বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে ভাবনা ও প্রত্যাশা

  • দীপংকর গৌতম   
  • ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৪:০২

সরকারি টাকার সুদ ৯ টাকা। আর এনজিওর ২৫ টাকা। তারপর কৃষক টমেটো বেচে ১ টাকা কেজি। আর বাজারে আমরা পাই ৬০/৭০ টাকা দামে। মাঝের টাকা খেয়ে যায় কালো ঘোড়ায়। কৃষকের টাকায় দেশ চলে সেই কৃষক ঋণ পায় না। যদি পায় ঠিকমতো সময় দিতে না পারলে তার কোমড়ে ২৫ হাজার টাকার জন্য দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। কিন্তু যে লোক রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা লোন নিয়ে পরিশোধ করে না, তার বেলায় কোনো কথা নেই।

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বা উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, মধ্য আয়ের দেশ কথাগুলো শুনলে বেশ আপ্লুত হই। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে মানে কী? প্রাণজুড়ানো শব্দাবলি। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে– এসব শব্দ শুনলে বুকের ভেতর দিয়ে বয়ে যায় দক্ষিণা বাতাস। যেন ঝাপটা মেরে যায়। আমাদের দেশ কত উন্নত হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ শহর, বরিশালের আগৈলঝাড়া বা মাদারীপুরের রাজৈর না নেমে কোটালীপাড়ার লোকজন কেথাও যেতে পারত না। তাতে সবখানেই ৭/৮ ঘণ্টা সময় লাগত। আামি যখন সরকারি বঙ্গবন্ধু কলজে পড়তাম আমার বড়সড় ছুটি না হলে বাড়ি যেতাম না। এত দূর আর বাহন একমাত্র নৌকা। সেই এলাকা এখন চেনা যায় না। বাস, গাড়ি চলছে। খুলনা-বরিশাল রোড ফোর লেনের সড়কে ৮ ঘণ্টা এখন ২০ মিনিট হয়ে গেছে। আমাদের এলাকায় গরিব লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।

বিজয়ের ৫০ বছরে আমাদের অর্জন তাহলে কম নয়। উন্নয়নের পেছনেও কিছু কথা থাকে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর দশটা দেশের মতো নয়। বাঙালির স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষা অনেক পুরোনো। টংক, তেভাগা, নানকার, ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ কোনো কিছুই স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে আলাদা ছিল না।

মানুষ একের পর এক যত সংগ্রাম করে যাচ্ছিল ততই একটা ধারণায় এসে উপনীত হচ্ছিল যে, কোনো সংগ্রাম বৃথা যায় না। সংগ্রামের এই ধারাবাহিকতায় ৫২, ৬২, ৬৯-এর পথ পেরিয়ে একদিন আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। অজস্র মানুষের আত্মত্যাগ, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাঙালি উপনীত হয় জীবনের চূড়ান্ত সংগ্রামে।

এই সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের পেছনে ছিল বহুবিধ ঘটনা, বিরূপ পরিস্থিতি, অসম আর্থিক বণ্টন ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বের বঞ্চনাসহ গুরুতর বিষয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমাবনতির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাঙালিদের উপর অপারেশন চালানোর মধ্য দিয়ে তারা প্রতিবাদমুখর বাঙালিকে চিরতরে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামক ওই পরিকল্পনা দিয়ে নারকীয় গণহত্যা চালালেও স্তব্ধ করা যায়নি।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। দেশকে হানাদারমুক্ত করতে মরণপণ লড়াইয়ে অংশ নেয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিককর্মী, ছাত্র-শ্রমিক, কৃষক-পেশাজীবী নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ ও গণহত্যা মোকাবিলার জন্য গড়ে তোলে প্রতিরোধ। নয় মাস আতঙ্কিত প্রহর অতিক্রম করে আসে বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার বেশি দিন পার না হতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে এদেশে ঘাপটি মেরে থাকা পরাজিত শত্রুরা।

১৯৭১ সালে সংঘটিত একটি গণবিপ্লবকে ১৯৭৫ সালের একটি প্রতিবিপ্লব দিয়ে শেষ করে দেয়া হয়। হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষকে তার পরিবার-পরিজনসহ। রক্তাক্ত করা হয় সংবিধানকে। বিকৃত করা হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে। ঘাতকদের উম্মত্ত মঞ্চে পরিণত হয় দেশ। আর একাত্তরের যেসব মহানায়কেরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন তারা হয়ে যায় অপাঙক্তেয়।

মানবেতর জীবন যাপন করে বেঁচে থাকে সব বীর যোদ্ধা। বেহাত হওয়া বীরত্বগাথা ঢাকা পড়ে যায়। বিক্ষত করা হয় সংবিধানকে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হয়ে ওঠে দলীয় ক্যাডারদের আড্ডাখানা। মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যেসব বীরযোদ্ধা জীবনকে তুচ্ছ করে দেশমাতৃকাকে হায়েনার হাত থেকে রক্ষা করতে মরণপণ সংগ্রাম করেছিল তারা মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। বিশেষ দিবসে এদের ডাকা হলেও এ বীরদের প্রশ্নে রাষ্ট্র, সরকারের যে ধরনের ভূমিকা রাখার কথা ছিল তা কোনো সরকার করেনি।

তালিকার পর তালিকা হয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা লজ্জায় আনতচিত্তে তালিকায় নাম ওঠাতেও বিরূপ ছিলেন। বিনাযুদ্ধে যারা দেশের একমুঠো মাটিও ছাড়তে চায়নি। যারা ১০ খানা টিন দুই মণ গম বা একটা প্লটের জন্য যুদ্ধ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে মনে পড়ে সেই মুখগুলোর কথা?

যেসব গেরিলার যুদ্ধের বর্ণনা শরীরকে শিহরিত করে তারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই ভাবতে অবাক হতে হয়। যেসব আগুনমুখাদের যুদ্ধের বর্ণনা শুনলে গর্বে বুক ভরে ওঠ তারা তালিকায় নেই।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কিংবদন্তিতুল্য যোদ্ধা কমলেশ বেদজ্ঞের নাম মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নেই। যে লোকদের নাম আছে তা ভাবলে অবাক হতে হয়। কিন্তু বৃহত্তর ফরিদপুর-বরিশালের বড় যুদ্ধগুলোতে নেতৃত্বদানকারী কমলেশ বেদজ্ঞের নাম তালিকায় নেই। আমার স্কুলে যাওয়ার পথটার কথা মনে পড়ে। আমাদের বাড়ি থেকে কাঁচা একটা ছোট রাস্তা এসে থমকে দাঁড়িয়েছে খালপাড়ে। এটাকে আমরা বড় খাল বলতাম। এর পাশে একসময় একটা বটগাছ ছিল। আমাদের অনেক স্মৃতিবহ বটগাছটাকে ঘিরে অনেক ইতিহাস ছিল। বটগাছের ছায়ায় শীত-গ্রীষ্মে ছোট খাটো আড্ডা লেগেই থাকত। এই গাছের সঙ্গেই একটা পুল ছিল।

কখনও ভাঙা, কখনও আধভাঙা অবস্থায় থাকত এটি। এরপরই বাজারের শুরু। ডানপাশটাতে দোকানের ভিটি ছিল। দোকান ছিল না। পুরোনোর ইটের গাঁথুনির উপর ভিটি। মালিক ব্যবসায়ীরা ছিল। তারা ভারতে চলে গেছে। ওখান থেকে একটু এগোলেই আমাদের এলাকার মহাজন কাদের মিয়ার দোকান, পেছনে নারিকেল গাছ। সেখানে দাঁড়ালে যে বাড়িটা দেখা যায় ওখানে মোজাফফর ঘরামীর সুপারিবাগান ফলদবৃক্ষে ভরা বন-বনানী চোখে পড়ার মতো। ওই বাড়িটি ছিল কমলেশ বেদজ্ঞের।

তিনি কোটালীপাড়া হেমায়েত বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। সিকির বাজারের যুদ্ধে কয়েকবার কমলেশ বেদজ্ঞসহ মুক্তিসেনারা ওই বটগাছের তলায় আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ করেছে বলে শুনেছি। কমলেশ মুক্তিযুদ্ধ করেনি, বিষ্ণপদ কর্মকার করেনি, রামপ্রসাদ ভট্টাচার্য করেনি! কোটালীপাড়ার মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বাড়ির কোনো অবদান ছিল না! আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত ছিলো না! ঘটনাগুলো এখন এমনটাই দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় প্রখ্যাত সাংবাদিক নির্মল সেনের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতা চালু করলে এমনসব মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন সেটা কল্পনার বাইরে। এবারে নতুন তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিপিবদ্ধ করতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সেখানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকা বিতর্কিত হয়েছে। বিএনপির সময় মুক্তিযোদ্ধাদের যে সংখ্যা ছিল তা বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে কি সম্মান বাড়ল?

ভাতা পাওয়ার জন্য যারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখায় তারা কোন মাপের মানুষ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু লোভীদের দশ বছর পরে কী হবে সেটা ভাবনার ব্যাপার। এ চিত্র সারা দেশের। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাটা করা হোক। যেটা দলিল হয়ে থাকবে হাজার বছর ধরে।

দুই.

‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’ যাদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই প্রাপ্তি সেই রক্তকে কতটুকু সম্মান জানাচ্ছি বা জানিয়েছি, সেটাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে। দেশের অর্থনীতির মূল বুনিয়াদ যাদের হাতে তারা কৃষক। তারা কৃষি ব্যাংকে গেলে ২৫ হাজার টাকা ঋণ পায় না। এ ঋণ পেতে দালারকে ৩ হাজার দিতে হয়। গণমাধ্যমে সম্প্রতি এমন খবর প্রকাশ হয়েছে। আবার টাকা দিয়েও কেউ ঋণ পায় না। তারা দাদন নেয় এনজিওর কাছ থেকে। নেত্রকোনায় এই দাদনপ্রাবল্য বেশি। সরকারি টাকার সুদ ৯ টাকা।

আর এনজিওর ২৫ টাকা। তারপর কৃষক টমেটো বেচে ১ টাকা কেজি। আর বাজারে আমরা পাই ৬০/৭০ টাকা দামে। মাঝের টাকা খেয়ে যায় কালো ঘোড়ায়। কৃষকের টাকায় দেশ চলে সেই কৃষক ঋণ পায় না। যদি পায় ঠিকমতো সময় দিতে না পারলে তার কোমড়ে ২৫ হাজার টাকার জন্য দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। কিন্তু যে লোক রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা লোন নিয়ে পরিশোধ করে না, তার বেলায় কোনো কথা নেই।

যে কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ আর প্রবাসীদের র‌্যামিট্যান্সে অর্থনীতির বুনিয়াদ গড়া হয় সেই টাকা চলে যায় ঋণ খেলাপির হাতে। আর কৃষক থাকে না খেয়ে। দেশের ঋণখেলাপি আর অর্থপাচারের যে মচ্ছব চলছে- তা ভয়াবহ। সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচেভেলের প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে দেশের বাইরে পাচার হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা৷ এই অর্থ বাংলাদেশের দুটি বাজেটের সমান৷ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশগুলোর মধ্যে অর্থপাচার সবচেয়ে বেশি হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই৷

গত ২ মে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) অর্থপাচারের যে তথ্য প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯১১ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা৷ বলা হয়েছে, আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ভয়েস এবং ওভার ভয়েসের মাধ্যমেই প্রধাণত এই অর্থ পাচার করা হয়৷ এবারের প্রতিবেদনে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ লাখ ৬ হাজার ৮ শত ৬৮

কোটি টাকা। কিছু মানুষের অবিবেচক কার্যক্রম, দেশপ্রেমের অভাব, স্বার্থপরতা, দেশের সার্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সরকার এসব টাকা ফেরত এনে দেশের উন্নয়নকে আরও গতিশীল করা সম্ভব। তবে তার আগে খেলাপিঋণ আদায় জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, খেলাপি ঋণের সিংহভাগই অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। জনতা ব্যাংকের ১৩ হাজার ৮ শত ৩৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপিঋণের ১৪ শতাংশ, সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা যা মোট খেলাপিঋণের ১০ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ৭ হাজার ৮ শত ৭২ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপিঋণের ৮ শতাংশ, বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৬ শত ১৯ কোটি টাকা যা মোট খেলাপিঋণের ৭.৫০ শতাংশ এবং বেসরকারি এবি ব্যাংকের ৫ হাজার ৩ শত ৩৩ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপিঋণের ৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপিঋণের প্রায় ৪৪ শতাংশ।

বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ৩ হাজার ৬ শত ৯৯ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ ৫০ হাজার ১ শত ৫৫ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো- ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া। ব্যাংক খাতে মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক প্রভাব ও আধিপত্যের কারণে খেলাপিঋণ চিত্র স্ম্ফীত হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি এ অবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলেছে। কাউকে নতুন করে খেলাপি বলা যাচ্ছে না।

ঋণ আদায়ের জন্য কোনো জোড়ালো তাগাদা বা কঠিন আইনি ব্যবস্থাও নেয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে কোনোই সংশয় নেই যে, মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক দুষ্টচক্রের দাপট ও আধিপত্যের কারণে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি খেলাপিঋণের প্রসার ঘটায়। মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেয়ার পর তা খেলাপিতে পরিণত করার প্রবণতা শুরুতেই যদি ব্যাংকগুলো রোধ করতে পারত কিংবা এখনও পারে, তাহলে ঝুঁকি এড়ানোর পথ থাকত। এ জন্য জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পাচারকারী, ঋণ খেলাপিদের টাকা আদায় যেমন জরুরি তেমনি এদের আইনের আওতার আনা উচিত। তাদের দেশের সার্বিক উন্নয়ন আমাদের পাশের যেকোনো দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। বিজয়ের এই মাসে আমাদের অঙ্গীকার হোক অর্থ পাচারকারী, ঘুষখোর, মুনাফালোভী ও খেলাপিঋণ করে যারা দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা। মুক্তিযুদ্ধে মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল তার বাস্তবায়ন খুব জরুরি।

লেখক: গবেষক, প্রবন্ধকার ও সাংবাদিক।

এ বিভাগের আরো খবর