বালতি, কলসি, ড্রাম যে যা পারছেন নিয়ে এসে তাতে করে ভরে ভরে তেল নিয়ে যাচ্ছেন। শুধু স্থানীয়রা নন, তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতের খবরে আশেপাশের এলাকা থেকেও লোকজন এসেছেন তেল নিতে।
রোববার হবিগঞ্জের শাহজীবাজারে সিলেটগামী তেলবাহী ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হলে তা থেকে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহে এমন ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয়রা।
দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে তেলবাহী ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল দুর্ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ধরনের পাত্র নিয়ে সেই তেল সংগ্রহ করছেন নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ কিংবা শিশু।
স্থানীয়রা জানান, তারা ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। ঘটনাস্থলে দীর্ঘ সময়েও রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা না আসায় অনেক লোক ভিড় করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের পাত্র ভরে ভরে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। অনেককে আবার ট্যাংকের ভিতরে প্রবেশ করে তেল সংগ্রহ করতেও দেখা গেছে। সন্ধ্যার পরে অনেকেই লাইট নিয়ে এসে তেল সংগ্রহ করছেন।
দুর্ঘটনায় পড়া ট্রেন থেকে তেল নিতে স্থানীয় নারী-পুরুষ-শিশু সবাই ভিড় করছেন। ছবি: নিউজবাংলা
ট্রেনের বগিতে লেখা তথ্য অনুযায়ী, উল্টে যাওয়া বগি দুটিতে ৭৮ হাজার ৪৮২ লিটার তেল ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদ কবির জানান, বেলা ১২টার পর বিকট শব্দে তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। এরপর এলাকাবাসী তেল নিতে ভিড় করেন। বালতি, বোতল, কলসি, ড্রামসহ বিভিন্ন পাত্র ভরে তেল নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সুমন আহমেদ নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনকে তেল নিতে বাধা দিলেও তারা শুনছেন না। বাধা উপেক্ষা করেই তারা তেল নিয়ে যাচ্ছেন।
দুর্ঘটনার জন্য স্টেশন মাস্টারের ভুলকে দোষারোপ করছেন ট্রেনের চালকরা। তারা বলছেন, শাহজীবাজার স্টেশনের কাছে লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছিল। কিন্তু তাদের আগে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। এমনকি ট্রেন আসার সময় স্টেশন মাস্টার স্টেশনে না থাকায় কোনো ধরণের সিগনালও দেয়া হয়নি।
লাইনচ্যুত ট্রেন থেকে তেল নিতে পুলিশ বাধা দিলেও শোনেননি স্থানীয়রা। ছবি: নিউজবাংলা
দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের সহকারী চালক হামিদুর আহমেদ বলেন, লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছিল। কিন্তু আমাদের কোনো নোটিশ বা সিগনাল দেয়া হয়নি। ফলে ট্রেনটি ১নং লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ইঞ্জিন অটোমেটিক ২নং লাইনে চলে যায়। এ ছাড়া বগি চলে যায় ১নং লাইনে। যে কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর থেকে শাহজীবাজার স্টেশন মাস্টার মোফাজ্জল হোসেনকে পাওয়া যাচ্ছে না।
শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুর আলম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী ট্রেন আসছে। তবে কখন রেল চলাচল স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।'
তবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত কোনো উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি।