ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের খাদ্য ও জীবিকার সংকট তুলে ধরার পাশাপাশি সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের দাবিতে বরিশালে এক শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা মিলনায়তনে ক্ষুদ্র ও সাধারণ মৎস্যজীবী ও মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতাদের অংশগ্রহণে এই শুনানী হয়। এর আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা প্রান্তজন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), বাংলাদেশ।
শুনানীতে মৎস্য উপকরণের কার্ড পেতে হয়রানির শিকার হওয়া এবং কার্ড থাকার পরও সেবা না পাওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। এসময় সরকারি বিধিনিষেধ ও করোনাকালে জেলেদের জীবিকার সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিষয়গুলো উঠে আসে।
শুনানীতে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের ২৪টি উপকূলীয় জেলায় দুই কোটি মানুষ জেলে পরিবারের সদস্য। এই বিশাল জনগোষ্ঠী একরকম অবহেলিত। কৃষিখাতে প্রণোদনা ঋণের ব্যবস্থা থাকলেও, সাধারণ জেলেদের জন্য কোনো ধরনের সরকারি ঋণ সুবিধা নেই। নেই কোনো সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি। যে কারণে সরকারি বিধিনিষেধ থাকাকালে বেকারত্ব বাড়ছে এবং তাদের মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টির সংকট তৈরি হচ্ছে।’
এসময় সাধারণ মৎস্যজীবীরা বলেন, বছরের বিভিন্ন সময়ে, নানা কারণে মোট ১৪৮ দিন মাছ ধরায় সরকারি বিধিনিষেধ থাকে। এই সময়ে আমাদের জীবিকার সংকট দেখা দেয়, যা নিজের ও পরিবারের সদস্যদের খাদ্য সংকটে রূপ নেয়। সরকারিভাবে এই সময়ে মৎস্যজীবীদের কার্ডের মাধ্যমে সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও, কার্ড পেতে হয়রানি ও কার্ড থাকার পরও সেবা পাওয়া যায় না।
তারা আরও বলেন, করোনাকালে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকার নগদ অর্থ সহায়তা ও প্রণোদনা ঋণ দিলেও জেলেরা ছিলেন উপেক্ষিত। এসময় এনজিও ঋণ বিতরণও বন্ধ ছিল, যে কারণে খরচ চালাতে চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে।
শুনানীতে জেলেদের জন্য আলাদা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করা, নগদ অর্থ সহায়তা, বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনা ঋণের ব্যবস্থা করা, মৎস্যজীবী কার্ড প্রাপ্তিতে হয়রানি বন্ধ করা এবং কার্ডের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করার দাবি তোলা হয়।
এক্ষেত্রে ২ কোটি জেলেদের খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
আইসিডিএর বরিশালের উপদেষ্টা আনোয়ার জাহিদের সভাপতিত্বে শুনানীতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস।
অতিথি ছিলেন সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদিন, সনাক বরিশাল সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা, সহকারী অধ্যাপক শিবানি চৌধুরী, ম্যাপ এর নির্বাহী পরিচালক শুভংকর চক্রবতী, রান এর নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল আলম, ক্যাব এর সম্পাদক রনজিৎ দত্ত, আরোহির নির্বাহী পরিচালক এ টি এম খোরশেদ আলম, বেলার সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন, ‘জানান’ সদস্য রেবেকা সুলতানা, র্যাক এর নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমান খান।