বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্ব হার্ট দিবস আজ: হৃদয় দিয়ে হৃদয়ের যত্ন নিতে হবে

  • এমএ খালেক   
  • ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:৫৪

বিশ্বে প্রতিবছর হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণে প্রায় ১৮ মিলিয়ন জীবন অবসান ঘটে যার অধিকাংশই ব্যক্তির স্বাস্থ্যসচেতনতা দ্বারা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই হার্ট সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

বর্তমান বিশ্বে হৃদরোগ মৃত্যুর এক নম্বর কারণ। হৃদরোগ বলতে মূলত হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপজনিত হার্টের অসুখকে বোঝায়। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাতজ্বরজনিত ভাল্বের সমস্যাও হৃদরোগ এটি বড় সমস্যা। অবশ্য এটি অসংক্রামক ব্যাধি।

উচ্চরক্তচাপ জনিত হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক, ডায়াবেটিস হচ্ছে অসংক্রামক ব্যাধির অন্তর্ভুক্ত। ২০২৫-এর মধ্যে ২৫ ভাগ বৈশ্বিক অসংক্রামক ব্যাধি মৃত্যু হ্রাসের জন্য ২০১২ সালের ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন (World heart fedaration) বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধির নানাবিধ প্রোগ্রাম করার পাশাপাশি কার্যক্রম গ্রহণ করে যাচ্ছে এবং ফি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ পালনের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য হৃদরোগ-বিষয়ক বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন, সামাজিক মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তুলে ধরছে।

এবারের হার্ট দিবসের বুলি হচ্ছে ‘হৃদয় দিয়ে হৃদয়ের যত্ন নিন’। চিকিৎসাবিজ্ঞানে আমরা জানি ভ্রুণের ৫-৬ সপ্তাহে হার্টবিট বা হৃৎস্পন্দনের শুরু হয়ে যে জীবনের যাত্রা শুরু হয় তার পরিসমাপ্তি ঘটে হার্টবিটের স্তব্ধতা দিয়ে।

সে প্রাসঙ্গিকতায় এবারের বিশ্ব হার্ট দিবসে হৃদয় দিয়ে হৃদয়ের যত্ন নেয়াকে মূল্যায়িত করা হয়েছে। এতে করে যেন আমরা হৃদরোগ প্রতিরোধে আরও যত্নশীল ও সচেতন হয়ে হার্টের সক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারি।

কোভিড মহামারিতে মানব সভ্যতা এক নজিরবিহীন ক্রান্তিকাল পার করছে। করোনা দেখিয়ে দিচ্ছে, বিশ্ব ও জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর, দুর্বল ও অবহেলিত। সেসঙ্গে আমরা কত নজিরবিহীন অবহেলা করি নিজ স্বাস্থ্যের প্রতি আর কত অরক্ষিত সামাজিক স্বাস্থ্য।

হাজার বিলিয়ন বিনিয়োগে যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা শক্তিধর সেসব দেশও আজ ধরাশায়ী অদৃশ্য ঘাতক ব্যাধি করোনায়। আমরা এখনও দিশেহারার মতো। কোভিড হৃদরোগীদের মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত করেছে আশঙ্কাজনকভাবে। তাছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট-অ্যাটাক, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।

কোভিড মহামারির মধ্যেও অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হার্টের প্রতি যত্নশীল থাকা দরকার। হৃদরোগীরা, বিশেষভাবে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওর, উচ্চরক্তচাপ যাদের আছে তারা যেন নিয়মিত ওষুধ সেবন ও চিকিৎসকের পরামর্শ যত্নের সঙ্গে পালন করে এবং যথাসম্ভব ধূমপান ও মাদক এড়িয়ে চলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ ও সতর্ক থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কোভিড নিউমোনিয়া ও হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে কোভিড হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে টাইপ-২। যার জটিলতার টাইপ-১ (অ্যাথেরোস্কেরটিক) হার্ট অ্যাটাকের চেয়ে অনেক বেশি। তাই কোভিড-সংক্রান্ত জটিলতা প্রতিরোধে হার্টকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। আরও Beat ev Pace করতে হবে।

সবাইকে নিজের রক্তচাপ কোন অবস্থায় আছে জানা দরকার। রক্তে সুগার ও চর্বির মাত্রাও জানা প্রয়োজন। স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ না করলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে। এমনকি ওজনের মাপ জানাও জরুরি।

রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা হলো সিস্টোলিক চাপ ১১০-১৩০ মি.মি পারদ আর ডায়াস্টোলিক ৬০-৮০ মি.মি পারদ। উচ্চরক্তচাপে ব্রেইন স্টোক, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওর, কিডনি ফেলিওর, চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিত হাঁটা, পুষ্টিকর খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে।

গরু ও খাসির মাংস, ঘি, মাখন, ডালডা, অতিলবণ পরিহার করা দরকার। সামগ্রিক চাপ ও দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দৈনিক বা সপ্তাহে ৫ দিন ৫০-৬০ মি. মধ্যম গতিতে হাঁটলে যেন কপালে বা দেহে ঘামের ভাব আসে এমনভাবে হাঁটতে হবে। সকাল-বিকাল যেকোনো সময় হাঁটা যেতে পারে, তবে সকালে হাঁটা ভালো।

বায়ু দূষণও হার্ট-অ্যাটাক, হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক ঝুঁকি ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশিরা এ বিষয়ে অসচেতন। সূক্ষ্ম কণা ২.৫ মাইক্রন pm 2.5 (Fine partilate matter-2.5 micron)- ১২ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি ঘনমিটার বাতাসে থাকলে সেটাকে বায়ুদূষণ বলছে আমেরিকান এনভাইরোনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি। পরিবেশ উন্নয়নেও সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশবিধ্বংসী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম ও তৎপরতা বৃদ্ধি।

রক্তের কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি স্বাভাবিক মাত্রা ও উৎস জানা দরকার। স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে পূর্ণমাত্রা ২০০ মি.গ্রা. প্রতি ডেসিলিটার এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টরল ৩৫ মি.গ্রা. প্রতি ডেসিলিটার, এলডিএল বা (খারাপ) কোলেস্টরল ১৩০ এবং ট্রাইগ্লিসারাইড (খারাপ) কোলেস্টরল ১০০ মি.গ্রা./প্রতি ডেসিলিটার।

বিশেষভাবে এলডিএল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড স্বাভাবিক মাত্রার বেশি হলে তাকে ডিজলিপি ডিমিয়া (Dyslipidimia) বা লিপিড abnormality বলা হয়। এর কারণে রক্তনালীতে চর্বি বা কোলেস্টরল আবরণ পড়ে রক্তনালী বন্ধ হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক, পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ হয়।

এই খারাপ কোলেস্ট্ররলের উৎস হচ্ছে প্রাণিজ চর্বি, গরু-খাসির মাংস, ঘি, মাছ, দুধের সর ইত্যাদি। খাদ্য তালিকায় এসব কম থাকাই ভালো। এখনকার জাঙ্ক ফুড-সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। বেশি সবুজ শাকসবজি, শস্যদানা ও বাদাম খেতে হবে। কায়িক শ্রম রক্তের চর্বি কমাতে ভূমিকা রাখে।

বিশ্বে প্রতিবছর হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণে প্রায় ১৮ মিলিয়ন জীবন অবসান ঘটে যার অধিকাংশই ব্যক্তির স্বাস্থ্যসচেতনতা দ্বারা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই হার্ট সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

আমরা হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হই, হার্টের সুরক্ষায় স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবার খাই, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য বর্জন করি। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করি, হৃদরোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলি।

লেখক: চিকিৎসক, অধ্যাপক। ডিরেক্টর কাম চিফ কনসালটেন্ট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মেডিক্যাল সেন্টার, রাজশাহী।

এ বিভাগের আরো খবর