সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। ভালো দাম পেয়ে পাট চাষে ঝুঁকছেন টাঙ্গাইলের নাগরপুরের অনেক চাষি। এবার সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাট তোলায় ব্যস্ত কিষান-কিষানি, এ নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে গ্রামে।
নাগরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, গত বছরের চেয়ে এবার পাট চাষ বেড়েছে। উপজেলায় ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আগের বছর আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৩৩১ হেক্টর জমিতে।
অন্য ফসলের চেয়ে পাটের জমিতে শ্রমিকের মজুরিসহ অন্য খরচ কম। এতে লাভ বেশি হওয়ায় উপজেলার কৃষকদের মাঝে পাট চাষের আগ্রহ বেড়েছে। গত মৌসুমের শেষের দিকে পাটের দাম দাঁড়িয়েছিল মণপ্রতি ৬ হাজার টাকায়।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, প্রকৃতি ও বাজার চাষিদের অনুকূলে হওয়ায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নাগরপুরে প্রতিবছরই বাড়ছে। এ বছর আবাদ করা পাটগাছ কেটে কৃষকরা এরই মধ্যে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান চাষিরা।
নাগরপুর উপজেলা অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় কমবেশি সব ইউনিয়নে পাটের আবাদ হয়ে থাকে। বাজারদর অনুযায়ী উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে পাটের ভালো লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা।
তারা জানান, বীজ বপনের সময় আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও পরে সময়মতো বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্ষার পানি আসার পর তারা পাট কাটা শুরু করেন। ওই পানিতেই জাগ দেন। গ্রামাঞ্চলে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বাড়ির পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নাগরপুরের গয়হাটা ইউনিয়নের চাষি রবি মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাট চাষে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এর মধ্যে রয়েছে বীজ, সার, কীটনাশক, পরিচর্যা ও রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত আনুষঙ্গিক খরচ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমি দুই জাতের পাটের আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস পাটবীজসহ বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এলাকায় পাটের হাট হিসেবে প্রায় প্রতিটি বাজার পরিচিত হলেও গয়হাটার হাট উল্লেখযোগ্য। সেখানে দূরদূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা এসে পাট কিনে নিয়ে যান।’
পাটচাষি হাসমত আলী বলেন, ‘ধানের মতো পাটের বাজারও যেন সিন্ডিকেটের দখলে চলে না যায়, সে জন্য সরকারিভাবে পাটের দাম নির্ধারণ ও ক্রয়ের উদ্যোগ নিতে হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন শাকিল নিউজবাংলাকে জানান, পাটের জমিতে শ্রমিক কম লাগে, জমির আগাছা ওষুধ প্রয়োগ করেই নির্মূল সম্ভব। সব মিলিয়ে পাটের দাম বেড়েছে। পাট ছাড়ানোর পর কাঠি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এসব কারণে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকরা পাট চাষে ঝুঁকছেন।
বর্তমান বাজারদরে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল পাট চাষ করে কৃষকের লোকসান হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই বলে জানান কৃষিবিদ ইমরান।
আরও পড়ুন:আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে সেতু ‘যমুনা রেলসেতু’।
এটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যমুনার বুকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হলো এটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। একই সঙ্গে দুই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো।
যমুনা রেলসেতুর পূর্ব প্রান্তে ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশনে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি ও জাইকার সাউথ এশিয়া ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর জেনারেল ইতো তেরুকি।
এর আগে বিষয়টি নিশ্চিত করেন যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান।
তিনি জানান, মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর আপ ও ডাউন দুটি লেন দিয়ে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ সব ট্রেন পূর্ণমাত্রায় চলাচল করবে।
প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতু ১৯৯৮ সালে চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি রেল যোগাযোগও স্থাপিত হয়। চালু হওয়ার প্রায় ১০ বছর পর ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছিল।
বিশাল এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ওই বছরের ২৯ নভেম্বর রেলসেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়। এ রেলসেতুর প্রথম পিলার নির্মাণে ২০২১ সালের মার্চে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।
দেশের দীর্ঘতম এ রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের প্রথম নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে দেশি উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
দেশের সর্ববৃহৎ এ রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চার। জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশাল এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের ৭ হাজারেরও বেশি কর্মীর ৪ বছরের পরিশ্রমে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
সেতুটিতে ৫০টি পিলার, প্রতি দুই পিলারের মাঝে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার হলেও দুই দিকে ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন পারাপারের মধ্য দিয়ে দেশের বৃহত্তম এই রেলসেতু দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ওই দিন সাধারণ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ৬ মিনিটে ট্রেন সেতু পার হলেও আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে উভয় লেনে ট্রেন চলবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে।
যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। এর ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আগের রেলসেতুতে লোডের সীমাবদ্ধতা ছিল। ৪৩ দশমিক ৭ কিলো নিউটন পার মিটারের কম লোডের ট্রেন চলতে পারত। সে ক্ষেত্রে শুধু মিটারগেজ ট্রেনে পণ্য সরবরাহ করা যেত।
‘আমাদের এ অঞ্চলের ব্রডগেজের চাহিদা বেশি। ইন্ডিয়া থেকে প্রচুর মালামাল আমদানি করা হয়। রেল যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসায়ীরা সমুদ্রপথে মালামাল আমদানি না করে রেলপথেই করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, সেতুটি দিয়ে এখন সব ধরনের মালবাহী ট্রেন চলাচলও করতে পারবে নির্বিঘ্নে। তবে ডাবল ইস্ট্র্যাক যাকে বলা হয়, অর্থ্যাৎ দুই ট্রেন একই সঙ্গে চলতে পারবে না।’
আরও পড়ুন:সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলটি রাষ্ট্রপক্ষ সোমবার প্রত্যাহারের আবেদন করে।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ লিভ টু আপিলটি খারিজের আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও ব্যারিস্টার কামারুন মাহমুদ দীপা।
আজকের এ আদেশের ফলে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে বিচারে বাধা রইল না বলে জানান ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম।
প্রেক্ষাপট
এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে (২০) ধর্ষণের ঘটনায় ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।
ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে যান। তবে তিন দিনের মধ্যে ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র্যাব।
আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। তাদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পুলিশ।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি অপহরণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ গঠন করেন।
একই আদালতে ২০২২ সালের ১১ মে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়।
একপর্যায়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার চেয়ে বাদী হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের রুলের শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক হাইকোর্ট বেঞ্চ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আরও পড়ুন:যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৪ মাসে ভারত থেকে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি করা হলেও দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে না।
দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত ৯২টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত কোটায় এসব চাল আমদানি করে।
চলতি অর্থবছরে ১৭ নভেম্বর থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত এসব চাল আমদানি করা হয়। তবে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে না।
গত ১৩ মার্চ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৩৫০ টন চাল আমদানি করা হয়। এ নিয়ে গত চার মাসে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে।
গত ৬ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আরিফুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বেসরকারিভাবে নন বাসমতি সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে এলসি খোলার সময়সীমা আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হলো।’
দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল ও ক্রেতা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার দেশের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানির এই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, আটটি চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত বছরে ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ মার্চ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি করেছে। সারা দেশে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ৯২ প্রতিষ্ঠানকে। দুই লাখ ৭৩ হাজার টন সেদ্ধ এবং এক লাখ ১৯ হাজার টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাদের।
অনেক প্রতিষ্ঠান এ সময়ের মধ্যে আমদানি করতে পারেনি। তারপরও সরকার ২৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দেয় আমদানি করা চাল বাজারজাত করার জন্য। আশানুরূপ চাল আমদানি না হওয়ায় পরে তা প্রথম দফায় ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ায় সরকার। তারপরও আমদানি ধীরগতির কারণে আবারও সময় বাড়ায় সরকার।
এভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি না হওয়ায় চতুর্থবারের মতো আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে সব চাল আমদানি হলে বাজারে চালের দাম কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের ওপর প্রভাব পড়ছে না। রোজার শুরু থেকেই সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। অব্যাহতভাবে চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, চালের দাম কমানোর জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও মিলছে না সুফল। ভারত থেকে চাল আমদানি হলেও দেশীয় চালের দামের ওপর তার প্রভাব পড়ছে না।
তারা বলছেন, রোজার শুরুতেই সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। পণ্যটির অস্বাভাবিক এ মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। রোজায় সবজিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে পারলেও চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
চাল ব্যবসায়ী দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘রোজার শুরুতেই চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। রোজার আগের ৬৪ টাকা কেজি দরের ২৮ জাতের চাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৬৯ টাকায়, ৭২ টাকার মিনিকেট ৭৬ টাকায়, ৫২ টাকার মোটা চাল ৫৬ টাকায়, ৮৪ টাকার বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে।
‘আমদানি করা ভারতীয় একটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। তবে বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে ভারতীয় চালের চাহিদা কম।’
তিনি বলেন, ‘রোজার মধ্যে চালের দাম কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারতীয় চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে সামনে নতুন চাল বাজারে উঠলে সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন জানান, ভারত থেকে আমদানি করা চালের ট্রাক স্থলবন্দরে ঢুকলেই দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তা দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা নেন, যাতে আমদানি করা চাল দেশের বাজারে দ্রুত সরবরাহ করা যায়।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেনাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি। বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় আমদানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের সময় স্বল্পতা ও আর্থিক সাশ্রয় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ায়। পণ্য পরিবহনে যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে উন্নত।
তিনি আরও জানান, এ বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করার পর অতি দ্রুত পৌঁছাতে পারে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের বাজারে।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত চার মাসে ভারত থেকে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাল আমদানির জন্য সরকার আবারও এক মাস সময় বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন চারজন, যারা হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে।
সদর উপজেলার রুহিয়া থানা এলাকার পাটিয়াডাঙ্গী বাজারের খড়িবাড়ি হঠাৎপাড়া গ্রামে রবিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
আহত চারজন হলেন আবদুল জলিল, তার স্ত্রী পারুল বেগম এবং তাদের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক ও ইউনুস আলী।
গুরুতর আহত অবস্থায় সাংবাদিকদের আবদুল জলিল বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) রাত থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বাড়িতে ভাড়া করা লোক এনে হামলা করা হয়েছিল। আমি তারাবির নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলাম। এরই মধ্যে আমার ছোট ভাইয়ের বউ খুব ডেঞ্জারাস। সে তার ভাইয়ের ছেলে এনে আমার বড় ছেলেকে মারধর করে। রাতে বিষয়টি কুলায়ে উঠতে পারিনি।
‘পরদিন সকালে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করি। আমার ছোট ভাইয়ের ছেলেকে শাসন করি। লাঠি দিয়ে মারি। এরই মধ্যে আমার আরেক ভাতিজা সাদেকুল ইসলাম ছুরি দিয়ে আমাদের আঘাত করে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাদেকুলের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাকিবুল আলম বলেন, ‘ছুরিকাঘাতে চারজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আমরা রংপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করেছি। তাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে।’
রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম নাজমুল হুদা বলেন, ‘খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
‘স্থানীয়রা একজনকে আটক করেছে। তার পূর্ণাঙ্গ নাম, পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), ঝালকাঠি বারের সাবেক সভাপতি ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান রসুলের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঝালকাঠি জজ আদালতে রবিবার সকালে হাজির হলে তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম।
ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতিতে হামলা, জেলা বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, আইনজীবী শাহাদাৎ হোসেনের বাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলাসহ ছয়টি মামলার আসামি আবদুল মান্নান। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে পলাতক ছিলেন আওয়মী লীগের এ নেতা।
চার মামলায় আসামির পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আওয়ামী লীগ দলীয় আইনজীবী বনি আমিন বাকলাই এবং মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন কবীর। আগামী ১৮ মার্চ একই আদালতে আসামির অন্য দুটি মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সাবেক পিপি আবদুল মান্নান রসুলের জামিন নাকচের পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘মান্নান রসুল আইনজীবী হয়েও তিনি আইনজীবীদের ওপর হামলা ও মিথ্যা মামলা করেছিল। তার পক্ষে আজ যে যে আইনজীবী দাঁড়িয়েছে, তারা নীতি নৈতিকতা হারিয়েছে।’
আওয়ামী লীগের আইনজীবী জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান রসুল ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর ঝালকাঠিতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর একক সিদ্ধান্তে ঝালকাঠিতে এ পদে অন্য কেউ আসতে পারেননি।
আরও পড়ুন:দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা ও নোয়াখালীর হাতিয়ার সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে ২০ মার্চ থেকে বিলাসবহুল দুটি অত্যাধুনিক জাহাজ সার্ভিস চালু হচ্ছে। এগুলো হলো এমভি বারো আউলিয়া ও এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস।
জাহাজ দুটি প্রতিদিন ভোলার চরফ্যাশন, মনপুরা, ঢালচর ও নোয়াখালীর হাতিয়া হয়ে চট্টগ্রামের সদরঘাটে ভিড়বে। প্রতিদিন একটি জাহাজ চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে নোয়াখালী এবং ভোলার চরফ্যাশনের উদ্দেশে যাবে।
অনুরূপভাবে ভোলার চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাট থেকে আরেকটি জাহাজ যাত্রী নিয়ে একই সময়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বারো আউলিয়া জাহাজের ম্যানেজার মো. সাইফুল ইসলাম।
ইতোপূর্বে বছর দেড়েক আগে জাহাজ দুটি এ রুটে মাসখানেক চলাচল করেছিল, কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অভ্যন্তরীণ রুটের অসাধু দলীয় লঞ্চমালিক সিন্ডিকেট নিজেদের স্বার্থে এ জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল।
অবশেষে নৌ পরিবহন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে আগামী ২০ মার্চ থেকে উপকূলীয় জেলা ভোলা, নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম রুটে নিয়মিত যাত্রীবাহী জাহাজ চালু হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাহাজ দুটি প্রতিদিন ছেড়ে এসে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় ঘাট দেবে। হাতিয়া থেকে ছেড়ে ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার ঢালচর ও রামনেওয়াজ লঞ্চঘাটে ঘাট দেবে। মনপুরা থেকে লালমোহন উপজেলার মঙ্গল শিকদার ঘাট দেবে। মঙ্গলশিকদার থেকে চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া লঞ্চঘাটে ভিড়ে যাত্রাবিরতি দেবে।
একই নিয়মে প্রতিদিন উভয় এলাকা থেকে জাহাজগুলো চলাচল করবে।
এ ব্যাপারে বারো আউলিয়া লঞ্চের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ২০ মার্চ থেকে উপকূলীয় যাত্রী সেবা চালু হতে যাচ্ছে। দুটি বিখ্যাত উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি বারো আউলিয়া ও এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে বেতুয়া নৌ রুটে নিয়মিত চলাচল করবে, যা যাত্রীদের জন্য একটি আরামদায়ক ও নির্ভরযোগ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে এবং নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির ভোলা অঞ্চলের ম্যানেজার (মেরিন) মো. আল-আমিন বাসসকে বলেন, ‘বারো আউলিয়া জাহাজটি সরকারের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও দ্রুতগতিসম্পন্ন নৌযান, যা উপকূলবাসীর জন্য খুবই গুরুত্ব বহন করবে।
‘অপর জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে আমাদের দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে যাত্রী বহন করে চলাচল করবে।’
আরও পড়ুন:দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁ। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমের মুকুল সবচেয়ে বেশি এসেছে জেলার আমের বাগানগুলোতে।
নওগাঁর বাতাসে এখন মুকুলের মো মো ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে। কয়েক দিনের বেশির ভাগ সময় আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য অনুকূল রয়েছে।
এবার গাছে গাছে মুকুলের আধিক্য দেখে ব্যাপক ফলনের আশা করছেন আমচাষিরা।
কৃষিবিদরা বলছেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে রয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। এবার গত বছরের চেয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে বেড়েছে আমের বাগান। আশা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার ২৫ হাজার টন ফলন বাড়তে পারে।
একজন কৃষিবিদের আশা, এবার জেলায় আমের বাণিজ্য হবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার।
আমচাষিরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। সে হিসেবে গত বছর নওগাঁয় আমের ফলন কম হওয়ায় এবার তারা আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন।
বাগানে প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছে। মুকুলকে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কীটনাশক স্প্রে করছেন তারা। ক্ষেত্রবিশেষে ছিটানো হচ্ছে পানি। আমগাছের গোড়াতেও পানি দিচ্ছেন চাষিরা।
এদিকে বাগানে মুকুল আসা শুরু করতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন।
কয়েক দিন ধরে মুকুলে গুটি হওয়ার পর বাগান কেনাবেচার জন্য আমবাগানিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বাগান কেনাবেচা নিয়ে কথা শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। এ ছাড়াও নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, বদলগাছী উপজেলা আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নওগাঁ জেলায় নাগফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, গোপালভোগ, আশ্বিনা, কাটিমন, বারি আম-৪, বারি আম-১১, গুটি আম ও ফজলি জাতের সুস্বাদু আমের উৎপাদন বেশি।
সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকাসহ ২০০ বিঘা জমির ওপর তিনটি আম বাগান রয়েছে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার। তিনি স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি ছাড়াও বিদেশে আম রপ্তানি করে থাকেন।
সোহেল রানা জানান, গত বছর তার বাগানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এবার এখন পর্যন্ত তার বাগানে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। ফাল্গুন মাস আমের মুকুল আসার উপযুক্ত সময়।
তার ভাষ্য, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাকি গাছগুলোতেও মুকুল আসবে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত আমের জন্য অনুকূলে আছে। রোদের তাপ কম পেলে ও প্রকৃতি কুয়াশায় ঢেকে থাকলে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য গাছে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তিনি।
পোরশা উপজেলার বড়গ্রাম এলাকার আমাচাষি রায়হান আলম বলেন, ‘গত বছর শীতের কারণে অনেক দেরিতে মুকুল এসেছিল। গাছে মুকুল আসতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন দেরি হয়েছিল। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়েও অনেক গাছে মুকুল ধরেছিল।
‘সে তুলনায় এবার অনেক আগেই মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাধারণত ধরা হয় দীর্ঘস্থায়ীভাবে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে আমের মুকুল ধরতে চায় না। তবে এবার জানুয়ারি মাসে দুই-এক দিন করে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। গড় তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। এই তাপমাত্রা আমের জন্য অনুকূল।
‘কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে কুয়াশা থাকছে। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কুয়াশার কারণে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য আমরা আমচাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে নওগাঁর আমের বাগান থেকে সাড়ে চার লাখ টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
‘আমের বাজার ভালো থাকলে এ বছর নওগাঁ জেলায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য