একাত্তরের ১৭ এপ্রিল মাদারগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এরপর প্রায় ৯ মাসের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় গাইবান্ধা।
এর আগে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই জেলার পূর্ব পাশে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের চর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা গাইবান্ধা শহরের দিকে এগোতে থাকেন। সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি থানা মুক্ত করে চারদিক থেকে গাইবান্ধা শহর ঘিরে ফেলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
৬ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর দুটি বিমান গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনের পাশে বোমা ফেলে। বিকেলে ট্যাংক নিয়ে মিত্রবাহিনী প্রবেশ করে শহরে।
ওই দিন সন্ধ্যার দিকে গাইবান্ধার স্টেডিয়াম ও ওয়ারলেস থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের ফেলে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পালিয়ে যায়।
পর দিন ৭ ডিসেম্বর ভোরে কোম্পানি কমান্ডার মাহবুব এলাহী রঞ্জুর (বীর প্রতীক) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ফুলছড়ি উপজেলার কালাসোনার চর থেকে বালাসীঘাট হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে।
তাদের আগমনে বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। তৎকালীন এসডিও মাঠে (বর্তমান স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ) বীর সেনানীদের দেয়া হয় সংবর্ধনা।
এর আগে একাত্তরের মার্চে যখন দেশজুড়ে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি চলছিল, তখন গাইবান্ধা শহরের সর্বত্র ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। এক গণজমায়েতে পুড়িয়ে ফেলা হয় পাকিস্তানের পতাকা। সেই মাঠেই বর্তমানে গড়ে তোলা হয়েছে বিজয়ের স্মৃতিস্তম্ভ।
১৭ এপ্রিল গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করার পর ভিএইডের ওয়ারলেস দখলে নিয়ে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামে (বর্তমান শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম) ঘাঁটি গাড়ে পাক হানাদার বাহিনী। সেখান থেকেই পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা জেলা জুড়ে চালায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। নারীদের ওপর চলে বর্বরতা।
রাজাকার ও আলবদরদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। ওই সময় রাস্তার পাশে ও রেললাইনের ধারে বহু মানুষকে পুঁতে রাখা হয়। বাড়ি থেকে নারীদের ধরে নিয়ে ক্যাম্পে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
গাইবান্ধা স্টেডিয়ামের দক্ষিণ অংশে ও বাইরে অসংখ্য মানুষকে হত্যার পর মাটি চাপা দেয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ সব স্থান বধ্যভূমি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার গৌতম চন্দ্র মোদক জানান, একাত্তরের ৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা মুক্ত হয়। এ ছাড়া ৮ ডিসেম্বর পলাশবাড়ি, ১০ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জ ও ১২ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ।
তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধায় যুদ্ধগুলোর মধ্যে বাদিয়াখালীর যুদ্ধ, হরিপুর অপারেশন, কোদালকাটির যুদ্ধ, রসুলপুর স্লুইস গেট আক্রমণ, নান্দিনার যুদ্ধ ও কালাসোনার যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। গাইবান্ধায় ৯১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।’
এদিকে হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে সোমবার নানা কর্মসূচি নিয়েছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।