মহাদেবের বুকের উপর ডান পা। লাল শাড়িতে কালী প্রতিমা। ‘নিজ থেকেই তিনি এসেছেন’ ভক্তের বাড়িতে। আর সেই খবরে বাড়ির আশপাশে হাজারো মানুষের ভিড়।
ঘটনাটি বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি গ্রামে। স্থানীয় মায়া রানী শীলের বাড়ির পূজার ঘরে রোববার সকালে দেখা মেলে শক্তির দেবী কালীর প্রতিমার।
কীভাবে এবং কেন- দেবী কালী এলেন ওই বাড়িতে?
জবাবে মায়া রানীর দাবি, তিনি বহু দিন ধরেই কালীর ভক্ত। বাড়িতে আসার খবর স্বপ্নে আগেই জানিয়েছিলেন দেবী। বলেছিলেন, পূজা দিলে তার অলৌকিক ক্ষমতার আরও প্রমাণ দেবেন।
গত তিন দিনে অবশ্য সে ধরনের আর কিছু দেখা যায়নি, তবে দেখা যাবে- এমন বিশ্বাসে লোকজনের ঢল নেমেছে বাড়িতে। ‘মনবাসনা পূরণের জন্য’ দেবীর উদ্দেশে টাকা দিচ্ছেন অনেকেই।
মায়া রানীর স্বামী মহাদেব কুমার শীল মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তার ছোট বোন কল্পনা রানীর দাবি, রোববার তিনিই প্রথম মাটি ফুঁড়ে ওঠা কালী মূর্তির দেখা পান।
কল্পনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার সকালে পূজা-অর্চনা করার ঘরে তাকিয়ে দেখি, মা কালী অবস্থান করছেন। বিষয়টি বাড়ির অন্যদের জানালে, তারা এসে ঘরের দরজা খুলে দেখে পিতলের একটি কলস, একটি কুলা, একটি মগসহ পূজা করার বিভিন্ন সরঞ্জামসহ মা কালী দাঁড়িয়ে আছেন।’
ওই বাড়ির সবার দাবি, মাটি ভেদ করেই জেগে উঠেছেন মা। যদিও এর কোনো আলামত ঘরের ভেতরে দেখা যায়নি।
জয়গাছি গ্রামের অনেকেই বলছেন, এমন ঘটনা ঘটা অসম্ভব, সাজানো ঘটনার মাধ্যমে চলছে প্রতারণা।
স্থানীয় শ্যামল শীল ঘুরে এসেছেন ওই বাড়িতে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহাদেবের বাড়িতে মাটি ফুঁড়ে প্রতিমা বের হয়ে উঠেছে, এমন কোনো আলামত দেখতে পেলাম না। ঘটনাটি আমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। সহজ সরল মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে প্রশ্নের সুযোগ অবশ্য দিচ্ছেন না ‘কালীভক্ত’ মায়া রানী। বাইরে থেকে কেউ মূর্তি আনতে পারে কিনা- জিজ্ঞেস করতেই চোখ বন্ধ করে ‘জয় মা কালী’ বলে চিৎকার শুরু করেন তিনি। এরপর গড়াগড়ি চলতে থাকে মাটিতে।
তার ছেলেরা এগিয়ে এসে লোকজনদের সরিয়ে দিয়ে বলেন, মায়ের ওপর এখন কালী ভর করেছে।
পূজার সরঞ্জামসহ হাজির কালী মূর্তি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে ওই গ্রাম ও আশপাশের এলাকার অনেকে।
এরই মধ্যে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে পূজার ঘর। লিখে দেয়া হয়েছে ‘বাঁশে কেউ হাত দিবেন না’। পাশে রাখা ঝুড়িতে টাকা ফেলে দেবীর ‘সুদৃষ্টি’ চাইছেন ভক্তরা।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনাস্থলে যান বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে. এম আজিজুল ইসলাম। তিনি জানান, টাকাপয়সা দেয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে বলেছি। কেউ প্রতিমা দেখতে গেলে এমনিতেই দেখে চলে যাবে। টাকা নিতে ওই পরিবারকেও নিষেধ করা হয়েছে।
কলকাতাভিত্তিক ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রধান প্রবীর ঘোষের ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ বইয়ে মাটি ফুঁড়ে কালীমূর্তির বের হওয়ার ঘটনা অনুসন্ধানের বিবরণ রয়েছে।
সেখানে দেখা যায়, ঘটনাগুলো মোটেই অলৌকিক ছিল না, সাজানো ঘটনার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল।