বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় এখনও তমসা!

  • নাসির আহমেদ   
  • ৩১ আগস্ট, ২০২১ ১৭:০৪

সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনা যতই আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করুন, সরকারের সেই চেষ্টা বাস্তবায়ন যাদের হাতে, সেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি উদাসীন হয় কিংবা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়, তাহলে মহৎ আকাঙ্ক্ষাও ব্যর্থ হতে বাধ্য। আমরা দেখেছি বরিশালের বিপর্যয়। রাজনীতিকে কিভাবে আমলাতন্ত্র অপমান এবং হেনস্থা করতে পারে!

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো শোকের মাস আগস্ট। একটা মাস আমরা গভীর শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ জাতির পিতার মর্মান্তিক মহাপ্রয়াণের স্মৃতি তর্পণ করেছি, তীব্র ঘৃণায় স্মরণ করেছি সেই খুনিদের অপকর্মও, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়েছিল ভয়ংকরভাবে। বহু বছরের জন্য পিছিয়ে পড়েছিল লাখো শহিদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের আলোকে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবার দৃপ্ত শপথে সারা দেশে পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস। আমাদের গণমাধ্যমও ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকীর তাৎপর্য জাতির সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে।

শোকের এই আগস্টের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মহাপ্রয়াণের স্মৃতি। এই লেখার শিরোনাম তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে কবির একটি কবিতার শেষ চারটি চরণ,তার উদ্ধৃতি:

“আমি গেলে যারা আমার পতাকা ধরিবে বিপুল বলে –সেই সে অগ্রপথিকের দল এসো এসো পথতলে!সেদিন মৌন সমাধিমগ্ন ইসরাফিলের বাঁশিবাজিয়া উঠিবে– টুটিবে দেশের তমসা সর্বনাশী!”

এমনই প্রত্যাশা করেছিলেন আমাদের জাতীয় কবি তার ‘অভয় সুন্দর’ কবিতার শেষ চার পঙক্তিতে।

গত ১২ ভাদ্র মানবমুক্তির অবিস্মরণীয় প্রবক্তা কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম প্রয়াণবার্ষিকী পার হয়ে গেল।দেশের গণমাধ্যমসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের সকল প্রান্তে প্রতিধ্বনিত হয়েছে কবির কালজয়ী কবিতা এবং তার আদর্শের বাণী। কিন্তু কবির যে মহতি আকাঙ্ক্ষা (টুটিবে দেশের তমসা সর্বনাশী) সেই আকাঙ্ক্ষা তো আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও। তিনি ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ঘুষখোর মুনাফাখোর চোরাকারবারি, ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক শাসন-শোষণ আর সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে নজরুলের মতো সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু আমরা কি এতকাল পরেও তাদের সেই আকাঙ্ক্ষার মতো দুর্নীতি আর শোষণহীন সমাজ বাস্তবায়ন করতে পেরেছি?

এই প্রশ্নটাই মনে এলো সংবাদপত্রে প্রকাশিত কয়েকটি শিরোনাম দেখে। যেমন ‘স্বাস্থ্যে আরও দুটি বড় লুটপাটের ছক’ (এই সংবাদ শিরোনাম নতুন নয়, কিন্তু এর প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি এখনও), ‘এতো উদ্যোগের পরও অস্থির চালের বাজার’, প্রচুর আমদানি, শুল্ক হ্রাস, কিন্তু কমছে না চালের দাম’, ‘চট্টগ্রাম কারাগার : কাজ ফেলে ঠিকাদার হাওয়া’, ‘ফাঁসির আসামি ওয়ার্ডে’, ‘বিদেশি ঋণের টাকায় কেনা বাস উন্মুক্ত স্থানে রাস্তায়: প্রধানমন্ত্রী বিআরটিসি বাস ডিপো নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রায় তিন বছর পরও ময়মনসিংহ ডিপো নির্মাণে মন্থর গতি’, ‘অতিরিক্ত যাত্রী বহনের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লইস্কা বিলে ট্রলারডুবি: ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ অনেকে’, ‘ভ্যাট ফাঁকি দিতে গুগল-ফেসবুক, আমাজন আয় গোপন করছে বাংলাদেশে’।

না, সংবাদ শিরোনাম বাড়িয়ে লাভ নেই। এরকম হতাশাব্যঞ্জক খবরের সংখ্যা অনেক। আর দেশের বাইরে যদি তাকাই তাহলে তো পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ! বিশেষ করে কাবুলে ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবান ২০ বছর পর আবার ক্ষমতা দখল করেছে। তাদের সরকার গঠনের আগেই গত সপ্তাহে ‘আইএসএ’র বোমা হামলায় কাবুল বিমানবন্দরের কাছে নারী শিশুসহ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, আহতের সংখ্যাও অনেক! মানবতার এই বিপর্যয়ে আঁতকে উঠেছে সারা পৃথিবী। এ ধরনের দুঃসংবাদে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষমাত্রই বিপন্ন বোধ করেন।

যাহোক, দেশের প্রসঙ্গে আসি। যে সংবাদ শিরোনাম স্বাস্থ্যখাতের, সেটি পুরানো হলেও এর প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব শেষ হয়ে হয়ে যায়নি। তাতে বলা হয়েছে: চিকিৎসা খাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ‘বঙ্গমাতা ন্যাশনাল সেলুলার অ্যন্ড মলিক্যুলার রিসার্চ সেন্টারের মূল কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি আড়াই বছরেও। রিসার্চ সেন্টারের দেখা নেই, অথচ আগেই যন্ত্রপাতি কেনা শুরু! ক্রয়বিধির তোয়াক্কা না করেই কার্যাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইফ-স্টাইল শাখায়!’ এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি আর অনিয়মের ঘটনা এক নয়, অনেক।

করোনাকালে বাস্তবতার কারণে দুদকের কার্যক্রম অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই মন্থর ছিল, এ সংবাদ দেখে সে তথ্যই স্মরণে আসে। এই সংবাদটির সূত্র ধরেই দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পাশাপাশি বাস্তবের অবস্থাও চলে আসে। সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনা যতই আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করুন, সরকারের সেই চেষ্টা বাস্তবায়ন যাদের হাতে, সেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি উদাসীন হয় কিংবা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়, তাহলে মহৎ আকাঙ্ক্ষাও ব্যর্থ হতে বাধ্য। আমরা দেখেছি বরিশালের বিপর্যয়। রাজনীতিকে কিভাবে আমলাতন্ত্র অপমান এবং হেনস্থা করতে পারে!

যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বদলির আদেশ হয়ে যাওয়ার পাঁচদিন পরেও পুরানো হতে যাওয়া কর্মস্থলে বসে তার বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত আনসারদের ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সদস্যদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন, তার ক্ষমতা কী অসীম! বাড়ির গেটে বাংলার দৃশ্যটুকুই দেখানো হয়েছে, পুরো দৃশ্যটি দেখলে বোঝা যাবে কেন বাড়ির গেট ভেঙে ফেলা হয়েছিল।

সেই কঠিন প্রশ্নের মীমাংসা হতেহাত। একটা আপসরফার মধ্যে দিয়ে আমলাতন্ত্র এবং স্থানীয় রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে পালটাপালটি মামলা আর তিক্ততার অবসান হয়েছে। একটি বিভাগীয় শহরে এত সরকারি কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও একজন ইউএনও কেন সৃষ্ট বাস্তবতা সামাল দিতে পারলেন না, তা বহুদিন অমীমাংসিত প্রশ্ন হয়েই থেকে যাবে। ইউএনও তার বস ডিসিকে, ডিসি মীমাংসা করতে না পারলে বিভাগীয় কমিশনারকেও নিশ্চয়ই জানাতে পারতেন। গুলি, কিংবা মামলা-মোকদ্দমা এড়ানো অসম্ভব ছিল না। একই সঙ্গে স্মরণে রাখতে হবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যত ক্ষমতাশালীই হোন না কেন, কেউ কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

এই ঘটনা অনেকে হয়তো ভুলেও যাবেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আর আমলাতন্ত্রের বিরোধে যে ক্ষত সৃষ্টি হলো এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে, তা ভবিষ্যতে চরম সর্বনাশ বয়ে আনলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে। এই সর্বনাশের পথ থেকে বেরিয়ে আসার উপায়ও উদ্ভাবন করতে হবে।

যা-ই হোক স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি প্রসঙ্গে আলোচনা থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলাম। বলছিলাম করোনাজনিত স্থবিরতার কথা। আশার কথা ২৬ আগস্ট দুদকের কার্যক্রম নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে জানানো হয়-‘‘নাজুক অবস্থার কারণে করোনাকালে সরকারি কেনাকাটা, হাসপাতালের অনুমোদন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ স্বাস্থ্যখাতের আলোচিত বিভিন্ন দুর্নীতির অনুসন্ধান-তদন্ত কার্যত আটকে ছিল, সেসব তদন্ত ও অনুসন্ধান আবার সচল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মাস্কসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটা, অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানকে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ দেয়া, ভুয়া করোনা রিপোর্ট প্রদান, অস্বাভাবিক হোটেল ভাড়া- খাওয়ার বিলসহ নানা ধাপে লাগামহীন দুর্নীতির ঘটনা ঘটে এই সময়ে, পরবর্তীকালে এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, ঠিকাদারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের দুর্নীতির তদন্তের ভার চলে যায় দুদকের হাতে।

দুর্নীতির অভিযোগগুলো তদন্তে আটঘাট বেঁধে মাঠেও নামে দুদকের একাধিক টিম। তদন্তকালে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শতাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্য মেলে। দুদক এসব তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করেছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ায় দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্তকাজ শেষ করতে পারেননি দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। পরিস্থিতির উন্নতি ও লকডাউন উঠে যাওয়ায় আটকে থাকা সেসব দুর্নীতি-অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে গতি ফিরবে বলে জানিয়েছেন দুদকের একজন কমিশনার।

মাস্ক ও পিপিই ক্রয়-দুর্নীতি মামলা, রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারি, জেকেজির ভুয়া করোনা রিপোর্ট, স্বাস্থ্য বিভাগের ৭৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির অভিযোগ, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবজাল হোসেন-রুবিনা খানম দম্পতির ২৮০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগসহ স্বাস্থ্য বিভাগের নানা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে আবার যে গতি ফিরে আসছে, এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক উদ্যোগ।

দুর্নীতিতে শুধু স্বাস্থ্য খাতে হচ্ছে তা নয়, দুর্নীতি হচ্ছে সব ক্ষেত্রেই। তবে কোথাও তা প্রকট, কোথাও সহনীয় পর্যায়ের। যখন সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনই তা গণমাধ্যমে খবর হয়ে আসে, চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে জনমনে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিচিত্র গত দেড় বছরে করোনাকে কেন্দ্র করেই এত প্রবলভাবে জনসম্মুখে এসেছে, তাতে এই সেক্টরের ভেতরকার বহু চিত্র ইতোমধ্যে উন্মোচিত হয়েছে। এখন শুধু প্রয়োজন প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তির আওতায় এনে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা। দৃষ্টি ফেরানো যাক চালের বাজারের দিকে।

‘এতো উদ্যোগের পরও অস্থির চালের বাজার’ শিরোনামের যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ২৬ আগস্ট, তাতে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অযৌক্তিকতা। এর পেছনেও নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিবাজরা জড়িত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে চালের দাম গত বছরের তুলনায় এবার কম। সরকার ও ব্যবসায়ীরা যে চাল আমদানি করেন তার অধিকাংশই এই তিনটি দেশ থেকে আসে। আমদানির পর দেশে সিদ্ধ চালের প্রতি কেজির দাম সর্বনিম্ন ৩২.৪৯ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৮.১০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু বাজার চিত্র ভিন্ন।

রিপোর্টে বলা হয়েছে: চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে ৭ জানুয়ারি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে চালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। পাশাপাশি আমদানিতে সব ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। মোট কর ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই সুবিধায় চাল আমদানি করা হয়।

মাঝখানে কিছু দিন বিরতির পর গত ১২ আগস্ট থেকে চাল আমদানি শুল্ক আগের মতো করে কমানো হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই কম শুল্কে চাল আমদানি করা যাবে। এদিকে সরকার চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকেই দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ওএমএসের মাধ্যমে ২ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল বিতরণ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর।

এদিকে কৃষি বিপণন ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যে তথ্য তাতে করোনাকালে চালের ব্যবহার বাড়লেও গত অর্থ-বছরের চেয়ে এবার ধানের উৎপাদন সাড়ে সাত লাখ টন বেশি। তাহলে সমস্যা কোথায়? এ প্রশ্ন সবার মনেই জাগার কথা। সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে চালকল মালিকদের সিন্ডিকেটের দিকে তাকালে। কিছুতেই কেন ভাঙা যাবে না সেই সিন্ডিকেট? ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ছোট চাল কলগুলো কেন বন্ধ হয়ে গেছে? এসব খতিয়ে দেখার এখনও কি সময় আসেনি? কেন বাজার ব্যবস্থা যাদের দেখার কথা তারা অসহায় বোধ করবেন? সমস্যার মূলে যেতে হবে।

বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন-‘গরিব মানুষের মুখে হাসি, দুবেলা দুমুঠো অন্ন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাই চান। কিন্তু সেই চাওয়াটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। যাদের দিয়ে সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবেন, তাদের নিয়েই সমস্যা।

ময়মনসিংহে বিআরটিসি বাস ডিপোর ভিত্তিপ্রস্তর প্রধানমন্ত্রী স্থাপন করার তিনবছর পরেও কেন তার নির্মাণকাজ এই মন্থরগতি? বিদেশি ঋণের টাকায় কেনা বাসগুলো কেন থাকবে রাস্তায়? এসব ‘কেন’র উত্তর খুঁজতেই হবে। চট্টগ্রাম কারাগারের কাজ অসমাপ্ত রেখে কেন ঠিকাদার হাওয়া? ফাঁসির আসামিরা কেন থাকবেন ওয়ার্ডে! সেই ঝুঁকি কে সামাল দেবে? জানা গেছে ঠিকাদার বিল না পাওয়ায় কাজ ফেলে চলে গেছেন! ঘটনাগুলো তদন্ত হওয়া দরকার ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সর্বত্র সব কাজে গতি না এলে, দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ না হলে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে যতই অগ্রসর হোক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা করে গড়ে তোলা যাবে না।

অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করছেন।

চেষ্টা যে করছেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ তো পদ্মা সেতুর বাস্তব রূপ। রাজধানীতে মেট্রো রেলের সচল চাকার বাস্তব সেই মনোহর দৃশ্য! স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি আমরা।

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের উৎসব আমরা উদযাপন করেছি। অথচ তার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম আর ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক মানসিকতার বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারছি না। রাজনীতিতে তার মতো দেশপ্রেমিক কিংবা তার কন্যার মতো নিবেদিতপ্রাণ নিঃস্বার্থ কর্মীও আমরা খুব একটা সৃষ্টি করতে পারছি না। যে কারণে ত্যাগী রাজনীতিকের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। দুঃখের আর কিছু হতে পারে না। রাজনীতিতে নিঃস্বার্থভাবে দেশপ্রেম নিয়ে, মানবসেবার মনোভাব নিয়ে প্রজন্ম যদি এগিয়ে না আসে, যদি তাদের আনা না যায়, তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন অনেক দূরে সরে যাবে।

১৯৭৪ সালে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: তোমরা আদর্শবান হও, সম্পদে থেকো, মানুষের মতো মানুষ হও।...

আবেগপ্রবণ কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, এত রক্তের পর এই স্বাধীনতা, তারপরও মুনাফাখোর চোরাকারবারি, ঘুষখোররা বাংলার দুঃখী মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে...। দেশের জন্য, দেশের গরিব দুঃখী মানুষের মুক্তির জন্য তিনি তার জীবনব্যাপী দুঃখ-কষ্ট আর ত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই। গায়ে কাপড় নাই। পেটে খাবার নাই। আমার মানুষ আমাকে যে এত ভালোবাসে, আমি কোথাও গেলে রাস্তার দুপাশে তারা ভিড় করে আমাকে দেখতে আসে। চোরের দল আমার দুঃখী মানুষের মুখের খাবার কেড়ে খায়। এই বাংলার মাটি থেকে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর মুনাফাখোরদের উৎখাত করতেই হবে...।

বঙ্গবন্ধু সেই উৎখাত অভিযানে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছিলেন। দুর্নীতিবাজ আর ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযান শুরুও করেছিলেন। কিন্তু সেই অভিযান শেষ করা সম্ভব হলো না। তার আগেই ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে হত্যা করে।

আগস্টের শেষদিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক, বিশেষ করে রাজনীতিকদের প্রত্যয় হোক ব্যক্তিগতভাবে আমরা যে যার অবস্থান থেকে ঘুষ দেব না, নেব না। দুর্নীতি করব না। পেশাগত জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার করব না। আমরা দুর্নীতি, ঘুষ-অনিয়ম আর সব অন্যায় থেকে নিজেদের মুক্ত রাখব।

যে যার অবস্থান থেকে ন্যূনতম সততার পরিচয় দিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ গড়া তথা গরিবের মুখে হাসি ফোটানোর মতো বাংলাদেশ গড়ে তোলা মোটেও অসম্ভব নয়। আমাদের সবার চেতনায় এটুকু দেশপ্রেম অন্তত সৃষ্টি হোক, এই আশা আমরা কি করতে পারি না?

লেখক: কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক। সাবেক পরিচালক (বার্তা) বিটিভি।

এ বিভাগের আরো খবর