১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর শত্রু মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে ‘খলিল বাহিনীর’ তিনশর বেশি মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মধ্যে একটানা ৩৬ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধের পর ৩৯ জন হানাদার সেনা আত্মসমর্পণ করলে মাদারীপুর শত্রুমুক্ত হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মাদারীপুরের সাবেক পৌর মেয়র খলিলুর রহমান জানান, ২৫ নভেম্বর শিবচর, ৪ ডিসেম্বর রাজৈর ও ৮ ডিসেম্বর কালকিনি থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এসব থানার ক্যাম্পগুলোর হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মাদারীপুর শহরের এ.আর হাওলাদার জুট মিলের ভেতরে ও বর্তমান মাদারীপুর সরকারি কলেজে অবস্থান নেয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে।
৯ ডিসেম্বর ভোররাতে হানাদার বাহিনী মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাবে, এমন সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের তিনশর বেশি মুক্তিযোদ্ধা বর্তমান সদর উপজেলার ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন।
ভোর ৫টার দিকে হানাদার বাহিনী ঘটকচর ব্রিজ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা। অবস্থা বেগতিক দেখে একটি কনভয় থেকে নেমে কভার ফায়ার করতে করতে দ্রুত সব গাড়ি নিয়ে এগোতে থাকে হানাদার বাহিনী। এ সময় হানাদার বাহিনীর ফেলে যাওয়া কনভয় থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে নেয়।
হানাদার ও তাদের দোসরদের একটি অংশ সমাদ্দার ব্রিজের দুইপাশে তৈরি করা বাংকারে গিয়ে পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। অপর অংশ ২টি কনভয় ও একটি জীপসহ টেকেরহাট ফেরি পার হয়ে ফরিদপুর যাওয়ার সময় ছাগলছিড়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। উপায় না পেয়ে ৩০ পাকিস্তানি সেনা ও ১২ রাজাকার আত্মসমর্পণ করে।
এদিকে সমাদ্দার ব্রিজে ৯ ডিসেম্বর সারাদিন সারারাত এবং ১০ ডিসেম্বর সারাদিন সম্মুখযুদ্ধ চলে মুক্তিযোদ্ধা ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা হ্যান্ডমাইকের মাধ্যমে হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু হানাদারেরা আবারও গোলাগুলি শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন।
দুই পক্ষের তুমুল যুদ্ধে ২০ পাকিস্তানি সেনা ও ১৪ রাজাকার নিহত হয়। যুদ্ধে শহিদ হন মাদারীপুরের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে গোলাবারুদ ফুরিয়ে এলে সন্ধ্যার আগেই হানাদার বাহিনীর মেজর আবদুল হামিদ খটক ও ক্যাপ্টেন সাঈদসহ ৩৯ হানাদার সেনা খলিল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মিত্রবাহিনী ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মাদারীপুর শত্রুমুক্ত হয়।