১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। দুপুর দেড়টা। গোসলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী। হঠাৎ বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকে পড়ল কয়েকজন যুবক। প্রত্যেকের মুখে রুমাল বাঁধা। ঘরে ঢুকেই মোফাজ্জল হায়দারকে বলল, ‘আমাদের কমান্ডার গাড়িতে বসে আছেন। উনি স্যারের সঙ্গে একটু কথা বলবেন।’
হঠাৎ এক যুবকের মুখ থেকে রুমাল খুলে পড়তেই মোফাজ্জল হায়দায় বললেন, ‘মুঈনুদ্দীন, তুমি?’
সঙ্গে সঙ্গে মুখে রুমাল বাঁধতে বাঁধতে মুঈনুদ্দীন বলল, ‘জি, আপনি আমার সঙ্গে যাবেন। কোনো ভয় নেই।’
তারপর সেই যে তাকে নিয়ে গেল, আর ফিরলেন না তিনি। তার লাশেরও খোঁজ মিলল না।
এই মুঈনুদ্দীন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র ও ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে ১৯৬৯ সালে মুঈনুদ্দীনকে কিছুদিনের জন্য ছাত্র হিসেবে পেয়েছিলেন মোফাজ্জল হায়দার।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের সন্ধে। কন্যা শমী কায়সারকে কোলে নিয়ে রেডিওর নব ঘোরাচ্ছিলেন শহীদুল্লা কায়সার। হঠাৎ শহীদুল্লা কায়সারের ছোটভাই এসে বললেন, ‘বড়দা, বাইরের গেটে কয়েকজন লোক গেটের তালা খোলার চেষ্টা করছে, ভেতরে আসতে চায়।’
শহীদুল্লা কায়সার বললেন, ‘আসতে দাও। নিশ্চয়ই মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা।’
আর দরজা খুলে দিতেই মুখে কালো কাপড় পরা তিন চারজন যুবক ঢুকে পড়ল ঘরে। লোডশেডিঙের জন্য তখন মোমবাতি জ্বলছিল ঘরে। ঘরে ঢুকেই একজন শহীদুল্লা কায়সারের কাছেই তার নাম জানতে চাইল। আর নাম জানার পরেই তার হাত ধরে টানাটানি করতে লাগল সবাই। আর চেঁচাতে লাগল, ‘চলুন আমাদের সঙ্গে!’
তারপর তাকে টান দিয়ে বারান্দায় নিয়ে গেল। পেছন থেকে তার হাত ধরে সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী পান্না কায়সারও বারান্দায় এলেন। পান্না কায়সার বাতির সুইচগুলো অন করতেই আলোকিত হয়ে উঠল চারপাশ। তখনই হঠাৎ দৌড়ে এলেন শহীদুল্লা কায়সারের সন্তানসম্ভবা বোন সাহানা। ভাইকে টেনে ধরে রেখেছিলেন তিনি। ওই যুবকদের সঙ্গে তিনি ভাইকে যেতে দেবেন না। রুমালে মুখ ঢাকা যুবকদের সঙ্গে শুরু হয়ে গেল ধস্তাধস্তি। আর একপর্যায়ে একজনের মুখ থেকে কালো কাপড়ের রুমাল খুলে গিয়েছিল। পরে ছবি দেখে তাকে শনাক্তও করেছিলেন পান্না কায়সার ও সাহানা। শনাক্ত হওয়া সেই ঘাতক ছিল এবিএম খালেক মজুমদার।
এভাবেই একে একে বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ঘাতকদল। যাদের নিয়ে গিয়েছিল, তারা কেউ আর ফিরে আসেননি। অনেকেরই লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত যাদের নাম পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডা. আলীম চৌধুরীর হত্যাকারী মাওলানা আবদুল মান্নান, কবি মেহেরুন্নেসার হত্যাকারী আবদুল কাদের মোল্লা, শহীদুল্লা কায়সারের হত্যাকারী এবিএম খালেক মজুমদার।
চট্টগ্রামে প্রধান হত্যাকারী ছিল ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার দুই ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গিয়াস কাদের চৌধুরী। প্রধান ঘাতক বদর বাহিনির চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ছিল অপারেশন ইন চার্জ আর প্রধান জল্লাদ ছিল আশরাফুজ্জামান খান। ১৬ ডিসেম্বরের পর আশরাফুজ্জামান খানের নাখালপাড়ার বাড়ি থেকে তার একটি ব্যক্তিগত ডায়রি উদ্ধার করা হয়। সে ডায়রির দুটো পৃষ্ঠায় প্রায় ২০ বুদ্ধিজীবীর নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোয়ার্টার নাম্বার লেখা ছিল।
এছাড়া স্বাধীনতার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত বঙ্গভবন থেকে রাও ফরমান আলীর হাতে লেখা একটি ডায়রি পাওয়া যায়, যেখানে অনেক নিহত বুদ্ধিজীবীর নাম পাওয়া যায়। বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ফরমান আলীর নামটাই আসে সবার আগে। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যা যে কেবল ১৪ ডিসেম্বর বা ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে শুরু হয়েছে তা নয়। ২৫ মার্চ রাত থেকেই মূলত বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের প্রশিক্ষিত আধা-সামরিক বাহিনী আল-বদর ও আল-শামস একটি তালিকা তৈরি করেছিল। সে তালিকায় ছিল স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবীদের নাম।
কেন এই বুদ্ধিজীবী হত্যা? এটা কি শুধুই পরাজয়ের প্রতিশোধ?
যদিও অনেকেই এটাকে পাকিস্তানিদের পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে দেখে থাকেন। যদি পরাজয়ের প্রতিশোধই হতো, তাহলে ২৫ মার্চ রাতেই কেন অনেক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হলো? তখন তো ছিল কেবলই পাকিস্তানিদের এক তরফা গণহত্যা। তখনও তো যুদ্ধই শুরু হয়নি। আসলে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের প্রতিশোধের কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাই মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যটা কী এবং উদ্দেশ্যটা কাদের?
বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কয়েকজনের পরিচয় জানা যাক। এই পরিচয় থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, বুদ্ধিজীবী হত্যায় কারা জড়িত এবং কেন?
১৯৭১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় মতিউর রহমান নিজামীর একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়। বক্তব্যটি ছিল, ‘যারা ইসলামকে ভালোবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্তানকে ভালোবাসে। এবারের উদ্ঘাটিত এ সত্যটি যাতে আমাদের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা ভুলে যেতে না পারে সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
এই বক্তব্যে বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত কি পাওয়া যায়?
২৩ নভেম্বর ১৯৭১ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। যাতে কিলিং মিশন সাকসেসফুল করতে পারে পাকিস্তানিদের দোসররা। বেশ কজন বুদ্ধিজীবীকে চিঠিও দেয়া হয়। আর সে চিঠিতে বুদ্ধিজীবীদের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক সিরাজউদ্দিন হোসেনও এমন একটি চিঠি পেয়েছিলেন। ১০ ডিসেম্বর রাত ৩ টায় বাসায় ঢুকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে তাকে ধরে নিয়ে যায়। স্বজনরা তার লাশটাও খুঁজে পাননি।
বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান জল্লাদ আশরাফুজ্জামান ছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। যে গাড়িতে করে ঘাতকেরা বুদ্ধিজীবীদের রায়ের বাজার, শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমিতে নিয়ে যেত, তার চালক মফিজুদ্দিন ধরা পড়ার পর তার জবানবন্দি থেকে এ তথ্য জানা যায়। সে জবানবন্দি থেকে আরও জানা যায়- মুনীর চৌধুরী, ড. আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, রশিদুল হাসান, ড. ফয়জুল মহী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডাক্তার গোলাম মুর্তজাকে নিজে গুলি করে হত্যা করেছিল আশরাফুজ্জামান।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী আরেক কুখ্যাত এবিএম খালেক মজুমদার। মুক্তিযুদ্ধের সময় খালেক মজুমদার ছিল জামায়াতে ইসলামী ঢাকা শহর শাখার দপ্তর সম্পাদক। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর পালিয়ে গিয়েছিল খালেক মজুমদার। তবে ২৩ ডিসেম্বর রামপুরার টেলিভিশন কেন্দ্রের কাছাকাছি একটি গোপন আস্তানা থেকে তাকে আটক করে ছোট কাটারার গেরিলা বাহিনী।
সেসময় জহির রায়হান বেঁচে ছিলেন এবং তার উদ্যোগে ও নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত কমিটি কাজ করছিল। সে কারণে খালেক মজুমদারকে শহীদুল্লা কায়সারের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে শনাক্ত করেন পান্না কায়সার ও সাহানা।
বিচারে শহীদুল্লা কায়সারকে অপহরণের জন্য ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয় খালেক মজুমদারকে। তারপর ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল হাইকোর্টের এক রায়ে শহীদুল্লা কায়সারের অপহরণ মামলার অভিযোগ থেকে তাকে বেকসুর খালাস দিয়ে মুক্ত করে দেয়া হয়।
‘শেকল পরার দিনগুলো’ নামে একটি বই লিখেছিল এই ঘাতক। ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই এই ঘাতকের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদের শোকবাণীতে বলা হয়, ‘মরহুম জনাব এবিএম আবদুল খালেক মজুমদার আল্লাহর দ্বীনের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। এ দেশে ইসলামী সমাজ কায়েম করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গিয়েছেন। ...’
২০০৩ সাল থেকে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেয়া জোরেসোরেই শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট। ২০০৩ সালের বুদ্ধিজীবী দিবসের স্মরণসভায় বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার প্রসঙ্গে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেছিল, ‘এত বছর আগের ঘটনা সেসময় বিচার করা হয়নি কেন? আপনারা জানেন বিচারে দেরি হলে সেটা ন্যায়বিচার হয় না। তাই এত বছর ধরে যেহেতু এই বিচার হয়নি আর এখন এর ন্যায়বিচার সম্ভব নয়, তাই জামায়াতও এই দায়ভার থেকে মুক্ত। আর বুদ্ধিজীবী হত্যায় তাদের কোনো দায়ও নেই। কারণ হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ নিজেই।’ (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক)
ওদিকে ২০১৯ সালের বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্য ছিল, ‘যারা পাকিস্তানের বেতন খাইল, তারা হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা, আর যারা পালিয়ে না খেয়ে বেড়াল, তারা হয়ে গেল রাজাকার। এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করা দরকার। কারণ এগুলো এখন ডাবল স্ট্যান্টার্ড হয়ে গেছে।
একাত্তরে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা পাকিস্তানের বেতন-ভাতা খেয়েছে তারা নির্বোধের মতো মারা গেল। আর আমাদের মতো নির্বোধেরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ফুল দিই। আবার না গেলে পাপ হয়। তারা যদি এত বুদ্ধিমান হয়, তাহলে ১৪ তারিখ নিজের ঘরে থাকেন কীভাবে?’
বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের কথা ও আচরণে কিন্তু কোনো পার্থক্য নেই। ক্ষমতায় থাকার সময় বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করায় ছিল না সম্মান বা মর্যাদা। সবটাই ছিল লোকদেখানো।
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করাই হয়েছে দেশকে পঙ্গু বানানোর জন্য। কারণ একটি দেশের প্রধান চালিকাশক্তি এই বুদ্ধিজীবীরা। তারা না থাকলে দেশ কখনও সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না। এবং তার ফলে কী হবে? একটা দেশ পিছিয়ে যাবে। এই গোষ্ঠী কখনোই চায় না বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, বুদ্ধিজীবী হত্যার পুরো ফায়দা কিন্তু এই পাকিস্তানপ্রেমী গোষ্ঠী আদায় করে নিয়েছে।
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে পঙ্গু বানিয়ে পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসররা এমন একটা ময়দান তৈরি করে রেখেছিল, যাতে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হলেও আবার তারা মাথা তুলতে পারে। দেশের শাসনক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে। যেমন ইচ্ছে তেমন করে শাসন করতে পারে। কিন্তু তাদের সামনে প্রধান বাধা হিসেবে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তাদের সে স্বপ্ন কখনোই পূরণ হওয়ার ছিল না। তাই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বুদ্ধিজীবী হত্যার ফায়দা হাসিল করে নিয়েছিল। প্রমাণ?
বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম এক ঘাতক এবিএম আবদুল খালেক মজুমদারের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর বিচারে শাস্তি ভোগ করছিল। সে মুক্তি পেল ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী মাওলানা মান্নান ধর্মমন্ত্রী হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। মুক্তিযুদ্ধের পর চট্টগ্রামের অন্যতম বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত ঘাতক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পালিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিকভাবে বেশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে সালাউদ্দিন কাদের। ১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদের সদস্য হয়।
এরপর জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে বিভিন্নসময়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে ষষ্ঠবারের মতো সংসদ সদস্য হয় এবং বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টাও হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী অপশক্তিগুলো কখনও এ দেশের ভালো চায়নি। যদিও বঙ্গবন্ধু এদের অনেককেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। অতীতের সব হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে বঙ্গবন্ধু সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে তার উদারতার প্রতিদান দিতে হলো প্রাণের বিনিময়ে। এই গোষ্ঠী যে কতখানি নিমকহারাম তার আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ দেয়া যাক।
আইয়ুব খানের শাসনামলে তথ্য সচিব ছিলেন আলতাফ গওহর। এক সাক্ষাৎকারে আলতাফ গওহর জানান, ফরমান আলীর তালিকায় তার (আলতাফ গওহর) বন্ধু কবি সানাউল হকের নাম ছিল। আলতাফ গওহরের অনুরোধে রাও ফরমান আলী তার ডায়েরির তালিকা থেকে সানাউল হকের নাম কেটে দেয়। শুধু তাই নয়, আল বদরদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থাও করেছিল সানাউল হক।
অথচ মুক্তিযুদ্ধের পর অনেকের তুমুল আপত্তি উপেক্ষা করেও এই সানাউল হককে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামে সানাউল হকের অতিথি ছিলেন। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে, বঙ্গবন্ধুকন্যাদের বাড়ি থেকে জোর করে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিল সানাউল হক। এমনকি তার গাড়ি দিয়ে সামান্যতম সহযোগিতা পর্যন্ত করেনি।
আসলে যতই দুধকলা আর আদর দেয়া হোক, সাপের ছোবল থেকে মুক্তি নেই। আজও বিষাক্ত ছোবল মারার মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে এই গোষ্ঠী, থাকবে আজীবন। আর দেশকে পিছনের দিকে টেনে নেয়ার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাবে। কাজেই এই বিষাক্ত সর্পগোষ্ঠী থেকে সাবধান না হলে কারুরই নিস্তার নেই।
সহায়ক: https://www.bbc.com/bengali/news-40926853?fbclid=IwAR1p9gyfhqElG9fbL4UkdCctGluqwUnK3aS-KWlWBJyF9YMyybrOf4GejO8
লেখক: শিশুসাহিত্যিক, প্রবন্ধ লেখক