এবারের কালবৈশাখীতে অনেক জায়গায় হাঁড়িভাঙা আমের গুটি ঝরে পড়েছিল। গাছে অবশিষ্ট যা ছিল, তা নিয়েও দুশ্চিন্তার কমতি ছিল না চাষিদের। শেষ পর্যন্ত নতুন করে বড় ধরনের কোনো ঝড় না আসায় সেই দুশ্চিন্তা কেটেছে। গাছে যে আম আছে, তা নিয়ে খুশি চাষিরা।
তবে শেষ পর্যন্ত এই আম কীভাবে দেশ-বিদেশে বিপণন করবেন, তা নিয়ে এখন নতুন দুশ্চিন্তা তাদের। অতি সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম বেশি পেকে গেলে দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়। সংরক্ষণ করার ব্যবস্থাও নেই চাষি এবং ব্যবসায়ীদের কাছে।
রংপুর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রংপুরে এবার ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে। এর বেশির ভাগই (১ হাজার ২৫০ হেক্টর) মিঠাপুকুর উপজেলায়। বদরগঞ্জে ৪০০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর মহানগর এলাকায় ২৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৬০, কাউনিয়ায় ১০, গঙ্গাচড়ায় ৩৫, পীরগঞ্জে ৫০, পীরগাছায় ৫ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুন) বিকেলে মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার দুই ধারে, কৃষিজমি, ধানি জমিতে সারি সারি আমগাছে আম ঝুলছে। গাছের ডালে, ডগায় ঝুম ঝুম আম। আম প্রায় পেকে গেছে, তা পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, দেশের অন্যান্য জায়গার আম প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার পর হাঁড়িভাঙা আম বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসে। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে এই আম বাজারে আসবে। অর্থাৎ ২০ জুনের পর বাজারে হাঁড়িভাঙা পাওয়া যাবে।
সেটার স্বাদ এবং গন্ধ আলাদা। মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, এর আগে বাজারে হাঁড়িভাঙা আম পাওয়া গেলেও তা অপরিপক্ব।
তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমের ওপর দিয়ে কিছুটা দুর্যোগ গেলেও আমরা যে টার্গেট করেছি, তা পূরণ হবে বলে আশা করছি।’
যোগাযোগব্যবস্থা নাজুক
আমের রাজধানী-খ্যাত রংপুরের পদাগঞ্জ হাটে বসে সবচেয়ে বড় হাট। এর পরের অবস্থান রংপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা। এ ছাড়া মিঠাপুকুরের বিভিন্ন হাটবাজারে, বদরগঞ্জ এলাকায় প্রতিদিনই আমের হাট বসে। কিন্তু এই আমরাজ্যে যোগাযোগব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। বড় অংশই মাটির কাঁচা রাস্তা। ফলে অল্প বৃষ্টিতে কাদাজলে নাকাল হয় আম ক্রেতা ও বিক্রেতা।
পদাগঞ্জ হাটের ইজারাদার ফেরদৌস আহমেদ ফেদু বলেন, ‘প্রতিবছর এই হাটের সরকারি মূল্য বাড়ে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধা বাড়ে না। বৃষ্টিতে হাঁটুপানি হয়। পরিবহন ঠিকমতো আসতে পারে না। আমরা চাই যোগাযোগব্যবস্থাটা উন্নত হলে আম নিয়ে আরো ভালো ব্যবসা হবে।’
আম বাজারজাত নিয়ে দুশ্চিন্তা
যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন চাষিরা। করোনার কারণে সঠিক সময়ে আম বাজারজাত ও পরিবহন সুবিধা বাড়ানো না গেলে মুনাফা নিয়ে শঙ্কা আছে তাদের।
আমচাষি আলী আজগার আজা বলেন, ‘আমার তিন একর জমিতে আম আছে। যে বাজার আছে তাতে জায়গা হয় না। সড়কে সড়কে আমরা আম বিক্রি করি। একটু বৃষ্টি হলেই কাদা হয় হাঁটু পর্যন্ত। ভ্যান, অটোরিকশা, ছোট ট্রাক, বড় ট্রাক আসতে পারে না। আম নিয়ে খুব চিন্তা হয়। এমনিতে বৈশাখী ঝড়ে আম পড়ে গেছে। এরপরেও যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে আম বেচতে পারব না। কারণ আম বিক্রির জন্য কোনো শেড তৈরি করা হয় না বা হয়নি।’
মাহমুদুল হক মানু নামে আরেক চাষি বলেন, ‘পদাগঞ্জে এত বড় একটা হাট, কিন্তু রাস্তা নিয়ে কারো কোনো চিন্তা নাই। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা বিক্রি হয়, অথচ ব্যাংক নাই। রংপুর যায়া ব্যাংকোত টাকা দিয়া আসতে হয়।’
মনসুর আলী নামে এক ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলেন, ‘এবারে আমের একটু সংকট হবে। আমের যদি দাম না পাই, তাহলে লোকসান হবে না। কিন্তু অন্যান্য বার যে মুনাফা পাইছি, এবার সেটা পাব না।’
তিনি বলেন, ‘আমার সঠিক দামটা আমরা যেন পাই। এ জন্য গাড়ির ব্যবস্থা চাই, ট্রাক বা ট্রেন হলে ভালো হয়। কারণ, ভ্যানে করে, সাইকেলে করে শহরে আম নেয়া খুবই কঠিন।’
আম বিক্রি করে ভাগ্যবদল অনেকের
স্বাদ এবং গন্ধে অতুলনীয় হাঁড়িভাঙা আমের মৌসুমি ব্যবসা করে ভাগ্য বদল করেছেন অনেকেই। মাত্র এক মাসের ব্যবসায় সংসারের অভাব এবং বেকারত্ব দূর হয়েছে অসংখ্য পরিবারের।
রংপুরের মিঠাপুকুর তেয়ানী এলাকার যুবক রমজান আলী বলেন, ‘আমি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। প্রতিবছর আমি আমের সময় বাড়িতে আসি। নিজের পরিচয় গোপন রেখে ফেসবুকে পেজ খুলেছি। গত বছর ১০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এবারও করব। এতে করে আমার এক বছরের ঢাকায় থাকার খরচ উঠে যায়।’
বদরগঞ্জের শ্যামপুর এলাকার শিক্ষিত যুবক সাজু বলেন, ‘আমি কারমাইকেল কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স করেছি। চাকরির অনেক খোঁজ করেছি বাট হয়নি। কিন্তু পরে জমি লিজ নিয়ে আম চাষ শুরু করেছি। এখন চাকরি করা নয়, চাকরি দিচ্ছি। আমার চারটি বাগান আছে। সেখানে ১৬ জন লোক কাজ করে।’
এ রকম শত শত যুবক আছেন, যারা অনলাইনে কিংবা জমি ইজারা নিয়ে আম চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন।
আম সংরক্ষণ ও গবেষণা দাবি
আমবাগানের মালিক আখিরাহাটের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি ১৯৯২ সাল থেকে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ করে আসছি। এখন পর্যন্ত আমার ২৫টির বেশি বাগান রয়েছে।
‘আমার দেখাদেখি এখন রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের কয়েক লাখ গাছ রোপণ করেছেন আমচাষিরা। আমার মতো অনেকের বড় বড় আমবাগান রয়েছে।’
তিনি বলেন, আম-অর্থনীতির জন্য শুরু থেকেই হাঁড়িভাঙা আমের সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আম চাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ হাঁড়িভাঙাকে জিআই (পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে ঘোষণার দাবি করে আসছিলাম আমরা। কিন্তু এই দাবি এখনও বাস্তবায়ন বা বাস্তবায়নের জন্য যে উদ্যোগ থাকার কথা, সেটি চোখে পড়ে না।’
তিনি বলেন, ‘এই আম নিয়ে গবেষণা এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলেও আমের উৎপাদন ও বাগান সম্প্রসারণ থেমে নেই। এ নিয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
যা বলেন জেলা প্রশাসক
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, আগামী ২০ জুন সরাসরি কৃষকের আম বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই দিন সদয় অ্যাপস নামে একটি হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির অ্যাপস চালু করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, হাঁড়িভাঙা আমের বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সেটি মনিটরিং করা হবে। আম বাজারজাত করবে যেসব পরিবহন, সেখানে স্টিকার লাগানো থাকবে, যাতে পথে-ঘাটে কোনো বিড়ম্বনার শিকার হতে না হয়। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি পরিবহন সুবিধার বিষয়টিও দেখা হবে।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে কুপিয়ে পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় ওই আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ও ত্রিশাল থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকেলে জেলার ডিবি পুলিশের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিন ভোর চারটার দিকে জেলার ভালুকা থানাধীন সিডস্টোর এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ত্রিশালের ধানীখোলা ইউনিয়নের শিমুলিয়াপাড়া এলাকার মূল আসামি ৫৯ বছর বয়সী বেদেনা খাতুন, তার ৪৪ বছর বয়সী ছেলে হারুন মিয়া ও ২৫ বছর বয়সী মো. নাঈম।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের ওসি মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আহত তিন পুলিশ কর্মকর্তা এখন শঙ্কামুক্ত।’
এর আগে, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি বেদেনা খাতুনকে গ্রেপ্তার করতে তার বাড়িতে যান থানার ৩০ বছর বয়সী উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন, ৩৫ বছর বয়সী সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) গোলাম রসুল এবং ৩৯ বছর বয়সী এএসআই রাকিব। আসামিকে বাড়িতে পেয়ে গ্রেপ্তার করতে চাইলে তার ছেলে হারুন ও নাঈম তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে আরও পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনার পরদিন সোমবার দুপুরে এসআই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় মেহেদী হাসান রাকিব নামে এক যুবককে মারধরের মামলায় চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনুকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালত এ আদেশ দেয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জেনারেল রেকর্ড অফিস (জিআরও) শাখার পুলিশ পরিদর্শক মো. আবু তাহের বলেন, ‘পাঁচলাইশ থানার মেহেদী হাসান নামে এক যুবককে অপহরণ, মারধর ও হত্যার হুমকির মামলায় কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।’
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মার্চ মামলার বাদী মেহেদী হাসান রাকিব চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে একুশে ড্রাগ হাউজ নামে একটি ফার্মেসিতে ছিলেন। এ সময় সেখানে থাকা বন্ধু অভিজিতের মোবাইলে ফোন করে কথা বলতে থাকেন কাউন্সিলর টিনু। পাশে মোবাইলে অন্যজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন রাকিবও।
কণ্ঠস্বর শুনে টিনু অভিজিতের কাছে তার পাশে থাকা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান। রাকিবের নাম শুনে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং তার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কথোপকথনের কয়েক মিনিটের মধ্যে ৫-৬টি মোটরসাইকেলে করে ১৫-২০ জন যুবক ফার্মেসির সামনে আসেন।
রাকিবকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে কাপাসগোলা এলাকায় চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কাউন্সিলর আগে থেকেই বসা ছিলেন। রাকিবকে চেয়ারে বসিয়ে কয়েকজন যুবক ঘিরে ধরেন এবং কাউন্সিলর তাকে মারধর করেন ও হত্যার হুমকি দেন।
এ ঘটনায় গত ৪ মার্চ নগরের পাঁচলাইশ থানায় কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনুসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন রাকিব।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে ধানখেতে পাতা হয়েছিল ইঁদুর মারার ফাঁদ। সেখানে সবজি তুলতে গিয়েছিলেন বাড়ির বউ। নিজের অজান্তে ওই ফাঁদ স্পর্শ করে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। তাকে বাঁচাতে গিয়ে একই ফাঁদে আটকে যান শাশুড়িও। সেখানেই চিরবিদায় নিয়েছেন দুজনই।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে খুলনার দাকোপ উপজেলার হরিণটানা গ্রামে বউ ও শাশুড়ির এমন মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন হরিণটানা গ্রামের চিত্তরঞ্জন গাইনের স্ত্রী ৬৫ বছর বয়সী চপলা গাইন ও তার পুত্রবধূ ৩৬ বছর বয়সী টুম্পা গাইন।
এ প্রসঙ্গে দাকোপ থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল হক বলেন, ‘ধানখেতে বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের ভােট দেব না, দেখা হলে সালাম দেবা না, কোনো অনুষ্ঠান দাওয়াত দেব না, ওয়াজ মাহফিলসহ ধর্মীয় বা কােন অনুষ্ঠানে অতিথি করবা না। তাহলে তারা আর কোনো উপায় না পেয়ে লজ্জায় পড়ে হলও মাদক ব্যবসা ছাড়বে।
মঙ্গলবার কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলায় এক শিক্ষাবত্তি প্রদান অনুষ্ঠান এসব কথা বলেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগঞ্জ টি এ হাইস্কুল এন্ড কলেজ মাঠে এ আয়ােজন করে আবদুর রহমান মাস্টার ফাউন্ডেশন। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ৩৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪৬৯ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তির সনদ ও আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেয়া হয়। প্রধান আলােচক ছিলেন ফাউন্ডশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মােহাম্মদ আক্তারুজ্জামান রিপন।
১০ বছর ধরে শিক্ষাবত্তি প্রদান করে আসছে ফাউন্ডেশনটি। ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৪টি মাদ্রাসারসহ মোট ৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭ম থেকে দশম শ্রেণির তিনজন করে ৪৩২ জন এবং ২০২৪ সাথে এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৩৭জনসহ মােট ৪৬৯জনকে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার মােহাম্মদ আক্তারুজ্জামান রিপন বলেন, আমাদর সন্তানদের শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করার জন্য বড় করি। কিন্তু এটা হওয়া উচিৎ নয়। যদি বাবা-মা চায় সন্তান বড় হয়ে ভােলা হবে, ভদ্র হবে, ন্যায়নিষ্ঠাবান ও সৎ পথ থাকব। তাহলে আমাদের সমাজ আয়নার মত সুন্দর হবে।
অনুষ্ঠান বিশষ অতিথি ছিলন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাে.মােশারফ হাসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম, উপজলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আলমগীর ভূঞা। সভাপতিত্ব করেন টি এ হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মােহাম্মদ মােজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রায় এক সপ্তাহ শান্ত থাকার পর মিয়ানমারের ভেতরে ফের গোলাগুলি ও ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ পাওয়া গেছে, দফায় দফায় হচ্ছে মর্টার শেলের বিকট শব্দ।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এমন শব্দে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্ত এবং টেকনাফ পৌরসভায় ১৮-২০টি গ্রাম কেঁপে উঠেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হ্নীলার চৌধুরী পাড়া ও হোয়াইক্যং সীমান্ত এবং টেকনাফ পৌরসভার সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির পাশাপাশি অন্তত ২০ থেকে ৩০টি মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের উত্তরে নাকপুরা এলাকা এবং পূর্বে ধনখালী, হাসুরাতা, নাইক্ষ্যংদিয়া, গর্জনদিয়া ও সংক্ষদাবিল এলাকায় সংঘাতের কারণে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাত ১২টার পর থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘দুই মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইনে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাত চলছে। উভয়পক্ষে গোলাগুলি, মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। যে কারণে এর প্রভাব এসে পড়ছে এপারে মানুষের ওপর।’
হ্নীলার বাসিন্দা ইউনুস বলেন, তারাবির নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঠিক রাত ১২টার পর মর্টার শেলের বিকট শব্দে বাড়ি-ঘর কেঁপে উঠল। তখন ভয়ে ঘুম ভেঙে যায়। বেশ কয়েকটি শুনতে পায় মর্টার শেলের শব্দ। এখন সবাই আতঙ্কে আছে।
শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের ইজারাদারের টোল আদায়কারী মোহাম্মদ ছিদ্দিক জানান, মঙ্গলবার সেহেরির সময় নাফ নদের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তর থেকে বেশ কয়েকটি গোলাগুলি ও ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শুনতে পেয়েছে লোকজন। এতে নাফ নদে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা আতঙ্কে রয়েছেন।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, রাত ১২টার দিকে বিকট শব্দের মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে টেকনাফ পৌরসভার কয়েকটি গ্রাম। এতে লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ওপারে সংঘাতের কারণে মাঝে মাঝে এপারে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। তবে আমরা নজরদারি করছি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যেন না করে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দিকী মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আগের দিন একই আদালত তাকে এক দিনের রিমান্ড দিয়েছিল।
একই মামলায় অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী দু দিনের রিমান্ডে আছেন।
কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ হোসেন রিমান্ডের আদেশের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুজনকে গ্রেপ্তারের পর কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল ডিএমপির কাছ থেকে দুজনকে রোববার রাতে কুমিল্লায় নিয়ে আসে।
গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লার বাসায় অবন্তিকার ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি প্যাঁচানো ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়।
মৃত্যুর আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি, যাতে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন বলে জানান। আত্মহত্যার জন্য সহপাঠী আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন এ শিক্ষার্থী।
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে পুলিশ আটক করার কথা শনিবার রাতে জানান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
পাবনা বেড়া উপজেলায় রাতের অন্ধকারে কবরস্থান থেকে ১৫টি কঙ্কাল চুরির অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার আমিনপুরে সোমবার রাতে নতুন বাজার গোরস্থানে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা।
চুরি হওয়া এক মরদেহের স্বজন মাসুদ রানা বলেন, ‘এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। মহাসড়কের পাশে এই কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। আমাদের দাবি পুলিশ দ্রুত এই ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।’
আরেক স্বজন জাহিদ হাসান বলেন, ‘এতো দিন আমরা দেখে আসছি আমাদের দেশে বেঁচে থাকা অবস্থায় মানুষের নিরাপত্তা নেই। এখন দেখছি মরে গেলেও মানুষের লাশেরও নিরাপত্তা নেই।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে আমিনপুর থানার ওসি হারুন-উর-রশীদ বলেন, রাতের কোনো এক সময় কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আজকে সকালে স্বজনরা কবরস্থানে দোয়া করতে গেলে সেখানে কবর খোঁড়া অবস্থায় দেখতে পান।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে ও তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য