১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একে একে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। প্রতিটি জায়গার হানাদারমুক্ত হওয়ার নির্দিষ্ট দিন রয়েছে। তবে এর ব্যতিক্রম দিনাজপুর।
দিনাজপুর জেলা কবে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়েছে তার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। তারিখ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আছে মতবিরোধ।
কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মতে, দিনাজপুর মুক্ত হয়েছিল ১৪ ডিসেম্বর আবার কারও মতে ১৫ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত দিবস। তবে কেউ কেউ এটিও বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পরেও দিনাজপুরে পাকিস্তানি সেনারা ছিল এবং মুক্তিযোদ্ধারা এই জেলায় ঢুকতে পারেনি।
মুক্ত দিবস নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও জেলায় প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় ১৮ ডিসেম্বর। সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম আবদুর রহিম পতাকা উত্তোলন করেন।
তৎকালীন দিনাজপুর জেলার জয়বাংলা বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম তালুকদার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরুতেই দিনাজপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হামলার মুখে পাকিস্তানি সেনারা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। ৮ ডিসেম্বর চিরিরবন্দরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৫১ জন রাজাকারকে বন্দি করে। ১০ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিরলে হানাদারদের ঘাঁটির ওপর হামলা চালান। পরের দিন হানাদাররা সেখানে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে বিরল শহর ছেড়ে চলে যায়।
এরপর ১৩ ডিসেম্বর বিরলের প্রত্যন্ত এলাকা বহলায় ৪৩ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে হানাদাররা সৈয়দপুরের দিকে রওনা হয়। ১৪ ডিসেম্বর বিরল উপজেলার মঙ্গলপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিত্রবাহিনী যোগ দেয়। ওই দিনই পাকসেনারা দিনাজপুরের কাঞ্চন নদীর রেলওয়ের লোহার ব্রিজ, ভুষিরবন্দর ব্রিজ, মোহনপুর ব্রিজ, দিনাজপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভেঙে দেয়।
এর পরে কবে কোন দিন দিনাজপুর থেকে পাকিস্তানি সেনারা একবারে চলে যায় তা নিয়েই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মতবিরোধ।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছিল। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে ১৫ ডিসেম্বরকে দিনাজপুর মুক্ত দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি পালন করা শুরু করে।
২০১৪ সালে আবারও এ নিয়ে মতবিরোধে দিনাজপুর মুক্ত দিবস পালন বন্ধ হয়ে যায়।
জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা একটি নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করে মুক্ত দিবস পালন শুরু করার জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ চেয়েছেন।