সিরাজউদ্দীন আহমেদ তখন বরগুনা মহকুমার প্রশাসক। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও প্রকাশ্যে ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন।
শুধু প্রতিবাদই না, খন্দকার মোশতাকের স্বঘোষিত সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। নিজ প্রশাসনিক এলাকায় ওই সরকারের কোনো আদেশ কার্যকর হতে দেননি।
কারফিউ জারির বদলে সংগঠিত করেছিলেন প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল। একপর্যায়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছিলেন। এমনকি জেলহত্যার প্রতিবাদেও হরতালের ডাক দেন তিনি।
১৯৭৩-৭৫ সাল পর্যন্ত বরগুনার মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) ছিলেন সিরাজউদ্দীন আহমেদ। বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনে ওই দিন থেকেই প্রথম প্রকাশ্যে প্রতিবাদ ও সামরিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয় বরগুনায়।
হত্যাযজ্ঞের পরদিনই অর্থাৎ ১৬ আগস্ট এসডিওর বাসায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্মান জানিয়ে মিলাদ ও শোকসভা হয়। রাজনৈতিক নেতারা ছাড়াও পুলিশ-রক্ষীবাহিনীর সদস্যরাও অংশ নেন।
রক্ষীবাহিনী বরগুনা শহর ৭ দিন তাদের দখলে রাখে। স্থানীয় তিনজন সংসদ সদস্য এবং অন্য সরকারি কর্মকর্তারাও এতে সমর্থন দেন।
পরে সিরাজউদ্দীন আহমদকে ২৪ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত করা হয়। পুনর্বহাল করা হয় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তার আগে তাকে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বলা হলে তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানান।
বরখাস্তের পর বিদ্রোহে যুক্ত থাকার অভিযোগে তদন্ত করা হলেও তার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী দেননি। পরে সিরাজউদ্দীনের নামে বরগুনা টাউন হলের নাম ‘সিরাজউদ্দীন মিলনাতন’ এবং অপর একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।
সিরাজউদ্দীন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ১৯৭৫ সালে বরগুনার মহকুমা প্রশাসক। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত। সে সময় ১৫ আগস্ট সকাল ৭.৩০ মিনিটে বেতারে হঠাৎ ডালিম ঘোষণা করলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। সামরিক আইন ও কারফিউ জারি করা হলো।
“আমি এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম, এ হত্যাযজ্ঞ ও সংবিধান লঙ্ঘনের প্রতিরোধ করব। আমি জানতাম অবৈধ সরকারের বিরোধিতা করলে মৃত্যু অনিবার্য- তাই অঙ্গীকার করলাম, ‘দিস ইজ দ্য এন্ড অব মাই লাইফ’ (আমার জীবন শেষ)।
“বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও খুনি সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আমি বরগুনার বাকশাল নেতা-কর্মী ও ছাত্রলীগ এবং বঙ্গবন্ধুর অনুগত সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রতিরোধ শুরু করি।
“আমি প্রথমে ঘোষণা করলাম, আমরা খুনি সরকারকে স্বীকার করি না। বরগুনার রক্ষীবাহিনী নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। খুনি সরকারের পক্ষে সকল প্রকার মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করি। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। তিন দিন বরগুনায় সকল দপ্তরের কাজ বন্ধ থাকে।
“আমার বাসভবনে জনতার ঢল নেমে আসে। ১৫ ও ১৬ আগস্ট আমার সরকারি বাসভবনে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার প্রতিবাদে শোকসভা হয়। আমি পটুয়াখালী জেলা সদরে অবস্থিত রক্ষীবাহিনী লিডারের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তাদের অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ করার নির্দেশ প্রদান করি।”
তবে পটুয়াখালীর রক্ষীবাহিনী ঢাকায় যোগাযোগ করে তারা কোনো নির্দেশনা পায়নি।
সিরাজউদ্দীন জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে বরগুনায় তার সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান (১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন), জেলা ছাত্রলীগের সে সময়ের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর, ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রশীদ, সুলতান আহমেদ, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু (সাবেক উপমন্ত্রী), দেলওয়ার হোসেন, আব্দুল মোতালেব ও আরও অনেকে।
বাকশাল নেতাদের মধ্যে ছিলেন নুরুল ইসলাম সিকদার, নিজামউদ্দিন আহমেদ, ইউনুস শরীফ, বরগুনা কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল আলম, আব্দুল লতিফ ফরাজী, আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তা ফররুখ আহমেদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান, সাব-রেজিস্ট্রার আলী আসগর, সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) মোখলেসুর রহমান, মহকুমা ত্রাণ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার শর্মা প্রমুখ।
প্রতিবাদ কর্মসূচি প্রসঙ্গে সিরাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমি আমার জীবনে প্রথম অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম। আমার জিপে ছাত্রলীগ ও বাকশালের কয়েকজন কর্মী ছিল, তাদের হাতে ছিল অস্ত্র। সেদিন বরগুনার পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না।
‘তাই আমি তাদের থানা থেকে বের হতে নিষেধ করি। আমার নির্দেশে বরগুনা শহরে রক্ষীবাহিনী টহল দেয়। ১৫ আগস্ট বরগুনায় ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, যারা খুনি সরকারের পক্ষে মিছিল বের করবে তাদের গুলি করে হত্যা করে বরগুনার খাকদন নদীতে ফেলে দেয়া হবে। বরগুনা শহর বা কোনো থানায় মিছিল বের হয়নি।’
তবে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করে হতাশ হন সে সময়ের এসডিও। বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল অবশ্যই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা ক্যু হবে, কিন্তু তা হয়নি। বরগুনা ব্যতীত বাংলাদেশের সকল শহরে খুনি সরকারের পক্ষে মিছিল বের হয়। এ মর্মবেদনা আজও আমাকে তাড়িত করে।’
বরগুনায় প্রতিরোধ চলে তিন দিন পর্যন্ত। তবে একপর্যায়ে তা ভেঙে পড়তে বাধ্য ছিল। পরে সিরাজউদ্দীনকে বরখাস্ত করা হয়। পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সরকারের আদেশ নিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তাকে সরকারি বাসভবন ছেড়ে দিতে হয়।
‘পটুয়াখালী জেলায় আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ হলো। আমি এ আদেশে ভীত হইনি। অবৈধ সরকারের নির্দেশ আমাকে আরও সাহসী করেছিল’, বললেন সিরাজউদ্দীন।
বলেন, ‘এরপর খবর আসে, আমাকে যেকোনো সময় সরকার গ্রেপ্তার করতে পারে। যশোর সেনানিবাস থেকে খবর আসছে তারা নাকি আমাকে মেরে ফেলবে। ইতোমধ্যে বরগুনায় বাকশালকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু হয়। বরগুনা ও পটুয়াখালী পুলিশ আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিচ্ছে।’
এর মধ্যেও গোপন তৎপরতা চালিয়ে যান সিরাজউদ্দীন। নভেম্বরে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে আরেকটি অভ্যুত্থানে খোন্দকার মোশতাক ক্ষমতাচ্যুত হলে তারা আবার সংগঠিত হন।
বলেন, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতা হত্যার প্রতিবাদে আমরা বরগুনা শহরে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা বাবু জ্ঞান রঞ্জন ঘোষের বাসায় গোপন সভার আয়োজন করি।’
সে সভায় বরগুনার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সিকদার, ন্যাপের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন এবং বরগুনা কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলহত্যার প্রতিবাদে ৬ নভেম্বর বরগুনায় পূর্ণ হরতাল পালিত হয়।
তবে ৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফ নিহত হলে বরগুনা ত্যাগ করে পটুয়াখালী হয়ে বরিশালে চলে যান সিরাজউদ্দীন। বরগুনার বাকশাল নেতা সিদ্দিকুর রহমান, ইউনুস শরীফ, নুরুল ইসলাম সিকদার, নুরুল ইসলাম পাশা, আব্দুল মান্নান (বেতাগী); ছাত্রনেতাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবীর, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, আব্দুর রশীদ, মোতালেবরা গ্রেপ্তার হয়ে যান।
সিরাজের বিরুদ্ধে সামরিক সরকার একাধিক মামলা করে। তবে বরগুনার একজন লোকও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি। পুলিশ বারবার প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল যে, তিনি ১৫ আগস্ট প্রকাশ্যে রিভলভার দিয়ে জনগণকে ভয় দেখিয়েছি কি না।
“আমার বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণ করতে না পারায় সরকার আমাকে ক্ষমা চাইতে বলেছিল। আমি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম, ‘আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে গর্বিত, আমি ক্ষমা চাইতে পারি না’।”
সাজা দিতে না পারার পর ১৬ মাস পরে চাকরি ফিরে পেয়েছিলেন সিরাজউদ্দীন।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বরগুনার প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন হয়। ওই প্রতিবেদনে বরগুনার পাঁচ ছাত্রনেতা ও বাকশাল নেতার অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
পরে বিএনপি সরকারের বিরাগভাজন হন সিরাজউদ্দীন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অভিযোগ ছিল আমি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আলোচনা করি। আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী। এ কারণে সরকার আমাকে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার পদে নিয়োগ করেনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের বিএনপিবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে জনতার মঞ্চ করেছিলেন, তাতেও অংশ নেন সিরাজউদ্দীন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে জনতার মঞ্চে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ৩ নং আসামি করা হয়।
সিরাজউদ্দীন আহমেদের জন্ম ১৯৪১ সালের ১৪ অক্টোবর। তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আরজি কালিকাপুর গ্রামের জাহান উদ্দীন ফকির ও লায়লী বেগম দম্পতির সন্তান।
শিক্ষাজীবনে সায়েস্তাবাদ এম এইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক, বরিশাল বিএম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে এমএ ও ১৯৬৮ সালে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়্যারম্যান ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তার স্ত্রী অধ্যক্ষ বেগম ফিরোজা মারা গেছেন। তাদের দুই সন্তান প্রকৌশলী শাহরিয়ার আহমেদ শিল্পী ও উপসচিব শাকিল আহমেদ ভাস্কর।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন। সূত্র: ইউএনবি
তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনটি দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং অবমূল্যায়ন করেছে, যা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর।’
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মুখপাত্র বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে স্পষ্ট হবে যে এতে পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।’
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেছে, ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।
‘বেশিরভাগই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার (বেনামী উৎসসহ) কাছ থেকে পাওয়া অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমর্থিত।’
‘প্রতিবেদনটি সহজাত পক্ষপাতদুষ্ট, এটি বেশ স্পষ্ট।’
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসা করেছে।
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যতই প্রত্যাশা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। মানবাধিকার কোনো শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতা প্রায়ই এসব অধিকার আদায়ের গতিকে সীমাবদ্ধ করে।’
‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
‘যেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন, এ জাতীয় প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, প্রবীণদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং আরও অনেক কিছুতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এটি বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
‘এ ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা থেকে জনসাধারণের জীবন, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ এবং প্রতিকারের চেষ্টা করার রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে। এটি খুবই হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের আন্তরিক সমর্থন ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের নির্বাচন বর্জন সত্ত্বেও ৪২ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে বার বার বেশকিছু অভিযোগ বা অনুযোগ উঠে এসেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
‘উদাহরণস্বরূপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা মিয়ানমারের নাগরিক বা বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতির বৈধ দাবিকে ক্ষুণ্ন করছে।’
অন্য একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দেশের সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী ‘আদিবাসী জনগণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা অযৌক্তিক উত্তেজনা ও বিভাজনকে উসকে দেয়ার প্রচেষ্টার নামান্তর।
“আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করা অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য বাদ দিয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
“উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহীন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলো আইনের আওতাভুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রে যে বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি, বিশেষ করে চলমান যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়টি।”
মুখপাত্র বলেন, ‘একইভাবে শ্রম অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধকরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’
‘বরাবরের মতোই প্রতিবেদনে আইনগত কর্মকাণ্ডের চিত্র ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি বা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে অযাচিত বাধা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গৃহীত প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে প্রতিবেদনে মানবাধিকারের পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশের প্রবণতা বজায় রাখা হয়েছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে।’
আরও পড়ুন:শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে তার বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ ১৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি (বিজ্ঞাপন), ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
সেগুলো হলো যথাক্রমে- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য