বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সম্মুখ যুদ্ধে মুক্ত হয়েছিল পটুয়াখালী

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ২১:১৬

পানপট্টিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসলে, হানাদাররা তাদের সহযোদ্ধাদের মরদেহ রেখে পালিয়ে যায়। বিজয় আসে পানপট্টির যুদ্ধে। জেলার প্রথম মুক্তাঞ্চল পানপট্টিতে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করেন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা।  

দীর্ঘ ৮ মাস অবরুদ্ধ থাকার পর ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী জেলা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। মিত্র বাহিনীর সহায়তা ছাড়াই সম্মুখ যুদ্ধে শত্রুদের পরাজিত করে মুক্তিবাহিনী।

জেলা শহর ছাড়া চারপাশের সব এলাকা মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয়। এ অবস্থা আঁচ করতে পেরে আগের রাতেই লঞ্চযোগে পালাতে শুরু করে পাকিস্তানের সেনারা।

পরদিন সকালে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করলে রাজাকার ও আলবদররা অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালাতে থাকে। বিনা বাঁধায় মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ন্ত্রণ পায় পটুয়াখালী জেলা সদরের।

ওই দিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নির্মল কুমার রক্ষিত। তার কথাতেই উঠে আসে সেই সময়ের চিত্র।

সংগ্রাম পরিষদ গঠন ও সশস্ত্র প্রশিক্ষণ

নির্মল কুমার রক্ষিত জানান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের মতো পটুয়াখালীতেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা করে গঠন করা হয় সাত সদস্যবিশিষ্ট জেলা সংগ্রাম পরিষদ।

জেলা সংগ্রাম পষিদের নেতৃত্বে ছিলেন সভাপতি আইনজীবী কাজী আবুল কাসেম, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান, হাফিজুর রহমান ফোরকান মিয়া, আইনজীবী মো. আবদুল বারী, আবদুল করিম মিয়া, সৈয়দ আশরাফ হোসেন ও কমরেড মোকসেদুর রহমান।

২৬ এপ্রিল পর্যন্ত পটুয়াখালী জেলা ছিল মুক্ত। এ সময় সংগ্রাম পরিষদ বর্তমান মহিলা কলেজে জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করে তিন শ মুক্তিযোদ্ধাকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম.এ আউয়াল পুলিশ লাইনস্‌ থেকে রাইফেল ও গুলি দেন মুক্তিযোদ্ধাদের। এ জন্য তাকে পাকিস্তানি হানাদাররা গুলি করে। কিন্তু প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

যেভাবে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানিরা

২৬ এপ্রিল ১৯৭১, বেলা সাড়ে ১০টা। পাকিস্তানি  হানাদারদের জঙ্গি বিমানি উড়ে আসে পটুয়াখালীর আকাশে। শুরু হয় বিমান হামলা। চলে শেলিং আর বেপরোয়া গোলাবর্ষণ। টানা কয়েক ঘণ্টা বোমা হামলা চালিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারে কালিকাপুর এলাকায় অবতরণ করে পাকিস্তানি ছত্রীসেনা।

উন্মত্ত আক্রোশে হানাদাররা ঝাপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র জনতার ওপর, চালায় নির্বিচারে গণহত্যা। অগ্নিসংযোগে ভস্মীভূত হয় শহরের পুরান বাজার এলাকা। রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় নিরীহ মানুষের মরদেহ। ওই দিনের গণহত্যায় তিন শতাধিক লোক শহিদ হন।

ছত্রীসেনা অবতরণকালে কালিকাপুর মাদবার বাড়ির শহিদ হয় ১৯ জন। প্রতিরোধ করতে গেলে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দক্ষিণ দিকের সরকারি কোয়ার্টারের সামনে সাতজন আনসার সদস্য ও তখনকার জেলা তথ্য অফিসারকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ওই শহিদ সাত আনসারের গণকবর রয়েছে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দক্ষিণ পাশে। এ ছাড়া, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জেলার বিভিন্নস্থানে ও জেলখানার অভ্যন্তরে হত্যা করা হয় দেড় সহস্রাধিক লোককে। এদের অধিকাংশকেই দাফন করা হয় বিনা জানাজায় গণকবরে। মাদবার বাড়ি, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের অদূরে আনসারদের ও পুরাতন জেলখানার অভ্যন্তরের বধ্যভূমি মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার নির্মম সাক্ষ্য বহন করছে আজো।

পানপট্টির ১২ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধ

পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে প্রমত্তা আগুনমূখা নদী পাড়ের একটি নিভৃত পল্লী পানপট্টি গ্রাম।

৯ নম্বর সেক্টর হেড কোয়াটারের নির্দেশে ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি মুক্তিযোদ্ধা দলকে কে.এম নুরুল হুদা (বর্তমান সিইসি) ও হাবিবুর রহমান শওকতের নেতৃত্বে পাঠানো হয় পটুয়াখালী এলাকায়। তারা নিরাপদ এলাকা চিহ্নিত করে ক্যাম্প স্থাপন করেন পানপট্টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে।

১৮ নভেম্বর সকাল ৬টার দিকে মেজর ইয়ামিনের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদারদের একটি বাহিনী আক্রমণ করে ওই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে। মুক্তিযোদ্ধারা যে যার মত করে অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ।

দুপক্ষের গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সমগ্র এলাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের তিনদিকের আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বিকাল ৪টার দিকে পিছু হটতে শুরু করে ইয়ামিন বাহিনী।

সন্ধ্যায় ওই এলাকার সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। সন্ধ্যায় অবস্থা বেগতিক বুঝে হানাদাররা তাদের সহযোদ্ধাদের মরদেহ রেখে পালিয়ে যায়। বিজয় আসে পানপট্টির যুদ্ধে। জেলার প্রথম মুক্তাঞ্চল পানপট্টিতে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করেন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা।

 

 

এ বিভাগের আরো খবর