জনবল-সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত লক্ষ্মীপুরের রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি।
সাত বছর ধরে কেন্দ্রটির ৮৩ পদের ৫৯টিই রয়েছে খালি। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে পোনা উৎপাদন।
কর্মকর্তারা বলছেন, জনবল সংকটের কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কেন্দ্র চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
১৯৮২ সালে ৫৪ একর ভূমির ওপর দেশের বৃহত্তম এই মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে। এখানে রয়েছে ৭৫টি পুকুর। সংস্কার না হওয়ায় এর মধ্যে ৩০টি পুকুর কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
কেন্দ্রর ৮৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আছেন মাত্র ২৪ জন। সাত বছর ধরে শূন্য রয়েছে একজন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ছয়জন বৈজ্ঞানিক ও একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, চারজন মৎস্য সম্প্রসারণ সুপারভাইজার ও একজন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ ৫৯টি পদ।
কেন্দ্রটিতে রয়েছে সাতটি আবাসিক ভবন। লোকবল না থাকায় একটি চার তলা ও তিনটি এক তলা ভবন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো জরাজীর্ণ হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
পুকুরের পাড়গুলোও ভেঙে গেছে। বছরের বেশির ভাগ সময় পুকুরগুলোয় পানি-সংকট থাকে। ফলে রুই, কাতল, কালবাউশ ও মৃগেলের মা মাছ মরে যায়।
স্থানীয় মাছচাষি মশিউর রহমান মিটু, আবদুল আজিজসহ কয়েকজন নিউজবাংলার কাছে অভিযোগ করেন, প্রকৃত মাছচাষিরা পোনা পাচ্ছেন না। চাষি নন এমন লোকও পোনা পাচ্ছেন।
এসব অনিয়ম ও জনবল সংকট দূর হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং কেন্দ্রটির পুরোনা ঐতিহ্য ফিরে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
হ্যাচারির কর্মচারী মোক্তার মিয়াসহ কয়েকজন জানান, জনবল সংকটের কারণে রাত-দিন কাজ করতে হয়। একই সংকটের কারণে ঠিকমতো পোনা উৎপাদন করা যাচ্ছে না। হিমশিম খেতে হয়।
তাদের একজন বলেন, ‘তারপরও প্রতিষ্ঠানের পোনা উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ কোনো রকমে চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় বেশি পরিশ্রমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। একসময় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা যে কাজ করতেন, এখন সে কাজ করানো হয় হ্যাচারির গার্ড ও ফিশারম্যানদের দিয়ে।’
দ্রুততম সময়ের মধ্যে শূন্য পদে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জনবল সংকটের কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কেন্দ্র চালাতে অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, দীর্ঘ সাত বছর আটজন ফিশারম্যানের পদসহ ৫৯টি পদ খালি রয়েছে। জনবল সংকটের পরও গত অর্থবছরে প্রায় ৬২ লাখ টাকার রেণু পোনা বিক্রি হয়েছে। জনবল সংকট না থাকলে এ বছর চাহিদার দ্বিগুণ রেণু উৎপাদন করা যেত।
আরও পড়ুন:
ইলিশ পচা গন্ধে বাতাস ভারী হয়েছে সামরাজ মৎস্যঘাটের। চিরচেনা এ মৎস্যঘাটে এমন ঘটনা হরহামেশাই না ঘটলেও ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ছয় ঘণ্টা পরেই ঘটেছে। এ মৎস্যঘাটের অবস্থান ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে ইলিশ বোঝাই সাগরগামী শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার মৎস্যঘাটে ফিরেছে। শত শত টন পচা ইলিশের ভাগাড় দেখে সাধারণ ক্রেতারা অবাক হলেও আড়তদার ও পাইকাররা ছিলো আনন্দমুখর। সূর্যের আলো উকি দেওয়ার সাথেই এসব সাগরগামী ট্রলার মৎস্যঘাটে এসে নোঙর করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘ ২২ দিন গভীর সাগরে অবস্থান করে এসব ইলিশ মাছ শিকার করেছেন জেলেরা। যদিও এসব তথ্য অকপটে শিকার করেছেন সাগর থেকে ফেরা একাধিক জেলে।
সরেজমিনে রোববার সামরাজ মৎস্যঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ভোর হতেই একে একে মৎস্যঘাটে ফিরেছে ইলিশ মাছ বোঝাই শতাধিক সাগরগামী ট্রলার। ওই সময় এফবি বিসমিল্লাহ, এফবি আয়েশা-১, এফবি হামিম-২ থেকে জেলেরা ঝুড়িভর্তি ইলিশ মাছ বিক্রির জন্য আড়তগুলোতে নিতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আড়তগুলোতেও মাছ বিক্রি শুরু হয়। কেউবা ঢাকাসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে ইলিশ সরবরাহ করতে গাড়ীতে তুলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাগর থেকে ফেরা এক জেলে জানান, ৪ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার খবর শুনে তার আগের দিবাগত রাতে বরফ, তেল ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ইলিশ শিকারের জন্য গভীর সাগরে গিয়েছেন। তারা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে ইলিশ শিকার করেছেন। দীর্ঘদিন ইলিশ মাছ বরফজাত করে রাখায় দুই-তৃতীয়াংশ মাছ পচে গেছে। এই জন্যই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এফবি বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি নুরমোহাম্মদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। তবে সামরাজ মৎস্য ঘাটের একতা ফিসের আড়তদার অহিদ বলেন, ‘আপনারাতো জানেনই এসব মাছ সাগরের। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জেলেরা সাগরে মাছ শিকার করেছে। এই মৎস্যঘাটে ৯৮ জন মৎস্য আড়তদার রয়েছে। এসব আড়তদাররা প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।’
চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, চরফ্যাশনের বড় মৎস্যঘাটগুলোর মধ্যে সামরাজ, নতুন স্লুইসগেট, খেজুরগাছিয়া, মাইনউদ্দি ঘাট, ঢালচর, বকসীরঘাট, ঘোষেরহাট, চরকচ্ছপিয়া ও কুকরি মুকরি অন্যতম। কাকডাকা ভোর থেকে প্রতিদিন ১৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয় এসব ঘাটে। উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার জেলে রয়েছে। নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ২৮১জন। অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার। এসব জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে। এ অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। এছাড়াও গভীর সমুদ্রগামী ৭ হাজার ট্রলার রয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, এমন তথ্য আমার জানা নেই।
৬ ঘণ্টার মধ্যে সাগরগামী ট্রলার ইলিশ বোঝাই করে মৎস্যঘাটে ফিরে আসা কি সম্ভব? এমন প্রশ্নের প্রতিউত্তরে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আপনার কথায় যুক্তি আছে। আমার অফিসারের সাথে কথা বলে জানাব। এ বলেই তিনি কল কেটে দেন।’
গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় কুমিল্লায় লোকসানে খামারিরা। গেল ৬ বছরে বন্ধ হয়ে গেয়ে আড়াইশ খামার। যেসব বাড়িতে সকালের ব্যস্ত শুরু হতো গরুর জন্য ঘাস কাটা, গরুর গোছল করানো ও দুধ দোহন। সেসব বাড়ি ও খামারে এখন সুনশান নীরবতা। দুধ উৎপাদনে লোকসান গুণতে হয় বলে গৃহস্থ ও খামারিরা এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।
সরেজমিনে কুমিল্লা লালমাই উপজেলার দুধের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিলোনিয়া গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, অল্প কিছু বাড়িতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি ও গৃহস্থরা। অথচ বছর দশেক আগেও এটিসহ আশপাশের ১২টি গ্রামে ঘরে ঘরে এক সময় দুধ উৎপাদন হতো। গরু পালন, দুধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ছিলোনিয়া গ্রামে আড়াই শতাধিক পরিবার দুধ উৎপাদন করতেন। তবে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে লোকসানে পড়েন খামারিরা। এরপর অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু এ গ্রামেই ৬ বছরে আড়াইশ খামারের মধ্যে ২০০টি বন্ধ হয়ে গেছে। দুধের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিলোনিয়া এখন অনেকটা নীরব-নিস্তব্ধ। এর পাশের গজারিয়া, হাপানিয়া, উৎসব পদুয়া, মাতাইনকোট, দোসারি চৌ, জামমুড়া, শাসনমুড়া, আটিটি, বাটোরা গ্রামেও এখন আর তেমন দুধ সংগ্রহ ও বিক্রির উৎসব হয় না।
স্থানীয়রা জানান, ছিলোনিয়া গ্রামে আগের মতো উৎসবের আমেজ নেই, অনেক খামার খালি পড়ে আছে।
ছিলোনিয়া গ্রামের মো. হোসেন, আবুল মিয়াসহ অন্তত ১০ জন খামারি জানান, করোনার আগে পর্যন্ত ভালোই চলছিল তাদের খামার। তারপরেই গো-খাদ্যর দাম বাড়তে থাকে। তবে সে তুলনায় বাড়েনি দুধের দাম। গড়ে ১ কেজি দানাদার খাবারের দাম ৭০-৮০ টাকা হলে ১ কেজি দুধের দাম হয় ৬০-৭০ টাকা। লোকসান গুণতে গুণতে বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকার অন্তত দুইশ দুগ্ধ উৎপাদন খামার।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল আজিজ জানান, ২০০৬ সালে ডেইরি ফার্ম শুরু হয় ছিলোনিয়া গ্রামে। ২০১৯ পর্যন্ত ভালো অবস্থা ছিল। ২০২০ সালে করোনার ধাক্কায় পিছিয়ে যায় দুগ্ধ উৎপাদন। গো-খাদ্যের চেয়ে দুধের দাম কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন খামারি ও গৃহস্থরা। ২৫০টি খামার থেকে এখন তা ৬০টিতে চলে এসেছে। সরকার দৃষ্টি না দিলে বাকি খামারিরাও হারিয়ে যাবেন।
কুমিল্লা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন জেলা জানান, খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুধের উৎপাদন কমেছে কুমিল্লায়। কুমিল্লা জেলায় দুধের বার্ষিক চাহিদা ৫.৩৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন ৫.০৩ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদনে বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। খামারের বিদ্যুৎ বিল কৃষির আওতায় আনা এবং খাদ্যে ভর্তুকির বিষয়ে উপদেষ্টারা অবগত বলে জানান জেলা এই কর্মকর্তা।
নবীন প্রজন্মকে কৃষির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’। গত বুধবার সকালে উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোস্তফা এমরান হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন, এবং সঞ্চালনা করেন সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জনাব শাহআলম মজুমদার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষক ও জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
শহীদ কামরুল মিয়ার পিতা জনাব নান্নু মিয়া বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তরুণদের কৃষিতে সম্পৃক্ততা খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
অন্যদিকে সাইফুল্লাহ বলেন, ‘তরুণদের কৃষিতে আগ্রহী করতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত ইতিবাচক। এই ধরনের সামাজিক উদ্যোগ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতেই এই বীজ বিতরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও নবীন চিন্তাধারার সংযোজন ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
এ সময় প্রধান অতিথি ড. মোস্তফা এমরান হোসেন বলেন, ‘সরকার আধুনিক কৃষিতে তরুণ ও শিক্ষিত শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাণিজ্যিক কৃষিতে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষক ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ মোট ২০ জনের মাঝে উন্নত মানের বীজ বিতরণ করা হয়।
চলতি শীত মৌসুমে প্রথমবারের মতো হাজারি জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন নরসিংদীর প্রান্তিক কৃষকেরা। বাজারে এ লাউয়ের চাহিদা থাকায় ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা। কম খরচে এবং কম সময়ে ফলন আসায় হাজারি লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় ১০ হাজার ৪১৭ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে লাউ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার রায়পুরা উপজেলার অলীপুরা ইউনিয়নের কাঙ্গালীমারা গ্রামের কৃষক আলী হোসেন তার বাড়ির আঙিনায় ২০ শতাংশ জমিতে এ লাউ চাষ করেছেন। মাচায় ঝুলছে লম্বা সবুজ রঙের অসংখ্য লাউ। যেদিকে তাকানো যায়, শুধু লাউ আর লাউ। বাগানের এসব সবুজ কচি লাউ দেখলে যেকোনো মানুষের চোখ জুড়িয়ে যায়। আলী হোসেন জানান, তিনি জৈব সারের সঙ্গে সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছেন। এতে কীটনাশক ও রোগবালাইনাশক ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। এ জন্য বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি বাগানের লাউ খেতে যেমন সুস্বাদু, বাজারেও এর চাহিদা অনেক বেশ। তিনি আরও জানান, বাড়ির আঙিনায় ২০ শতাংশ জায়গা সারা বছরই পড়ে থাকত। তার এক নিকটতম আত্মীয়ের পরামর্শে এ বছর স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে প্রথমবার হাজারি জাতের লাউ চাষ শুরু করেন। বাজার থেকে লাউয়ের বীজ সংগ্রহ করে গত শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে জমিতে রোপণ করেন।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হক জানান, হাজারি লাউ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। এ জাতের লাউ রোপনের ৫-৭ দিনের মধ্যে চারা হয় এবং ৪২-৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ধরতে শুরু করে। এছাড়া ৬০-৭০ দিনের মধ্যে বাজারজাত করা যায়। এ লাউ দেখতে খুব সুন্দর ও তরতাজা। খেতেও খুব সুস্বাসু। এছাড়া বাজারে এর চাহিদা এবং ফলন বেশি হওয়ায় এ লাউ চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলায় যশোরের দুঃখখ্যাত ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ১৮ হাজার বিঘা জমিতে এবার আমন আবাদ করতে পারেননি কৃষকেরা। এসব জমিতে ১২ হাজার টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল কৃষি বিভাগের। আমন আবাদ করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি এসব বিলে ঢুকে পড়ায় কৃষিকাজ বন্ধ রয়েছে। জলাবদ্ধতার পেছনে অপরিকল্পিত মাছের ঘের ও নদ-নদী পলিতে ভরাট হয়ে পানি সরতে না পারা কারণ হিসেবে দেখছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এই উপজেলায় ৭১ হাজার ৬২৫ বিঘা জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ৫৫০ টন; যার বাজারমূল্য ১৩১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে এবারের আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ৫৩ হাজার ৭০০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ হয়। অনাবাদি থেকে যায় ১৭ হাজার ৯২৫ বিঘা জমি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুম শুরুর আগেই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া অপরিকল্পিত মাছের ঘের, নদীর নাব্যতা না থাকাসহ মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষার পানি শুষ্ক মৌসুমেও নামতে পারেনি। এতে বিস্তীর্ণ জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের বিলগুলোতে আমন আবাদ করতে ব্যর্থ হন কৃষকেরা।
উপজেলার মজিদপুর গ্রামের কৃষক মোতাহার হোসেন জানান, বুড়িভদ্রা নদীর পাশে তার প্রায় দেড় বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। এ কারণে তিনি এবার আমন আবাদ করতে পারেননি। অপরিকল্পিত মাছের ঘের ও নদ-নদী পলিতে ভরাট হয়ে পানি সরতে না পারায় তার মতো অনেক কৃষক আমন আবাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
পৌরসভা এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বাসপাড়ার কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিলে এখনো হাঁটুসমান পানি। জলাবদ্ধতার কারণে আমার সাত বিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে পারিনি।
একই এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, নোনামাঠেল বিলে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকেরা এবার আমন আবাদ করতে পারেননি।
মজিদপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, মজিদপুর, বাগদহ, দেউলী, হিজলতলাসহ অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চলের বিলগুলো জলাবদ্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন দৈনিক বাংলা পত্রিকাকে বলেন, ভবদহের প্রভাবে জলাবদ্ধতায় নিম্নাঞ্চলের বিলগুলোতে আমন আবাদ হয়নি। এ জন্য এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কৃষকেরা ১১ হাজার ৯৫০ টন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে আমনের আবাদ ভালো হয়েছে।
যশোর জেলার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে ভবদহের অবস্থান। চার দশক ধরে এখানকার ৩৩০ কিলোমিটার এলাকার ৩ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতায় ভুগছেন।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া এলাকার রাবার বাগানে আবারো শুরু হয়েছে রাবারের রস সংগ্রহ। অক্টোবরের শুরু থেকে স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা বাগানটির গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উদ্যোক্তা অলক বড়ুয়া জানান, আমুচিয়ার বাগানটিতে প্রায় ১০ হাজার রাবার গাছ রয়েছে। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে শ্রমিকরা গাছের নির্দিষ্ট অংশের বাকল কেটে দেন। সেখান থেকে গড়িয়ে পড়া দুধের মতো সাদা নির্যাস পাত্রে জমা হয়। সকাল ৯টার মধ্যেই এসব পাত্র থেকে রস সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ২৫০ কেজি রাবার সংগ্রহ হচ্ছে। প্রতি কেজি রাবারের দাম ২৭০ থেকে ২৭৫ টাকা। এসব রাবার দেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে সরবরাহ করা হয়, পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়। অলক বড়ুয়া আরো জানান, স্থানীয় বাসিন্দা কালু বড়ুয়া ও গিয়াস উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে প্যারাগন কোম্পানির কাছ থেকে ৬ লাখ টাকায় দুই বছরের জন্য বাগানটি ইজারা নিয়েছেন। বর্তমানে সেখানে ১৫ জন শ্রমিক মাসিক ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন।
জানা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘কানুনগোভ্যালি’ প্রায় ৭০ একর পাহাড়ি জায়গাজুড়ে এই রাবার বাগান গড়ে তোলে। দীর্ঘদিন উৎপাদন চললেও লোকসানের কারণে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে প্যারাগন কোম্পানি বাগানটি ক্রয় করে সেখানে ফলের বাগান তৈরি করে।
অলক বড়ুয়ার হিসাব অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়টাতে রাবারের রস সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। প্রতিদিন ২৫০ কেজি হারে মাসে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কেজি রস সংগ্রহ সম্ভব, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে মাসে প্রায় ১৮ লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
নওগাঁয় জমি থেকে আলু তোলার কাজে ব্যস্ত চাষিরা
নওগাঁয় আলুর দাম কম থাকায় হিমাগার থেকে কৃষক ও ব্যবসায়িরা কম পরিমাণ আলু বের করছে। লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। মৌসুমের শুরুতে খোলা বাজারে ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা মন বিক্রি হলেও হিমাগারে ৭ মাস সংরক্ষণের পর একই দাম বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি বস্তায় (৬০কেজি) অন্তত ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা লোকসান হচ্ছে। সরকার ২২ টাকা দাম নির্ধারণ করলেও হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ১২-১৬ টাকা কেজি। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ২৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ টন। জেলায় ৭টি হিমাগারে ধারণক্ষমতা ৪৬ হাজার ৫৩০ টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত আলু পাশের জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
ভালো দাম পাওয়ার আশায় এ বছর জেলার আলু চাষিরা আশায় বুক বেঁধে চাষাবাদ করেছিল। যেখানে উন্নত জাতের আলু ডায়মন্ড, স্টিক ও কাটিনাল চাষ করা হয়েছিল। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষক ও ব্যবসায়িরা মার্চ মাসে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছিল। যেখানে খরচ পড়েছিল আলুর জন্য বস্তা কেনা, হিমাগার পর্যন্ত বস্তা পরিবহন ও হিমাগার ভাড়াসহ অন্তত ৫৫০ টাকা। কিন্তু সংরক্ষণের ৭ মাস পরও ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে।
বদলগাছী উপজেলার বেগুন জোয়ার গ্রামের কৃষক আইনুল হক। দুই বিঘা জমিতে দেশি জাতের আলু রোপণে খরচ পড়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। যেখানে আলু পেয়েছিলেন ১২০ মন। মৌসুমের শুরুতে ৬০০ টাকা হিসেবে ১০০ মন বিক্রি করে অবশিষ্ট আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিলেন। যেখানে প্রতিবস্তা আলু হিমাগারে রাখতে খরচ পড়েছে অন্তত ৫৫০ টাকা। ৭মাস সংরক্ষণের পর আলুর দাম বলছে ৬০০ টাকা। এতে তার লোকসান বস্তাপ্রতি ৬০০ টাকা।
কৃষক আইনুল হক বলেন, প্রতি বিঘাতে আলু রোপণে বীজ আলুর প্রয়োজন হয় প্রায় ১৮০ কেজি। বীজ আলু বাড়ির হওয়ার আলু চাষবাদে খরচ তুলনামূলক কম পড়েছে। তবে যারা বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন তাদের ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বস্তা (৬০ কেজি) কিনতে হয়েছে এবং খরচ বেশি পড়েছে। এ বছর আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। দাম কম হওয়ায় কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে আগামীতে অনেকে আলু চাষ কমিয়ে দিবে এবং বেশি দামে কিনে খেতে হবে। বাজার সামঞ্জস্য থাকলে সবার জন্য সুবিধা হবে।
একই অবস্থা অন্য কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। বাজারে আলুর দাম কম থাকায় লোকসানের শঙ্কায় অনেকে হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না। দাম না পাওয়ায় কৃষকদের আলু চাষের আগ্রহ কমে যাবে এবং আগামীতে সরবরাহ কমে আসায় বাজারও উর্ধ্বগতি হবে। তবে বীজ আলু নিয়ে অনেকে আগাম জাতের আলু চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বদলগাছী উপজেলার পারসোমবাড়ী গ্রামের আলু ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, পাটনাই জাতের ৪০০ বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছি। প্রতি বস্তায় আলুর দাম ১ হাজার ২০০ টাকার এবং পরিবহন, বস্তা ও হিমাগার খরচ ৪৫০-৫০০ টাকা পড়েছে। প্রতি কেজি আলুর বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। প্রতি বস্তায় লোকসান হবে ৭০০-৭৫০ টাকা পর্যন্ত। আমার যে পুঁজি ছিল তা শেষ হওয়ার উপক্রম। এতে সাংসারিকভাবে অর্থনেতিক দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হলো।
ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান বলেন, দেশি আলু ৩২ টাকা কেজি এবং স্টিক আলু ২৭ টাকা কেজি কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিলাম। এখন দেশি আলু ১৫ টাকা কেজি এবং স্টিক আলু ১০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার সরাইল গ্রামের কৃষক রহিদুল দেওয়ান বলেন- ১ বিঘা জমিতে আলু চাল করেছিলাম। মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়ীরা ৮৫০ টাকা মন দাম বলেছিল। আলু বিক্রি না করে হিমাগারে ৮ বস্তা রেখেছিলাম। আগাম জাতের আলু রোপণ করার জন্য সবগুলো বের করেছি। ২ বস্তা বিক্রি করতে চাইলাম এখন ৬০০ টাকা বস্তা দাম বলছে। তাহলে হিমাগারে এতদিন সংরক্ষণ করে কি লাভ হলো। আমরা কৃষক লাভ বা লোকসান যায় হোক না কেন আবাদ করা ছাড়া তো জমি ফেলে রাখতে পারি না। ২২ টাকা আলুর দাম কার্যকরে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
নওগাঁ ইষ্টার্ণ প্রডিউস কোল্ড স্টোর লিমিটেড এর ম্যানেজার সেতু মৈত্র বলেন- হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ৭০ হাজার বস্তা। এর বিপরীতে ৭৫ হাজার ৬০০ বস্তা (৩ হাজার ৮১৩ টন) সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেখানে বীজ আলু ২ হাজার ১৪১ টন এবং খাবারের আলু ৭৩ হাজার ৪৫৯ টন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার বস্তা এখনো মজুত আছে। চলতি (অক্টোবর) মাসে আলু বের হওয়ার সময়। বাজারে আলুর দাম কম থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু বের করছেন না। নভেম্বর মাস পর্যন্ত হিমাগার চালু রাখতে হবে। এতে একমাসেই প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল আসবে। তারপর বন্ধ হয়ে যাবে। এতে আলু নষ্ট হয়ে যাবে। নষ্ট ও পঁচা আলু নিজ খরচে হিমাগার থেকে অপসারণ করতে হবে। এতে প্রায় ১ কোটি টাকার ওপর লোকসান হবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. হোমায়রা মন্ডল বলেন- চলতি বছর আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা ভাল দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাজারে দাম কম থাকায় হিমাগার থেকে আলু কম পরিমাণ বের হচ্ছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আউয়াল বলেন, মৌসুমের শুরুতে আলু হিমাগারে রাখার সময় একবার সমস্যা হয়েছিল। সেসময় ভোক্তা অধিদপ্তরকে সাথে নিয়ে সমস্যা সমাধান করা হয়েছিল। একটি বিষয় অবগতি হয়েছি- হিমাগারে কৃষকদের স্বল্প মূল্যে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যৌথ অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে তার আগে ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেট ভাঙতে কৃষক ও হিমাগার কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বসে আলোচনা করা হবে।
মন্তব্য