আলেমদের নিয়ে তার বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আলেমদের সঙ্গে অযথা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ঠিক না।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন বিএনপিপন্থি এই বুদ্ধিজীবী। যদিও কোন বক্তব্য নিয়ে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি সেটা স্পষ্ট করেননি সেখানে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আমার একটা বক্তব্য নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আমি সে সম্পর্কে বলতে চাই। আলেমরা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, আপনাদের অযথা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ঠিক না। আজকে ভাস্কর্য বিতর্কে যাওয়া ইসলামের জন্য ক্ষতিকর।’
সম্প্রতি মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতন ও বলাৎকার ইস্যুতে কথা বলে কওমি আলেমদের বিরাগভাজন হয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা। তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছেন একজন আলেম।
গত ২৮ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজকে মৌলভী সাহেবেরা কেন যৌন নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত হবেন? এতে সম্মান কমছে।’
অন্যদিকে বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজকে তিনি বলেছেন, 'আলেমগণ আমাদের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি তাদেরকে এই সব বিতর্কে জড়ানো উচিত না। আজকে মাদ্রাসার লোকেরা কেন বলাৎকারে জড়িত? এ থেকে কীভাবে জাতিকে রক্ষা করা যায়, সে ব্যাপারে হেদায়েত করা উচিত।’
ভুল বোঝাবুঝি বলতে কী বুঝিয়েছেন-জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আসলে বেশি কিছু কথা বলেছিলাম। সব মিলিয়ে তারা ভুল বুঝেছেন। তাই তাদের বলেছি ভুল না বুঝতে।’
‘কী বক্তব্য নিয়ে তারা ভুল বুঝলেন?’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এই ধরুন, আমি বলেছি মেয়েদের বোরকা পরা দেশে বেড়ে চলেছে। এটা আসলে দেশের আইনশৃঙ্খলা অবনতির প্রমাণ। কারণ, বোরকা মেয়েরা আত্মরক্ষার জন্য পরে। একদিনের ঘটনা বলি। বিটিভি থেকে বের হইছি। এক বোরকা পরা মেয়ে আমাকে সালাম দিল। আমি চিনতে না পারার কারণে সে পরিচয় দিল৷ আমি বললাম এ কি অবস্থা? আমার কর্মীদের একজনের এই হাল কেন?
‘সে বলল, দেশের যা অবস্থা, কখন কী হয়! এসিড মারে কি না! এই ভয় থেকে আসলে বোরকা পরে।
‘একইসঙ্গে আলেমদের বলেছিলাম, আপনারা পান খেয়ে ঠোঁট লাল করবেন না। যেখানে সেখানে পিচকি ফেলবেন না। তারা বুঝলেন না যে, পান খেলে এক সময় ক্যান্সার হতে পারে।
‘দ্বিতীয়ত আমি বলেছিলাম, মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনের কথা। বিষয় হলো, আলেমদের সবাই সম্মানের চোখে দেখেন৷ কতিপয় লোকের কারণে সবার সম্মান নষ্ট হয়। এটা নিয়ে ভাবা উচিত৷
‘আর সর্বশেষ আমি ভাস্কর্য নিয়ে অহেতুক বিতর্কে যেতে বারণ করেছি। কারণ, ভাস্কর্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাদের দেখার রয়েছে। এই যে কাবা শরিফ, সেটার ভেতরে যে পাথরে চুমু খেতে যায়। সেটা ভাস্কর্য না মূর্তি?’
‘ভাস্কর্য ইস্যুতে দায়ী আওয়ামী লীগ’
বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বিরোধিতা নিয়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন জাফরুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘এয়ারপোর্ট এর সামনে লালনের ভাস্কর্য ছিল সেটা নিয়ে হুমকি ধামকি শুনে সরকার চুপচাপ বসে ছিল। …ফলে তারা আজকে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলছে।’
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিমানবন্দর মোড়ে লালনের ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ ভেস্তে যায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বিরোধিতায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হেফাজতে ইসলামের বিরোধিতার পর ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের সামনে জাস্টিস লেডির ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়া হয়। সেটি সুপ্রিম কোর্ট চত্ত্বরে অন্য একটি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে।
তারেককে দিয়ে ‘হবে না’
বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে হলে তারেক রহমানকে নয়, তার মেয়ে জায়মা জারনাজ রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে হবে বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ।
বিএনপি নেতাদের তিনি বলেন, ‘তারেকের স্তুতি দিয়ে কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।…আমি তারেককে কোনো দোষ দিচ্ছি না। স্ট্র্যাটেজি বলে একটা কথা আছে। আমরা বললেই তার (তারেক) বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার হবে না; দেশের মাটিতে ফিরতে পারবে না। একমাত্র গণতন্ত্রের বিজয় হলেই তারেক দেশে ফিরতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘জায়মা আসলে যে আন্দোলনের জোয়ার শুরু হবে, তাতে প্রধানমন্ত্রী তার যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী এসেছে এটা টের পাবেন।’
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে বের করে আনার পরামর্শও দিয়েছেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘বিএনপির উচিত হবে খালেদা জিয়াকে প্রতিদিন ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রোদের মধ্যে বসানো। যাতে জনগণ দেখতে পায়, তাদের নেত্রীকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।’