গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আলোচিত লিটন মিয়া হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার চার জন।
পুলিশ বলছে, এদের মধ্যে তিনজন জবানবন্দিতে হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় জুসের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে খাওয়ানোর পর লিটনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার হিরকপাড়ার একটি কলাবাগান থেকে চা দোকানি লিটন মিয়ার (২৭) গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিনই তার বাবা আশরাফ আলী অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
সেদিন রাতেই হত্যায় জড়িত সন্দেহে লিটনের বন্ধু নূর হোসেন ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন একরাম নামে একজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। সবশেষ রোববার গ্রেফতার করা হয় রনি কুমার মোহন্তকে। পুলিশ বলছে, একরাম ইয়াবার কারবারি।
হত্যা ঘটনায় অভিযুক্ত রনি মোহন্ত, নূর হোসেন ও আনোয়ার।
শনিবার গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক পার্থ ভদ্রের কাছে জবানবন্দি দেন আনোয়ার হোসেন ও নূর হোসেন। একই আদালতে রোববার জবানবন্দি দেন একরাম হোসেন। আর সোমবার জবানবন্দি দেন রনি মোহন্ত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম জানান, ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ভাগদড়িয়া গ্রামের লিটন মিয়া কিছুদিন আগে মাদক সেবন ছেড়ে বাবার চা দোকানে বসা শুরু করেন। এর আগে লিটন এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা সুদে ধার নিয়ে দুই বন্ধু নূর হোসেন ও রনি মোহন্তকে ধার দেন।
মরদেহ উদ্ধারের আগের দিন বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে পাওনা টাকার সুদ চেয়ে নূর ও রনিকে ফোন করেন লিটন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আরেক বন্ধু আনোয়ারকে সঙ্গে নিয়ে লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ওইদিন রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে লিটনকে ফোনে ডেকে নেন তিন বন্ধু। এরপর লিটনসহ চার জন একটি নির্জন জায়গায় গাঁজা সেবন করেন। এ সময় লিটনকে ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস পান করান তারা। কিছুক্ষণ পর তারা একসঙ্গে ইয়াবাও সেবন করেন। এর একপর্যায়ে লিটন নিস্তেজ হয়ে পড়লে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে পাশের একটি কলাবাগানে নেয়া হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এ সময় ছুরি বের করে হঠাৎ লিটনের বুকে বসিয়ে দেন আনোয়ার। পরে তিন জন হাত-পা চেপে ধরে গলা কেটে লিটনকে হত্যা করেন। হত্যার পরে লাশের পাশে বসে আবারও ইয়াবা সেবন করেন তিন বন্ধু।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আরিফুল আরও বলেন, ‘চার আসামির প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়। বিচারক দুই দিন করে অনুমতি দেন।’
তিনি জানান, রনির রিমান্ড শেষ হবে ৯ ডিসেম্বর। বাকি তিন জন রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মেহেদি হাসান বলেন, ‘শিগগিরই আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হবে।’