বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রাথমিকে শিক্ষার মান ও শিক্ষকের মর্যাদা

  •  মো. বাবর আলী   
  • ১৮ মার্চ, ২০২২ ১৬:১৮

আমাদের দেশে যদিও দেড় বছর মেয়াদি ডিপিএড প্রশিক্ষণ ও ইউআরসিতে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু সে প্রশিক্ষণের বাস্তবতা নিয়েও অনেকের দ্বিমত রয়েছে। আবার সে প্রশিক্ষণের সুফল শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে কি না তার তদারিকও পর্যাপ্ত নয়। আমাদের দেশে চিকিৎসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিতদের জন্য বিদেশে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের যে সুযোগ রয়েছে তা প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য নেই। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে পিটিআইগুলোতে ডিপিএড প্রশিক্ষণ করার পর শিক্ষকদের বেতন কমে যায়, এতে অনেক শিক্ষকই প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

‘মেরুদণ্ড’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে থেকেই আমরা অনেকটা না বুঝে-শুনে পড়ি আসছি যে ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। মেরুদণ্ড দুর্বল হয়ে গেলে মানুষের সোজা হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে কষ্ট হয়। জাতির মেরুদণ্ড তৈরির কাজ শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং কিছুটা মজবুত করে তোলা হয় মাধ্যমিকে এসে। কিছু পত্রিকায় দেখলাম গত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ‘ক’ ইউনিটে পাসের হার ১০.৭৬ % আর ‘চ’ ইউনিটে ২.৫৬ %। যা খুবই হতাশাজনক। লক্ষ করলে দেখা যায়, সেখানে কিন্তু খুব একটা কঠিন প্রশ্ন করা হয় না। শিক্ষার্থীদের এহেন দুরাবস্থার অন্যতম কারণ হতে পারে যে, তারা গোড়া থেকে গড়ে উঠছে না। আর এই মেরুদণ্ডটাকে গড়ে তোলা ও মজবুত করার দায়িত্ব যাদের হাতে সেই সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষকরা রাষ্ট্রের নিম্নতম শ্রেণির কর্মচারী। যার ফল হিসেবে জাতির মেরুদণ্ড দুর্বলভাবে গড়ে উঠছে।

এ বিষয়ে যে প্রশ্নটি সামনে এসে যায় তাহলো- কাদের মর্যাদা বেশি হওয়া উচিত? জাতিগড়া কারিগরদের নাকি গাড়ি চালকদের? মর্যাদার মানদণ্ড নির্ভর করে ক্যারিয়ার উপার্জন বা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ওপর। আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন দেয়া হয় ১৩তম গ্রেডে। যারা ঢাবির আইইআর হতে দেড় বছর মেয়াদি ডিপিএড সনদধারী। আর অষ্টম শ্রেণি পাসের গাড়িচালকদের নিয়োগ হয় ১২তম গ্রেডে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তফশিলি সব ব্যাংকে একজন ঝাড়ুদার বা পিয়নেরও সর্বনিম্ন ২৪ হাজার টাকা বেতন দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকিং কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কর্মচারীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ানোর জন্য তাদের মানসম্মত বেতন দেয়া আবশ্যক। তাহলে তো মর্যাদার মানদণ্ডে শিক্ষকের চেয়ে গাড়িচালক বা ঝাড়ুদারকেই বেশি সম্মান দিতে হবে। বাস্তবে এর ব্যতিক্রম খুব একটা হয় না। ‘শিক্ষক’ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মনের মধ্যে ভেসে ওঠে পুরানো ছাতা হাতে সংসার চালানোর দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন মানুষের ছবি। যদিও আমাদের দেশে বই পুস্তক বা রাজনৈতিক মঞ্চে বলা হয় শিক্ষকের মর্যাদা সবার চেয়ে বেশি। কিন্তু বাস্তবে ‘দুই টাকার শিক্ষক’ই বলা হয়ে থাকে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের মেধাবীরা শিক্ষকতায় আগ্রহী নয়; বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতায়। তার কারণ নিম্ন বেতন ও সামাজিক অবমূল্যায়ন। গবেষকরা বলেন যে, আর্থিক কারণে বাংলাদেশে মেধাবীরা অন্য পেশায় যতটা আগ্রহী শিক্ষকতায় ততটা নয়। প্রাথমিকে এমন কিছু শিক্ষক ছিলেন যারা ২/৩ বছরের মধ্যে শিক্ষকতা পেশা ত্যাগ করেছেন নিম্ন বেতন আর বিদ্যালয়ের পরিবেশের কারণে। বাংলাদেশে প্রাথমিকের একজন শিক্ষক শুরুতে বেতন ও ভাতা মিলে পান ১৭ হাজার টাকা যা বছরে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪ হাজার টাকা। অথচ বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার বা ২ লাখ ২২ হাজার টাকা । (কালের কণ্ঠ, ০৮.০২.২০২২)। ফিনল্যান্ড, দ. কোরিয়া, চীন, জাপানসহ বহু দেশে সবচেয়ে সম্মান আর মর্যাদার পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা।

আমেরিকার উচ্চ শিক্ষিতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আগ্রহী বেশি। এটা মানতে হবে যে, শুধু বেশি বেতন দিয়েই শিক্ষকের মর্যাদা বাড়ানো যায় না। আবার এটাও সর্বজনস্বীকৃত যে, শিক্ষকদের নিম্নমানের বেতন বা মর্যাদাহীন করেও শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। একটি দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই সরকারের উচিত শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতনস্কেল বা প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেয়া যাতে তারা সন্তুষ্টচিত্তে পাঠদান করতে সক্ষম হয়। যাতে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়ানো, ব্যবসা বা অন্য কোনো কাজ করতে না হয়। এতে মেধাবীরা স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হবে।

২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে, প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত হয় একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যা সরকার নির্ধারিত ও অপরিবর্তিত। সেখানে বলা আছে, প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো-শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মানসিক উন্নয়ন, বিজ্ঞানমনস্ক ও উন্নত জীবনদর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। কিন্তু আমাদের দেশের পরিবেশই এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা। অনুন্নত শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয়ের সময়সূচি (৯:০০-৪:৩০টা) শিশুদের মানসিক বিকাশে প্রধান অন্তরায়। শিশুদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার জন্য বিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট তেমন উপকরণ নেই। আবার উন্নত জীবনদর্শনে উদ্বুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। যেখানে শিক্ষকরাই উন্নত জীবন-যাপন করতে পারেন না সেখানে তারা কীভাবে শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখাবেন এটা কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।

এ লেখার শুরুতে উল্লেখ আছে যে, দেশের শিক্ষার্থীরা গোড়া থেকে মজবুত হয়ে গড়ে উঠছে না। এর পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যে অনুপাত তা মানসম্মত শিক্ষার জন্য উপযোগী নয়। সুস্থ মেধা বিকাশের উপযোগী পরিবেশ বা শ্রেণিকক্ষ অনেক বিদ্যালয়েই অনুপস্থিত। অনেক বিদ্যালয়ে বসার জন্য পর্যাপ্ত বেঞ্চ নেই, পর্যাপ্ত টয়লেট ও শিক্ষা উপকরণ নেই। অভিভাবকদের অসচেতনতা প্রাথমিক শিক্ষার অনুন্নয়নে কম দায়ী নয়। তারা সন্তানদের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করাতে গৌরবের মনে করে।

আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সমাজের ছিন্নমূল, দরিদ্রদের পাঠশালা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। ফলে প্রাথমিকের শিক্ষকদের মতো বিদ্যালয়গুলোও পড়ে থাকে অবহেলা-অনাদরে, অযত্নে। দেশে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৯৩টি আর শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। যাদের মধ্যে সব শিক্ষকই যে দক্ষতাসম্পন্ন তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। শিক্ষার মান ও শিক্ষকের দক্ষতা পরিপূরক। শিক্ষার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে শিক্ষকের সক্ষমতাও সন্তোষজনক নয়। এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো প্রতিবছর ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে । তাতে উল্লেখ আছে, ‘প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রশিক্ষিত শিক্ষক রয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ।’ অথচ ভুটান, জর্ডান, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে প্রাথমিক শিক্ষকদের শতভাগই প্রশিক্ষিত।

আমাদের দেশে যদিও দেড় বছর মেয়াদি ডিপিএড প্রশিক্ষণ ও ইউআরসিতে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু সে প্রশিক্ষণের বাস্তবতা নিয়েও অনেকের দ্বিমত রয়েছে। আবার সে প্রশিক্ষণের সুফল শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে কি না তার তদারিকও পর্যাপ্ত নয়। আমাদের দেশে চিকিৎসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিতদের জন্য বিদেশে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের যে সুযোগ রয়েছে তা প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য নেই। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে পিটিআইগুলোতে ডিপিএড প্রশিক্ষণ করার পর শিক্ষকদের বেতন কমে যায়, এতে অনেক শিক্ষকই প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

তারা ট্রেনিং গ্রহণ করেন ঠিকই কিন্তু প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জন করতে ব্যর্থ হন। শিক্ষক প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে রাজশাহী পিটিআইর একজন ইন্সট্রাক্টরের একটি মন্তব্য প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, জাইকার (জাপান উন্নয়ন সংস্থা) একজন কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, প্রশিক্ষক হওয়ার আগে আমি কত বছর প্রাথমিকে শিক্ষকতা করেছি? আমি বললাম যে, কোনোদিনই শিক্ষক ছিলাম না। এতে তিনি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন যে, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছাড়াই বাংলাদেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হওয়া যায়? অর্থাৎ আমাদের দেশে উপযুক্ত প্রশিক্ষক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সরকার খুব একটা আন্তরিক নয়।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন না দেয়ার পেছনে অনেকেই আরও একটি কারণ দাঁড় করান তা হলো প্রাথমিকে উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নেই। এই ধারণাটা খুব একটা সত্য নয়। যদি সত্য বলে মেনেও নিই তার দায় অধিদপ্তরেরই। তারা প্রাথমিকে মাত্র ৮০ মার্কের প্রিলিমিনারির পরিবর্তে পিএসসির আদলে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারতেন। কারণ বর্তমানে দেশে উচ্চশিক্ষিত নারী-পুরুষের অভাব নেই ।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের বাধ্যতামূলকভাবে ঢাবির আইইআর থেকে ডিপিএড সনদ অর্জন করতে হয়। সুতরাং যোগ্য শিক্ষক প্রাথমিকে নেই এটা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। যদি অদক্ষ কিছু শিক্ষক নিয়োগ পেয়েও থাকেন তাদের দক্ষ করে তোলার দায়িত্ব অধিদপ্তরেরই। তাই এসব খোঁড়া যুক্তিতে আমাদের শিক্ষকদের উচ্চ মর্যাদা হতে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই।

দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অতি অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়ে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪:৩০ পর্যন্ত পাঠদান পরিচালিত হয়। এতে শিক্ষকদের চেয়ে শিক্ষার্থীরাই বেশি একঘেয়েমিতে পড়ে। খেলাধুলার কোনো সময়ই শিক্ষার্থীরা পায় না। যা শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশে অন্তরায়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ছাত্র-শিক্ষক আদর্শ অনুপাত ১:২০ হতে হবে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যমতে, আমাদের দেশে এই অনুপাত ১:৩৭। উপচে পড়া শিক্ষার্থী নিয়ে দীর্ঘ সময় পাঠদানের সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিকের শিক্ষকদের মোট ১৩ ধরনের কাজেও ব্যস্ত রাখা হয়।

এগুলো হচ্ছে, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোটগ্রহণ, ০-১৪ বছর বয়সি শিশুদের জরিপ, কৃষিশুমারি, আদমশুমারি, খোলাবাজারে চাল বিক্রি তদারকি, সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির থাকা, কাঁচা-পাকা ল্যাট্রিনের হিসাব করা, কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানো, ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে হোমভিজিট করাসহ অধিদপ্তরের বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হিমশিম খেতে হয়। প্রাথমিকে অফিস সহকারী না থাকায় প্রধান শিক্ষকদের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। এতে প্রাথমিকে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপরদিকে ব্যাহত হয় সরকারনির্ধারিত প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আর এর দায় চাপানো হয় চাপে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ওপর।

অনেকে বলে থাকেন আর্থিক মর্যাদা না থাকলেও শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা সবার উপরে। আসলে এটা শিক্ষকদের ঠকানোর একটি কৌশল। শিক্ষকদের সম্পর্কে আমাদের নাটক বা সিনেমার সংলাপগুলোতে শোনা যায়- ‘দুই টাকার মাস্টার হয়ে বড় বড় কথা!’ অর্থাৎ শিক্ষকদের নিয়ে সমাজে বিভিন্নভাবে মশকরা, উপহাস করা হয় যেন এরা অন্য গ্রহের প্রাণী। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ওপর। কিছু কর্মকর্তা বলে থাকেন যে, জেনেশুনেই তো শিক্ষক হয়েছেন তাহলে প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা আশা করেন কেন? নার্স, ইউপি সচিবরাও তাদের বেতনের পরিমাণ জেনে শুনেই তাদের পেশায় এসেছিলেন এবং সরকারের কাছে চাহিবামাত্রই তাদেরকে ৩য় থেকে ২য় শ্রেণির মর্যাদা দিতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন, মর্যাদা বাড়ানোর কথা বললেই সরকারের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টান পড়তে দেখা যায়।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের নিম্নমানের কর্মচারী বানিয়ে রেখে তাদের কাছ থেকে উচ্চগুণসম্পন্ন শিক্ষা আশা করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি মাঝে মধ্যে কিছু শিক্ষকের চরিত্র, আন্তরিকতা সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক খবর শোনা যায় সেটাও কোনোভাবে কাম্য নয়। এমন অনেক বিদ্যালয় আছে যেখানে কিছু শিক্ষক পাঠদানে উদাসীনতা প্রদর্শন করেন। প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান পুরোপুরি বাস্তবায়নে কিছু শিক্ষকের মধ্যে গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়। আবার আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত পাঠদানে ব্যর্থ হন। এক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের নৈতিকতার মান উন্নয়ন করতে হবে। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে হবে, তবে তারা শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনদর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগামী দেশগুলোর মত আমাদের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

লেখক: শিক্ষক

এ বিভাগের আরো খবর