বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘কী করি খাম চিন্তায় বাছি না’

  •    
  • ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ১৫:৪৬

এমন দুশ্চিন্তা তাড়া করছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুমারদের। এই উপজেলায় মোট ১১৫টি পাল পরিবার আছে। বেশির ভাগ পরিবারই দীনহীন।

মাটির কলস ও হাঁড়িসহ নানা পণ্য এখন আর খুব একটা চলে না। এসব পণ্য বিক্রি করে কুমারদের রোজগার হয় সামান্যই, তার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে নেমে এসেছে করোনো মহামারি।

যেসব কুমার এখনও পৈতৃক পেশা আঁকড়ে আছেন, তারাও এখন আর মাটির পণ্য ফেরি করতে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। বাড়িতে যা বিক্রি হয়, তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন চলে।

পরিস্থিতি দিনের পর দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কী খেয়ে বাঁচবেন কুমাররা, এই দুশ্চিন্তা তাদের তাড়া করছে। এরই প্রতিধ্বনি শোনা যায় এক কুমার পত্নীর কণ্ঠে।

তিনি বলেন, ‘এখন ত এগুলা চলে না, মানুষ নেয় না মাটির জিনিস। কেমন করি সংসার চালাই! খুব কষ্ট, হামরা কি করি খাম চিন্তায় বাছি না। সরকারও কিছু সাহায্য সহযোগিতা করে না।’

তার নাম শ্রীমতি পঞ্চমী পাল। বয়স ৫০ বছর। বাড়ি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কুমারটারী গ্রামে।

ছোটোবেলায় মাটি দিয়ে নানা পণ্য তৈরির কাজে হাতেখড়ি। তখন বাবাকে সহযোগিতা দিতেন। এরপর অল্প বয়সে একই এলাকার অমূল্য চন্দ্র পালের সঙ্গে বিয়ে। স্বামীর পেশাও মাটির জিনিসপত্র তৈরি ও বিক্রি করা। আর পঞ্চমী, ঘরের কাজ করার পাশাপাশি, মাটির পণ্য তৈরিতে হাত দেন। ধীরে হয়ে ওঠেন নিপুণ কারিগর।

তাদের বড় ছেলে সন্তোষ চন্দ্র পাল রংপুরে শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেখানে কাজ নেই। এখন বাড়িতে আছেন। তাদের ছোট ছেলে প্রশান্ত চন্দ্র পাল পৈতৃক পেশাকেই ধরে রেখেছেন।

কিন্তু করোনার কারণে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ফেরি করতে পারছেন না। তাই বাড়িতে যে কয় টাকার বিক্রি হয়, তা দিয়েই কোনো রকমে খেয়ে পরে বেঁচে আছেন।

এই গ্রামের কুমার পল্লিতে ২৭টি পাল পরিবারের বাস। অমূল্য চন্দ্র পাল বলেন, জন্মের পর থেকেই দেখছেন তার বাবা-দাদারা এই ব্যবসা করছেন।

তিনি বলেন, তারা মাটি দিয়ে ৫১ প্রকার জিনিসপত্র তৈরি করতেন। তখন খুব চাহিদা ছিল। লোকজন বাড়ি থেকেই এগুলো কিনে নিয়ে যেতেন।

তিনি বলেন, আগে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কুয়া দেখা যেত। মাটির কলসে কুয়ার পানি আনতেন নারীরা। মাটির হাঁড়িতেই রান্না করতেন ভাত। খাওয়া দাওয়াও করতেন মাটির তৈরি পাত্রে। পানি পান করতেন মাটির মগে। এখন প্লাস্টিক এসে এসব গিলে খেয়েছে।

পাশের বাড়ির এক বিধবা নারী বলেন, তিন মেয়ে ও এক ছেলেসহ ছয় সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি ছিলেন তার স্বামী। তার স্বামী গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাটির বাঘ, সিংহ, হরিণ, ঘোড়া, টব, ফুলদানি, মাটির ব্যাংকসহ নানা জিনিসপত্র বিক্রি করতেন।

তাদের তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে বড় হয়েছে। বাবাকে মাটির জিনিস তৈরিতে সহযোগিতা দেয়ার পাশাপাশি অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করেন। তাতেও সংসারে নিত্য লেগে থাকে অভাব অনটন।

সদর উপজেলায় মোট ১১৫টি পাল পরিবার আছে। বেশির ভাগ পরিবারই দীনহীন। বংশ পরম্পরায় করা মাটির পণ্যের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেয়া দরকার। আর করোনা সংকটকালে তাদের বেঁচে থাকার জন্য দরকার জরুরি ত্রাণ সহায়তা।

এ বিভাগের আরো খবর