ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার। বিরোধীরা অভিযোগ তুললেও নৌকা প্রতীক পেলে সিংহভাগই নির্বাচিত হচ্ছেন। এর মধ্যেই লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগ ছেড়ে কয়েকজন নেতার জাতীয় পার্টিতে যোগদান নিয়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য।
বাংলাদেশে নানা সময় ক্ষমতাসীন দলে যোগদানের প্রবণতা থাকলেও উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জনপদে উল্টো চিত্র কেন, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে আলোচনা।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজনৈতিক দল পাল্টানোর পেছনে আদর্শ নয়, কাজ করেছে মনোনয়নের আকাঙ্ক্ষা। কেউ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চান। কেউ প্রার্থী হতে চান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে।
গত ২৩ অক্টোবর যুবলীগের সাবেক নেতা ওয়াহেদুল হাসান সেনা, কুলাঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দীন, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জুলফিকার আলী বুলু, লালমনিরহাট জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম বসুনিয়াসহ ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতা জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
লালমনিরহাট সফরে যাওয়া সংসদে প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের হাত ফুল দিয়ে তারা দল পাল্টান।
ওয়াহেদুল হাসান সেনা ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে, তখন তিনি ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।
২০০২ সালে আসেন যুবলীগে। তিনি ২০১১ সালে লালমনিরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এবার তিনি মেয়র পদে প্রার্থী হতে চাইছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে না বলে চলে গেলেন জাতীয় পার্টিতে। এবার নৌকার বিরুদ্ধে লাঙ্গল নিয়ে দাঁড়াবেন তিনি।
গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খুনিয়াগাছ থেকে নৌকা প্রতীকে ভোট করতে চেয়েছিলেন জুলফিকার আলী বুলু। দল মনোনয়ন না দেয়ায় স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। নৌকার প্রার্থীর কাছে হেরে যান ২০০ ভোটের ব্যবধানে। এবার তিনি ভোটে দাঁড়াবেন লাঙ্গল নিয়ে।
নিউজবাংলাকে বুলু বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। কিন্তু দল থেকে তেমন কোনো মূল্যায়ন পাই না। তাই এবার জাতীয় পার্টিতে আসলাম। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করব।’
দল পাল্টানো আরেক নেতা মাহতাব উদ্দীন বলেন, ‘রাজনীতি করি, কিন্তু আমরা কোনো মূল্যায়ন পাই না। যা কিছু আসে, তা সবকিছু বড় নেতাদের হাতেই শেষ। আমরা যে এলাকায় থাকি মানুষের সাথে সব সময় ওঠাবসা। মানুষেরও তো কিছু চাহিদা আছে। কিন্তু আমরা তা মেটাতে পারি না।
‘সবসময় কথা শুনতে হয় স্থানীয়দের মুখে। তাই দলের সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়ায় জাতীয় পার্টিতে যোগদান করি। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। আমিও প্রস্তুত।’
৪ ডিসেম্বর ঢাকায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে দলে যোগ দেন লালমনিরহাট জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম বসুনীয়া।
তিনি সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান।
গত নির্বাচনেও বসুনিয়া দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রতীক তুলে দেয় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপনের হাতে। তিনি ভোটে জেতেনও। আগামী নির্বাচনেরও নির্বাচনে তিনিই দলের প্রার্থী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে বসুনিয়া দলই পাল্টে ফেললেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে দল আমাকে মূল্যায়ন করেনি। সামনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আমি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করব।’
২৩ অক্টোবর যারা আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে আসেন, তাদের মধ্যে আছেন মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক যুবদল নেতা ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশেকিন রতনও। তার উদ্দেশ্যও ভোটে দাঁড়ানো।
নিউজবাংলাকে রতন বলেন, ‘আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনে দল যখন হাল ছাড়া তখন আমি মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন বিএনপিকে সংগঠিত করে ধরে রাখি। কিন্তু তার সঠিক মূল্যায়ন পাই না। জাতীয় পার্টি আমাকে মূল্যায়ন করবে। মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেব।’
আওয়ামী লীগ-বিএনপি থেকে নেতাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদানে উৎফুল্ল জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক এস কে খাজা ময়নুদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘অতীতের তুলনায় লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টি অনেক সুসংগঠিত। দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আজ মুক্তি চায়। তারাও জানে জাতীয় পার্টিই ভবিষ্যৎ। তাই ক্ষমতাসীন দল ছেড়ে শত শত নেতাকর্মী আমাদের দলে এসেছেন।’
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, ‘আমি তাদের যোগদানের বিষয়টি শুনেছি। তবে এখানে মন্তব্য করার কিছু নাই। এতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না বলে আমি মনে করি। অনেকে চলে যাবে। আবার অনেকে আওয়ামী লীগেও যোগদান করছে, করবে।’