সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গ্রাম অচিন্তপুর। কাগজে কলমে অচিন্তপুর হলেও মানুষের কাছে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধার গ্রাম হিসেবেই।
যুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ হওয়া ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের জন্মস্থান এ গ্রাম। তিনি ছাড়াও এ গ্রাম থেকে ৩৫ জন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
বর্তমানে সুরমা নদীর ভাঙনের ফলে গ্রামটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।
উপজেলার গৌরারং ইউনয়িনের অচিন্তপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙনের ফলে ভেঙে গিয়েছে অনেক বাড়িঘর। এখনো কয়েকটি ঘরবাড়ি নদীর তীরে থাকলেও সেগুলোতেও ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় সেগুলো চলে যাবে নদীর্গভে।
গ্রামটিতে এক হাজার পরিবারের বসবাস। ভাঙনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে গ্রামটির একমাত্র সড়কটিও।
২০০২ সাল থেকে এখন র্পযন্ত নদীগর্ভে গিয়েছে এই গ্রামের সাত একর ভূমি। সেই সঙ্গে গিয়েছে অনেকের বসতভিটা। গত এক সপ্তাহে আরও ৬টি ঘর তলিয়ে গেছে পানির নিচে।
ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেয়ার জন্য গ্রামবাসীরা বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। প্রশাসনের কর্তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন অনেকবার। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি।
অচিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হকের অতি কষ্টে তৈরি করা বাড়িটি কয়েকদিন আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । তিনি এখন আশ্রয় নিয়েছেন ভাইয়ের বাড়িতে।
জিয়াউল হক জানান, রাতে বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ পানিতে কিছু পড়ছে এমন শব্দে ঘুম ভাঙলে উঠে দেখেন তার ঘরের অধিকাংশই সুরমা নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জীবন বাঁচলেও চলে গিয়েছে নিজের সাজানো ঘরটি।
আরেক বাসিন্দা মুক্তাদুল হক বলেন, ‘দুই দিন আগে আমার ঘরের মেঝে ফেটে গেছে। যেকোন সময় আমার ঘরটিও পানিতে চলে যাবে।’
গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন চূড়ান্ত সীমায় চলে গিয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি আমাদের গ্রামটি রক্ষায় দ্রুত একটি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডার সহ-সভাপতি ও অচিন্তপুরের বাসিন্দা আজিজুল হক আজিম বলেন, ‘আমাদের গ্রামটি অনেক বড় ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে গ্রামটি ভাঙতে ভাঙতে এখন ছোট হয়ে গেছে।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, ‘অচিন্তপুর গ্রামে আমি গিয়েছি। সেই গ্রামের নদী ভাঙনের ফলে ঘরবাড়ি হারানো পরিবারকে নতুন ঘর দেয়া হবে। আর নদী ভাঙন রোধে কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আমি তাদের বিষয়টি জানিয়েছি।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো সবিবুর রহমান বলেন, ‘অচিন্তপুর গ্রামের বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি। গ্রামটি রক্ষায় নদী ভাঙন রোধে আমরা একটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে অনুমোদন এলে আমরা নদীভাঙন রোধে কাজ শুরু করতে পারব।