মিত্র বাহিনীর সহায়তা ছাড়াই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জকে হানাদার মুক্ত করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। চুড়ান্ত বিজয়ের দুদিন আগেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিজয়োল্লাসে সামিল হয় সেখানকার সাধারণ মানুষ।
এ দিন সকাল ১০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিজয়ের খবর নিয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেছিল।
জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী, গাজী লুতফর রহমান মাখন, গাজী সাইদুর রহমান ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিকুল ইসলাম শফির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর ইতিহাস।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সিরাজগঞ্জে প্রবেশ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। প্রবেশের পথে জ্বালা-পোড়াও, গুলি, হত্যা এবং শেষে গোটা সিরাজগঞ্জ শহরকে আগুনে পুড়িয়ে জনমানবহীন শহরের দখল নেয় তারা।
সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বাঘবাটি গ্রামের এ কুয়াতে হানাদাররা বাঙালিদের মরদেহ ফেলে রেখেছিল
মুক্তিযোদ্ধারা ’৭১ এর কয়েক মাসে বড়ইতলী, বাগবাটী, কৈগাড়ি, ভদ্রঘাট, নওগাঁ, বারুহাস ছোনগাছাসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে যুদ্ধ করে।
১২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এক দিনের যুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন করে নওগাঁ হন্ডিয়ালে। এই যুদ্ধে পলাশডাঙা যুব শিবিরের কাছে নিশ্চিহ্ন হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩২ বেলুচ রেজিমেন্ট।
শহরকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক ও ইসহাক আলীর নেতৃত্বে পূর্ব দিক, সোহরাব আলী ও লুতফর রহমান দুদুর নেতৃত্বে পশ্চিম দিক ও আমির হোসেন ভুলু ও জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তর দিক থেকে আক্রমণে হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে।
৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা যুদ্ধের পর ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদার মুক্ত করে।
সদর উপজেলার ধীতপুরে এ ব্রিজের নিচে হানাদাররা গণকবর দিয়েছিল বাঙালিদের
১৩ তারিখ শেষ প্রহরে হানাদার বাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ট্রেনে করে উল্লাপাড়া থেকে নগরবাড়ি হয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।
১৪ তারিখ ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা ওয়াপদা অফিস হানাদার মুক্ত করে। একই দিনে কওমী জুটমিল, মহুকুমা প্রশাসকের অফিসসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে লাল সবুজের মাঝে হলুদ মানচিত্র আঁকা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।