২০০৮ সালে ধান মাড়াইয়ের যন্ত্র কেনেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন গ্রামের মো. শহিদ। শিঙাড়া ও চপের দোকান বাদ দিয়ে এই মেশিনে তার ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে। গ্রামের কৃষকরা তখন শহিদের কাছে ভোর রাত থেকেই সিরিয়াল নিতে যেত। এভাবেই ধানের মৌসুমে গ্রামের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় শহিদ তার মেশিন নিয়ে ধান মাড়াইতে ব্যস্ত থাকতেন।
দিন বদলের সঙ্গে শহিদ আরও অনেক কৃষিযন্ত্র কিনতে থাকেন। এখন শহিদের ছেলে বাবার কৃষিযন্ত্রগুলো দেখভাল করেন। তবে এখন শুধু শহিদ না, গ্রামের অনেকেই কৃষিযন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।
সারা দেশে এখন গবাদিপশুতে টানা লাঙল উঠে গেছে। কাস্তে দিয়ে ধান কাটার প্রচলনও কমে আসতে শুরু করেছে। ধান মাড়াইয়ের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। কৃষিকাজে জায়গা করে নিচ্ছে যন্ত্র।
গত ১০ বছরে সরকারি হিসাবেই প্রায় ৬৯ হাজার কৃষিযন্ত্র গ্রহণ করেছে কৃষক। এসব যন্ত্রে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য সরকার ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প নেয়, যেটির তৃতীয় ধাপ ২০২০ সালে শুরু হয়। শেষ হবে ২০২৪ সালে।
এ বছর প্রস্তাবিত বাজেটেও গুরুত্ব পেয়েছে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। কৃষকদের কৃষিযন্ত্রের ওপর ৫০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তার মাধ্যমে কম দামে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরকারি হিসাবে ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৬৯ হাজার ৮৬৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর, রিপার, সিডার, পাওয়ার টিলারসহ কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। তা ছাড়া, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ৬১ জেলায় ৫০ একর করে হাইব্রিড বোরো ধানের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে।
তবে এর ভিন্ন চিত্রও আছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ হলেও তা দেশের সব কৃষকের হাতের মুঠোয় আসেনি। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকদের যন্ত্রের মাধ্যমে চাষের আওতায় আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা অনেক ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে না।
কী বলছেন কৃষকরা
দেশের হাওরভুক্ত সাত জেলায় এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে। এটি দেশের মোট আবাদের প্রায় ২০ শতাংশ। আর শুধু হাওরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে।
তবে এবার বোরো কাটতে কৃষকের কোনো সমস্যা হয়নি। বর্ষার আগেই ঘরে ধান তুলেছে কৃষক। এখানে বড় ধরনের অবদান রয়েছে যান্ত্রিকতানির্ভর কৃষিতে।
নেত্রকোণার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরি উপজেলা সদরের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার। তিনি হাওরে এক ফসলি জমিতে বোরো আবাদ করে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘এত দিন ধৈর্য্য ধরে হাওরে সনাতনী পদ্ধতিতে আবাদ কইরা আইছি। কিন্তু প্রায় তিন বছর কৃষিকাজে কিছু কিছু যন্ত্রের ব্যবহার করতাছি। সেচ দিতাছি মর্টার (ইঞ্জিনচালিত সেচযন্ত্র) দিয়া। এইবার ধানও কাটছি মেশিনে। এতে তাড়াতাড়ি কম ট্যাহায় ধান কাটতাম পারছি। এইবার আমরার হাওরে ধান কাটার লাইগ্যা অনেক মেশিন আছিল। ভাড়ায় কাটাইছি। সরকারেও কিছু মেশিন হাওরে পাঠানোর ব্যবস্থা করছিল। এতে আমরা উপকার হইছে।’
একই উপজেলার আদমপুর গ্রামের কৃষক আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘অহন হাল দেয়ার মেশিন, সেচের মেশিন, ধান কাটনের মেশিন সবই ভাড়ায় পাওয়া যায়। খরচ কম অয়। এইবায়েই ফসল মাড়াইতাছি।’
তবে প্রান্তিক চাষিরা বলছেন ভিন্ন কথা। কলমাকান্দা উপজেলার কৃষক মনতোষ বিশ্বশর্মা বলেন, ‘আমরা ছুডু চাষি। এত যন্ত্রের ব্যবহার করতে পারি না। গরু, লাঙলই আমরার ভরসা। যন্ত্র কিনার মতো ট্যাহা নাই। আগেও যেইবায় চাষ করতাম অহনও হেইবায়ই ফসল করতাছি। সরকারে আমরার কাছে যন্ত্রপাতি পৌঁছাইয়া দিলে আমরার তো উপকারই হতো।’
দেশের বোরো ধানের ভান্ডারখ্যাত সুনামগঞ্জ। এই জেলাতে জেলার প্রায় আড়াই লাখ চাষি পরিবার বোরো চাষে জড়িত। হাওর থেকে বছরে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়।
একই সঙ্গে করোনাকালে হাওর এলাকার শ্রমিক সংকট মোকাবিলা করে কৃষিযন্ত্রের মাধ্যমে দ্রুত ফসল কেটে আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষা সম্ভব হয়েছে। খামার যান্ত্রিকীকরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং মূল্য শৃঙ্খল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করে একটি আধুনিক কৃষিব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে এমনটা জানিয়েছে সরকার।
কী পরিমাণ ভর্তুকি
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সরকার ২০০৯-২০১৩ সালে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খামার যান্ত্রিকীকরণের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৮ হাজার ৩৩৮টি ও ২৫ হাজার বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র কৃষকদের সরবরাহ করেছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি সারা দেশে ৫০ শতাংশ ও হাওর-উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরে এ প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দপ্রাপ্ত ২০৮ কোটি টাকার মাধ্যমে সারা দেশে ১ হাজার ৭৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার, ৩৭৯টি রিপার, ৩৪টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ প্রায় ২ হাজার ৩০০টি বিভিন্ন ধরনের কৃষিযন্ত্র কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৬৮০ কোটি টাকা।
মন্ত্রী কী জানালেন
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে জানালেন ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে অঞ্চলভেদে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের কৃষিযন্ত্র দেয়া হচ্ছে।
‘আমরা তো চাচ্ছি যে বাংলাদেশে কী পরিমাণ কৃষিযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে, যন্ত্রগুলোর অবস্থা কী, কোন কোন কোম্পানি যুক্ত আছে, সেগুলোর পারফরম্যান্স কেমন। আমরা তো সেখানে ভর্তুকি দিতে চাচ্ছি। সেই প্রণোদনা যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়। আমাদের দেশীয় অনেক কোম্পানি ভালো ভালো যন্ত্র বানাচ্ছে। সেগুলোকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই।’
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা অফিশিয়ালি একটা অর্ডার দেব। খুব তাড়াতাড়ি যা দুই-এক দিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশে একটা ইনভেনটরি করে দেয়া হবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে কোথায় আমরা আছি। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারব যেসব যন্ত্রের পার্টস দেশে তৈরি হচ্ছে সেগুলো যেন বাইরে থেকে আনতে না হয়। এগুলো যাতে রিপেয়ারের ব্যবস্থা থাকে। এ জন্য আমরা নতুন নতুন ওয়ার্কশপ করার চেষ্টা করব। সেখানে সহযোগিতা দেব।’
মন্ত্রী হাওর এলাকার বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের হাওর এলাকাতে বেশি পরিমাণ যন্ত্র যাচ্ছে। ওখানে মেরামতের ওয়ার্কশপ করা দরকার। আর সেই ব্যাপারেও আমরা সচেতন।’
একটি অ্যাপের মাধ্যমে হারভেস্টরের মতো বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। বলেন, ‘এর মাধ্যমে মানুষ তথ্য পাবে। যেমন হাওরে আমরা গত বছর নীলফামারী থেকে ট্রাকে করে কম্বাইন্ড হারভেস্টর এনে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জে পৌঁছে দিয়েছি। অ্যাপ থাকলে আমরা জানতে পারব, কোথায় কী আছে। শ্রমিকদের বিষয়ে হেল্প করতে পারব।’
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পূজার ঘণ্টাধ্বনি। উৎসবকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রীমঙ্গলের মৃৎশিল্পীরা। কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্যসুন্দর রূপ ফুটিয়ে তুলতে দিন-রাত সমান তালে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এবছর উপজেলার ১৫৭ টি মন্ডপে পূজিত হবেন দেবী দুর্গা।
নিখুঁত কারুকার্যে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পীরা। রঙ-তুলির আঁচড়ে প্রতিমার সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য বাড়াতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। পূজার দিন যত ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ততই ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে।
শিল্পীরা বলছেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের মুখ তারা খুব একটা দেখছেন না। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পূজা আয়োজকদের ব্যয়ও বেড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা গেছে— শহর থেকে পাড়া-মহল্লার প্রতিটি মন্দিরে শোভা পাচ্ছে ছোট-বড় প্রতিমা। বাঁশ, কাঠ, সুতলি, খড় আর কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। ইতোমধ্যে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, ময়ূর, প্যাঁচা ও দেবী দুর্গার মূর্তি গড়ার কাজ শেষ হলেও সৌন্দর্য বাড়াতে চলছে শেষ মুহূর্তের রঙতুলি। কেউ প্রতিমার হাত-পা তৈরি করছেন, কেউ মাটি লাগাচ্ছেন, কেউ আবার রঙ করছেন— সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কাজ।
প্রতিমা শিল্পী হনু পাল বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিমার চাহিদা অনেক বেশি। তাই দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাদামাটির কাজ চলছে। এরপর রঙের কাজ হবে। সব কাজ শেষ হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছে দেওয়া হবে। শুধু শ্রীমঙ্গল নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায়ও আমাদের প্রতিমা পাঠানো হয়। আশা করছি এবার লাভও ভালো হবে।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সুজিত রায় বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতি বছরের মতো এবারও এ উৎসব জাঁকজমকভাবে উদ্যাপন করা হবে। শ্রীমঙ্গলে প্রায় ১৫৭টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। শ্রেণি বা উঁচু-নিচুর বিভেদ ভুলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একত্রিত করে মিলনমেলার রূপ নেয় বলেই এ পূজাকে সার্বজনীন পূজা বলা হয়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে শহরের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরির কারখানা পরিদর্শন করেছি এবং আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মন্দিরের নিরাপত্তার বিষয়েও ব্যবস্থা থাকবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।”
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, “প্রতিবছরের মতো এবারও প্রতিটি পূজা মণ্ডপে কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া হবে। পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও টহল দেবে। ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মণ্ডপগুলোতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হবে।”
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, “আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে প্রশাসনিকভাবে প্রতিটি পূজা মণ্ডপের তালিকা সংগ্রহ, পরিদর্শন এবং রোডম্যাপ প্রস্তুতের কাজ চলছে। উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা উদ্যাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছেন সারোয়ার হোসেন (১৫) নামে এক কিশোর । রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার সাতমোড়া ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতের দুটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আহত সারোয়ার ওই গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ ঘটনায় একই গ্রামের শ্রাবণ মিয়া প্রধান হামলাকারী হিসেবে জড়িত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে সারোয়ার ও শ্রাবণের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে শ্রাবণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। হঠাৎ সে হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সারোয়ারের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। এতে তার বাম হাতের দুটি আঙুল শরীর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দ্রুত হামলাকারী শ্রাবণ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম বলেন, "ঘটনাটি তদন্তাধীন। দোষী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।"
৪২ হাজার টাকা মূল্যের জাল নোটসহ আমিরুল ইসলাম খোকন (৪৪) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব—১২) গাংনী ক্যাম্পের সদস্যরা।
আটককৃত আমিরুল ইসলাম খোকন মেহেরপুরের গাংনী পৌর এলাকার শিশির পাড়া গ্রামের নিজামুদ্দীনের ছেলে। সে বর্তমানে ভাটপাড়া ইকোপার্কের আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা।
গত রবিবার মধ্যেরাতে ভাটপাড়া আবাসন এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। এসময় তার ঘরের ভিতর ফ্রিজের উপর একটি পার্সের মধ্যে থেকে ৪২ টি এক হাজার জাল নোট টাকা জব্দ করার দাবী র্যাবের। তবে, পরিবারের লোকজনের দাবী তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
র্যাব-১২ সিপিসি মেহেরপুরের গাংনী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ওয়াহিদুজ্জামান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে খোকনের বাড়ি থেকে ১ হাজার টাকা মূল্যের ৪২টি জাল নোট উদ্ধার করা হয়। আটককৃত ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে জাল নোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় আটক আমিরুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়েরপূর্বক গাংনী থানায় হস্তান্তের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে আমিরুল ইসলাম খোকনকে আটক করে থানায় দেওয়ার পর ভাটপাড়া আবাসন এলাকার কয়েক শ লোকজন থানায় আসেন তার পক্ষে সার্পোট করতে। তারা জানান, খোকন একজন নিরীহ মানুষ। তাকে কেউ শত্রুতা করে ফাঁসাতে পারে। বিষয়টি তদন্ত্র করার দাবী জানান তারা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন বহাল রেখেই শিক্ষাপঞ্জির অন্যান্য ছুটি কমিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল কাজই হচ্ছে স্বাক্ষরতা। স্কুল স্তরে যদি স্বাক্ষরতা করতে হয়, কতগুলো প্রতিবন্ধকতা আমাদের পার হতে হচ্ছে। কেন আমরা সহজে এগোতে পারছি না। এই বিষয়গুলো আমি আপনাদের সামনে প্রকাশ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘স্কুলে যদি পড়াশোনা হতে হয় তবে প্রয়োজনীয় একটি শর্ত হচ্ছে কন্ট্রাক্ট আওয়ার, অর্থাৎ একজন শিক্ষক ছাত্রকে কতটুকু সময় দিতে পারছেন। এই কন্ট্রাক্ট আওয়ার প্রথমত নির্ভর করছে কত দিন স্কুল খোলা থাকে। আপনারা ক্যালেন্ডার দেখেন, ৩৬৫ দিনের মধ্যে আমার স্কুল খোলা থাকে মাত্র ১৮০ দিন। খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা? পড়াশোনাটা যে হবে, স্কুল কত দিন খোলা পাচ্ছি? এর মানে আমাদের অনেক অপ্রয়োজনীয় ছুটি রয়ে গেছে।’
‘আমরা চেষ্টা করছি ছুটি যদি কিছু কমিয়ে আনা যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে এটা করছি, কারণ বিচ্ছিন্নভাবে করলে হবে না।’
ছুটি কমানোর ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন থেকে কমিয়ে এক দিন করার চিন্তা আছে কিনা— জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপাতত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ক্যালেন্ডারে ছুটি কিছুটা কমানো। আমরা যদি সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনকে এক দিন করতে চাই, সেটা সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেহেতু একই রকম তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলাদাভাবে করা কঠিন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এক ধরনের দাবি আছে, শিক্ষকরা হচ্ছেন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে, নন-ভ্যাকেশন হতে চাইলে এটা সঙ্গে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষের প্রসঙ্গ আছে। ফলে এ ধরনের একটা চিন্তা আছে, তবে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তবে আমাদের ক্যালেন্ডারে যে ছুটি আছে সেক্ষেত্রে আমাকে কিছুটা কমিয়ে আনব।’
কোন কোন দিন ছুটি কমাবেন সেটা ঠিক হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা চূড়ান্ত হলে আপনাদের জানিয়ে দেব।’
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করে গর্ভকালীন মাতৃ মৃত্যুহার, অপুষ্টি জনিত শিশু মৃত্যুর হার কমানোসহ সংক্রামক রোগের সংক্রমন প্রতিরোধে ঝিনাইদহে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে এ কর্মশালার আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)। এতে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আলমগীর হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাছরীনসহ এসডিএফ'র জেলা ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান, জেলা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মকর্তা ডা. অনুদীপা রানী, আইটি এন্ড এসআইএস মো. সাদ আহম্মেদ, ক্লাস্টার অফিসার বাণী বৈরাগীসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি প্রতিনিধি ও এসডিএফ-এর কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ কর্মশালায় পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় এসডিএফ-এর পক্ষ থেকে খাদ্য ও পুষ্টি, অপুষ্টিজনিত সমস্যার প্রতিকার, কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টির গুরুত্ব, ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস এবং বসতভিটায় পুষ্টিবাগান স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালাটি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
দীর্ঘ ৮ বছর পর আগামী ৮ই সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা বিএনপির দ্বি-বাষিক সম্মেলন। এই সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছাস, উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন বাঁধার মুখে আর হতে পাড়েনি কোন সম্মেলন। এবারে অভ্যুত্থানে পরে অনেকটাই আন্দন ও উৎসাহ নিয়েই প্রস্তুতী চলছে এই সম্মেলনের। ইতিমধ্যে মঞ্চ তৈরীর কাজ চলছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে টাঙ্গানো হয়েছে ব্যানার ফেস্টুন। তবে প্রার্থী,কাউন্সিলর ও বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতারা বলছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য মতে, সম্মেলনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারও করেছেন। সবশেষ সভাপতি পদে রয়েছেন ১জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন ৪জন প্রার্থী। এছাড়া সম্মেলনে কাউন্সিলর রয়েছেন ৮০৮জন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু। এছাড়াও রংপুর বিএনপির তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক সহ বিভিন্ন স্থরের নেতাকর্মীরা থাকবেন।
সম্মেলনের প্রার্থীরা বলছেন বিএনপির এই সম্মেলন আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোড়ালো ভূমিকা রাখবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেই আসুক না কেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নির্দেশেই এগিয়ে যাবে দলটি।
এদিকে সম্মেলনের কাউন্সিলর ও বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতা-কর্মীরা বলছেন,এই সম্মেলনের মাধ্যমেই জেলায় আরো বেশি শক্তিশালী হবে বিএনপি। আমরা প্রত্যাশা করছি কর্মীবান্ধব নেতৃত্বই আসবে এই সম্মেলন থেকে। তবে মহাসবিচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যা বলছেন তাই মাথা পেতে নেবে সকলে। তঢাগীদের দলে পদ পদবিতে জায়গা হবে এটাই প্রত্যাশা দলের নেতাকর্মীদের।
সম্মেলনের নির্বাচন কমিশন অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান চৌধুরী বলেন,সম্মেলন নিয়ে সকল প্রস্তুতী সম্পূর্ণ রয়েছে বলে জানালেন নির্বাচন কমিশনার। আমরা আশা করছি একটি সুষ্ঠু সুন্দর সম্মেলন উপহার দিতে পাড়বো।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, সম্মেলন ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থরের নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও থাকবে আমাদের সাথে।
ঢাকা কেরানীগঞ্জে ঘটে গলো এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোরের কোনো এক সময়ে মাত্র দুই বছর বয়সী শিশু আব্দুর রহমানকে প্রাণ হারাতে হয়েছে তার নিজের মায়ের হাতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত আনুমানিক ৪:০০ ঘটিকা থেকে সকাল ৭:০০ ঘটিকার মধ্যে আব্দুর রহমানকে তার মা মোছাম্মৎ আতিয়া শারমিন নিজের বাসায় প্রাণঘাতী আঘাত করেন এবং টুকরো করে খাটের নিচে রেখে দেন। পরে স্থানীয়রা শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জ কলাতিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ নিরু মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে, এবং লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতালে) প্রেরণ করে।
এব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল হক ডাবলু বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, শিশুটির মা মানসিক অসুস্থ ছিলেন। আমরা মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।
স্থানীয়রা জানান, শিশুটির মা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন। ঘটনায় এলাকায় শোক ও ক্ষোভের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, সন্তানের নিরাপদ আশ্রয় মায়ের কোলে হলেও এ ঘটনা মানবিকতার সীমা ছাপিয়ে গেছে।
নিহত শিশুর বাবা টুটুল সাংবাদিকদের বলেন, আমি কখনো ভাবিনি এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে। আমার ছেলে আর ফিরে পাব না। আশা করি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং ভবিষ্যতে কেউ এভাবে সন্তানকে হারাবে না।
মন্তব্য