ধা মান্নান মিয়া, আব্দুল মজিদ মোল্লা, আব্দুল কাদের, আজগর হোসেন এবং আনছার আলী দেওয়ান,
নভেম্বর শেষের দিকে আশুলিয়ার বিরুলিয়ার যুদ্ধে মিরপুর ও সাভারের দুটি দলের মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। যুদ্ধের আগে ক্যাম্পে রেকি করতে গিয়ে ধরা পড়েন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। পাশবিক নির্যাতনে হত্যা কয়ারা হয় তাকে।
৪ থেকে ৯ ডিসেম্বর সাভারের বিশমাইলে যুদ্ধ হয় আনসার ক্যাম্পে। যুদ্ধে হারিয়ে ক্যাম্প থেকে অস্ত্র লুট করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেই যুদ্ধে ১০ থেকে ১৫ জন হানাদার মারা যান।
পরে মধুরহাটিতে (বর্তমান আশুলিয়া বাজার) আরেকটি যুদ্ধ হয়।
সাভার উপজেলা চত্বরে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক। ছবি: নিউজবাংলা১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর আশুলিয়ার রোস্তমপুর এলাকার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা বিপদে পড়ে যান। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের সামনে গিয়ে আটকাতে চেয়েছিলেন। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় চারদিক থেকে গুলি ছুড়তে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর সেনারা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে পাঁচ পাকিস্তানি সেনাকে। এতে তারা ভয় পেয়ে পিছু হটে।
সবশেষ ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ার গঙ্গারবাগ (বর্তমান ঘোষবাগ) এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মানিগঞ্জের কিশোর গোলাম দস্তগীর টিটো অংশ নেন। হানাদারদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে পাকিস্তানিদের বুলেটে শহিদ হন টিটো। সেদিনই যুদ্ধের পর হানাদাররা ঢাকার দিকে পালিয়ে আসে, মুক্ত হয় সাভার।