বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শেখ হাসিনা বানাইছে, না গেলে খারাপ দ্যাহায়’

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:৪৮

‘পদ্মা সেতু হচ্ছে এমন খবর দেখেই কিন্তু বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগ বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। আরও কলকারখানা, প্রতিষ্ঠান বাড়বে বরিশালে।’

বৃহস্পতিবার শেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এ নিয়ে দারুণ উৎফুল্ল দক্ষিণাঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ। অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনের বদৌলতে পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়ার খবর নিয়ে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই বরিশাল নগরীর চায়ের দোকানগুলো ছিল সরগরম।

কত জল্পনা-কল্পনা আর বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে এবং এতে তারা কতটা উপকৃত হবে, এটাই ছিল আলোচনার মূল বিষয়। বরিশাল বিভাগের সঙ্গে এই প্রথম ঢাকার রেল সংযোগ চালুর সম্ভাবনা নিয়েও মানুষ ছিল উৎফুল্ল।

বুধবার রাত ৯টার দিকে বরিশাল নগরীর গড়িয়ারপার এলাকার চায়ের দোকানে আলাপ হয় ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মুনসুর আলী শমসেরের সঙ্গে। চায়ের কাপে তৃপ্তির চুমুক দিতে দিতে বলেন, ‘মোরা তো জীবনেও ট্রেন দেহি নাই। তয় এই ফির দেখমু। মোগো এই সাইড দিয়াই ট্রেন যাইবে হুনছি।

‘অনেক হকালেই এক জায়গা দিয়া আরেক জায়গাই যাইতে পারমু। অনেকেই কইছিল হইবে না এই বিরিজ। বিদেশি একটা ব্যাংকের ধারে কিন্তু টাহাও চাইছিল। কিন্তু হেরা ভুল-ভাল বুঝাইয়া টাহা দেয় নাই। হেতে কিন্তু মোগো এই বিরিজের কাম ঠেইক্কা রয় নায়।’

তিনি বলেন, ‘বিরিজের কামও হইছে, এহন টিভিতে দেখলাম এপার আর ওপারের জয়েন্ট হইয়া গেছে পুরাপুরি। মরার আগে এই বিরিজে চইরা আমু। শেখ হাসিনা বানাইছে, না গেলে খারাপ দ্যাহায়।’

ওই চা দোকানের কর্মচারী শাখাওয়াত মিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতুর লইগ্গা মোগো ম্যালা সুবিধা অইবে। আগে বরিশাল দিয়া ঢাকা কোনো রুগি পাঠাইতে হইলে অর্ধেক রোগী মনে হয় ফেরিতে বইয়াই মইরে যাইত। কিন্তু সেতুটা পুরাপুরি কমপ্লিট হইলে সহজে চইলা যাওয়া যাইবে চিকিৎসা নেতে।’

 

নগরীর রুপাতলী এলাকার বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মাধ্যমেই আমাদের পুরো দক্ষিণাঞ্চলে রেল যোগাযোগ তৈরি হবে। বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রথমবারের মতো তাদের নিজ এলাকায় রেল দেখতে পারবে। এটা বেশ আনন্দের।’

মুদি দোকানি আলী আহম্মেদ বলেন, ‘মোরা বিশাল বিশাল লঞ্চ দেখছি, বাস দেখছি। কিন্তু কহনও ট্রেন দেহি নাই। তয় এবার দেখমু। বিরিজের কাম তো অইয়াই গেছে।

‘আর তো বেশি দিন না। মোর দোহানের সামনে দিয়াই ট্রেন যাইবে। মোরা যে এইডা দেখতে পারতেছি, এইডাই অনেক কিছু আমাগো জন্য। এই সরকারের এক কামেই পুরা বরিশালের চেহারা চেইঞ্জ হইয়া যাইবে।’

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসা যেহেতু শেষ সেহেতু রেল সংযোগ আসাটাও আর বেশি দূরে নয়। বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে রেল সংযোগ এলে আমরা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারব। এমনিতেই আমরা অনেক পেছানো অন্য জেলা ও বিভাগগুলো থেকে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় কিন্তু সময়ের ব্যাপক সাশ্রয় করবে এই পদ্মা সেতু।’

‘স্বপ্নের রেলকে সংযোগ করবে এই পদ্মা সেতু। রেল হচ্ছে জনগণের বাহন। এই বাহন দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকতে পারবে, এটাই আমাদের বড় একটি পাওয়া। এই সংযোগ আমাদের বরিশালকে অনেকের কাছাকাছি নিয়ে যাবে। পদ্মা সেতুর কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে বরিশালে বিনিয়োগ বাড়বে এবং মানুষের কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।’

বরিশালের গবেষক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, ‘পদ্মা সেতু হচ্ছে এমন খবর দেখেই কিন্তু বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগ বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। আরও কল-কারখানা, প্রতিষ্ঠান বাড়বে বরিশালে। এতে বেকারত্ব কমবে এই এলাকার মানুষের।

‘রেল লাইন যেহেতু ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত সেহেতু ব্যবসায়ীরা বেশ উপকৃত হবেন এই কারণে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অর্থাৎ পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইন আনতে সরকারের আরও সময় লাগতে পারে বলে মনে করছি। কেননা নদীবেষ্টিত বরিশালে প্রচুর নদী থাকায় নদীগুলোর উপর থেকে রেল সেতু নির্মাণ করার দরকার হবে। সে ক্ষেত্রে কিছু সময় প্রয়োজন হবে সরকারের।’

 

বরিশালের বীর মুক্তিযোদ্ধা এম জি কবির ভুলু বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার পরে আমরা আশা করছি যে, এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এখানকার প্রতিটি মানুষ বলছে, পদ্মা সেতু হলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। রেল সংযোগের কারণে বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ স্থাপন হবে।’

‘যেখানে আমরা একটা সময় নৌকায় চলেছি, তারপর ছোট লঞ্চ, এরপর বড় বড় লঞ্চ এসেছে। তারপর রাস্তা পেয়েছি, আর এখন পাব ট্রেন। সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু নানা ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল সেটার সমাধান হয়ে যাচ্ছে রেল সংযোগের কারণে।’

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, ‘পদ্মা সেতু আর রেল যোগাযোগ আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। রাজধানী ও উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের।

‘এই সংযোগের মাধ্যমে মানুষ দ্রুত তাদের কাজ ও ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। শিল্প খাত থেকে শুরু করে বরিশাল উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে যাবে সেতু ও রেল সংযোগের কারণে।’

এ বিভাগের আরো খবর