মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় জেলার সব পুলিশ সদস্যকে বদলি করে দেয়ার পর কক্সবাজারে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, সব কিছু গুছিয়ে নিতে তাদের সময় লাগছে।
পুলিশে রদবদলের সুযোগে কক্সবাজার শহরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অপরাধী চক্র। আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে সংঘাত, মাদক পাচার, চোরাকারবারি, ছিনতাই ও খুনের ঘটনা।
গত এক সপ্তাহে অপরাধী চক্রের হাতে খুন হয়েছে অন্তত তিন জন। এতে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে জনমনে।
জানা যায়, চলতি বছরের গত ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের হাতে সিনহা হত্যার পর দেড় হাজার পুলিশ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়। বিপরীতে কক্সবাজারে যোগ দেয় সমপরিমাণ পুলিশ সদস্য। রদবদলের এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা।
তবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিতভাবে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।
সম্প্রতি কক্সবাজার শহর ও পর্যটন এলাকায় ব্যাপকহারে বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ভোরে ও সন্ধ্যার দিকে বেশিরভাগ সময়েই এ ঘটনাগুলো ঘটে।
ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে কখন জীবন মাল হারাতে হয় এই আতঙ্কে কক্সবাজার শহরের সাধারণ মানুষের চলাফেরা করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।
চলতি নভেম্বরে কক্সবাজারের ১০টি স্পটে ২৮টিরও বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সর্বস্ব হারিয়েছে অনেকেই। আবার মূল্যবান মালামালের জন্য মানুষের জীবন কেড়ে নিতেও দ্বিধাবোধ করছে না লুটেরারা।
এসব অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে গেলে ছিনতাইয়ের শিকার লোকজনদের হয় অভিযোগ, না হয় হারানো ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়া হয়।
সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর রাতে ছিনতাইকারীর কবলে প্রাণ হারান আনোয়ার হোসেন (৩২) নামে এক বিক্রয়কর্মী। চাকরি সূত্রে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প চৌধুরীপাড়ার বসবাস করতেন তিনি।
গত শনিবার সকাল ১০ টায় কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ মুহুরীপাড়া এলাকায় ছুরিকাঘাতে মো. সাবিল (১৯) নামের এক পলিটেকনিক শিক্ষার্থীকে দিন-দুপুরে হত্যা করা হয়।
অক্টোবরের শুরুতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে কক্সবাজারের ঈদগাহ-ঈদগড়-বাইশারি সড়কের হিমছড়ি ঢালায় মৃত্যু হয় আঞ্চলিক গানের জনপ্রিয় শিল্পী জনি দে’র।
গত ২৩ নভেম্বর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সুজন শিকদার কক্সবাজার বাস টার্মিনালে ছিনতাইকারীর আক্রমণের শিকার হন। ছিনতাইকারীরা ধারালো ছুরি দেখিয়ে এবং শারীরিকভাবে আক্রমণ করে তার মোবাইল, টাকাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।
বিষয়টি তিনি সদর থানার প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে জানালে, জিডি করার পরামর্শ দেয়া হয় সুজন শিকদারকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ওসিসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা মোবাইল ফোন রিসিভ করেন না। অপরাধী চক্রের কবলে পড়লে কেউ তাৎক্ষণিক কল দিয়ে পুলিশকে পাচ্ছে না।
সন্ত্রাসী, মাদক পাচারকারী, ছিনতাইকারীরা এভাবে পার পেতে থাকলে কক্সবাজার শহর অপকর্মের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাতি লাভ করবে বলে জানান স্থানীয় কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রভাষক জমির জামি।
তিনি বলেন, সিনহা হত্যার পর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলি হওয়ায় নতুন কর্মকর্তারা এখনও চারদিক বুঝে উঠতে পারেনি। এমনকি কক্সবাজার শহরের অনেক অলিগলি তাদের অজানা। যার কারণে অপরাধীদের দমন করা সম্ভব হচ্ছে না।
ছিনতাইকারীর আক্রমণে নিরীহ মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কে ভুগছেন এমনকি সন্ধ্যা নেমে আসলে সাধারণ নিরীহ মানুষ ভয়-ভীতি নিয়ে চলাফেরা করেন। তাই কক্সবাজার শহরকে অপরাধমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের আরও সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন জমির জামি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শেখ মুনিরুল গিয়াস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কক্সবাজারে আমরা এখনো নতুন। তবে আমরা থেমে থাকিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অতীতের তুলনায় এখন মানুষ পুলিশের সেবা পাচ্ছে বেশি।’
তিনি জানান, শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় ছিনতাইকারীর আক্রমণে আনোয়ার হোসেন (৩২) হত্যাকাণ্ডে একজনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলমান রয়েছে।
শেখ মুনিরুল গিয়াস আরও জানান, ২১ নভেম্বর কক্সবাজার শহরে ছুরিকাঘাতে মো. সাবিল (১৯) নামের এক পলিটেকনিক শিক্ষার্থী দিন-দুপুরে হত্যাকাণ্ড মামলার আসামিকে সেদিন রাতেই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, কক্সবাজার শহরের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে নিয়মিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। অপরাধমূলক বা ফৌজদারি কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।