১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুখরিত হয় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে। উড়তে থাকে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। কারণ এই দিনই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্ত হয় জেলাটি।
তবে পালানোর আগে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেব উদ্দিনসহ তিন মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করে রেখে যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর জানান, সুনামগঞ্জকে হানাদার মুক্ত করতে ৩ ডিসেম্বর থেকেই পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেজর মুত্তালিব, মিত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন রঘুনাথ ভাটনগর ও যাদব একসঙ্গে কাজ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়।
‘এ’ কোম্পানিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার যোগীরগাঁও এলাকায়, ‘বি’ কোম্পানিকে হালুয়াঘাট এলাকায়, ‘সি’ কোম্পানিকে হাসননগর এলাকায়, ‘ডি’ কোম্পানিকে ভাদেরটেক ও লালপুর এলাকায়, ‘ই’ কোম্পানিকে মল্লিকপুর এলাকায়, ‘ডিইএফ’কে কোম্পানি বেরীগাঁও ও কৃষ্ণতলা এলাকায়, ‘এডিএম’ কোম্পানিকে রসদ পরিবহন এবং এক প্লাটুন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বনগাঁওয়ে সদর দফতরে রাখা হয়। ওই সময় সুনামগঞ্জ মুক্ত করার পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছিল ‘খরগোশ’।
৫ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন রধুনাথ ভাটনগর ও যাদব বনগাঁও থেকে আমবাড়ি এলাকায় আসেন। ‘বালাট’ নামে একটি বিশেষ কোম্পানি গঠন করা হয়। যৌথ কমান্ডের নির্দেশে তারা সুনামগঞ্জ সদরের গৌরারং এলাকার দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন।
সুনামগঞ্জ পৌঁছে কোম্পানিটির অর্ধেক সদস্য বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয় ও বাকিরা জয়কলস উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থান নেন। ওই দিন রাতেই পাকিস্তানি বাহিনী ভয় পেয়ে সুনামগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর সকালে বিজয়ের বেশে শহরে প্রবেশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
প্রতি বছরই সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবসে নানা আয়োজন করা হয়। তবে এ বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সীমিত আকারে দিবসটি পালিত হবে। রোববার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ডলুরা শহিদ মিনারে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা ও দোয়ার আয়োজন করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা এ বছর লোক সমাগম হবে এমন আয়োজন করছি না। আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছেন।’