প্রায় ৪ কোটি টাকা নিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় গ্রামীণ সেভিংস্ এন্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. নামের একটি সমিতি উধাও হয়ে গেছে গ্রাহকরা অভিযোগ তুলেছেন।
সমিতির কার্যালয়ে তালা দিয়ে প্রধান কর্মকর্তা চন্দ্রলাল রবিদাস গাঢাকা দিয়েছেন। তার বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্ল্যাপুর উপজেলার বকশিগঞ্জ গ্রামে।
তিনি ২০১৩ সালে উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের নিবন্ধন নিয়ে উপজেলার কৃষি ব্যাংক মোড় সংলগ্ন সুহেল বাবুর ভবনের দ্বিতীয় তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে সমিতির কার্যক্রম শুরু করেন।
ডিপিএস-এ ১৫ শতাংশ এবং এফডিআরে দ্বিগুণ মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করা হয়। লাভের আশায় এলাকার অনেক মানুষ ডিপিএস, এফডিআর ও সাধারণ সঞ্চয় হিসাব খোলেন।
এরই মধ্যে কিছু গ্রাহক তাদের সঞ্চয় ফেরত চাইলে চন্দ্রলাল রবিদাস টালবাহানা করতে থাকেন। দানেজপুর গ্রামের মাঙ্গাল উড়াও নামের এক জন গ্রাহক ১৫ নভেম্বর সঞ্চয়ের টাকা তুলতে গিয়ে সমিতির কার্লযালয়ের দরোজায় তালা দেখতে পান। পরে খবর পয়ে অন্য গ্রাহকরা সেখানে জড়ো হন। তারা জানতে পারেন প্রধান কর্মকর্তা চন্দ্রলাল রবিদাস গাঢাকা দিয়েছেন।
মাঙ্গাল উড়াও নিউজবাংলাকে বলেন, তিনি ওই সমিতিতে ৪ লাখ টাকা সঞ্চয় রাখেন। মাসে লাখে ১৫ শ টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি একটি টাকাও পাননি। এখন দেখছেন সমিতিই উধাও।
একই উপজেলার শিমুলতলী গ্রামের রুনা মার্জিয়া বানু জানান, অনেকের মতো তিনিও লাভের আশায় ৪ লাখ টাকা জমা রাখেন। সমিতির মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
উপজেলার গনেশপুর গ্রামের আদিবাসী সাঙ্গাল উড়াও বলেন, তিনি জমি বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা জমা রাখেন। অফিসে গিয়ে দেখেন তালা মারা।
এছাড়া দানেজপুর গ্রামের সুকর্না উড়াও, সুমন্ত মিনজি, কাশপুর গ্রামের নাফিউল হক, উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের নাফিজুর রহমান নাহিদও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
তারা জানান, তাদের মতো অন্তত ২৭২ জন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
মাঠ কর্মকর্তা উপজেলার ঢাকার পাড়া গ্রামের রাশেদ মণ্ডল জানান, ‘আমি ও আমার স্ত্রী ১০ লাখ টাকা জামানত দিয়ে মাসে ২২ হাজার টাকা বেতনে সেখানে চাকরি নিই। অনেক দিন থেকে বেতনও দেয়া হয় না। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’
অপর মাঠকর্মী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘আমরা শুধু মাঠপর্যায়ে সঞ্চয় ও ঋণ আদায় করতাম, আর এফডিআরের সঞ্চয়গুলো ম্যানেজার চন্দ্রলাল বাবু নিজেই আদায় করতেন। আমাদের ৫/৬ মাস ধরে বেতনও দেননি। আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি।’
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এসকে আব্দুল হক বলেন, ‘গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. সমিতির নামে বড় ব্যানার টাঙিয়ে এলাকার অসহায় মানুষদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। নিবন্ধন প্রদানকারী সমবায় অফিস এর দায় এড়াতে পারে না। আশা করি, সমবায় অফিস এই সমিতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’
সমবায় সমিতিটির কার্যালয়ের ভবন মালিক সুহেল বাবু জানান, মার্চ মাস থেকে অফিসের ভাড়া পাওনা রয়েছে।
সমিতির সভাপতি শ্রী হরেন চন্দ্র বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালে সমিতি থেকে বের হয়ে এসেছি। আমি এর কার্যক্রমের সাথে আর জড়িত নই। আমি কীভাবে এখনও সভাপতি আছি, এটি সমবায় অফিস ও তার কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা লুৎফুল কবীর সিদ্দিকী বলেন, ‘গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. নামের একটি সমিতি বন্ধের অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পেলে আইনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’