বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জামায়াত-হেফাজত নিষিদ্ধ কি কঠিন?

  • রণেশ মৈত্র   
  • ২৭ অক্টোবর, ২০২১ ১৩:৩২

গণ-আদালত ছিল নেহায়েত জনগণের আদালত এবং সাংবিধানিকভাবে গঠিত না হওয়ায় তখন সরকার ওই অভিযোগ আমলে নেয়নি। কিন্তু সবখানেই জনগণ বরাবর সোচ্চার গোলাম আযমের ফাঁসির দাবিতে আওয়াজ তোলে। যাহোক আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অবশেষে গঠিত হয়। মওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ বেশ কজন নেতৃস্থানীয় জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে আনা সরকারি অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিজামীসহ বেশ কজনের ফাঁসির আদেশ ও তা কার্যকর করা হয়। এখন কতগুলো যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতার ফাঁসির আদেশ উচ্চতর আদালতে বিচারাধীন আছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দিতে গিয়ে বিচারকরা বেশ কবার ‘জামায়াতে ইসলামী একটি সন্ত্রাসী দল’ বলে মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো সন্ত্রাসী দলের বৈধভাবে সমাজে কাজ করার অধিকার নেই। ইতোমধ্যে কয়েকটি সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আদালতে প্রমাণিত সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী আজও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়নি। দিব্যি দেশ-বিদেশের সহায়তা ও আনুকূল্যে প্রকাশ্যে সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে বিষয়টি শঙ্কা ও হতাশার।

এ ব্যাপারে অনেক লেখালেখি-আলোচনা হলেও বিগত প্রায় ৪ দশকেও দলটিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়নি। তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করতে না দেয়া ও গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ফাঁসির দাবি তুলেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সেই প্রায় ৩০ বছর আগে।

কোনো নেতা-নেত্রী তার আগে এমন দাবি সাহসের সঙ্গে উত্থাপন করে দেশব্যাপী কাজ করেননি। জাহানারা ইমাম এ দাবিতে দেশের বিশিষ্টজনদের নিয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো বৃহত্তম ময়দানে গণ-আদালত বসিয়ে গোলাম আযমের বিচারের আয়োজন করেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের তীব্র বিরোধিতার মুখেও লক্ষাধিক মানুষ ওই গণ-আদালত পর্যবেক্ষণে যোগ দেয়।

বিশাল মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন বিচারকরা। উপস্থিত থাকেন প্রখ্যাত আইনজীবীরা। একে একে সাক্ষীরা এসে সাক্ষ্য প্রদান করে। বিচারকরা সাক্ষ্য ও জেরার ভিত্তিতে এ মর্মে রায় দেয় যে, গোলাম আযম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধিতা করে, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ দালিলিক ও মৌখিক সাক্ষ্যে সন্দেহাতীতভাবে সত্য প্রমাণিত হওয়ায়; সর্বসম্মতিক্রমে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ফাঁসির রজ্জুতে ঝোলানো উচিত।

যেহেতু ওই গণ-আদালত ছিল নেহায়েত জনগণের আদালত এবং সাংবিধানিকভাবে গঠিত না হওয়ায় তখন সরকার ওই অভিযোগ আমলে নেয়নি। কিন্তু সবখানেই জনগণ বরাবর সোচ্চার গোলাম আযমের ফাঁসির দাবিতে আওয়াজ তোলে। যাহোক আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অবশেষে গঠিত হয়।

মওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ বেশ কজন নেতৃস্থানীয় জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে আনা সরকারি অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিজামীসহ বেশ কজনের ফাঁসির আদেশ ও তা কার্যকর করা হয়। এখন কতগুলো যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতার ফাঁসির আদেশ উচ্চতর আদালতে বিচারাধীন আছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি এই আপিলগুলোর শুনানি, রায় ও কার্যকর করা হবে বলে আশা করা যায়। তবে তা সন্দেহাতীত নয়। সন্দেহাতীত নয় কথাটি আসলে বেসুরো।

আমাদের সবারই মনে আছে, কবছর আগের শাহবাগের গণজাগরণের কথা। ঢাকার তরুণসমাজ রুখে দাঁড়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিলম্বের প্রতিবাদে। উল্লেখ্য, তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলেও নানা কারণে রায় প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছিল। প্রতিবাদী তরুণ-তরুণীরা, যারা দিনরাত শাহবাগ ময়দানে লক্ষাধিক সংখ্যায় জমায়েত হয়- সম্মিলিত কণ্ঠে যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত ফাঁসির আদেশ এবং তা কার্যকরের দাবি তোলে।

এখানেই এ আন্দোলনের শেষ নয়। যতদিন পর্যন্ত তাদের ওই বিপ্লবী দাবি মেনে নেয়া কার্যকর না হয়- ততদিন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই অবস্থান করে। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের আয়োজিত কর্মসূচি ছিল না। তবে ব্যক্তিগতভাবে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা ওই সমাবেশে উপস্থিত হয়ে তাদের সংহতি জানায়।

অপরদিকে হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয় বলে, তাদের নেতারা এসব কথা প্রচার করলেও; তারা শাহবাগের তরুণ সমাজের ওই অরাজনৈতিক সমাবেশকে বিতর্কিত করতে ধর্মের আশ্রয় নেয়। এতেও ওই তরুণ-তরুণীরা ভয় পেয়ে থেমে যায়নি বরং সবাই মিলে সন্ত্রাসীদের শাহবাগ এলাকা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।

পরে সংশ্লিষ্ট মহল তাদের ছাত্র সংগঠন, যারা স্বেচ্ছায় ওই সমাবেশে শরিক থেকে আন্দোলনটিকে বেগবান করে তুলতে সহায়তা করে, তারা নিজেদেরকে নীরবে ওই আন্দোলন থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এর পরেও বাকি যারা ছিল তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে অপেক্ষাকৃত কম শক্তি নিয়েই।

অতঃপর একজন বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির আদেশের রায় হলে তখন তারা সে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। বিজয় সূচিত হয় যুদ্ধাপরাধবিরোধী আন্দোলনের। তবে এখনও বেশকিছু ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত না হওয়ায় অনেকের মনে নানা আশঙ্কা বিরাজ করছে।

এই হলো জামায়াত-হেফাজতের অরাজনৈতিক (?) ভূমিকা- যা বাংলাদেশের মানুষকে আজও জীবনাশঙ্কায় ভোগাচ্ছে। হেফাজত ইদানীং অনেক এগিয়ে গেছে। সরকারের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করে পাঠ্যপুস্তক থেকে অসাম্প্রদায়িক লেখক-কবিদের লেখা তুলে নিয়ে সাম্প্রদায়িক লেখকদের লেখা অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদরকে সাম্প্রদায়িক হয়ে গড়ে ওঠার ব্যবস্থা পাকাপাকি করেছে। এতে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে দেশটি ঘোর সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে নির্মিত একটি স্থাপত্য, যা জাস্টিসিয়া নামে পরিচিত সেটিকে ভেঙে ফেলার দাবি তুললে সঙ্গে সঙ্গে তা অপসারণ করে সর্বোচ্চ আদালতটির পিছনের আঙিনায় স্থাপন করা হয়।

হেফাজতিদের দাবি অনুযায়ী মাদ্রাসাশিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরের ডিগ্রিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রির সমতুল্য বলে স্বীকৃতি দিয়ে উচ্চশিক্ষাকেও সাম্প্রদায়িকতার প্রভাবে নিয়ে যাওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারিভাবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সর্বোচ্চ আকারে গড়ার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা করলে হেফাজত ওই ভাস্কর্য ভেঙে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলে দেবে বলে হুঁশিয়ারি জানালে সরকার চুপিসারে কাউকে না জানিয়ে পরিকল্পনাটি বাতিল করে।

এই দুই অপশক্তি, জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের আরও অনেক ভয়ংকর কাজের সঙ্গে সবাই পরিচিত। এরপরও এরা বৈধ সংগঠন হিসেবে সক্রিয়ভাবে চালু থাকছে। এদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা কি তবে এতই কঠিন?

লেখক: রাজনীতিক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক

এ বিভাগের আরো খবর