বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুক্তিযোদ্ধার বর্ণনায় কামালপুর মুক্ত হওয়ার গল্প

  •    
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:৩১

ভারতীয় যুদ্ধ বিমান কামালপুরের উপর দিয়ে টহল দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে পর পর দুই বার বিমান থেকে বোমা ফেলে। কোনো উপায় না দেখে মাটিতে অস্ত্র রেখে লাইন ধরে আত্মসর্মপণের জন্য এগিয়ে আসে ক্যাম্পের সেনারা।

১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের জামালপুরের কামালপুর। এর মাধ্যমেই প্রসারিত হয় জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল তথা ঢাকা মুক্ত হওয়ার পথ।

কামালপুরে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বর্ণনা দিয়েছেন সেদিন কীভাবে এলাকাটি হানাদার মুক্ত হয়।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের সৈন্যদের নিয়োগ করা হয়েছিল কামালপুর ক্যাম্পে। ক্যাম্পের চারদিকে পর পর কয়েকটি স্তরে মোটা গাছের গুঁড়ি, কংক্রিট ব্লক, তারপর ছয় ইঞ্চি থেকে এক ফুট ব্যবধানে ভারী লোহার বীম এবং প্রতিটি স্তরে রি-ইনফোর্সড কংক্রিট বেরিয়ার দেয়া।

বাংকারের উপরের আবরণ ছিল কয়েক স্তরে লগ-বালুর বস্তা-কংক্রিটে সাজানো। বাংকারগুলোতে সুড়ঙ্গ পথে যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল। চারদিকে পাতা ছিল অ্যান্টি ট্যাংক মাইন, বুব্যি ট্র্যাপ এবং অ্যান্টি পারসোনাল মাইন। ক্যাম্পটি ঘেরা ছিল কাঁটাতারের বেড়া ও স্পাইকস দিয়ে।

এভাবেই ক্যাম্পটিকে দুর্ভেদ্য করে তোলা হয়েছিল বলে জানান বীর প্রতীক বশির আহমেদ।

তিনি জানান, মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর রাজধানী ঢাকা দখলের সহজ ও একমাত্র পথ ছিল এটি। তাই এখানে শক্ত প্রতিরোধ তৈরি করেছিল পাক সেনারা।

৪ ডিসেম্বর সকালে কামালপুর ঘাঁটিতে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে প্রথমে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পাঠানো হবে। কিন্তু আত্মসমর্পণ পত্র ও সাদা পতাকা নিয়ে তাদের ঘাঁটিতে কে যাবে?

সবার মধ্যে দুজন রাজি হলেন। প্রথমে বশির আহমেদ কামালপুর ক্যাম্পে গেলেন। কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি ফিরে না আসায় এক ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে আনিসুল হক আকন্দ সঞ্জুকে পাঠানো হলো।

কিন্তু তিনিও ফিরে না আসলে ব্রিগেডিয়ার ক্লে বিমান বাহিনীকে কামালপুর ঘাঁটিতে আঘাত হানার সংকেত দেন।

ভারতীয় যুদ্ধ বিমান কামালপুরের উপর দিয়ে টহল দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে পর পর দুই বার বিমান থেকে বোমা ফেলে। কোনো উপায় না দেখে মাটিতে অস্ত্র রেখে লাইন ধরে আত্মসর্মপণের জন্য এগিয়ে আসে ক্যাম্পের সেনারা।

কামালপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আনসার মালিকের নেতৃত্বে ১০০ জন নিয়মিত সৈন্য, ৩০ জন    রেঞ্জার ও বেশকিছু স্থানীয় রাজাকার ব্রিগেডিয়ার ক্লের কাছে আত্মসমর্পন করেন। মুক্তিযুদ্ধে কামালপুরেই প্রথম আত্মসমর্পন পাকিস্তানি নিয়মিত বাহিনীর।

এরপর ক্যাম্পে তল্লাশি চালিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা বশির আহমেদ ও আনিসুল হক আকন্দ সঞ্জুকে উদ্ধার করা হয়। তাদের ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন করেছিল পাকিস্তানি সেনারা।

কামালপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তিন জন বীর উত্তম, আট জন বীর বিক্রম ও ১৮ জন বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন।

শহিদ হয়েছেন ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিনসহ মোট ১৯৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অফিসারসহ পাকিস্তানি মোট ৪৯৭ জন সেনা নিহত হয়।

এ বিভাগের আরো খবর