সিরাজউদ্দীন আহমেদ তখন বরগুনা মহকুমার প্রশাসক। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও প্রকাশ্যে ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন।
শুধু প্রতিবাদই না, খন্দকার মোশতাকের স্বঘোষিত সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। নিজ প্রশাসনিক এলাকায় ওই সরকারের কোনো আদেশ কার্যকর হতে দেননি।
কারফিউ জারির বদলে সংগঠিত করেছিলেন প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল। একপর্যায়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছিলেন। এমনকি জেলহত্যার প্রতিবাদেও হরতালের ডাক দেন তিনি।
১৯৭৩-৭৫ সাল পর্যন্ত বরগুনার মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) ছিলেন সিরাজউদ্দীন আহমেদ। বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনে ওই দিন থেকেই প্রথম প্রকাশ্যে প্রতিবাদ ও সামরিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয় বরগুনায়।
হত্যাযজ্ঞের পরদিনই অর্থাৎ ১৬ আগস্ট এসডিওর বাসায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্মান জানিয়ে মিলাদ ও শোকসভা হয়। রাজনৈতিক নেতারা ছাড়াও পুলিশ-রক্ষীবাহিনীর সদস্যরাও অংশ নেন।
রক্ষীবাহিনী বরগুনা শহর ৭ দিন তাদের দখলে রাখে। স্থানীয় তিনজন সংসদ সদস্য এবং অন্য সরকারি কর্মকর্তারাও এতে সমর্থন দেন।
পরে সিরাজউদ্দীন আহমদকে ২৪ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত করা হয়। পুনর্বহাল করা হয় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তার আগে তাকে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বলা হলে তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানান।
বরখাস্তের পর বিদ্রোহে যুক্ত থাকার অভিযোগে তদন্ত করা হলেও তার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী দেননি। পরে সিরাজউদ্দীনের নামে বরগুনা টাউন হলের নাম ‘সিরাজউদ্দীন মিলনাতন’ এবং অপর একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।
সিরাজউদ্দীন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ১৯৭৫ সালে বরগুনার মহকুমা প্রশাসক। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত। সে সময় ১৫ আগস্ট সকাল ৭.৩০ মিনিটে বেতারে হঠাৎ ডালিম ঘোষণা করলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। সামরিক আইন ও কারফিউ জারি করা হলো।
“আমি এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম, এ হত্যাযজ্ঞ ও সংবিধান লঙ্ঘনের প্রতিরোধ করব। আমি জানতাম অবৈধ সরকারের বিরোধিতা করলে মৃত্যু অনিবার্য- তাই অঙ্গীকার করলাম, ‘দিস ইজ দ্য এন্ড অব মাই লাইফ’ (আমার জীবন শেষ)।
“বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও খুনি সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আমি বরগুনার বাকশাল নেতা-কর্মী ও ছাত্রলীগ এবং বঙ্গবন্ধুর অনুগত সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রতিরোধ শুরু করি।
“আমি প্রথমে ঘোষণা করলাম, আমরা খুনি সরকারকে স্বীকার করি না। বরগুনার রক্ষীবাহিনী নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। খুনি সরকারের পক্ষে সকল প্রকার মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করি। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। তিন দিন বরগুনায় সকল দপ্তরের কাজ বন্ধ থাকে।
“আমার বাসভবনে জনতার ঢল নেমে আসে। ১৫ ও ১৬ আগস্ট আমার সরকারি বাসভবনে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার প্রতিবাদে শোকসভা হয়। আমি পটুয়াখালী জেলা সদরে অবস্থিত রক্ষীবাহিনী লিডারের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তাদের অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ করার নির্দেশ প্রদান করি।”
তবে পটুয়াখালীর রক্ষীবাহিনী ঢাকায় যোগাযোগ করে তারা কোনো নির্দেশনা পায়নি।
সিরাজউদ্দীন জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে বরগুনায় তার সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান (১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন), জেলা ছাত্রলীগের সে সময়ের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর, ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রশীদ, সুলতান আহমেদ, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু (সাবেক উপমন্ত্রী), দেলওয়ার হোসেন, আব্দুল মোতালেব ও আরও অনেকে।
বাকশাল নেতাদের মধ্যে ছিলেন নুরুল ইসলাম সিকদার, নিজামউদ্দিন আহমেদ, ইউনুস শরীফ, বরগুনা কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল আলম, আব্দুল লতিফ ফরাজী, আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তা ফররুখ আহমেদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান, সাব-রেজিস্ট্রার আলী আসগর, সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) মোখলেসুর রহমান, মহকুমা ত্রাণ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার শর্মা প্রমুখ।
প্রতিবাদ কর্মসূচি প্রসঙ্গে সিরাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমি আমার জীবনে প্রথম অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম। আমার জিপে ছাত্রলীগ ও বাকশালের কয়েকজন কর্মী ছিল, তাদের হাতে ছিল অস্ত্র। সেদিন বরগুনার পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না।
‘তাই আমি তাদের থানা থেকে বের হতে নিষেধ করি। আমার নির্দেশে বরগুনা শহরে রক্ষীবাহিনী টহল দেয়। ১৫ আগস্ট বরগুনায় ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, যারা খুনি সরকারের পক্ষে মিছিল বের করবে তাদের গুলি করে হত্যা করে বরগুনার খাকদন নদীতে ফেলে দেয়া হবে। বরগুনা শহর বা কোনো থানায় মিছিল বের হয়নি।’
তবে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করে হতাশ হন সে সময়ের এসডিও। বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল অবশ্যই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা ক্যু হবে, কিন্তু তা হয়নি। বরগুনা ব্যতীত বাংলাদেশের সকল শহরে খুনি সরকারের পক্ষে মিছিল বের হয়। এ মর্মবেদনা আজও আমাকে তাড়িত করে।’
বরগুনায় প্রতিরোধ চলে তিন দিন পর্যন্ত। তবে একপর্যায়ে তা ভেঙে পড়তে বাধ্য ছিল। পরে সিরাজউদ্দীনকে বরখাস্ত করা হয়। পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সরকারের আদেশ নিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তাকে সরকারি বাসভবন ছেড়ে দিতে হয়।
‘পটুয়াখালী জেলায় আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ হলো। আমি এ আদেশে ভীত হইনি। অবৈধ সরকারের নির্দেশ আমাকে আরও সাহসী করেছিল’, বললেন সিরাজউদ্দীন।
বলেন, ‘এরপর খবর আসে, আমাকে যেকোনো সময় সরকার গ্রেপ্তার করতে পারে। যশোর সেনানিবাস থেকে খবর আসছে তারা নাকি আমাকে মেরে ফেলবে। ইতোমধ্যে বরগুনায় বাকশালকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু হয়। বরগুনা ও পটুয়াখালী পুলিশ আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিচ্ছে।’
এর মধ্যেও গোপন তৎপরতা চালিয়ে যান সিরাজউদ্দীন। নভেম্বরে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে আরেকটি অভ্যুত্থানে খোন্দকার মোশতাক ক্ষমতাচ্যুত হলে তারা আবার সংগঠিত হন।
বলেন, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতা হত্যার প্রতিবাদে আমরা বরগুনা শহরে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা বাবু জ্ঞান রঞ্জন ঘোষের বাসায় গোপন সভার আয়োজন করি।’
সে সভায় বরগুনার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সিকদার, ন্যাপের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন এবং বরগুনা কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলহত্যার প্রতিবাদে ৬ নভেম্বর বরগুনায় পূর্ণ হরতাল পালিত হয়।
তবে ৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফ নিহত হলে বরগুনা ত্যাগ করে পটুয়াখালী হয়ে বরিশালে চলে যান সিরাজউদ্দীন। বরগুনার বাকশাল নেতা সিদ্দিকুর রহমান, ইউনুস শরীফ, নুরুল ইসলাম সিকদার, নুরুল ইসলাম পাশা, আব্দুল মান্নান (বেতাগী); ছাত্রনেতাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবীর, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, আব্দুর রশীদ, মোতালেবরা গ্রেপ্তার হয়ে যান।
সিরাজের বিরুদ্ধে সামরিক সরকার একাধিক মামলা করে। তবে বরগুনার একজন লোকও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি। পুলিশ বারবার প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল যে, তিনি ১৫ আগস্ট প্রকাশ্যে রিভলভার দিয়ে জনগণকে ভয় দেখিয়েছি কি না।
“আমার বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণ করতে না পারায় সরকার আমাকে ক্ষমা চাইতে বলেছিল। আমি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম, ‘আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে গর্বিত, আমি ক্ষমা চাইতে পারি না’।”
সাজা দিতে না পারার পর ১৬ মাস পরে চাকরি ফিরে পেয়েছিলেন সিরাজউদ্দীন।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বরগুনার প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন হয়। ওই প্রতিবেদনে বরগুনার পাঁচ ছাত্রনেতা ও বাকশাল নেতার অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
পরে বিএনপি সরকারের বিরাগভাজন হন সিরাজউদ্দীন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অভিযোগ ছিল আমি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আলোচনা করি। আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী। এ কারণে সরকার আমাকে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার পদে নিয়োগ করেনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের বিএনপিবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে জনতার মঞ্চ করেছিলেন, তাতেও অংশ নেন সিরাজউদ্দীন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে জনতার মঞ্চে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ৩ নং আসামি করা হয়।
সিরাজউদ্দীন আহমেদের জন্ম ১৯৪১ সালের ১৪ অক্টোবর। তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আরজি কালিকাপুর গ্রামের জাহান উদ্দীন ফকির ও লায়লী বেগম দম্পতির সন্তান।
শিক্ষাজীবনে সায়েস্তাবাদ এম এইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক, বরিশাল বিএম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে এমএ ও ১৯৬৮ সালে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়্যারম্যান ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তার স্ত্রী অধ্যক্ষ বেগম ফিরোজা মারা গেছেন। তাদের দুই সন্তান প্রকৌশলী শাহরিয়ার আহমেদ শিল্পী ও উপসচিব শাকিল আহমেদ ভাস্কর।
আরও পড়ুন:মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গবাদিপশু পালন প্রোটিন ঘাটতি নিরসন, মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। অথচ অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে চারণভূমির হ্রাস হচ্ছে, ফলে মহিষের মতো মূল্যবান সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আজ সকালে বরিশাল ক্লাবে অনুষ্ঠিত “উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সমাধান” শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশন, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজিইউএস) এবং কোস্টাল ভেট সোসাইটি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সঠিক নীতি নির্ধারণ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে এখনো অনেক চরাঞ্চল রক্ষা করা সম্ভব। মহিষ পালন বাড়াতে পারলে জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যাবে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহিষের চারণভূমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং এমনকি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলায় বৃহৎ গরুর বাথান ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও উঠছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে গরুর বাথান ধ্বংস করা দেশের সামগ্রিক কল্যাণে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে? তিনি আরও বলেন, মহিষের স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় উপকূলীয় এলাকায় স্পিডবোটভিত্তিক ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্থাপন করা প্রয়োজন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে গবাদিপশুর চারণভূমি কমে যাওয়া এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষসহ অন্যান্য গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও টেকসই চারণভূমি উন্নয়ন অপরিহার্য। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ওমর ফারুক।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, জিজিইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্হানীয় খামারীরা কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন।
শিশু জন্মের পরপরই মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেছেন, শিশু জন্মের দুই-তিন দিন পর যখন পর্যাপ্ত দুধ আসে না, তখন অনেক সময় চিকিৎসকরা ফরমুলা দুধের পরামর্শ দেন। কিন্তু ডাক্তারদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা মায়ের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিবেন। ফরমুলা দুধের পরামর্শ দেবেন না। তিনি বলেন, একসময় শাল দুধ (কোলস্ট্রাম) খাওয়ানো নিয়ে নানা কুসংস্কার ছিল। এখন মানুষ সচেতন হয়েছে। তবুও উদ্বেগজনকভাবে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার কমছে। এখন মাত্র ৫৫ শতাংশ শিশু মায়ের দুধ পাচ্ছে, আগে এ হার আরও বেশি ছিল। তিনি মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার বাড়ানোর জন্য কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের আহৃবান জানান।
আজ রাজধানীর বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৫’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর আগে এ উপলক্ষে এক বর্নাঢ্য রেলির আয়োজন করা হয়।
মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনের প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে
উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, শিশু জন্মের পরপরই অনেকসময় পর্যাপ্ত দুধ আসে না। কাজেই প্রস্তুতি আগে থেকেই নিতে হয়। গর্ভাবস্থার ছয় মাস পর থেকে মায়ের খাদ্যাভ্যাস ও যত্নের বিষয়ে নজর দিতে হবে। মা ভালো খেলে, তার শরীর থেকে সন্তানের জন্য যথেষ্ট দুধ তৈরি হবে।
কর্মজীবী মায়েদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, মাঠে-ঘাটে নানা কাজে যুক্ত মায়েরা সচেতনতার অভাব ও খাদ্যের ঘাটতির কারণে সন্তানকে পর্যাপ্ত দুধ খাওয়াতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের দিকেও আলোকপাত করেন। সরকারি হিসাবে দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশের মতো, বেসরকারি হিসাবে আরও বেশি। যদি এই ২০ শতাংশ মা পর্যাপ্ত খেতে না পারেন, তবে সন্তানও পর্যাপ্ত দুধ পাবে না। তাই দারিদ্র্য হ্রাসে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, গৃহকর্মী নারীদেরও শিশু জন্মের পরপরই বাচ্চাকে কোলে নেবার সুযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের বাসাবাড়িতে যারা কাজ করেন, তাদের অনেক সময় সন্তানকে আনতে দিই না। বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুছ আলীসহ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী নির্বাচনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে সারাদেশে জেলা-উপজেলায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর চলমান প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
চলমান ২৮ দিনব্যাপী ভিডিপি অ্যাডভান্সড কোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী ডিউটির প্রাকপ্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় অনুশীলন সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এই প্রশিক্ষণের আওতায় বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনে করণীয়, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন, কেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটারদের ভোটদানে সহযোগিতা করা, ব্যালট পেপার এবং ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ কয়েকটি বিষয়ে হাতে কলমে মহড়া দেয়া হচ্ছে।
বাহিনীর সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করছেন।
আসছে ০৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হবে। গত রবিবার (২৪ আগস্ট) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনে বর্ণাঢ্য জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ জাতীয় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এসভায় ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আঃ ছালাম খানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করবেন। এদিন সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সরকারিভাবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও রাস্তাসমূহে জাতীয় পতাকা, রঙিন পতাকা ও 'কালিমা তায়্যিবা' লিখিত ব্যানার প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সারাবিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্ম ও মৃত্যুর স্মৃতিধন্য এ দিবসটি উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) কে ক্বিরাত, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠ, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও আরবিতে খুতবা লেখা প্রতিযোগিতা আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে স্মরণিকা প্রকাশ ও সেমিনার আয়োজন করতে বলা হয়েছে।
১২ রবিউল আউয়াল থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ প্রান্তে পক্ষকালব্যাপী ইসলামিক বইমেলার আয়োজন করবে ইফা। এদিনে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রচার মাধ্যমে দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশও করা হবে।
এ দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ইফা, ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা ও জেদ্দা হজ অফিসসহ সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে হযরত(সা.) এর জীবন ও কর্ম, ইসলামের শান্তি, প্রগতি, সৌহার্দ্য, সহিষ্ণুতা, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব, মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, হামদ-নাত ও কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজনের নির্দেশনা রয়েছে জাতীয় কর্মসূচিতে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের জন্য হামদ-নাত, রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
এ দিবসে দেশের সকল সামরিক ও বেসামরিক হাসপাতাল, কারাগার, শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরসমূহকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহেও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) যথাযথভাবে উদযাপিত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের কঠোর পরিশ্রম ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতার পথে ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশের অর্থনীতি ছিল নাজুক অবস্থায়। আমরা অভ্যন্তরীণ আস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরেও প্রমাণ করেছি যে বাংলাদেশ এখনো কোনো ঋণখেলাপি রাষ্ট্র নয়।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বগুড়ার জেলার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লাইট হাউজ বগুড়ার প্রধান নির্বাহী হারুন অর রশিদ, বগুড়ার পুলিশ সুপার জিদান আল মুসা, সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলাম, বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুদ্দীন ফিরোজসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা।
উল্লেখ্য, ‘নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা’ প্রকল্পের মাধ্যমে বগুড়া জেলায় নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন; অনলাইন ভূমি ব্যবস্থাপনার ফলে ভুয়া ভূমি রেজিস্ট্রেশন ও জালিয়াতির সুযোগ কমে গেছে। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ই-মিউটেশন সিস্টেমের কারণে মালিকানার তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ হয়, যা ভুয়া দলিল তৈরির সুযোগ অনেকাংশে হ্রাস করে এবং ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে সাহায্য করে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম বিভাগ ভিত্তিক কার্য পর্যালোচনা করে প্রতি সপ্তাহে সিনিয়র সিচব মহোদয়কে অবহিত করছেন।
আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘৭৭তম টিম সভা’য় তিনি এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
সিনিয়র সচিব বলেন; ভূমি সেবা প্রদানে আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে সন্তুষ্টির মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনি মহানগর থেকে মাঠ পর্যায় সর্বত্র কার্যক্রম পরিদর্শন/মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। পরিদর্শন প্রতিবেদন নিয়ে সভা করে কারো বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসততার বা সেবা গ্রহীতাকে হয়রানির প্রমান পেলে বিধি মতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও যে কোনো মাধ্যমে দূর্নীতি বা হয়রানির প্রমান পেলেও ব্যবস্থাগ্রহণ করা হচ্ছে। ভূমিসেবায় দূর্নীতির ব্যাপারে কোন আপোষ নয়। জনবান্ধব ভূমিসেবা প্রদানই ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রধান লক্ষ্য।
সভায় জনানো হয়; সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপুর্ণ মামলা সুষ্ঠভাবে পরিচালনার স্বার্থে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন পাওয়া গেছে। অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে,জরিমানা করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি ভালো । এছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল,২০২৫ মতামতের জন্য বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মতামত পাওয়াগেলে ভেটিংএর জন্য আইন মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে । এছাড়াও ভূমি ভবনে স্থাপিত ভূমি যাদুঘরে ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ,আধুনিকায়ন ও সমৃদ্ধকরণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকদের কাছে ভূমি ব্যবস্থাপনার বিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য ও ভূমি জরিপকার্যে ব্যবহৃত ভূমি ঐতিহ্যের ধারক এমন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম যদি থাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য পত্র দেয় হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ),মো: শরিফুল ইসলাম; অতিরিক্ত সচিব (জরিপ ও সায়রাত অনুবিভাগ) সায়মা ইউনুস,এনডিসি ; অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ),মো: এমদাদুল হক চৌধুরী; অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ)মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ব্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে শ্রম খাতের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলারের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে শ্রম আইন যুগোপযোগীকরণ, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, শিশুশ্রম ও জবরদস্তিমূলক শ্রম নিরসন, সামাজিক সংলাপ জোরদার, ফ্যাক্টরি পরিদর্শন কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে শ্রম খাতের সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বৈঠকে বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) কর্তৃক স্বাক্ষরিত ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে । মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রম উপদেষ্টার নেতৃত্বে শ্রম আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করা হবে। আগামী ২৬ আগস্ট ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদ (TCC) এর সভায় সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করে সকল অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, শ্রমিক বা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বা হয়রানিমুলক ৪৫ টি মামলার মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইতোমধ্যে ৪৪ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর কনভেনশন সি ১৫৫ এবং সি ১৮৭ অনুস্বাক্ষর এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে কনভেনশন সি ১৯০ অনুস্বাক্ষরের প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর করতে শ্রম অধিদপ্তর একে ডিজিটালাইজড করার কাজ করছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলার ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োগকর্তা বা কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ না থাকতে দেওয়া, বাংলাদেশ শ্রম আইন (বিএলএ) এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) শ্রম আইনের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলমান সকল পুরনো ও বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, নিয়মিত সামাজিক সংলাপের আয়োজন, শ্রমঘন এলাকায় ফ্যাক্টরি পরিদর্শন বাড়ানো এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরও শ্রম আইনের আওতায় আনার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশের চলমান শ্রম সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কম্প্রিহেনসীভ শ্রম আইনের সংশোধনীর উপর তিনি গুরুতারোপ করেন। কেননা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত 'এভরিথিং বাট আর্মস' (ইবিএ) সুবিধার ধারাবাহিকতায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরে জিএসপি প্লাস বাজার সুবিধাসহ সেইফ গার্ড ক্লজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ বিবেচনার লক্ষ্যে শ্রম আইনের প্রত্যাশিত সংশোধনী ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলার।
বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য