কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের মধ্যে একটি ছিল যে তহবিলকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে কি না। গত বছর পর্যন্ত অনুমোদিত তহবিলগুলো আয়কর রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। যাই হোক, সাম্প্রতিক অনুমোদিত আয়কর আইন ২০২৩-এ এই বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বিশেষত, আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ১৬৬(২)-এ অনুমোদিত তহবিলসমূহকে পূর্বে বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে অনুমোদিত তহবিলসমূহের জন্য এখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
যেহেতু তহবিলসমূহকে রিটার্ন জমা দেয়া প্রয়োজন, তাই এখন প্রশ্ন আসে যে, কখন আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বুঝতে হবে আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২(২২) এ বর্ণিত সংজ্ঞা অনুসারে, তহবিলসমূহকে ‘করদাতা’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২(৩১)(ঞ) অনুসারে, ‘কোম্পানি’-এর সংজ্ঞা থেকে তহবিলসমূহকে বাদ দেয়া হয়েছে। আরও উল্লেখ্য যে, ‘করদিবস’ আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ২(২৩)-এ সংজ্ঞায়িত হয়েছে, যেখানে এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোম্পানি করদাতা ব্যতীত অন্য করদাতাদের ক্ষেত্রে কর দিবস হবে ৩০ নভেম্বর। অতএব ইহা বলা যেতে পারে যে, তহবিলসমূহকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এটা মনে রাখা দরকার, আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে বিলম্ব হলে প্রতি মাসে ৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এই আর্থিক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে সক্রিয় পদক্ষেপ শুরু করার জন্য তহবিলসমূহকে পরামর্শ দেয় হয়েছে।
তহবিলসমূহের জন্য করের হার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রযোজ্য করের হার, ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৩০ শতাংশ, তা নগদ লেনদেনের সীমা মেনে চলার ওপর নির্ভর করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, তহবিলসমূহ করপোরেট সংস্থা ও অন্যান্য উৎস হতে অর্থপ্রাপ্ত হয়ে থাকে এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করে থাকে।
এই পরিচালনা কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে এটা প্রত্যাশা করা যায় যে, তহবিলসমূহের সিকিউরিটিজ বা বিকল্প কোনো উৎস হতে প্রাপ্ত আয়ের ওপর সম্ভাব্য করপোরেট করের হার হবে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন যে, সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে উৎসে কর্তিত কর (টিডিএস) তহবিলসমূহের জন্য একটি ন্যূনতম কর দায়, চূড়ান্ত কর দায় নয়। এর মানে হলো, তহবিলসমূহকে এখন উক্ত আয়ের ওপর অতিরিক্ত কর দিতে হতে পারে, যা তার মোট কর দায়ের উপর নির্ভর করবে। যাই হোক, তহবিলসমূহ মূলধনী লাভের ওপর ১৫ শতাংস করের হার উপভোগ করতে পারবে।
যেহেতু এটা বলা যেতে পারে যে, তহবিলসমূহের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ও করের হার সম্ভবত ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, এখন প্রশ্ন আসে, তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী জমা দিতে হবে কি না।
আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৭৩ অনুসারে, কোনো তহবিলের টার্নওভার তিন কোটি টাকার বেশি হলে তহবিলকে অবশ্যই নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া শ্রম আইন অনুযায়ী, আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা বাধ্যতামূলক। তাই স্বচ্ছতার স্বার্থে তহবিলসমূহ আয়কর রিটার্নের সঙ্গে নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী দাখিল করতে পারে।
এখন একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তাদের আয় বছরের সময়কাল কি হবে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২(১৫)-এ ‘আয়বর্ষ’-এর সংজ্ঞা অনুসারে, এটি হবে জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত।
নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এনবিআর থেকে অনুমোদন নিয়ে কোম্পানি বা তার প্রতিনিধি বা লিয়াজোঁ অফিস তাদের মূল কোম্পানির অর্থবছরের সঙ্গে মিলিয়ে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়ের বছর বেছে নিতে পারে, বিশেষ করে বহুজাতিক করপোরেশন, ব্যাংক, বিমা কোম্পানিগুলোর ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগী কোম্পানিসমূহের ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য।
যাই হোক তহবিলসমূহের জন্য একটি স্বতন্ত্র আয় বছরের সময়কাল জুলাই-থেকে-জুন বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলার আন্ডারস্কোর করা জরুরি।
তহবিলসমূহের আর্থিক বিবরণী জানুয়ারী’২২ থেকে ডিসেম্বর’২২ পর্যন্ত হওয়ায় তহবিলসমূহ চলতি কর বছরে প্রথমবার আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দুটি বিকল্প পদ্ধতি বিবেচনা করা যেতে পারে:
(ক) প্রথম বিকল্পের মধ্যে রয়েছে, জুলাই থেকে জুন আয়বর্ষ নির্ধারণ করে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত সময়কালের জন্য একটি আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা।
(খ) দ্বিতীয় বিকল্পটি হলো জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত সময়কালের জন্য একটি আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রথম বিকল্প (ক) নির্বাচন করার ক্ষেত্রে, ইহা মনে রাখতে হবে যে, এর ফলে কর কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে, কারণ তহবিলসমূহের জন্য নির্ধারিত আয়বর্ষ ১২ মাস সময়কাল থাকা বাধ্যতামূলক। বিপরীতভাবে, দ্বিতীয় বিকল্পটি (খ) একটি নির্দিষ্ট স্তরের জটিলতা তৈরি করতে পারে।
যেহেতু আমাদের ২০২২-এর ১ জুলাই প্রারম্ভিক জের চিহ্নিত করতে হবে ও তারপরে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে। আবার যারা ২০২২ সালের (জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত) অডিট সম্পন্ন করেছে, তাদের অডিটরগণ ইতোমধ্যেই ডিভিসি (DVC) গ্রহণ করেছে। এখন যেহেতু বছরের অর্ধেক পুনরায় অডিট করতে হবে, তাদের অডিটরগণ কি ওই একই সময়ের জন্য আবার ডিভিসি নিতে পারবে? এ ক্ষেত্রে, ফাইন্যান্স অ্যাক্ট ২০১৬-এর মাধ্যমে আয়বর্ষের সংজ্ঞা যেভাবে স্পষ্ট করা হয়েছিল, আমরা ২০২৩ সালের পরিপত্রে তহবিলের আয়কর সংক্রান্ত বিষয়ে একইভাবে স্পষ্টীকরণ আশা করছি।
আরেকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত যে, তহবিলসমূহের করযোগ্য আয় ৬ লাখ টাকার বেশি হলে ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৫ ডিসেম্বর, ১৫ মার্চ, এবং ১৫ জুন তারিখে চারটি সমান কিস্তিতে তহবিলসমূহকে অগ্রিম আয়কর প্রদান করতে হবে। বাকি কর ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় প্রদান করতে হবে।
লেখক: পরিচালক, এসএমএসি অ্যাডভাইজারি সার্ভিসেস লিমিটেড