বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বুদ্ধিজীবী হত্যা থামেনি

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৩:১৪

১৯৭১ সালে সরাসরি যারা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিল, গণহত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যায় অংশ নিয়েছিল কিংবা সমর্থন জানিয়েছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কোনো অবস্থাতেই অংশ নিতে চায়নি, বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত ও গঠিত হোক এটি যারা মনেপ্রাণে চায়নি, বুঝতেও অক্ষম ছিল, তাদের অজ্ঞানতা পাকিস্তানের প্রতি অন্ধত্ব। সেজন্যই তারা পাকিস্তানকে এমন নির্বোধ আজ্ঞাবাহী, তল্পিবাহী হিসেবে সমর্থন দিয়েছিল। তারাই আবার বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে স্বরূপে আবির্ভূত হতে থাকে।

১৯৭১ সালে ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী শক্তি আল বদর, আল শামস-রাজাকার এবং অন্যান্য বাহিনী বাংলাদেশে যে গণহত্যা সংঘঘত করেছিল তাতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের বেছে হত্যা করা ছিল অন্যতম। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপর্যায়ের শিক্ষক, বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কবি, লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবক এবং রাজনীতি-সচেতন অগ্রসর মানুষ- যারা পাকিস্তানকালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার ভাষা সংস্কৃতি, রাজনীতি, গণঅধিকার ইত্যাদিকে সমর্থন করেছিলেন বা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তাদেরকে বেছে বেছে হত্যা করা হয়। ২৫ মার্চের অন্ধকার রাতে অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষকদের বেশ কজনের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাসদস্যরা আক্রমণ করে। সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত কয়েকজন অধ্যাপককে হত্যা করা হয়।

উল্লেখযোগ্য অধ্যাপকরা হলেন- অধ্যাপক ফজলুর রহমান, অধ্যাপক আবদুল মুক্তাদির, অধ্যাপক আ র খান খাদিম, অধ্যাপক শরাফত আলী, অধ্যাপক জি সি দেব, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, হাউস টিউটর অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য । এছাড়া আরও অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও পরবর্তী সময়ে তাদেরকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। ততদিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সঙ্ঘের নেতাকর্মীরা আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে একাত্ম হয়ে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল। তারাই বুদ্ধিজীবীদের নাম, পরিচয়, বাসস্থানের ঠিকানা এবং যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তাদের ক্যাম্পে এসব বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিত।

১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট গীতিকার ও সুরকার আলতাফ মাহমুদকে তার বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বাসভবনে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, তাদের অস্ত্রশস্ত্র গোপন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ক্যাম্পে অমানুষিক অত্যাচার চালানো হয়। কিন্তু তার মুখ থেকে কারো নাম পাকিস্তানিরা আদায় করতে পারেনি। অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পরিকল্পিত উপায়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসররা যখন বুঝতে পেরেছিল যে, পাকিস্তানকে রক্ষা করার কোনো চেষ্টাই সফল হবে না, মুক্তিবাহিনী ও যৌথ বাহিনী যখন ঢাকা অভিমুখে পাকিস্তানিদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে আসছিল তখনি তারা ঢাকার অভ্যন্তরে থাকা বুদ্ধিজীবীদের একে একে ঘর থেকে ধরে নিয়ে যায়।

১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, লেখক, বুদ্ধিজীবীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন ইত্তেফাকের সিরাজউদ্দিন হোসেন, দৈনিক পূর্বদেশের গোলাম মোস্তফা, সাপ্তাহিক শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীন, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী , ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আ ফ ম আলিম চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার প্রমুখ। এদের সবাইকে বিভিন্ন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে অত্যাচার করার পর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে মৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। ঢাকার বাইরেও অসংখ্য নামিদামি বুদ্ধিজীবী ও সমাজসেবককে আগেই হত্যা করা হয়।

ভারত উপমহাদেশের অন্যতম আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় লিঃ-এর প্রতিষ্ঠাতা নূতনচন্দ্র সিংহ, সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা যোগেশ্চন্দ্র ঘোষ, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, সমাজসেবক এবং দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা (আরপি সাহা), কবি মেহেরুন্নেসা, গণিতজ্ঞ ড. আবুল কালাম আজাদ, আইনজীবী নজমুল হক সরকারসহ প্রায় ১১ শতাধিক খ্যাতনামা ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়- যারা প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজকর্মে স্বনামধন্য ছিলেন। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পরেও কিছু জায়গায় পাকিস্তানি দোসরদের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সেখানেও গণহত্যা চলতে থাকে।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন থেকে ফিরে এসে যখন জানতে পারেন তার বড়ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে ধরে নেয়া হয়েছে তখন তিনি তার সন্ধান করতে থাকেন। একটি টেলিফোন কল পেয়ে তিনি মিরপুর বিহারী-অধ্যুষিত এলাকায় ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ বড় ভাইয়ের খোঁজ নিতে যান। ধারণা করা হচ্ছে পরিকল্পিত উপায়ে তাকে লুকিয়ে থাকা ঘাতকরা হত্যা করে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার এই ধারা স্বাধীনতার পরও স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারা সংঘটিত হতে থাকে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ’৭১-এর ঘাতকদের সহযোগীরা পালিয়ে যায়, অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যায়। আবার অনেকে দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী রাজনৈতিক দলে আশ্রয়গ্রহণ করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের অভ্যন্তরে উগ্রধারার একাধিক তথাকথিত বিপ্লবী সংগঠন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হত্যাকাণ্ড, ব্যাংকলুট, পাটের গুদামে আগুন দেয়া, পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ, লুঠপাট ইত্যাদিতে অংশ নিয়েছিল। এদের মধ্যে অনেকেই নাম পরিচয় গোপন করে বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক বিশিষ্ট কবি হুমায়ুন কবির ১৯৭২-এর ৬ জুন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির অন্তর্কোন্দলের শিকার হয়ে নিহত হন।

১৯৭২-৭৫ সালের মধ্যে ৮ সংসদ সদস্য উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এরপর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নেয়াই ছিল এই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য। হত্যাকারীরা সামরিক বাহিনীর পদচ্যুত বা কর্মরত নিম্ন কর্মচারী হলেও ভাবাদর্শে তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করতে পারেনি। এদের হাতেই শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও ওই রাতে নিহত হন।

৩ নভেম্বর জেলের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পেছনেও ছিল একই অপশক্তির ধারক-বাহকরা- যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নেয়ার পথ কন্টকমুক্ত করতেই জেলের অভ্যন্তরে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল। হত্যাকাণ্ডের এই রাজনীতি পাকিস্তানের গণহত্যারই নতুন রূপে আবির্ভূত হয়। যদিও হত্যাকারীরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি ঘাতকদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়নি কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকেই পাকিস্তানি ভাবাদর্শের নির্যাস থেকে নিজেদেরকে মুক্ত না করে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কঠিন পথচলার দুঃসময়ে হাল না ধরে বরং পাকিস্তানি এবং তাদের সহযোগীদের অনুসৃত পথেই বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব, মেধাবী, জ্ঞানীগুণী মানুষদের একে একে হত্যা করতে থাকে।

এটি কোনো অবস্থাতেই ১৯৭১-এর গণহত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল চিন্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ পাকিস্তানিদের গণহত্যা এবং তাদের দোসরদের নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল লক্ষ্যই ছিল পাকিস্তান থেকে বের হয়ে আসা বাংলাদেশ রাষ্ট্র যাতে অকার্যকর হয়ে পড়ে। সেজন্য এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব, মেধাবী অংশকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এই কাজটি ১৯৭১-এর পর থেকে ভিন্ন নামে, ভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পরিচয়ে যারা সংঘটিত করেছিল তারা মূলতই বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের বুদ্ধিজীবী নিধনের ধারাবাহিকতাই স্বাধীন বাংলাদেশে অনুসরণ করে আসছে।

হয়তো অনেকে এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার পেছনে তাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস, উচ্চাভিলাষ এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিফলন ঘটানোর ইচ্ছা থেকেই সংঘটিত করে বা অংশ নেয়। কিন্তু যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ একটি স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদাশীল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিয়মতান্ত্রিক ধারার আন্দোলন, রাজনীতি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চার বাইরে গিয়ে তেমন কিছু অর্জন করা যেকোনো বাঙালি সচেতন বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের করার কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়। কিন্তু এই গভীর বোধটির ভয়ানক অনুপস্থিতি আমরা লক্ষ করেছি ১৯৭২ থেকে পরবর্তী রাজনৈতিক নানা উত্থান-পতনের ৫ দশক ধরে।

এর ফলে ১৯৭১ সালে সরাসরি যারা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিল, গণহত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যায় অংশ নিয়েছিল কিংবা সমর্থন জানিয়েছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কোনো অবস্থাতেই অংশ নিতে চায়নি, বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত ও গঠিত হোক এটি যারা মনেপ্রাণে চায়নি, বুঝতেও অক্ষম ছিল, তাদের অজ্ঞানতা পাকিস্তানের প্রতি অন্ধত্ব। সেজন্যই তারা পাকিস্তানকে এমন নির্বোধ আজ্ঞাবাহী, তল্পিবাহী হিসেবে সমর্থন দিয়েছিল। তারাই আবার বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে স্বরূপে আবির্ভূত হতে থাকে। এরাই পাকিস্তানি ভাবাদর্শের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে একটি ধর্মভিত্তিক উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য এর শিক্ষা-অর্থনীতি, রাজনীতি-সমাজ ও প্রশাসনসহ সবক্ষেত্রে তাদের অনুসারী সৃষ্টির জন্য ৭০-এর দশকের শেষ থেকে ধীরে ধীরে শক্তিবৃদ্ধি করতে থাকে। এরা বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের বিস্তার ঘটাতে থাকে।

এরা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যারা শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি-শিক্ষা, অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণার প্রসারে ভূমিকা রেখে আসছিলেন তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং নানা ধরনের বিকৃত, বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি যুগে ফিরিয়ে নিতে অস্ত্র এবং জঙ্গি ক্যাডার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করেছে, মুক্তচিন্তার অধ্যাপক-শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক এবং তরুণ প্রজন্মের চিন্তাশীল লেখকদের ওপর ক্রমাগত আঘাত হেনে চলছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ইউনুস আলী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম লিলন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক একেএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে প্রকাশ্যে গলাকেটে হত্যা করেছে।

২০১৬ সাল পর্যন্ত চলতে থাকা হত্যাযজ্ঞে নিহত হন আটজন মুক্তমনা লেখক ও চিন্তাবিদ। এদের মধ্যে রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, ফয়সাল আরেফিন দীপন উল্লেখযোগ্য । অনেকেই এসব হত্যাকারীদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশের অভ্যন্তরে অনেক লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্রগঠনের পক্ষে লেখালেখি করতে নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তচিন্তার মানুষদের বিরুদ্ধে দেশ এবং বিদেশ থেকে ৭১-এর দোসরদের উত্তরাধিকাররা অনেকেই হত্যার হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। এটি ১৯৭১-এর বুদ্ধিজীবী হত্যারই ধারাবাহিকতা বলে ধরে নেয়া যায়।

লেখক: গবেষক-অধ্যাপক।

এ বিভাগের আরো খবর