১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর রাত। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কামান্না গ্রামে ঘুমিয়ে ছিলেন ৪২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দুই দিন আগে ২৩ নভেম্বর তারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছিলেন।
অবস্থানগত সুবিধার কারণে কামান্না গ্রামের মাধবচন্দ্রের পরিত্যক্ত বাড়িতে অস্থায়ী ঘাঁটি গাড়েন মুক্তিযোদ্ধারা। শেষ প্রহরে হানাদার বাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে ঘিরে ফেলে বাড়িটি। হঠাৎ করেই সার্চলাইট জ্বালিয়ে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করে। স্থানীয় রাজাকাররা আগেই তাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পৌঁছে দিয়েছিল।
আকস্মিক আক্রমণে ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে হচকচিয়ে যান। আক্রমণের প্রথম ধাক্কা সামলে নিয়ে তারাও পাল্টা আঘাত করা শুরু করেন। যুদ্ধ চলে ২৬ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত।
১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর রাতে ৪২ জনের একটি দল ভারত থেকে প্রশিক্ষণ শেষে এই বাড়িতেই অস্থায়ী ঘাঁটি গড়ে তোলেন। ছবি: নিউজবাংলা
সকালে গ্রামের মানুষ দেখেন, পড়ে আছে ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নিথর দেহ। এক আহত মুক্তিযোদ্ধাকে পানি খাওয়াতে গিয়ে তাদের সঙ্গে শহিদ হন বৃদ্ধ রঙ্গ বিবি, ফণীভূষণ কুণ্ডু।
এ ছাড়া হানাদারদের এলোপাতাড়ি গুলিতে কয়েক জন গ্রামবাসী গুরুতর আহত হন। হানাদার বাহিনী যাওয়ার সময় গ্রামটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
এখানেই কবর দেয়া হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কামান্না গ্রামে শহিদ হওয়া ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। ছবি: নিউজবাংলা
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দিনটি কামান্না দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তাদের স্মরণে কামান্নায় নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
২৬ নভেম্বর যারা শহিদ হন তারা হলেন মোমিন, কাদের, শহিদুল, সলেমান, রাজ্জাক, ওয়াহেদ, রিয়াদ, আলমগীর, মতালেব, আলী হোসেন, শরিফুল, আনিচুর, আলিমুজ্জামান, তাজুল, মনিরুজ্জামান, নাসিম, মো. রাজ্জাক, কওছার, মালেক, আজিজ, আকবর, সেলিম, হোসেন, রাশেদ, গোলজার, অধীর ও গৌর।
দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে কামান্না গ্রামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এতে অংশ নেন।