বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হীনম্মন্যতায় উন্নয়ন থেমে থাকে না

  •    
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৫:১৩

পঞ্চাশ বছর আগে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। ধর্ষণ ও লুটপাট করেছিল। তাদের সহযোগী ছিল এ দেশেরই কিছু লোক। এই অপশক্তি এখনও বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে চায় না। পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগলে তারা উল্লসিত হয়। সেতুর দুই প্রান্তে যে বিশ্বমানের সড়ক গড়ে উঠেছে, সেটা দেখে তাদের গা জ্বালা করে। কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে সেটা ভণ্ডুল করার জন্য রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ব্যবহার করা যায় কি না, তেমন ষড়যন্ত্রের কথাও শোনা যায়। অতএব, সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিল বিশ্বব্যাংক- এটা আমাদের জানা আছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ চ্যালেঞ্জ জয় করেছেন অমিত সাহস ও সংকল্পে। এ সেতুটি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দিন গুণছে মহাকালের ব্যবধান ঘুচিয়ে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি যোগাযোগের। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-রাজশাহী-রংপুর অঞ্চলের যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছানো যাবে বরিশাল কিংবা গোপালগঞ্জ বা যশোর-খুলনায়।

পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ সমাপ্ত হতে চলেছে- এটা মস্তু সুখবরের মধ্যেই রাজধানীর অধিবাসীরা প্রত্যক্ষ করেছে উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত মেট্রোরেলের মহড়া। উত্তরা থেকে এ রেল চলে যাবে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায়। দিনে যাতায়াত করতে পারবে ৫ লাখ মানুষ। রাজধানীতে এখন ২ কোটির মতো লোকের বসবাস। এদের বড় অংশ প্রতিদিন যাতায়াতের জন্য কোনো না কোনো যানবাহন ব্যবহার করে।

প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকেও বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ঢাকায় আসেন নানা কাজে। মেট্রোরেল চালু হলে মাত্র ৫ লাখ এ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে। কেউ বলতেই পারেন, যানজট তো থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু মেট্রোরেল যে বড় অগ্রগতি, সন্দেহ নেই। এ পথ আরও প্রসারিত হবে এবং অধিক সংখ্যক যাত্রী বহন করবে। পাশাপাশি ঢাকায় যে নদী রয়েছে- বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ- যাতায়াতের জন্য এ জলপথও ব্যবহার করতে হবে। এ সব নদীর সংস্কারের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। চলছে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ অভিযান। এ পথে নৌযান নিয়মিত চলাচল করলে যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে, পরিবেশেরও উন্নতি ঘটবে।

চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ১৩৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। বঙ্গোপসাগর খুব কাছেই। চট্টগ্রাম বন্দরও কাছে। এ সুবিধা কাজে লাগাবে শিল্পনগরটি। সেখানে ১৩টি শিল্প কারখানার নির্মাণ শেষপর্যায়ে। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন। চীন, জাপান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ অনেক দেশের বিনিয়োগকারীও রয়েছেন সেখানে কারখানা স্থাপনে উদ্যোগীদের তালিকায়। মোট বিনিয়োগ হওয়ার কথা দুই হাজার কোটি ডলার, ১৫৩ কারখানায় কাজের সুযোগ মিলবে ১৫ লাখ লোকের। পোশাক, মোটরগাড়ি, ইস্পাত, ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ, প্লাস্টিক, সিরামিকস, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য, রাসায়নিক- অনেক ধরনের শিল্প গড়ে উঠবে এখানে। বাংলাদেশে এ ধরনের মোট ১০০ শিল্পনগর গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

এক সময় বলা হতো- বাংলাদেশের নিজস্ব কাঁচামাল নেই। তাহলে কারখানা কীভাবে হবে? কেউ বা বলতেন- বিদ্যুৎ নেই, সড়ক ও রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। বন্দর-সুবিধা তেমন নেই। বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল। ব্যাংকিং কার্যক্রম সেকেলে। তাহলে শিল্প স্থাপনে কে এগিয়ে আসবে?

এখন এ সব প্রশ্ন করার লোক কমে যাচ্ছে। অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে। পোশাক শিল্প দেখিয়েছে- অন্য দেশের কাঁচামালের ওপর নির্ভর করেও ৪০ লাখের বেশি কর্মী কাজ করতে পারে একটি শিল্প খাতে, যা রপ্তানি আয়ের প্রধান অবলম্বনও। পাশাপাশি গড়ে উঠছে নিজস্ব বস্ত্র কারখানা।

অবকাঠামো সুবিধা সম্প্রসারণের আরেকটি নজির কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। এ কাজ শেষ হওয়ার পথে। আমি একবার লন্ডনের টেমস নদীর নিচ দিয়ে চলে যাওয়া টানেল ধরে হেঁটেছি। প্রথমে একাধিক লিফট ব্যবহার করে টানেলের এক প্রান্তে পৌঁছেছি। তারপর মনে হলো হেঁটেই কেন নদীর অপর তীরে যাই না? গাইড বলল- অনেক দূর। আমি তার কথায় কান না দিয়েই হেঁটে চলে যাই অপর তীরে। কর্ণফুলীর বঙ্গবন্ধু টানেলে এ সুবিধা থাকবে কি না, জানা নেই এখনও। কিন্তু এ পথ যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনবে, সেটা বুঝতে পারি। বাংলাদেশকে নিয়ে যারা বহু বছর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছে, তারা এখন নতুন করে ভাবতে শিখছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়ের ডাকসাইটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন- বাংলাদেশ বাস্কেট কেস হবে।

বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারাও এমন মত দিয়েছিলেন। এখন তারা নতুন বাংলাদেশ দেখছে। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে শিল্প-ব্যবসা বাণিজ্যে নতুন গতি আসবে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে বিশ্ব দেখবে এক শিল্পায়িত বাংলাদেশ। কৃষি বরাবরই আমাদের বড় ভরসার জায়গা। বছরে চার কোটি টনের বেশি চাল, গম ও ভুট্টা উৎপন্ন হচ্ছে বাংলাদেশে। সত্যিই আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছি, যার ভিতটা মজবুত হচ্ছে দিন দিন।

২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য রানওয়ে সমুদ্রে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। এমনটি সম্ভব, কজন ভেবেছেন? এ কাজ দৃষ্টিনন্দন হবে, সন্দেহ নেই। বিমান যখন ঢাকায় অবতরণ করে কিংবা উড়ে অন্য দেশের পথে চলে- আমরা ওপর থেকে দেখি অসংখ্য ঘর-বাড়ি। কক্সবাজারের রানওয়ে চালু হলে দেখা যাবে নীল জলরাশি। কেবল এ সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য অনেক ব্যক্তি এ বিমানবন্দর ব্যবহার করবেন, সেটা এখনও বলে দিতে পারি।

এ কাজের উদ্বোধন করার সময় প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে সংযুক্ত করতে চাই, যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চাই। কক্সবাজার বিমানবন্দর আশপাশের অনেক দেশের বিমানের জ্বালানি গ্রহণের আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হবে। এর ফলে আয় বাড়বে নানা খাতে। কক্সবাজারে পর্যটক বাড়বে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপিত হবে।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। এ মামলা পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিপুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের নিজস্ব সমুদ্র এলাকা এখন অনেক বড়। তেল-গ্যাসসহ বহু ধরনের খনিজসম্পদ, মৎস্যসম্পদ, পানিসম্পদ- সমুদ্র নিয়ে কত স্বপ্ন আমাদের। এখন সমুদ্রসম্পদের ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।

এসব উন্নয়নকাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। পঞ্চাশ বছর আগে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। ধর্ষণ ও লুটপাট করেছিল। তাদের সহযোগী ছিল এ দেশেরই কিছু লোক। এই অপশক্তি এখনও বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে চায় না। পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগলে তারা উল্লসিত হয়। সেতুর দুই প্রান্তে যে বিশ্বমানের সড়ক গড়ে উঠেছে, সেটা দেখে তাদের গা জ্বালা করে। কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে সেটা ভণ্ডুল করার জন্য রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ব্যবহার করা যায় কি না, তেমন ষড়যন্ত্রের কথাও শোনা যায়। অতএব, সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

আরও কয়েকটি বিষয় নজর দিতে হবে। যেমন, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের মান বাড়ানো। শুধু কক্সবাজারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জন্যই এটা প্রযোজ্য। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা এখন বাস্তব। আমরা আমাদের শ্রম-ঘাম-সৃজনশীলতায় এই মহৎ লক্ষ্যে পৌঁছাবোই।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।

এ বিভাগের আরো খবর