রাজবাড়ীর একটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে সন্তান চুরির অভিযোগ করেছেন এক মা। তার দাবি, তার জমজ সন্তান হলেও ক্লিনিক থেকে একটি সন্তান দেয়া হয়েছে।
সুস্মিতা বেগম সুমী নামের ওই গৃহবধূ সন্তান জন্মের দুই মাস পর সোমবার রাতে এ অভিযোগ করেন। তার এ অভিযোগকে সাজানো নাটক বলছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
সুমী বলছেন, রাজবাড়ীর বড়পুলে অবস্থিত রাজবাড়ী ক্লিনিকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিজারিয়ান অপারেশনে সন্তান জন্ম দেন। এর আগে কয়েকবার আল্টাসনোগ্রাফি করান; প্রতিবারই যমজ সন্তানের রিপোর্ট আসে।
তিনি বলেন, ‘গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী ক্লিনিকে ভর্তির পরদিন সিজারিয়ান অপারেশনে মাধ্যমে আমার দুটি সন্তান হয়। তখন আমার অল্প জ্ঞান ছিল। আমি দুটি সন্তান দেখেছি। কিছুক্ষণ পর খিঁচুনি উঠলে আমি জ্ঞান হারাই।
‘এরপর আমাকে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে জ্ঞান ফেরার পর একটি সন্তান দেখে স্বজনদের কাছে জানতে চাই আরেক সন্তান কোথায়? তখন আমাকে জানায়, ক্লিনিক থেকে একটি সন্তান দিয়েছে। সাতদিন পর সুস্থ হয়ে রাজবাড়ী ক্লিনিকে গিয়ে যমজ সন্তানের কথা বললে তারা তা অস্বীকার করে।’
সুমী রাজবাড়ী সদরের চন্দনী ইউনিয়নের কাটাবাড়িয়া গ্রামের অটোরিকশা চালক মিন্টু শেখের স্ত্রী। তার বাবা আব্দুল আজিজ সরদারের বাড়ি রাজবাড়ী শহরতলীর সোনাকান্দর গ্রামে। তিনি ভ্যানচালক।
সুমীর অপারেশন করেছিলেন গাইনি চিকিৎসক শাহনীমা নার্গিস। সোমবার সুমী তার শ্বশুরকে নিয়ে তার কাছে যান।
সুমী বলেন, ‘শাহনীমা নার্গিস আমাকে দেখে চিনতে পারেন। জানতে চান আমার জমজ সন্তান কেমন আছে। কিন্তু আমি বলি আমাকে তো একটি সন্তান দেয়া হয়েছে। তখন আমার যে জমজ সন্তান হয়েছিল তার সাক্ষী দিতে বলি। তিনি রাজিও হন।’
সুমী জানান, তিনি বাড়ি ফিরে কয়েকজন স্বজনকে নিয়ে আবারও ক্লিনিকে যান। আরেক সন্তানের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা পাত্তা দেননি। পরে তাদের আটকে রেখে হুমকি দেয়া হয়। এরপর আরও স্বজনরা গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন।
সুমী বলেন, ‘রাতে আমরা অভিযোগ দিতে থানায় যাই। কিন্তু অভিযোগ লেখার লোক নেই বলে কোনো অভিযোগ নেয়নি থানা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসক শাহনীমা নার্গিস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯ সেপ্টেম্বর সুমীর অপারেশন করা হয়। বাচ্চার পজিশন ভালো ছিল না। একলেমশিয়া রোগ ছিল। এ কারণে দ্রুত ফরিদপুর রেফার্ড করা হয়।
‘পরে সে আরও দুইবার রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আমার কাছে গিয়েছিল। তখন কোনো অভিযোগ করেনি। দুই মাস পর এসে দাবি করছে তার যমজ সন্তান হয়েছে, যা সঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রেসক্রিপশনে সুমী অন্য একজনকে দিয়ে লিখিয়েছে টুয়াইন বেবি। আমাদের ডাক্তারি ভাষায় এ শব্দ নেই। আমরা টুয়াইন প্রেগন্যান্সি লিখে থাকি।’
সুমীর বাবা আজিজ জানান, তার মামাতো ভাই বক্কারের মাধ্যমে সুমীকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। অপারেশনের পর তার মেয়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়। পরে তাকে ফরিদপুর নেয়া হয়। অপারেশন থেকে শুরু করে ফরিদপুর মেডিক্যালে পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া- এর কোনো টাকাই নেয়নি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
সোমবার রাতে রাজবাড়ী ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, পরিচালক শিশির চক্রবর্তী, ইমানুল করিম জকি ও ফকীর শাহাদত হোসেন বেশ কয়েকজনকে নিয়ে এক কক্ষে বসে আছেন।
সুমীর একটি সন্তান না দেয়ার অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে ক্লিনিক পরিচালক ইমানুল বলেন, ‘প্রথম আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টে ওই গৃহবধূর সিঙ্গেল বেবি ছিল। তারপর যে কটি আলট্রাসনোগ্র্রাফি করেছে প্রতিটিই সিঙ্গেল ছিল। শুধু একটিতে টুয়াইন এসেছে। সেটিও ভুলবশত। এখন আরেকটি সন্তান দাবি করা হাস্যকর।’
সুমীর পরিবার গরীব হওয়ায় ক্লিনিকের চার্জ নেয়া হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
কাগজপত্র না দেয়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি রোগীকে তাদের কাগজপত্র দিয়ে দেই। একটি আমাদের কাছে সংরক্ষিত থাকে। এই রোগীর ক্ষেত্রে ঘটনা আলাদা ঘটেছে। তাকে দ্রুত ফরিদপুর নেয়ায় কাগজপত্র দেয়া যায়নি। এখন সে যেসব দাবি করছে তার কোনো ভিত্তি নেই।’
রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার জানান, ‘প্রেসক্রিপশনে দুই রকম হাতের লেখা দেখা গেছে। আমাদের কাছে অভিযোগ সত্য মনে হয়নি। রাজবাড়ীর মতো ছোট জেলায় এ ধরনের ঘটনা কল্পনা করা যায় না।’
এ ব্যাপারে সুমীর বাবা আজিজ সরদারের মামাতো ভাই বক্কারের সঙ্গে কথা বলতে ফোন করা হলে তিনি ‘আমি এখন ব্যস্ত’ বলে সংযোগ কেটে দেন।