১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় ময়মনসিংহ। মুক্ত আকাশে ওড়ে লাল-সবুজ পতাকা।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৩ এপ্রিল জামালপুর হয়ে ময়মনসিংহে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প করে। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ করে এই জেলার মানুষকে। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
জেলার সবচেয়ে বড় গণহত্যা হয় মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নে। ২ আগস্ট ওই এলাকার ১০ গ্রামের দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদাররা।
ডিসেম্বরের শুরু থেকে সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট দিয়ে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ শুরু করে। সেই সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনীও আক্রমণ চালায়। প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকিস্তানিরা প্রথমে ফুলপুর ও পরে তারাকান্দা, শম্ভুগঞ্জ ও ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে যেতে শুরু করে। তবে পালিয়ে যাওয়ার আগেও তারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে যায়।
১০ ডিসেম্বর সকালে হালুয়াঘাট থেকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করতে থাকেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মিত্রবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার সানথ সিং বাবাজী ও মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার এবং সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় বিজয় মিছিল। মুক্ত ঘোষণা করা হয় ময়মনসিংহ জেলাকে।
ময়মনসিংহে ১২৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলার ২৫ জন, ভালুকার ১৩ জন, ফুলবাড়িয়ার ১০ জন, হালুয়াঘাটের পাঁচ জন, ত্রিশালের ১৪ জন, গফরগাঁওয়ের ১৯ জন, গোরীপুরের ছয় জন, ঈশ্বরগঞ্জের ছয় জন, মুক্তাগাছার ২২ জন, ফুলপুরের তিন জন এবং নান্দাইলের তিন জন।
প্রতি বছর জেলা প্রশাসন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে নানা আয়োজনে দিনটি পালন করা হয়।