জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ৯ মাস আটক থাকার পর পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলো- বিশ্বনেতাদের অব্যাহত চাপে এবং মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের কারণে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সদ্য প্রসূত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরিসমাপ্তি হয়েও যেন শেষ হয় না। ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আমরা জানতে পারলাম জাতির পিতা মুক্তি পেয়ে পাকিস্তান থেকে উড়োজাহাজে সকাল সাড়ে ৬টায় ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছে গেছেন। তখনই আমরা আনন্দ মিছিলে নেমে পড়ি।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর প্রথমেই তার স্বপ্নের বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী সেটা সম্ভব ছিল না। সম্ভব ছিল না পাকিস্তানের উড়োজাহাজে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করা।
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে তৃতীয় দেশ হিসেবে ইরান অথবা তুরস্ককে বেছে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে বঙ্গবন্ধু তা নাকচ করে দেন। এরপর তাকে লন্ডন হয়ে দেশে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। কারণ বাংলাদেশের পর ওই সময় সবচেয়ে বেশি বাঙালি বসবাস করতেন ব্রিটেনে।
ব্রিটেনে বাঙালি প্রবাসীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছিল আত্মিক যোগাযোগ। ১৯৫৬ সাল থেকেই তার বিলেতে যাতায়াত ছিল। তাই তিনি বেছে নিয়েছিলেন লন্ডনকে।
তবে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির খবর তার ইচ্ছা অনুযায়ী পাকিস্তান সরকার প্রচার করেনি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি নিজেই বিশ্বকে জানাতে চাই আমার মুক্তির বার্তা। লন্ডনে বঙ্গবন্ধু মাত্র একদিন যাত্রাবিরতি করেন।
বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়ে লন্ডনে আসছেন- ৮ জানুয়ারি বিবিসির মর্নিং সার্ভিসে এমন খবর পরিবেশন করা হয়। সকাল ৭টায় বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে প্রচারিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিমানযোগে লন্ডনে আসছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
একই দিন রয়টার্স শিরোনাম করে, ‘লন্ডনে শেখ মুজিব’।
৮ তারিখ বিকাল ৫টায় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথ-এর আমন্ত্রণে এক বৈঠকে মিলিত হন বঙ্গবন্ধু। উল্লেখ্য যে, ব্রিটেন তখনও বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসার প্রায় এক মাস পর ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ব্রিটেন বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সানডে টাইমস ৯ জানুয়ারি ‘ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বৈঠক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। ওই দিন বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানটি হিথ্রো বিমানবন্দর ছাড়ার পর বিবিসি ঘোষণা দেয়- বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন।
বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের আগে ভারতে যাত্রাবিরতি করেন ওইদিন সকালে। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্য অতিথিবৃন্দ বিমানবন্দরে উপস্থিত হন।
ভারতের জনগণ উষ্ণ সংবর্ধনা দেন স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। অকৃপণ সহযোগিতার জন্য বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ ও জনগণের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বেলা ১টা ৪১ মিনিটে বঙ্গবন্ধু তার সারা জীবনের লালিত স্বপ্নের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এটা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের ২৩তম দিন।
প্রিয় নেতাকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য বিমানবন্দরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। ওইদিন লাখ লাখ মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে উষ্ণ প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানায়। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, যা লিখে প্রকাশ করা যায় না।
মানুষের ঢল নেমেছিল পুরো ঢাকা শহরে। কানায় কানায় পূর্ণ রেসকোর্স ময়দান। এখানে ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে বিকেল ৫টায় বঙ্গবন্ধু অশ্রুসিক্ত আবেগভরা কণ্ঠে বাঙালি জাতির প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জানান।
মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছেন, যারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন ও নির্যাতিত হয়েছেন তাদের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-জনতাসহ সব স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল আবেগঘন। আনন্দ ও বেদনার অশ্রু তার দুই চোখ বেয়ে নেমেছিল অঝোরে। প্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালির চোখেও নেমেছিল অঝোর অশ্রুধারা। একইসঙ্গে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল বাংলার আকাশ-বাতাস।
জাতির পিতা তার ভাষণে আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় ফিরে যেতে পারব কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’
সবাইকে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আমার আদেশ, আমার হুকুম ভাই হিসেবে; নেতা বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই।
‘এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেটভরে ভাত না পায়, যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবকরা চাকরি না পায়।
‘মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ, তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছ, তোমরা রক্ত দিয়েছ। রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় না।’
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বলেন, ‘আমাকে আপনারা পেয়েছেন, আমি এসেছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়েছে। আমার সেলের পাশে আমার কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম- আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। মুসলমান একবার মরে, দুইবার মরে না।
‘আমি বলেছিলাম- আমার মৃত্যু যদি আসে হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালি জাতিকে অপমান করে যাব না। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না। যাবার সময় বলে যাবো- জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
সব গণমাধ্যমে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল- ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে।
দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতির জন্য ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক বঙ্গবন্ধুকে কারারুদ্ধ করে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ৬ দফার ভিত্তিতে স্বাধিকার আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্তির জন্য গনঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ও ছাত্র সমাজের ১১ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রস্তুত করে দেশ পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতায় বসতে দেয়া হয়নি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু পরিষ্কারভাবে জাতির সামনে ব্যাখ্যা করেছেন পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের ষড়যন্ত্রের কথা। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ বাঙালির আত্মত্যাগ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন সদ্য স্বাধীন সার্বভৌম যুদ্ধবিধস্ত এক বাংলাদেশ।
দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে বিশ্বের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে সম্প্রচার করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণের দৃশ্য বর্ণনায় এনবিসি টেলিভিশনের ভাষ্যকার ‘আজ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো’ বলে উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুকে ‘বাংলাদেশের জর্জ ওয়াশিংটন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং জাতির পিতাকে জনগণের স্বাগত জানানোকে বিশ্বের সবচেয়ে আবেগঘন ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা হয়। একইসঙ্গে পাকিস্তানের পক্ষে আগত যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ৭ম নৌবহর বঙ্গোপসাগর ত্যাগের খবরটিও প্রতিবেদনে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯টি মাস বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের স্বৈরশাসকরা পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আটকে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি কখনও কারাগারকে ভয় পাননি। ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশে রূপান্তরিত হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। এরপর তিনি বীর বাঙালির বীর নেতা হিসেবে বীরের বেশে তার স্বাধীন বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন।
একটি দেশের একজন রাজনৈতিক নেতা এতটা জনপ্রিয় হযন কেমন করে তা একটি বিস্ময়! যিনি পুরো ৯ মাস দেশেই ছিলেন না, তারপরও শুধু তার নামের ওপর ভিত্তি করে বীর বাঙালি আত্মবিশ্বাসে দেশকে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত না হলে এখন যেভাবে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তার অনেক আগেই বাংলাদেশ মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশে পরিণত হতো।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। পরবর্তী সরকারগুলো জাতির পিতার দুই কন্যাকে দেশে আসতে না দেয়ার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর মতো চ্যালেঞ্জ নিয়েই ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শুরু হলো ঘরে-বাইরে নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সফল আন্দোলনে পতন হলো সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের।
দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলো ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন। শুরু হলো নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসতে দেবে না ষড়যন্ত্রকারীরা। নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে শেখ হাসিনাকে হারিয়ে দিলো ষড়যন্ত্রকারীর। ভোট বেশি পেয়েও আসন কম পাওয়ায় জাতির পিতার কন্যা ক্ষমতায় বসতে না পারায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজ ১০ বছর পিছিয়ে গেল। অন্যথায় ১০ বছর আগেই শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুদৃঢ় নেতৃত্বে আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিপূর্ণ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হয়ে জাতির পিতার সোনার বাংলায় পরিণত হতো। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সরকারি কৌঁসুলি।