রাজবাড়ী গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় সারা বছরই থাকে গোখাদ্যের সংকট। গবাদিপশুর খাবারের উচ্চমূল্য আর এলাকায় প্রয়োজনীয় কাঁচা ঘাস না পাওয়ায় এ নিয়ে সমস্যা পোহান কৃষক-কৃষানিরা।
বর্ষায় এ সংকট কিছুটা কাটে। এ সময় পদ্মার বিভিন্ন চরে জন্মায় প্রচুর পরিমাণে কড়চা, বন, দুবলা ও বাকশীজাতীয় ঘাস। তবে দুর্গম চরের এসব ঘাস কাটতে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে তাদের পাড়ি দিতে হয় উত্তাল পদ্মা।
স্থানীয় লোকজন জানান, নদী তীরবর্তী এলাকার এসব মানুষের অধিকাংশ নদীভাঙনের শিকার ভূমিহীন কৃষক। সম্পদ বলতে কিছু গরু-ছাগলই তাদের সম্বল। কিন্তু নিজেদের জমি না থাকায় তারা পশু পালনে ঘাস চাষও করতে পারেন না। এ জন্য দুর্গম চরাঞ্চলে ঘাসই তাদের ভরসা।
গৃহপালিত পশুর খাবার সংগ্রহ করতে তাই এখন প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন এ এলাকার শ শ নারী-পুরুষ।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় এ নিয়ে কথা হয় কৃষক ওসমান খানের সঙ্গে। তিনি জানান, তার তিনটি গাভি, একটি ষাঁড় ও চারটি ছাগল আছে। সহায়সম্পদ বলতে এগুলোই। নিজের কোনো জমিজমা নেই। সব নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, এসব গরু-ছাগল পালনে প্রচুর খাবার লাগে। খড়, কুঁড়া, ভুসির দাম অনেক। এ জন্য বর্ষা মৌসুমে চর থেকে ঘাস কেটে এনে খাওয়ান।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাহিরচর সাত্তার মেম্বারের পাড়ার সরূপী বেগম জানান, গোখাদ্যের সংকটে নিজের দুটি গরু ও পাঁচটি ছাগলের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁচা ঘাস সংগ্রহ করে আনেন।
ঝুঁকির বিষয়ে বলেন, ‘নিজেরা ঠিকমতো খাইবার পাই না পাই, বোবা গাই-বাছুর গুলানরে তো আর ক্ষিধায় কষ্ট দিবার পারি না। তাই শত কষ্ট অইলেও ওগের জন্যি পদ্মা-যমুনা পাড়ি দিয়া দুর্গম চরে যাই ঘাস আনতে।’
স্থানীয় নুরজাহান বেগম, রুস্তম কাজী, আব্দুল বেপারিসহ ২৫-৩০ নারী-পুরুষ ঘাস কাটতে যেতে উঠছিলেন একটি ট্রলারে।
তারা জানান, সকালে পান্তা ভাত বা হালকা নাশতা করে ট্রলারে ওঠেন। সঙ্গে কিছু খাবার নেন দুপুরের জন্য। সারা দিন চরে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ঘাস কাটেন। ফেরেন বিকেলে।
ঝুঁকি ও কষ্ট হলেও বোবা প্রাণীগুলোর আহার জোগাতে এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই বলে জানান তারা।
ট্রলারচালক নাদের মাঝি জানান, তার মতো আরও বেশ কয়েকটি ট্রলারে প্রতিদিন অনেক নারী-পুরুষ বিশ্বনাথপুর, ভাবৈল, বনভাবৈল, চর পালন্দ, আখ পালন্দসহ বিভিন্ন দুর্গম চরে গিয়ে ঘাস নিয়ে আসেন। জনপ্রতি তারা ভাড়া নেন ৪০ টাকা।
তিনি আরও জানান, এ সময় চরে প্রচুর পরিমাণে কড়চা, বন, দুবলা ও বাকশীজাতীয় ঘাস পাওয়া যায়। এ কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত চরগুলোতে যায়।
যাওয়ার সময় তেমন ঝুঁকি না থাকলেও ফেরার সময় অতিরিক্ত লোড থাকায় বেশ ঝুঁকি থাকে। ভরা বর্ষায় তীব্র স্রোত ও বড় বড় ঢেউয়ের কারণে এ ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন:হাওরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক অতিবৃষ্টি আর আকষ্মিক বন্যা। প্রতিবছর বৈশাখ আসার আগেই পাহাড়ি ঢল আর বন্যার আতঙ্কে থাকেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। ফসল রক্ষায় অনেক সময়ই অপরিপক্ব ধান গাছে কাস্তে চালাতে হয় তাদের।
চলতি মৌসুমে হাওরের লাখ লাখ হেক্টর জমিতে সবুজ ধানের গালিচায় সোনালী রং ধরে গেছে। আর সে সুবাদে বৈশাখের শুরুতেই কৃষকরা ধান কাটতে নেমে পড়েছেন হাওরে। প্রকৃতি প্রতিকূল হয়ে ওঠার আগেই পুরো ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরে এক ফসলি বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন দেখে বেজায় খুশি কৃষকরা। তারা আশা করছেন, অনুকূল আবহাওয়ার সুবাদে এবার তারা শতভাগ ধান গোলায় তুলতে পারবেন।
কৃষি অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরে ১০ লাখ কৃষক বোরো ধানের আবাদ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার সুনামগঞ্জে ২৬২ হেক্টর বেশি জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে। ধানগুলো বর্তমানে হাওরে কাচা-পাকা অবস্থায় রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার বরদল গ্রামের কৃষক মন্তাজ মিয়া বলেন, ‘আমি বিআর-৯২ ধান লাগিয়েছিলাম। মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা পানির সংকট ছিল। তবে এতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ফলন ভালো হয়েছে। আর চার থেকে পাঁচ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে আমার জমির ধান কাটা শেষ করতে পারব।’
সুনামগঞ্জ সদরের গৌরারং ইউনিয়নের কৃষক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ধানের ফলন ভালো হয়েছে। মাঠে ধান এখন পাকা ও আধপাকা অবস্থায় রয়েছে। এই সময়ে শিলাবৃষ্টি হলে আমরা মারা পড়বো। আশা করছি আনন্দের সঙ্গেই আমরা সব ধান ঘরে তুলতে পারব।’
শাল্লা উপজেলার আঙ্গারুয়া গ্রামের কৃষক আজমান গণি বলেন, ‘সঠিক সময়ে হারভেস্টার মেশিন ও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলে ফসল কাটা ও মাড়াই সহজ হবে। শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা না হলে খুশি মনে ধান কাটা যাবে। কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া সঠিক সময়ে ঘরে ধান উঠাতে পারাটা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ৫ মে’র মধ্যে হাওরের শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরামর্শের জন্য কৃষকদের পাশে রয়েছেন। হারভেস্টার মেশিনগুলো প্রস্তুত রয়েছে।
‘সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা ছিলো ২ লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার ৯ লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টন চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।’
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে কৃষি খাতে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তিন বছরে কৃষি উন্নয়নে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।
‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)’ অনুসারে, এই বিনিয়োগ খাদ্য নিরাপত্তা ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয়। সূত্র: ইউএনবি
জিডিপিতে হ্রাস প্রবণতা সত্ত্বেও এটি বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষিনির্ভর সংখ্যাগরিষ্ঠদের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য উৎপাদন ও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের গৃহীত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে- উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, যান্ত্রিকীকরণ-সেচ সম্প্রসারণ এবং বীজ ও সারের মতো সাশ্রয়ী মূল্যের উপকরণের প্রাপ্যতা বাড়ানো।
নীতি নথিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সেচের জন্য ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়ানো, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি সমাধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং ফসল পরিচর্যার জন্য রিমোট সেন্সিং নিয়োগ করা।
সরকার একটি টেকসই ও স্বনির্ভর কৃষি কাঠামো গড়ে তুলতে ভর্তুকি, আর্থিক প্রণোদনা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই খাতকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উপখাত থেকেও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এটি কেবল জিডিপি যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৯১ শতাংশই বৃদ্ধি করে না, বরং জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং জীবিকার সংস্থান করে। এই ক্ষেত্রগুলোর অর্জনের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য এসব খাত অত্যাবশ্যক।
ভবিষ্যতে এসব খাতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি গ্রহণ এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য বিশেষ করে ছোট ইলিশের (জাটকা) জন্য উন্নয়ন প্রকল্প চালু করতে প্রস্তুত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
টেকসই কৃষির গুরুত্ব বিবেচনায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা আরেকটি মৌলিক ক্ষেত্র। আন্তঃসীমান্ত নদী থেকে ন্যায়সঙ্গত পানির হিস্যা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জলাশয় খনন ও উপকূলীয় বনায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা উন্নয়নের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির হুমকির মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সরকার এই প্রভাবগুলো হ্রাস করার বিস্তৃত কৌশলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাটি জলবায়ু সম্পর্কিত বাধাগুলোর বিরুদ্ধে সহনশীলতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাত ও সম্প্রদায়গুলোকে সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই বহুমুখী প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের কৃষি ঐতিহ্যকে কেবল সুরক্ষাই নয়, বরং এগিয়ে নিতেও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মাগুরা জেলায় জনপ্রিয় হচ্ছে চিয়া সিডের চাষ। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাবার তালিকায় চিয়া সিড এখন বেশ জনপ্রিয়।
চিয়া সিড মূলত মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া উদ্ভিদের বীজ। মধ্য আমেরিকায় অনেক বেশি পাওয়া যায় এ শস্য। এটি সাধারণত শস্যের তালিকায় পড়লেও একে এক ধরনের ভেষজও বলা হয়।
চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের দানার মতো। পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডম কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি ফসল হিসেবেও লাভজনক।
মাগুরা সদর উপজেলার নালিয়ারডাঙ্গি গ্রামের প্রতিবন্ধী কৃষক আক্কাস আলী শুরু করেন চিয়া সিডের চাষ। গত বছর কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে চিয়া সিডের চাষ করেছিলেন তিনি। এ বছর তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে আরও ১৪ জন কৃষক চাষ করেছেন। আগামীতে চিয়া সিড চাষের জন্য তার নিজ এলাকাসহ আশপাশের জেলার চাষিরাও তার কাছে বীজ চেয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, আমাদের এলাকার প্রতিবন্ধী কৃষক আক্কাস আলীর মাধ্যমেই নতুন নতুন পদ্ধতিতে চাষ শিখছি। পাশাপাশি নতুন ধরনের ফসলেরও চাষ হচ্ছে। তেমনি চিয়া সিড আমাদের কাছে নতুন একটি চাষ। চিয়া সিড খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপকার হয়। পাশাপাশি এর চাহিদা ও বাজার দর বেশি হওয়ায় কৃষকরা এটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
কৃষক আক্কাস আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর অল্প পরিসরে চিয়া সিড চাষ করি। মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্র আমাকে এ বীজ দেয়। এ বছর আমি ছাড়াও আমার এলাকার ১৪ জন চাষি চিয়া সিড করেছে।’
পুষ্টিকর ও দাম ভাল হওয়ায় আগামী বছর একশ’র উপরে চাষি চিয়া সিড চাষ করবেন বলে আশা তার।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চিয়া সিড সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত। এটির গুণাগুণ ও বাজারমূল্য প্রচুর। যে কারণে আমরা কৃষকদের এটি চাষে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
৪০ কেজিতে এক মণ হলেও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের হাট-বাজারগুলোতে এক মণ শসা বিক্রি করতে কৃষককে দিতে হচ্ছে ৪২ কেজি ৩০০ গ্রাম।
এতে কৃষকরা প্রতি কেজি হিসেবে পাঁচ টাকারও কম পাচ্ছে, তবে এ শসা বাজারে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে পাইকাররা।
অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের জাঁতাকলে পড়ে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে জানান ক্ষুদ্র কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, তারা এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে শসা আবাদ করেন। এ সুযোগে পাইকারি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা কম দামে শসা কিনে বেশি দামে বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভারী করেন। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত বছর ২৬৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হলেও এ বছর ২২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। শসার দাম কম পাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শসা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে প্রতি বছর শসার আবাদ কমার সম্ভবনা রয়েছে।
কৃষকরা জানান, উপজেলার প্রত্যেকটি বাজারে শসার পাইকাররা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যখন যা বলে, সে দামেই বিক্রি করতে হয়। তাদের নির্ধারিত দামে শসা বিক্রি না করলে শসা খেতে পচে নষ্ট হয়। গত বছরও অসাধু পাইকারদের জন্য অনেক কৃষক লাভের মুখ দেখতে না পেরে শসা চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে একসময় শসা উৎপাদন একেবারেই কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেক কৃষকরা।
ধুরাইল ইউনিয়নের নাগলা বাজার এলাকার কৃষক জাহিদুর রহমান বলেন, ‘২৫ শতাংশ জমিতে শসার আবাদ করেছি। এতে সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। রমজানের শুরুতে ভালো দাম পেলেও দিন যত যাচ্ছে, পাইকাররা দামও কমিয়ে দিচ্ছেন। এখন ২০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।’
জুগলী ইউনিয়নের জুগলী এলাকার কৃষক আহম্মদ মিয়া বলেন, ‘৩০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছি। এক মণ ৪২ কেজি হিসেবে শসা কিনেন পাইকাররা। আমাদের কাছ থেকে একেবারেই কম দামে কিনে ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আমরাও লাভবান হতে পারছি না, ক্রেতারাও প্রতারিত হচ্ছেন।’
পৌর বাজারে শসার পাইকার মনোয়ার হোসেন লিটন বলেন, ‘এ উপজেলার শসা দূরদূরান্তের পাইকাররা ঢাকাসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে ট্রাক কিংবা পিকআপ ভর্তি করে নিয়ে আড়তে বিক্রি করেন৷ এরপর ছোট পাইকারসহ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। সড়কে গাড়ির খরচসহ কয়েকটি হাত ঘুরে ক্রেতা পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়। আমাদের উপজেলার বাজারগুলোতে ক্রেতার চাহিদার উপর নির্ভর করে দাম উঠানামা করে।’
শসা ৪২ কেজিতে এক মণ নেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর যাবৎ কৃষকদের কাছ থেকে সব পাইকাররা এভাবেই কিনছে। তাই আমিও এভাবেই কিনি।’
শসার দাম সম্পর্কে জানতে সরেজমিনে ময়মনসিংহ শহরতলীর শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে কথা হয় খুচরা শসা বিক্রেতা মোরশেদ মিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও খুচরা ব্যবসায়ীরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা হিসেবে শসা বিক্রি করলেও এখন ২০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নসহ জেলার তারাকান্দা, ফুলপুর ও হালুয়াঘাট থেকেও শসা আসে।
‘পিকআপ ভর্তি করে পাইকাররা নিয়ে এসে আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। তারা আমাদের কাছ থেকে বেশি দামে বিক্রি করায়, আমরাও কয়েক টাকা লাভে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি।’
হাকিমুল নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘কৃষক আর ক্রেতা সবসময় ঠকে। মূলত সিন্ডিকেট কারণেই এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিয়মিত অভিযান চালালে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে শসা কিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ করে বিক্রি করতে হবে। অতিরিক্ত দামে কখনোই বিক্রি করা যাবে না। বাজারগুলোতে অভিযান চালানো হবে। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:বীজের বাড়তি দাম, আবাদের মাঝ সময়ে শিষ মরা রোগের সঙ্গে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন মেহেরপুরের অনেক গমচাষি। কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন নিয়ে তাদের মধ্যে ছিল শঙ্কা, তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে গমের বাম্পার ফলন হওয়ার পাশাপাশি বাজার দর ভালো পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।
জেলায় এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে গম ৪.১ টন উৎপাদন হয়েছে। মণ প্রতি গম বিক্রি করছেন ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পযর্ন্ত। গমের মাঠের অধিকাংশ গমের দানাও মোটা তাই কৃষকদের ফলন বেড়েছে।
মেহেরপুর জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে গম চাষ হয়েছে, যা আমদানি নির্ভরতা কমাতে ভূমিকা রাখবে। তা ছাড়া অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে সঠিক সময়ে কৃষকরা মাঠ থেকে ফসল তুলতে পেরেছেন। এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই আগ্রহ বেড়েছে গম চাষে।
জেলার তিনটি উপজেলা গাংনী, মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলার ফসলি মাঠ পরিদর্শন করে দেখা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গমের আবাদ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মাঠ থেকে পাকা গম এখন সোনালি বর্ণ ধারণ করেছে। ফসলের মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পাকা গম কেটে মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
অধিকাংশ গম ঘরে উঠলেও এখনও মাঠেই রয়েছে অনেক গম। চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে মেঘের চোখ রাঙানি থাকলেও আধুনিক কৃষি পদ্ধতির কারণে গম মাড়াইয়ের কাজ অনেকটা সহজতর হয়েছে।
কৃষি বিভাগের ভাষ্য, চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে, যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৬৬ টন। আর এবার প্রতি হেক্টর জমিতে চার দশমিক এক টন উৎপাদন হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর গমের দানা বেশ বড় বড় হয়েছে। গমের বাজার মূল্যও ভালো। মণপ্রতি গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পযর্ন্ত।
জেলার গাংনী উপজেলার নিশিপুর গ্রামের গমচাষি আনোয়ার বলেন, ‘এ বছর এক বিঘা জমিতে আমি গম কেটে মাড়াই শেষে ২০ মণ গম পেয়েছি, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড। আর আমার নিজের জমি হওয়ায় সব মিলিয়ে ছয় হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আর বতর্মানে প্রতি মণ গম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।’
আরেক চাষি তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেড় বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। শুরুতে গম ভালো হয়েছিল, মাঝখানে যখন শিষে গমের দানা বাদতে শুরু করে, ঠিক তখনই শিষ মরা রোগ শুরু হয়।
‘ভয় হয়েছিল ভালো ফলন পাব কি না, তবে আল্লাহর রহমতে শেষমেশ ভালো ফলন পেয়েছি। আবার এ বছর গমের দাম বেশ ভালো।’
একই এলাকার গমচাষি ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আমাদের মাঠে এবার ব্যাপক গমের আবাদ হয়েছে। আমি দুই বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছি। আজ সপ্তাহখানেক হবে গম কেটে মাড়াই শেষে ফসল ঘরে তুলেছি।’
‘আমার এক বিঘা জমিতে ফলন পেয়েছি ১৭ মণ, আরেকটিতে পেয়েছি ২০ মণ হারে। যেখানে কম ফলন হয়, সেই গমটিতে শিষ মরা রোগ হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম ফলন একেবারে পাব না, তবে আল্লাহ খুব ভালো ফসল দিয়েছেন।’
গম ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আড়তে সপ্তাহখানেকের বেশি হবে স্থানীয় গম আসতে শুরু করেছে। এ বছর কৃষকদের গমের ফলন বেশ ভালো। সে হিসাবে আড়তে গমের আমদানি হচ্ছে ভালো। আমরা বতর্মানে আকারভেদে প্রতি মণ গম সংগ্রহ করছি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।’
আরেক ব্যবসায়ী শিপন বলেন, ‘আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গম সংগ্রহ করে থাকি। আজ ১০ দিনের মতো হবে গম সংগ্রহ শুরু করেছি। এবার মাঠের অধিকাংশ গমের দানা বেশ মোটা, যার ফলে কৃষকদের ফলন বেড়েছে। তা ছাড়া গত বছরের চেয়ে এ বছর মাঠে গমের আবাদ বেশি।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কৃষ্ণকুমার হালদার বলেন, ‘মেহেরপুরে ব্লাস্ট প্রতিরোধী উচ্চফলনশীল গমের জাত বারি-৩৩ ও ডব্লিউএমআইআর গম-৩ নামের দুটি গমের জাত উদ্ভাবনের ফলে এ অঞ্চলে গম চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।
‘আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিতে চাষিদের আগ্রহ বাড়ায় গম চাষাবাদ থেকে মাড়াইয়ের পদ্ধতি অনেক সহজতর হয়েছে। তা ছাড়া গমের বতর্মান বাজারদর ও চাহিদাও বেশ ভালো, যার ফলে চলতি মৌসুমে গম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।’
ফরিদপুরে ফসলি মাঠে ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও চাষে কৃষকের দিনবদল হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার তারা বিঘাপ্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ পাবেন বলে আশা করছেন।
প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করতে এক লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। সে হিসাবে জেলাজুড়ে চাষিদের সবমিলিয়ে এবার প্রায় কোটি টাকার মতো করে লাভ থাকবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক দম্পতি লাভলী আক্তার ও ইনতাজ মোল্লা। ১২ বছর আগে মাত্র দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেন এই দম্পতি। সেবার ভালো লাভ পেয়ে প্রতিবছর বাড়িয়ে চলেছেন আবাদি জমির পরিমাণ। এবছর ৪০ বিঘা জমিতে তারা পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন।
এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরাতো তাদের। তবে পেঁয়াজ বীজের কল্যাণে এই পরিবারটি এখন কোটিপতি। নিজস্ব জমিতে তাদের রয়েছে পাকা ইমারতের বাড়ি।
দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছেলে আর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া একটি মেয়ে নিয়ে এখন তাদের সুখের সংসার। প্রতিবছর তারা পেঁয়াজ উপার্জনের টাকায় নিজেদের সম্পত্তি বাড়াচ্ছেন, কিনছেন জায়গা-জমি।
কৃষক লাভলি আক্তার বলেন, ‘বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে দেখি শ্বশুর বাড়ির লোকেরা পেঁয়াজ বীজের চাষ করে। আমিও স্বামীকে সহায়তায় নামি। এতে প্রথম বছরেই ভালো আয় হয় আমাদের। এরপর আর থেমে থাকিনি আমরা।
‘আমি এই পেঁয়াজ বীজের টাকা দিয়েই ৭৫ লাখ টাকা খরচ করে বাড়িতে বিল্ডিং তুলেছি। প্রতিবছরই নতুন জমি কিনেছি। একসময় আমাদের পক্ষে এসব সম্ভব ছিল না। তবে এখন তা আমাদের কাছে বাস্তব।’
পেঁয়াজ বীজ গাছের সাদা কদম তথা গোলাকারের বড় ফুল শুকিয়ে বের হয় কালো দানা। আকাশ ছোঁয়া বাজার দরের কারণে একে বলা হয় ‘কালো সোনা’। একটা সময় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর থাকলেও দিন দিন দেশে এই ‘কালো সোনা’র আবাদ বাড়ছে।
পেঁয়াজ চাষে দেশের মোট বীজ চাহিদার ৫০ শতাংশ উৎপাদিত হয় ফরিদপুরে। চলতি মৌসুমে যদিও প্রাকৃতিক পরাগায়নের অভাবে আবাদের তুলনায় পেঁয়াজ বীজের উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা, তারপরও এবার জেলার চাষিদের সবমিলিয়ে পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন তিন শ’ কোটি টাকার বাজার ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলায় মোট এক হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। গত বছর যা ছিল এক হাজার ৮৬৭ হেক্টর। এসব জমি থেকে এবার প্রায় সাড়ে সাত টনের বেশি বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো লাভ পাওয়ার কারণেই এই ফসলের দিকে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
এবার জেলাটিতে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে জেলা সদরে, প্রায় ২০৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন কৃষকরা। এরপর ভাঙ্গায় ১৭৬, সদরপুরে ১৪৬, চরভদ্রাসনে ৬৮, মধুখালীতে ৬৮, বোয়ালমারীতে ৩৪, নগরকান্দায় ২৮, সালথায় ২২ ও আলফাডাঙ্গায় ৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে।
তবে এ বছর মৌমাছির অভাবে পেঁয়াজ ফুলে পরাগায়ণের মাত্রা কমেছে। নিরুপায় কৃষক নিজ হাতে এক ফুলের রেণুর সঙ্গে আরেক ফুলের রেণুর পরাগায়ণের পন্থাও বেছে নেন অনেক খেতে, কিন্তু এতে প্রাকৃতিক পরাগায়ণের মতো ভালো ফলন হয়নি।
ফলে গত বছরের চেয়ে কিছু বেশি জমিতে চাষ হলেও এবার উৎপাদন তুলনামূলক কম হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। এই সুযোগে ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানি ও বাড়তি মূল্য গোনার আশঙ্কাও রয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজের আমদানি ঠেকানো না গেলে বিপদে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরাও।
স্থানীয় এক কৃষকের ভাষ্য, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানি করা হলে তা সার্বিকভাবে ক্ষতিই ডেকে আনবে। কারণ, ভারত থেকে আনা বীজ নিম্নমানের হয়, তাতে ভালো ফলন হয় না।’
পেঁয়াজ বীজ আবাদে ছোট্ট শিশু প্রতিপালনের মতোই যত্নশীল থাকতে হয়। কোনোরকম অযত্ন হলে ফলন নষ্ট হয়ে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে খেতে বীজের আবাদ শুরু হয় যেখান থেকে ফলন পেতে লেগে যায় এপ্রিল-মে মাস। জমি থেকে তোলার পর এক বছর পর্যন্ত এই বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। পরবর্তী বছর কৃষকরা এই বীজ সংগ্রহ করে বপন করে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে জেলার কৃষকরা এবার সাড়ে সাত টন বীজ উৎপাদন করবে। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর জেলার বীজ চাষিদের সমস্যা নিরসনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের সব ধরনের পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে আসছে। এতে তারা এ সেক্টরে দিন দিন উন্নতি করতে পারছেন।’
আরও পড়ুন:গত মৌসুমে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার মাদারীপুরে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। মাঠে মাঠে সরিষার ফুলের সমারোহ দেখে বাম্পার ফলনের আশা করলেও এবার আশানুরূপ ফলন পাননি কৃষক। এমনকি গতবারের তুলনায় এবার দামও কম পাচ্ছেন সরিষা চাষিরা। ফলে আগামীতে সরিষা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে জেলার কৃষক।
ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে মাদারীপুরে সরিষার আবাদ বেড়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত দুই মৌসুমের তুলনায় এবার অন্তত ৫ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরপর দুবছর নিজের তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন জেলার কালকিনির বিদ্যাবাগীশ এলাকার চাষি আনোয়ার মোল্লা। তবে এবার রোপন মৌসুমে তিনবার বৃষ্টিতে বীজ নষ্ট হয়। এরপরও হলুদের আভরণে হাসি ছিল তার মুখে, কিন্তু গাছে ফলন কম হওয়ায় আগেভাগেই ক্ষেত পরিষ্কার করছেন পরিবার নিয়ে। ফলে এমন লোকসানে আগামীতে আর সরিষার দিকে ঝুঁকতে চান না তিনি।
তার মতো একাধিক সরিষা চাষি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই পরিমাণ জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৬ থেকে ৮ মণ। বাজারে দাম ভালো থাকলে প্রতি বিঘার সরিষা ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি সম্ভব। এতে খরচ বাদে ভালোই লাভ থাকে। কিন্তু এবার সরিষার ফলন ও দাম দুটোই কম থাকায় তেমন লাভবান হতে পারছেন না চাষিরা।
বিদ্যাবাগীশ গ্রামের কৃষক লিটন উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর সরিষার ফলন ও দাম ভালো ছিল। এ কারণে এবার সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। তবে এবার গতবারের মতো ফলন হয়নি; দামও কম। গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি মণে অন্তত ৬ থেকে ৮ শ’ টাকা কমে সরিষা বিক্রি হচ্ছে।’
গত মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলেন কুনিয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর শরীফ। এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন।
এই কৃষক বলেন, ‘এবার ফলন কম হয়েছে। গত বছর বিঘায় ৭ মণ থেকে ৮ মণ ফলন হয়েছিল, কিন্তু এবার ৫ মণ থেকে ৭ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। গত বছর কাঁচা সরিষা ২ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আর শুকনো সরিষা বিক্রি করেছি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২ শ’ টাকায়, কিন্তু এবার দাম খুবই কম।’
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক দিগ্বিজয় হাজরা জানান, ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় ১৫ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবার ২০২৩-২৪ মৌসুমে আবাদ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৮২ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ চাষ বেড়েছে ১ হাজার ৩৯৭ হেক্টর বেশি। এবার সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৭৬ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, ‘এবার চাষিরা দেরি করে সরিষা চাষ শুরু করেছেন। তাছাড়া আবহাওয়াও অনুকূলে না থাকায় এবার সরিষার উৎপাদন গতবারের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে।’
তবে প্রণোদনা দিয়ে চাষিদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য