আফগানিস্তানে পপি চাষ নিয়ে আমেরিকাকে কম মাথা ঘামাতে হয়নি। একটা পর্যায়ে একরকম যুদ্ধ ঘোষণা করে বসলেও খুব একটা লাভ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ও আফগানিস্তানের পপি চাষ যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেটি উঠে এসেছে সংবাদ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভিত্তিক ওয়েবসাইট ভাইসের এক প্রতিবেদনে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেটি অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
২০০১ যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের আগে আফগানিস্তানে ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে পপি চাষ হতো। পপি গাছ থেকেই আফিম তৈরি হয়। আর আফিম থেকে তৈরি হয় হেরোইন ও অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্য। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের অনুমান, আফগানিস্তানে বর্তমানে ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে পপির চাষ হচ্ছে, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি।
দেশটি থেকে পপি গাছ উচ্ছেদ করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৮০০ কোটি ডলার খরচ করলেও লাভ হয়নি। উল্টো তাদের চোখের সামনেই এটি আফগানিস্তানের সবচেয়ে অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বের ৮২ শতাংশ পপি সরবরাহ করে আফগানিস্তান।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য লড়াইগুলোর মতো (দক্ষিণ আমেরিকায় মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো) পপির বিরুদ্ধে লড়াইও পুরোপুরি ব্যর্থ। পেন্টাগন শুধু মাদক উৎপাদক গাছটিকে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে তা নয়, তারা এটি বিস্তারের জন্য উপযুক্ত পরিবেশও সৃষ্টি করে দিয়েছে। জাতিসংঘের অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম ও স্পেশাল ইনসপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশনের (সিগার) অসংখ্য প্রতিবেদনে মাদক নিষিদ্ধকরণে ব্যর্থতার কারণগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পপি চাষের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে আফগান যুদ্ধ। দেখতে একেবারে আলাদা একটি গাছ এটি। একে ব্যবহার বা বহন করার সময় বিশেষ এক ধরনের গন্ধ ছড়ায়, যে কারণে গোপন করা মুশকিল।
প্রজেক্ট অন গভর্নমেন্ট ওভারসাইটে মিলিটারি ফেলো ও যুক্তরাষ্ট্র মেরিন বাহিনীর সদস্য হিসেবে ইরাক ও আফগানিস্তানে কাজ করা ড্যান গ্রেজিয়ার ভাইস নিউজকে বলেন, ‘বহিঃশত্রুর আক্রমণের পর যে ধরনের অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয় তা আফিম চাষের জন্য উপযুক্ত।’
‘আর্থিকভাবে লাভযোগ্য পরিমাণের আফিম চাষের জন্য একটি একেবারে অকার্যকর সরকার দরকার পড়ে বা এমন এক দল লোকের প্রয়োজন হয়, যারা টাকার বিনিময়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকবে। আমাদের আক্রমণ দুটো পরিস্থিতিই (আফগানিস্তানে) তৈরি করে দিয়েছে। আমরা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে দেশটিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢালছিলাম। লোকজনের চোখ সরানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টাকা তখন আফিম উৎপাদনকারীদের হাতে ছিল।’
সিগারের করা ২০১৮ সালের পপি চাষ সংক্রান্ত এক জরিপে দেখা যায়, গাছটি সম্বন্ধে ও এর চাষীদের কাছে এর গুরুত্ব কতটুকু সেটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিষ্কার ধারণা ছিল না। ফলে আফগানিস্তানের অন্য অনেক সমস্যার মতো গাছটিকে নিয়ে কী করা হবে তারা সেই কৌশল বদলাতে থাকে।
সিগারের বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে, কোনো মাদক বিরোধী প্রকল্পই পপি চাষ বা আফিমের উৎপাদনকে কমাতে পারছিল না। নির্মূল প্রচেষ্টা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। আর একই ভৌগলিক এলাকায় সহায়তামূলক টানা নির্মূল প্রক্রিয়া চলেনি। অন্যান্য সহায়ক কার্যক্রমগুলো ছিল একেবারেই ক্ষণস্থায়ী। পপির স্থায়ী বিকল্প তৈরিতে ব্যর্থ হয় সেটি, এমনকি কখনও কখনও পপির উৎপাদন বাড়াতে সেগুলো ভূমিকা রাখে।
এই ব্যর্থতার নিদর্শন হিসাবে অনলাইনে ফক্স নিউজের একটি ক্লিপ প্রায় দেখা যায়। যুদ্ধের শুরুর দিকে রেকর্ড করা ক্লিপটিতে দেখা যায়, এক মেরিনের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন সাংবাদিক জেরাল্ডো রিভেরা। ভিডিওটিতে সেই মেরিন সদস্য রিভেরার কাছে ব্যাখ্যা করেন, কেন স্থানীয় চাষীরা আমেরিকার চাহিদা অনুযায়ী শসা বা তরমুজ চাষের চেয়ে পপি চাষে বেশি আগ্রহী।
রিভেরা বলেন, ‘আমরা পপি চাষ মেনে নিচ্ছি কারণ এখন যদি আমরা এগুলোকে ধ্বংস করি তাহলে জনতা মেরিনদের বিপক্ষে চলে যাবে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে।’
ভিডিওতে রিভেরা একটি হাতে বানানো পপির চাঁছুনি দেখান। চাষের কাজে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রিভেরার জানান, মেরিনরা যতগুলো চাঁছুনি পেয়েছেন তার সবগুলো বাজার থেকে কিনে এনেছেন।
এক মেরিন সদস্য রিভেরাকে বলেন, ‘আমি চাচ্ছিলাম এগুলো যেন পাওয়া না যায়। মূল লক্ষ্যটি হলো, আমরা চাই না পপি চাষ করা হোক। আমরা চাই পপির জায়গা গম, তুলা, শসা বা তরমুজ নিক। এই শস্যগুলোও তারা এখানে চাষ করে।’
দেশটিতে আমেরিকার হামলার পর পপি চাষ ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এটি আফগানদের জন্য ভালো ব্যবসা ছিল। সিগার জানায়, ২০১৭ সালের মধ্যে শুধু পপি চাষ ৫ লাখ ৯০ হাজার বেতনভুক্ত চাকরির সমান কাজের জায়গা তৈরি করে। যে সংখ্যাটা আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্সেসে কাজ করা লোকবলের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পরিস্থিতির কারণে আফিমের চাহিদা অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে যায়। হাইড্রোকোডোন, ফেন্টানাইল, অক্সিকোনটিনের মতো আফিমজাত মাদকের বিক্রি বাড়ায় নতুন আফিমের ক্রেতা তৈরি হয়। লোকে যখন প্রেসক্রিপশন হারিয়ে ফেলে বা আরও কঠিন নেশা করতে চায় তারা হেরোইনের দারস্থ হয়। আর আফগানিস্তানের পপি ক্ষেতগুলো তাদের চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত ছিল।
রাশিয়া বা ইউরোপে কেউ হেরোইন কিনলে সেটির জোগান আফগানিস্তান থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সিগারের অনুমান অনুযায়ী, কানাডায় জব্দ হওয়া প্রায় ৯০ শতাংশ হেরোইনের উৎস আফগানিস্তানের পপি ক্ষেত।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্র মাদকবিরোধী অভিযানের উদ্যোগ নেয়। তারা দেখতে পায়, তাদের অনেক আফগান মিত্র এই ব্যবসায় জড়িত। সবাই এতো বেশি অর্থ উপার্জন করছিল যে আমেরিকানদের সঙ্গে মিলে গাছ ধ্বংস করার ইচ্ছা কারও ছিল না।
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ) ও আফগান পুলিশ মিলে হেলমান্দ প্রদেশের গভর্নরের কার্যালয় থেকে ৯ টন আফিম জব্দ করে।
২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পেন্টাগন পপি নির্মূলের দিকে মনোযোগ দেয়। ব্রিটিশরা ফসল ধ্বংস করে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে আগে চেষ্টা করেছে। আকাশ থেকে উদ্ভিদনাশক ছিটিয়ে পপি গাছ ধ্বংসের চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপ আফগানদের ক্ষেপিয়ে তোলে ও মিত্র বাহিনী ও তাদের আফগান মিত্রদের মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটায়।
ওবামার জোরাজুরিতে ২০০৯ সালে মাদকবিরোধী কৌশল পালটে যায়। পপি চাষ কয়েকটি এলাকায় কমতে থাকে। এর মূল কারণ ছিল, গ্রামগুলোতে হাজারো আমেরিকান সেনার টহল। ক্ষেত ধ্বংস করে চাষীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার চেয়ে আমেরিকানরা চেষ্টা করে চাষীদের সয়াবিন ও গমের মতো ফসলের দিকে উৎসাহী করে তুলতে। এতে তারা ভর্তুকিও পেত, কিন্তু এই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
বাস্তবিক ভাবে পপি এমন একটি ফসল যেটির চাহিদা সবসময় বেশি থাকে ও সবসময় এটি বিক্রি করা যায়। জমির মালিক, ফসলের ভাগীদার ও আফগানিস্তানের শ্রম শক্তির বড় অংশ ভ্রাম্যমাণ শ্রমিক এবং তারা পপি চাষ করে প্রচুর অর্থ পেতেন।
পপি চাষ করা আফগানিস্তানে অনেকের জন্যই ছিল দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলার উপায়। পপির মতো আর্থিকভাবে লাভজনক একটি ফসল বাদ দিয়ে গম বা অন্য কিছু চাষ করার কোনো কারণ তাদের কাছে ছিল না।
এর চেয়েও খারাপ ছিল শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো একীভূত কৌশল না থাকা। সামরিক নেতৃত্ব নিজেদের উদ্যোগেই মাঝেমধ্যে মাদক নির্মূল অভিযান চালাত।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সিগার জানায়, ২০১০ এর বসন্তে ইউএস মেরিন ক্ষতিপূরণমূলক নির্মূল কার্যক্রম শুরু করে। এর নাম তারা দেয় মারাজ অ্যাক্সেলারেটেড আগ্রিকালচারাল ট্র্যানসিশন প্রোগ্রাম। তবে যেহেতু আগের ক্ষতিপূরণ নির্ভর নির্মূল অভিযানগুলো ব্যর্থ হয়েছিল, সেহেতু আন্তর্জাতিক মাদক ও আইন প্রণয়ন সংস্থা ও যুক্তরাজ্য সরকারের কাছ থেকে বিরোধিতার মুখে পড়ে এই কার্যক্রম।
আপত্তির পরও এবং বৃহত্তর কৌশলগত লক্ষ্য থাকা বা আগের প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হবার পরও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কমান্ডাররা তাদের নিয়ন্ত্রিয়ত এলাকায় এই কার্যক্রম ও অন্যান্য মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেন।
আফগানিস্তানে থাকার সময় এই কার্যক্রম নিজের চোখে দেখেন গ্রেজিয়ার। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না আমরা কতটুকু সফল হয়েছিলাম। আমরা যেখানে মাদক শুকানো হতো সেখানে হেলফায়ার মিসাইলগুলো নিক্ষেপ করতাম।’
নিখুঁতভাবে ড্রোন হামলায় বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয় এই সারফেস-টু-এয়ার ধরনের হেলফায়ার মিসাইল। এগুলোর প্রতিটির দাম দেড় লাখ ডলার ও ওজন ১০০ পাউন্ড।
তবে যখন দেশ থেকে আমেরিকান সৈন্যরা সরে আসতে শুরু করে তখনই ডিইএ ও তাদের আন্তর্জাতিক সঙ্গীরা ফের মাদক বিরোধী অভিযানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
আফগানিস্তান অত্যন্ত জটিল আর সেখানে আমেরিকান কৌশল সফল হওয়ার মতো একেবারেই ধারাবাহিক বাস্তবতা ছিল না। এক প্রদেশে সহায়তা কর্মীরা জমির মালিকদের সয়াবিন চাষ করার জন্য অর্থ ঘুষ দিতেন, অন্যদিকে আর কোনো প্রদেশে কারখানার ওপর মিসাইল আক্রমণ চালাত মেরিনরা।
আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত একটি ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়, যেটি আফিম উৎপাদন বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
গ্রেজিয়ার বলেন, ‘আফগানিস্তানে আমাদের ব্যর্থ অভিযানের দিকে যখন আমরা ফিরে তাকাই তখন এটা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, একটা দেশে হামলা করলে এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের প্রভাবও থাকবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে আমাদের সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে।’
আফগানিস্তানের পপি চাষের ভবিষ্যৎ অজানা। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক নমনীয় করতে তালেবান ২০০০ সালে তাৎক্ষণিকভাবে পপি গাছ নিষিদ্ধ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেমন পপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বাধার সম্মুখীন হয়েছিল তালেবানও একইভাবে চাষীদের কাছ থেকে বাধা পায়।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরের শাসনামলে তালেবান দ্রুত অর্থ আয়ের উপায় হিসেবে মাদকের গুরুত্ব বুঝতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণার চেয়েও বেশি আফগানিস্তানকে বুঝতে পেরেছে তালেবান। তালেবান ভালোভাবেই জানে, পপিকে নিষিদ্ধ করলে তা গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবানের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর হাজারো আফগাানের মতো যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন নসরত আহমাদ ইয়ার। দোভাষী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করায় বিশেষ ভিসায় দেশটিতে গিয়েছিলেন তিনি।
আমেরিকায় স্ত্রী এবং ১৩, ১১, ৮ বছর ও ১৫ মাস বয়সী চার সন্তানকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন ৩১ বছর বয়সী নসরত। আশা ছিল নিরাপদে বাঁচার, কিন্তু সেটি সম্ভব হলো না।
বন্ধু রহিম আমিনি আল জাজিরাকে জানান, গত ৩ জুলাই রাত ১২টার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির উত্তর-পূর্বে লিফট রাইডশেয়ার নামের কোম্পানির গাড়ির ভেতর গুলিতে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায় নসরতকে।
যুক্তরাষ্ট্রে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করা দোভাষী বন্ধুর স্মৃতিচারণ করে রহিম আমিনি বলেন, ‘সে আমার রক্তের ভাই না হলেও এর চেয়ে বেশি কিছু ছিল। তার ঘুমের সময়ই কেবল আমরা পরস্পর থেকে আলাদা হতাম। আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম, একসঙ্গে হাসতাম, একসঙ্গে খেতাম।’
রহিম জানান, নসরত আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর দোভাষী হিসেবে ১০ বছর ধরে কাজ করার সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয়।
নসরতের মতো রহিমও পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের এক বছরেরও বেশি সময় পর তালেবান আফগানিস্তান জুড়ে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু তালেবান সরকারের স্বীকৃতি না মেলায় বৈশ্বিক উন্নয়ন সহায়তা ও বিদেশের ব্যাংকে গচ্ছিত রিজার্ভ স্থগিত হয়ে আছে। এ অবস্থায় দেশটির অর্থনীতি ভয়াবহ আর্থিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সন্ত্রাস দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে এড়িয়ে আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছিল। এরপর ২০টি বছর তাদের সমর্থিত সরকার বসিয়ে সে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালায় এই পরাশক্তি। তাতে ব্যর্থ হলে শেষ পর্যন্ত তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা করে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, পরবর্তী সময়ে সেই যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই বিভিন্ন দেশের সরকার আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে রাখে। একই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানে কোটি কোটি ডলারের সহায়তা বন্ধ করে দেয়। একইসঙ্গে আফগানদের সঙ্গে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ রেখেছে তারা।
আফগানিস্তানে অবস্থানকালে বিগত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা মিলে সন্ত্রাসবিরোধী যেসব আইনকানুন করেছিল, সেসবের দোহাই দিয়ে এসব ব্যবস্থা আফগানিস্তানের ওপরই চাপিয়ে দিয়েছে। ফলে অর্থ সংকট যেমন বেড়েছে, তেমনই তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে দেশটিতে।
সম্প্রতি ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে ‘দুর্ভিক্ষের প্রাথমিক সতর্কতামূলক হট স্পট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আফগানিস্তানভিত্তিক খামা প্রেস বলছে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অবস্থা খুবই নাজুক। দেশ দুটিতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের অবনতি অব্যাহত রয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে আগামী মাসগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা আরও তীব্রতর হবে, যা দেশ দুটিকে আরও বাজে পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে।
খরা, সংঘাত এবং অর্থনৈতিক দৈন্য- এসব কিছুর মিলিত প্রভাব আফগান জনগণের জীবিকা ও খাদ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আফগানিস্তানে প্রতি তিনজনে একজন মানুষ খাদ্যাভাবে ভুগছে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। এ অবস্থায় সেখানে বড় ধরনের মানবিক সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেডক্রস (আইসিআরসি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘গত দুই বছরে আফগানিস্তানে বেকারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য মানবিক সংকটের পাশাপাশি এই বেকারত্ব আফগানিস্তানে লক্ষাধিক মানুষের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর মধ্যে প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আইসিআরসি আফগানিস্তানে বিনিয়োগ শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
কাবুলভিত্তিক টোলো নিউজের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে অর্থনীতিবিদ দরিয়া খান বাহির বলেছেন, এই সাহায্যের একটি বড় অংশ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের পরিবেশকে অনুকূল করতে এবং তাদের অর্থনৈতিক সমস্যা কমানোর জন্য বৃহৎ অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা প্রয়োজন।
আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার পাকিস্তান। স্বভাবতই পাকিস্তানের রাজনৈতিক টালমাটাল ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কাবুলেও পড়ছে। ২০ বছরের মধ্যে এই প্রথম বড় একটা বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
বিশ্বব্যংকের প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান দিতে না পারায় আফগানিস্তান দুর্ভিক্ষের মতো গুরুতর ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে দেশটির লক্ষাধিক পরিবারের কাছে আরেকটি কঠোর শীত মোকাবেলা করার কোনো উপায় নেই।
তীব্রভাবে খাদ্য-অনিরাপদ আফগানদের মাঝে মাসিক খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা চালিয়ে যেতে ডব্লিউএফপি’র জরুরিভাবে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এই সহায়তার জন্য আইসিআরসি’র পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
ডব্লিউএফপি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মধ্যে এক কোটি ১৪ লাখই কোনোমতে খেয়ে বা না খেয়ে দিন পার করছে। অপুষ্টিতে ভুগছে ২০ লাখের বেশি শিশু। দেশটিতে বর্তমানে আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭০ হাজারের বেশি, যার প্রায় ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাটি আরও বলছে, এ বছরের শেষ নাগাদ দেশটিতে আরও অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন:গা হিম করা শীতে আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী ফ্লোর ম্যাট্রেস তোশকে পা রেখে গুটিসুটি হয়ে বসে ছিল শাহ ইব্রাহিম শাহিনের কম বয়সী সন্তানেরা। তাদের পাশে ছিলেন প্রাপ্তবয়স্করা, যাদের গায়ে ছিল উলের জামা।
ছোট্ট ঘরে এমন চিত্র দেখা যায় উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বাগলানে।
এবারের মৌসুমে বাগলানের মতো অনেক প্রদেশেই অস্বাভাবিক শীত অনুভব করছেন বাসিন্দারা। রাজধানী কাবুলে তাপমাত্রা কমে হিমাঙ্কের ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শৈত্যপ্রবাহে দেশজুড়ে ২০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বাগলানে গত কয়েক দিনের মধ্যে শুক্রবার তাপমাত্রা একটু বেড়েছিল। তাও সেটি ছিল হিমাঙ্কের ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। এমন পরিস্থিতিতে ১০ সন্তানসহ ১৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে ঘর গরম রাখার সামগ্রী কেনার অবস্থায় নেই শাহিন। এ পরিবারে উষ্ণতা ছড়ানোর একমাত্র উপায় পরস্পরের গা ঘেঁষে থাকা।
পেশায় ট্যাক্সিচালক শাহিন প্রায় এক বছর ধরে বেকার। শীতে জমে যাওয়া ঘরে বসে ৫৪ বছর বয়সী এ ব্যক্তি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের একটি মাত্র বুখারি (ঐতিহ্যবাহী কয়লাচালিত হিটার)। শীতের শুরুতে আমরা কিছু কয়লা কিনেছিলাম, কিন্তু এমন আবহাওয়ায় আমাদের জোগান প্রায় শেষ এবং নতুন করে কেনার সামর্থ্যও নেই।’
আফগানিস্তানে তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার ১৮ মাসের বেশি সময়েও অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে। এখনও আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন এ সরকার ব্যাপক দারিদ্র্য ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় সক্ষমতা দেখাতে পারেনি।
১০ সন্তানের জনক শাহিন যখন প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, ঠিক সে সময়ে পরিবারের সদস্যের অসুস্থতা তাকে মারাত্মক ঋণে ফেলে দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় ট্যাক্সি চালাতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি জোগানো সম্ভব হবে না তার পক্ষে।
সংসার কেমন চলছে, তার বিবরণ দিয়ে শাহিন বলেন, ‘আমার দুই ছেলে দিনমজুরের কাজ করে, তবে তারা দৈনিক দেড় শ আফগানির বেশি রোজগার করতে পারে না, যা দিনের খাবার কেনার জন্যও যথেষ্ট নয়। কয়েক মাস ধরে আমরা ফল বা মাংস ছুঁয়ে দেখিনি।’
হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশে বাগলানে তীব্র শীত নতুন নয়, যেখানে তুষারপাতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বাড়ে, যা হতে পারে চাষাবাদের সহায়ক।
এ নিয়ে শাহিন বলেন, ‘আমরা খুশি যে তুষার পড়ছে। এটা আল্লাহর দান, যা কুয়ায় কাজে লাগবে এবং কৃষকদের উপকারে আসবে, তবে তাপমাত্রা কমতে থাকার মধ্যে কীভাবে নিজেদের গা গরম রাখব, তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন আমরা।’
বাগলানের পার্শ্ববর্তী সামানগান প্রদেশেও তীব্র শীত দেখছেন বাসিন্দারা। সেখানে দুই সন্তানের জননী ২৫ বছর বয়সী এক নারী আছেন উভয় সংকটে। তাকে কয়লা বা খাবারের যেকোনো একটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মারিয়াম (ছদ্মনাম) নামের ওই নারী আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা কাঠ ও কয়লা কিনলে খাবার কিনতে পারব না। আমার স্বামী যে অর্থ পাঠায়, তা মৌলিক প্রয়োজন পূরণের জন্যও যথেষ্ট নয়।’
তার স্বামী যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আফগান সরকারের সাবেক সেনা। তিনি পালিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গিয়ে কাজ নিয়েছেন।
তালেবানের প্রতিশোধের ভয়ে আসল নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করা নারী বলেন, ‘কাবুলের পতনের পর তালেবান আমার স্বামীকে খুঁজেছে, যার ফলে তাকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে যেতে হয়েছে। সে সময় কিছুদিন আমরা তার সঞ্চয়ের ওপর চলেছি। এরপর চলেছি দানের ওপর। কাজ থাকলে তিনি টাকা পাঠান, কিন্তু এ শীতে আমরা একটি বুখারি কিনতে পারছি না।’
মারিয়াম আরও বলেন, ‘আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি শীত দেখেছি এবারের শীত মৌসুমে। খাবার কিংবা হিটার ছাড়া কীভাবে এটি পার করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’
আরও পড়ুন:নারীর ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা তালেবানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বলে জানিয়েছেন গোষ্ঠীটির মুখমাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খামা প্রেসের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআইর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ শনিবার একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসলামিক আইনের ওপরে নির্ভর করেই ইসলামিক শাসন জারি থাকবে। নারীদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করাটা কখনোই সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পাবে না।’
গত ২০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে তালেবান। এরপর দেশটিতে এনজিওতে নারীদের কাজ নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে দেশটিতে বিক্ষোভও করেন নারীরা।
নারীদের ওপর এসব বিধিনিষেধ আরোপ করায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ। গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে নারীদের শিক্ষার সীমিত প্রবেশাধিকারের কারণে ১২ মাসে দেশটির আনুমানিক ৫০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) অবিলম্বে আফগানিস্তানে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আফগানিস্তানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন।
বুধবারের এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
তালেবান সরকারের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
কাবুলের পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বাহিনীটি এ হামলাকে ‘কাপুরোষচিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
কাবুলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে চালানো এ হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।
মন্ত্রণালয়ের বাইরে থাকা গাড়িচালক জামশেদ কারিমি বলেন, ‘ আমি হামলাকারীকে দেখেছি, যিনি নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন।’
ইতালিভিত্তিক সংস্থা ইমার্জেন্সি এনজিওর প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের কাছে ৪০ জনের বেশি আহত মানুষকে আনা হয়েছে।
একটি টেলিগ্রাম পোস্টে আইএসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহতদের মধ্যে কূটনৈতিক কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার সময় চীনা একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ের ভেতরে ছিল, তবে আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর অফিস এএফপিকে জানিয়েছে, হামলার সময় সেখানে কোনো বিদেশি ছিলেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দেশটির ক্ষমতায় আসে তালেবান। তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিলেও দৃশ্যত অস্থিতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি।
আফগানিস্তানজুড়ে একের পর এক হামলা চলছেই। এসব হামলার বেশিরভাগেরই দায় স্বীকার করে নিয়েছে আইএস।
আরও পড়ুন:আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরি কে হয়েছেন তা এখনও অস্পষ্ট বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এমনটি জানান বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল যে, গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানে তাদের হামলায় নিহত হন জাওয়াহিরি। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানে আল-কায়েদার প্রধান নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর সংগঠনটির প্রধান হন তিনি। এর পর থেকে জাওয়াহিরি পলাতক ছিলেন।
জাওয়াহিরির মৃত্যুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টারটেরোরিজম সেন্টারের পরিচালক ক্রিস্টিন আবিজাইদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সংগঠনটি নিজেদের সুবিধার জন্যই পরবর্তী উত্তরসূরির নাম প্রকাশ করছে না।’
যুক্তরাষ্ট্র জাওয়াহিরিকে হত্যার দাবি করলেও আল-কায়েদার পক্ষ থেকে এখনও নতুন নেতার নাম ঘোষণা করা হয়নি, তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিসরীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক সদস্য ও আল-কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতা সাইফ আল-আদেল গোষ্ঠীটির পরবর্তী প্রধান হতে পারেন।
সাইফ আল-আদেলকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাকে ধরিয়ে দিতে কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন।
সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করার সময় আফগানিস্তানে ২৫ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করে তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের তোপে পড়েছেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আফগান সরকার বলেছে, তালেবান নয়, বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছিলেন হ্যারি।
আত্মজীবনীমূলক ‘স্পেয়ার’ নামের বইতে হ্যারি আফগানিস্তানে ২৫ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। আগামী ১০ জানুয়ারি প্রকাশ হতে যাচ্ছে বইটি।
প্রিন্স হ্যারি জানিয়েছেন, ওই ২৫ জনকে তার কাছে মানুষ মনে হয়নি; ‘দাবার ঘুঁটি ’ মনে হয়েছে। তাদের তিনি দাবার বোর্ড থেকে কেবল সরিয়ে দিয়েছেন।
এ নিয়ে তালেবান নেতা আনাস হাক্কানি শুক্রবার আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওই সময় হেলমান্দে কোনো তালেবান সদস্য নিহত হননি। এটা স্পষ্ট যে, তিনি সাধারণ বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছেন।
‘আফগানিস্তানে পশ্চিমাদের অনেক যুদ্ধাপরাধের একটি মাত্র গল্প বলেছেন হ্যারি। এটি পশ্চিমাদের অপরাধের পুরো চিত্র নয়।’
এর আগে টুইটে আনাস হাক্কানি লেখেন, ‘হ্যারি যাদের হত্যা করেছেন তারা দাবার ঘুঁটি নয়; তারা মানুষ। আপনি সত্য বলেছেন, সাধারণ আফগান মানুষজন আপনাদের সেনা, সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে দাবার ঘুঁটি ছিল, কিন্তু আপনারা সেই খেলায় হেরেছেন।’
প্রিন্স হ্যারির সমালোচনা করে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালখি বলেন, ‘আমাদের দেশে পশ্চিমা দখলদারিত্ব সত্যিই মানব ইতিহাসে একটি বিশ্রী মুহূর্ত।’
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দেশটির ক্ষমতায় আসে তালেবান। পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার আফগানি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য