দুলি বেগম। সত্তরোর্ধ্ব এই নারী স্বামী হারিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। দুই মেয়ে আর দুই ছেলের সবাই বিবাহিত। ছেলেদের যে আয়, তাতে ঘুরছে না সংসারের চাকা। তাই এই বয়সেও নিজেই ধরেছেন সংসারের হাল।
গত চার বছর ধরে সড়কের পাশে বৌ-বাজারে কাঁচা তরিতরকারি বিক্রি করে সংসার চালাতে সাহায্য করছেন ছেলেদের।
দুলির মত আরেক নারী আমেনা বেগম। সংসারে তার অভাব অনটন লেগেই থাকত। আর তাই স্বামীর পাশাপাশি নিজেও শুরু করেন সবজি বিক্রি। এতে করে পরিবারের অভাব মেটানোর পাশাপাশি স্কুলে পড়াচ্ছেন দুই ছেলেকে। এসএসসি পাসের পর বিয়ে দিয়েছেন একমাত্র মেয়েকে।
দুলি ও আমেনা বেগম দুজনই চাঁদপুর শহরের পুরানবাজারের বৌ-বাজারে সবজি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
আমেনা বেগম জানান, স্বামীও তার মত সবজি বিক্রি করেন। স্বামীর একার আয়ে সংসার চালানো কষ্ট হতো। পরে তাকে সাহায্য করার জন্য তিনিও সবজি বিক্রি করতে নামেন।
সেটা ১৫ বছর আগের কথা। দুই জনের আয়ে সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা, সন্তানদেরও লেখাপড়া করাতে পারছেন।
সাধারণ মানুষের কেনাকাটায়ও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ‘বউ বাজার’। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটার প্রধান বাজার এটি। কারণ, এখানে দাম তুলনামূলক কম।
বৌ-বাজারে দুই শতাধিক নারী রাস্তার দুই পাশে বসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও এখন বিভিন্ন নিত্যপণ্য এই বাজারে বিক্রি করছে।
সবজি বিক্রেতা লাবণী আক্তার ও নারগিস বেগম জানান, বাজারটি প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। এই বাজারে পাঁচ টাকার তরকারি, ২০ থেকে ৫০ টাকার মাছ, একশ টাকায় মাংস, পাঁচ টাকার মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি হয়।
এই বাজারের বিক্রেতা নয়ন বেগম জানান, তারা অল্প লাভে বিক্রি করেন। অন্য বাজারে ৪০ টাকা করে বিক্রি করা কুমড়া এখানে ১০ টাকাতেও পাওয়া যায়। আস্ত মাছ কেটে টুকরা করে ৫০ টাকা, একশ টাকা ভাগে বিক্রি করা হয়।
রানু বেগম নামের এক নারী বলেন, এখানে যারা বাজার করতে আসেন তারা সবাই অতি দরিদ্র। তাই একে অপরের দুঃখ বুঝতে পারেন।
মাংস ব্যবসায়ী আবদুল শুক্কুর জানান, ৫২০ টাকা দরে বাজার থেকে গরুর মাংস কিনে এনে ৫৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। দুইশ গ্রাম থেকে আড়াইশ গ্রাম মাংস নেয়ার ক্রেতা বেশি। আবার কখনও ৫০ থেকে একশ টাকার মাংসও বিক্রি করতে হয়।
গৃহকর্মীর কাজ করা আকলিমা বেগম ও রহিমা আক্তার জানান, তাদের যে উপার্জন হয় তা নিয়ে কোনো বাজারে গেলে চাল কিনতে পারলে তেল কেনা যায় না। কিন্তু বৌ-বাজারে সব জিনিসপত্রই অল্প পরিমাণে কম দামে কেনা যায়।
বাজারে কেনাকাটা করতে আসা তাসলিমা আক্তার জানান, বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা অল্প পরিমাণে জিনিসপত্র কিনতে গেলে অনেক সময় খারাপ আচরণ করেন। তাই তিনি এখানে আসেন।
চাঁদপুর পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌসি আক্তার বলেন, ‘সংসারে স্বচ্ছলতা আনার পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়া করাতে স্বামীহারা নারীরা এই বাজারটি গড়ে তোলেন। তাই ‘বউ বাজার’ নামে পরিচিত। এই বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই নারী।’
তিনি বলেন, ‘এখানে সাধ্য অনুযায়ী ক্রেতারা যে কোনো ধরনের পণ্যসামগ্রী অল্প পরিমাণে কিনতে পারেন যা অন্য কোনো বাজারে করতে পারেন না। তাই বাজারটি এখন অসহায়, দিনমজুর, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়।’