১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রথমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ সুগম করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর খুনিরা কে কোথায়, শুরু হয় তত্ত্বতালাশ। গঠন করা হয় একটি টাস্কফোর্স।
এই টাস্কফোর্সের সব খোঁজখবরের মূল সমন্বয়ক ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব অ্যাম্বাসেডর ওয়ালিউর রহমান। তার দুই হাত হিসেবে কাজ করেছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা এনএসআইয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক মশিউর রহমান ও পুলিশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট বা সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল হান্নান। আব্দুল হান্নান ছিলেন টাস্কফোর্সের প্রধান ইনভেস্টিগেটর।
কে কেথায় আছেন, সেই খোঁজ পেতে একটি বড় সময় গেছে টাস্কফোর্সের। সেটা ছিল প্রায় দুই বছরের একটা অভিযাত্রা। শুরুতে হাতে কোনো তথ্যই ছিল না। একেবারে শূন্য থেকে এই দলের সদস্যরা কয়েকটি মহাদেশ ঘুরে খুঁজে বের করেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অবস্থান।
কেবল তা-ই নয়, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে তারা ঘুরেছেন আশ্রয় দেয়া দেশগুলোতে। সেখানকার শাসকদের সঙ্গে করেছেন দেনদরবার। এসব করতে করতে ঝুঁকির মুখেও পড়েছেন কোথাও কোথাও। আততায়ীদের হাতে পড়েছেন। আবার কখনও পড়েছেন মরুঝড়ে। কখনও বিব্রত হয়েছেন অনৈতিক প্রস্তাবে। জীবন বাঁচাতে তারা পালিয়ে বেড়িয়েছেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে।
মশিউর রহমান ও আব্দুল হান্নান আজ বেঁচে নেই। বেঁচে আছেন ওই দলের একমাত্র সদস্য প্রধান সমন্বয়ক সাবেক সচিব অ্যাম্বাসেডর ওয়ালিউর রহমান। সেই সময়ের অভিজ্ঞতার কিছু অংশ তিনি তুলে ধরেছেন নিউজবাংলার কাছে।
ওয়ালিউর রহমানের বয়ান
‘আমি তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে কাজ করি। আমার সামনে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুটো অপশন দিলেন। এক হলো ‘ফরেন সেক্রেটারি’ হওয়া, অন্যটি হলো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খুঁজে দেশে ফিরিয়ে আনার কো-অর্ডিনেশনের দায়িত্ব পালন করা। আমি শেষটাই বেছে নিলাম। এবং প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, এই সুযোগ তো আমি আর পাব না। আমি এটাই নিতে চাই।
‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে দুটো কথা বললাম। এক হলো: আমি সব জায়গায় একা একা যেতে পারব না। আমি একা যাবও না। এটা ঠিকও হবে না। আপনি আমাকে একজন লোক দেন। যে আপনার বিশ্বস্ত। আর দ্বিতীয়টা হলো: এই যাত্রায় আপনি আমাকে ডেইলি অ্যালাউন্স বা ডিএ দেবেন না। কারণ সচিব হিসেবে তখন আমার ডিএ অনেক টাকা। বঙ্গবন্ধুর খুনি খোঁজার জন্য আমি কোনো ভাতা নিতে পারব না।
‘তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে সে সময়ের এনএসআইয়ের মহাপরিচালক মশিউর রহমানকে দিলেন সঙ্গী হিসেবে। তিনি খুবই দক্ষ ও হাই লেভেলের যোগাযোগসম্পন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছিলেন। মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ সজ্জন। এসব কাজে সজ্জন ব্যক্তি সঙ্গী হলে সুবিধা হয়।
‘আমাদের সব টাকা এলো প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে। অন্যদিকে প্রাথমিকভাবে মশিউর রহমান ছোট একটা অ্যামাউন্ট নিলেন তার তহবিল থেকে। আমাদের টিকিট আছে। তা দিয়ে সারা দুনিয়া আমরা বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করেছি। খেয়েছি। মোটামুটি ভালো হোটেলে থেকেছি।
‘আমাদের অবস্থা হলো, আমরা দেয়ালে দেয়ালে মাথা ঠুকেছি। আমাদের হাতে তো কিছু নেই। আমরা জানি না, আমরা যাদের খুঁজছি, তারা কোথায় আছে। তাই প্রথমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ওপর একটি বই বের করলাম, যেখানে হত্যাকাণ্ডের ডিটেইলস থাকল সচিত্র। এরপর সচিত্র খুনিদের বর্ণনা থাকল। এ ছাড়া ওয়ান্টেড নামে খুনিদের নিয়ে একটি পোস্টার বের করলাম। এরপর এই বই ও পোস্টার সারা বিশ্বের মিশন, হাইকমিশন, দূতাবাস, বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হলো। সবার কাছে আহবান জানানো হলো এই ঘৃণ্যতম খুনিদের সম্পর্কে তথ্য দিতে। তাদের ফিরিয়ে দিতে।
মিসরে ধূলিঝড়ের কবলে
‘আমাদের প্রথম টার্গেট লিবিয়ার বেনগাজি। সেখানে আমাদের কর্নেল গাদ্দাফির সঙ্গে বৈঠক ঠিক করা হলো। দিন-তারিখ ঠিক করা হলো।
‘আমাদের এই লিবিয়া অভিযানে সহায়তা করেছিলেন গাদ্দাফির হাউস স্পিকার অব পার্লামেন্ট আব্দুর রহমান আল শারগাম। তিনি আমার বন্ধু ছিলেন। আমি যখন রোমে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর, উনি তখন লিবিয়ার অ্যাম্বাসেডর। তিনি ভেরি এডুকেটেড ম্যান। একজন লেখক ও পণ্ডিত ব্যক্তি। আমি ঢাকা থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম।
‘তিনি আমাকে বললেন, তোমরা প্লেনে এসো না। এতে সবাই তোমাদের আসার খবর জেনে যাবে। এবং তোমাদের নামও জেনে যাবে।
‘সে ক্ষেত্রে সেখানে যেতে দুটো বিকল্প উপায়ের একটি নিতে হবে। হয় আমাদের মিসর হয়ে গাড়িতে করে যেতে হবে। না হয় কায়রো থেকে মাল্টা হয়ে স্টিমারে করে যেতে হবে। আল শারগাম আমাদের গাড়ি ও স্টিমারের রুট ঠিক করে দেন।
‘আমরা কায়রো থেকে ওনাকে ফোন দিলাম। উনি গাদ্দাফির সঙ্গে আমাদের মিটিংয়ের ডেট ঠিক করলেন। কথা হলো, আমরা যাব, উনি সবাইকে কল করবেন এবং খুনিদের আমাদের হাতে তুলে দেবেন। তখন ডালিমসহ সবাই বেনগাজিতে বড় একটি ঘাঁটি তৈরি করেছে।
‘আমরা প্রথমে কায়রো থেকে গাড়িতে করে রওনা হলাম। আমাদের বলা হয়েছিল, শীতের সময় ওয়েদার ভালো থাকে। সমস্যা হবে না। কিন্তু মরুভূমিতে ভয়ংকর মরুঝড় বা স্যান্ড স্টর্মের কারণে আমরা ফিরে আসতে বাধ্য হলাম। বলতে গেলে জীবন নিয়ে কায়রো ফিরতে সমর্থ হলাম। এরপর শারগামকে ফোন করে বললাম, আমরা মাল্টা যাচ্ছি।
অপারেশন মাল্টা
‘আমরা কায়রো থেকে মাল্টা পৌঁছলাম। ইউরোপের ছোট দেশ মাল্টা। ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র। অত্যন্ত ধনীদের কারবার সেখানে। আমরা সেখানে গিয়ে শারগামের পরামর্শে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করলাম।
‘মাল্টা একটা অদ্ভুত জায়গা। সারা পৃথিবীর যত স্পাই এজেন্সি আছে, তাদের সবাই এখানে আছে। মাল্টা হলো সেন্টার ফর অল দ্য স্পাইজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড।
‘আমরা খুবই নিম্নমানের একটা হোটেলে ছিলাম। যেখানে ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা ছিল না। খাওয়াদাওয়া তো নাই-ই। আমরা নাশতা না করেই কাটাতাম।
‘পাশাপাশি দুটো রুম নিয়েছি। তিন দিনের মতো ছিলাম সেই হোটেলে। সেখানে তখন আমাদের কোনো হাইকমিশন ছিল না। একজন ভারতীয় কনসাল জেনারেল ছিলেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং আমাদের আসার কারণ বললাম। তখন তিনিও জানলেন আমাদের ভেঞ্চারটা।
‘তিনিও একটু ঘাবড়ে গেলেন। বললেন, অ্যাম্বাসেডর, বি কেয়ারফুল। মাল্টাতে আপনাদের এক্সট্রিম কেয়ারফুল থাকতে হবে। কারণ আপনারা এখানে এসেছেন, কেন এসেছেন, সবাই তা জানে। দিস ইজ মাল্টা। এখানে গোপন বলে কিছু নেই। এখানে যা আন্ডারগ্রাউন্ড, তাই ওভারগ্রাউন্ড। আমি মশিউর রহমানের মুখের দিকে আর উনি আমার মুখের দিকে তাকালেন। কী করা যাবে, বুঝতে পারছিলাম না।
‘আমরা আমাদের হোটেলের নাম কাউকে বলিনি। আমরা কেবল শারগামের পরামর্শ ও রেফারেন্সে পুলিশ কমিশনারকে আমাদের মাল্টা আসার রিপোর্ট করেছিলাম।
‘আমাদের স্টিমার ঠিক হলো। টিকিট কাটা হলো। আমরা বিলাসবহুল জাহাজে লিবিয়া যাব। ত্রিপোলিতে। আমাদের গাদ্দাফির সঙ্গে মিটিং শিডিউল করা। কথা ছিল আমরা ওখানে গিয়ে পৌঁছাব। আব্দুল রহমান শারগাম লোকজন নিয়ে আমাদের রিসিভ করবেন। আমাদের তার নেতা গাদ্দাফির কাছে নিয়ে যাবেন। গাদ্দাফি তাদের (খুনিদের) ডাকবেন এবং আমাদের হাতে তুলে দেবেন, যতজন ওখানে আছে। ডালিম-টালিম সবাই তখন লিবিয়ায় থাকত।
‘আমরা সুন্দর স্টিমারে যাব। খুব সুন্দর কাজ করা। মাল্টা ধনী দেশ। লিবিয়াও তখন ধনী রাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়া আরামদায়ক জাহাজ।
‘যাত্রার আগের দিন রাত আড়াইটায় হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ। আমি দরজা খুললাম। আমি রাতপোশাক পরে আছি। দরজায় দাঁড়িয়ে স্বয়ং পুলিশ কমিশনার। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এত রাতে! আপনি এখানে কেন?
‘উনি বললেন, প্লিজ ডোন্ট আস্ক মি অ্যানি কোয়েশ্চেন মি. অ্যাম্বাসেডর। প্লিজ কাম কুইকলি। তিনি বললেন, আপনাদের খুন করার জন্য কেউ এখানে ভাড়াটে খুনি পাঠিয়েছে। দ্রুত আমার সঙ্গে বের হয়ে আসুন।
‘সময় ছিল না। আমি দ্রুত জুতা-কাপড় ব্যাগে ঢুকালাম। স্যান্ডেল পরেই বের হয়ে গেলাম। মশিউর ভাইকে জাগালাম। তিনি বললেন, শেভ হতে পারলাম না। আমি বললাম, রাখেন আপনার শেভ-টেভ। আগে জীবন বাঁচান।
‘আমরা গেলাম পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। সেখানে আমরা আগে গিয়েছি, যেদিন এসেছিলাম। হেডকোয়ার্টারের পেছনে সুন্দর একটি রেসিডেন্স আছে। দারুণ কিছু স্যুট। বিদেশি অতিথিদের জন্য। পুলিশ কমিশনার তার একটি আমাদের থাকার জন্য দিলেন। বললেন, এখানে থেকে রাত কাটাও। এখান থেকেই কাল তোমাদের ফিরে যেতে হবে ইতালির মিলান। নট টু রোম।
‘আমি বললাম, কমিশনার, মিলানের চেয়ে রোম আমার জন্য ভালো। সেখানে আমি অ্যাম্বাসেডর ছিলাম। আমি সেখানের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবাইকে চিনি। তারাও আমাকে চেনেন। আমি সেখানকার রাস্তাঘাট সব চিনি।
‘তিনি বললেন, তুমি ওখানকার সবাইকে চেন বলেই ওখানে যাবে না। পরের দিন উনি আমাকে বিমানে তুলে দিলেন। আমাদের যে টিকিট ছিল, তা বাদ। নতুন টিকিট করলেন, নতুন এয়ারলাইনসে। আমরা মিলানে পৌঁছলাম।
‘আমি কল করলাম অ্যাম্বাসেডর শারগামকে। তিনি বললেন, আমি সব জানি। আমি তোমাদের সব খবর জানি। আমি তোমাদের ফোন দিচ্ছি। কিন্তু তোমরা ধরছ না। (তখন তো মোবাইল ফোন নেই। উনি কল করছিলেন হোটেলের ফোনে। আমরা তো তখন দৌড়ের ওপর।) তোমরা আসতে পারছ না, সেটা আমি জানি। মাল্টায় কী হচ্ছে, ত্রিপোলি তা জানে। রশীদ খুনি পাঠিয়েছে, তা আমি লিডারকে (গাদ্দাফি) জানিয়েছি।
‘আমাদের অভিযান আল্টিমেটলি ব্যর্থ হলো। আমরা মিলান থেকে লন্ডন গেলাম। সেখানে আমাদের অসমাপ্ত কিছু কাজ ছিল। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে আমাদের কাজ ছিল। আমরা গেলাম যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আমরা সেখান থেকে এমআই-ফাইভ, এমআই-সিক্সকে সঙ্গে নিয়ে পৃথক একটি গাড়িতে গেলাম ৩০-৪০ মাইল দূরে নর্থ ইস্ট কেন্ট বলে একটি জায়গায়। সেখানে পাশাপাশি দুটো বাড়ি ছিল। এর একটি খুনিদের ঘাঁটি ছিল। তাদের ইউরোপের দুটি ঘাঁটির একটি ছিল মিলান, অপরটি এই লন্ডনে। লন্ডনের এই বাড়িতে তারা বছরে দুই-তিনটি মিটিং করত। সবাই এক হতো। মিলানেরটা আগেই আমি বন্ধ করেছিলাম ইতালির সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রোদির মাধ্যমে। এবার লন্ডনেরটা বন্ধ হলো। ওদের মবিলিটি বন্ধ হয়ে গেল।
‘আমরা মশিউর রহমানের মাধ্যমে এই বাড়ির খবর পেয়েছিলাম। তার অসম্ভব যোগাযোগ ছিল দুনিয়াজুড়ে। তিনি এই বাড়ি খুঁজে বের করলেন।
‘তিনতলা বাড়ি। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের লোকেরা গিয়ে প্রথমে দরজা ধাক্কাল। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করল। সব ঠিকঠাক আছে। বিছানা-বালিশ। কেউ তখন না থাকলেও বোঝা গেল এখানে নিয়মিত লোকজন আসে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড দুটো কাঠ নিয়ে এসে বাড়িটি সিলগালা করল। তারা লিখে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এই বাড়ি বাজেয়াপ্ত করছে। কেউ এখানে প্রবেশ করলে তা বিচারযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
পাশার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার চাইলেন মুগাবে
‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একজন আব্দুল আজিজ পাশা। তিনি তখন জিম্বাবুয়েতে জাঁদরেল ব্যবসায়ী। মুগাবে সরকারের খুব ঘনিষ্ঠজন তিনি। তাকে আনতে জিম্বাবুয়েতে গিয়েছিলাম আমরা। অভিজ্ঞতাটা মোটেও সুখকর ছিল না।
‘জিম্বাবুয়েতে তখন একটি মিশন ছিল। এখন নেই। তুলে আনা হয়েছে। তখন মিশনের দায়িত্বে ছিলেন বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। আমরা একটি মিটিং ঠিক করি প্রেসিডেন্ট রবার্ট গ্যাব্রিয়াল মুগাবের সঙ্গে।
‘প্রথমে তার সোশ্যাল সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করি। তিনি বললেন, অ্যাম্বাসেডর, কোনো ব্যাপারই না। কখন দেখা করতে চান? আমি বললাম, যখন সময় দেবেন। তিনি বললেন, যখন খুশি আসেন। তবে দেখুন, আমাদের তো একটা এনজিও আছে। সেখানে কিছু ডোনেশন দিন।
‘আমি বললাম, কত বলুন। আমরা তো টাকা নিয়ে আসি নাই। একেবারে মিনিমাম কত বলুন। তখন তিনি ৫ হাজার ডলার দাবি করে বসলেন। আমি বললাম, এত টাকা তো আমাদের কাছে নাই। আমরা টাকা বহন করি না। তখন তিনি বললেন, ঠিক আছে, যা দেবেন, দিন। আমি বললাম, এক হাজার ডলার দিতে পারব বড়জোর। তখন তিনি বললেন, এত কমে হবে না। তখন আমাদের হাইকমিশনারের কাছ থেকে নিয়ে তাকে দুই হাজার ডলার দিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে মেইল করলাম। প্রধানমন্ত্রীও দেরি না করেই আমাদের তা পাঠিয়ে দিলেন।
‘ভদ্রমহিলা এরপর রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। আমরা সহজেই সরাসরি প্রেসিডেন্ট মুগাবের কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। তিনি হাত মেলালেন। কফি অফার করলেন। এরপর বললেন, দেখুন, আপনারা কেন এসেছেন আমি জানি। ও (আজিজ পাশা) আমাদের কাছে আছে। আমরা ওকে দেখে রেখেছি। তাকে তো আমরা ছাড়তে পারব না।
‘আমি বললাম, দেখুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপনার কলিগ ছিলেন। আপনি তাকে চিনতেন। কমনওয়েলথে তার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার খুনিকে আপনারা সাপোর্ট করছেন। আশ্রয় দিচ্ছেন। এটা কি ঠিক? আপনি তাকে বিচারের জন্য ছাড়বেন না?
‘তখন মুগাবে বললেন, দেখুন, আমার ওয়াইফ মারা গেছেন। তার নামে একটি ওয়েলফেয়ার ফান্ড আছে। আপনারা সেই ফান্ডে কিছু টাকা দিন। আমি বললাম, আমরা টাকা নিয়ে আসিনি। আপনার সঙ্গে দেখা করতেই আমাকে টাকা দিতে হয়েছে। তিনি বললেন, এটা খুবই ছোট বিষয়। আমার মেয়ে আছে। সে কিছু কাজটাজ করে।
‘আমি বললাম, মিনিমাম কত লাগবে বলুন! তিনি বললেন, ১০ মিলিয়ন ডলার দিন, আমি তাকে (আজিজ পাশা) সেন্ড করব।
‘হারারেতে পাশাকে তারা সুন্দর বাড়ি করে দিয়েছিল। গাদ্দাফির কাছ থেকে উপহারের টাকায় ১০টা বাস কিনে দিয়েছিল। তিনি সেইগুলো চালাচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন বিনিয়োগকারী। জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে তিনি ধনী লোক।
‘আমি মুগাবেকে বললাম, দেখুন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আপনাকে চিঠি লিখেছেন। আপনি যখন পশ্চিমাবিরোধী বিদ্রোহ করেছিলেন, আমরা তখন আপনাকে সমর্থন করেছিলাম। তখন তিনি বললেন, দেখুন ৫ মিলিয়নের নিচে আমি তাকে আপনাদের হাতে তুলে দিতে পারব না।
‘আমরা বের হয়ে আসি এবং প্রধানমন্ত্রীকে জানাই, আমরা টাকা দিতে রাজি হইনি। তিনি বলেন, ঠিক আছে। এর দুই বছরের মধ্যে আজিজ পাশা মারা যায়।
কেনিয়াতেও মেলে হতাশা
‘কেনিয়ার অভিজ্ঞতা জিম্বাবুয়ের চেয়েও খারাপ। আমরা নাইরোবিতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্টেট মিনিস্টার, কতজনের সঙ্গে যে বসেছি! কিন্তু তারা শুরু থেকেই খুনিদের ফিরিয়ে দিতে নারাজ ছিল।
‘খুনিদের সঙ্গে তাদের প্রশাসনের বংশপরম্পরায় ব্যবসা ছিল। নাইরোবির সবাই ছিল করাপ্ট ম্যান। আমরা দেয়ালে মাথা ঠুকে কিছু করতে পারছিলাম না।
‘জিম্বাবুয়েতেও আমরা শিওর ছিলাম, মুগাবেকে টাকা দিতে রাজি হলে আজিজ পাশাকে ফেরত পেতাম। কিন্তু কেনিয়াতে কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হলো না।
‘ডালিম সেখানে চতুরতার সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি সেখানকার সিনেটর। তিনি কেনিয়ার পলিটিশিয়ান সিনেটর। মাল্টি-মিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী।’
আরও পড়ুন:গত ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড SRO No-404-Law/2025 এর মাধ্যমে বাংলা ভাষায় প্রণীত আয়কর আইন, ২০২৩ এর Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ বাতিল করে ২০২৩ সালে বাংলা আয়কর আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করার পর হতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আয়কর আইনের Authentic English Text প্রকাশের দাবি জানাচ্ছিলেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও অনুশীলনের বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে থাকতেন এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text সরকারী গেজেটে প্রকাশ হবার ফলে দেশী-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ আয়কর আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা পাবেন বিধায় করদাতাগণের আস্থা অধিকতর বৃদ্ধি পাবে এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করে স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কাস্টমস আইন, ২০২৩ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর Authentic English Text সরকারি গেজেটে প্রকাশের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই এই দুটি আইনের Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীগনের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন পদ্মা সেতুতে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাশলেস, টোল কালেক্টর ব্যতীত ননস্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ETC) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের টোল পরিশোধ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় এসেছে।
বর্তমানে বিকাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের অ্যাপ এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোল পরিশোধ করা যাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা বিকাশ অ্যাপে গিয়ে “টোল” অপশনের অধীনে “মোটরযান রেজিস্ট্রেশন করুন” এ প্রবেশ করে গাড়ির নম্বর ও চেসিস নম্বরের শেষ ৪ (চার) ডিজিট প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। সফল রেজিস্ট্রেশনের পর ফিরতি এসএমএসে একটি Ekpass ID প্রেরণ করা হবে।
এই Ekpass ID ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাপের “Pay Bill” অপশনের “D-Toll Top-Up” সেবার মাধ্যমে রিচার্জ করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজার নিকটস্থ রেজিস্ট্রেশন বুথে বিআরটিএ অনুমোদিত RFID ট্যাগ প্রথমবারের মতো যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। একবার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, যানবাহন কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে ETC লেন ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে।
১৮ অক্টোবর সেতু বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ পদ্মা সেতুর ইটিসি বুথ পরিদর্শন করেন এবং ইটিসি সেবা ব্যবহার করে পদ্মা সেতু পারাপার করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ETC সিস্টেমের লাইভ পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই সেবার পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ETC সিস্টেমের মাধ্যমে মোট ১,৮১৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং মোট ৩৪,৯১,৭০০ টাকা টোল আদায় সম্পন্ন হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহোদয়ের বিশেষ নির্দেশনা ও দিকনির্দেশনায় পদ্মা সেতুতে এই ETC সিস্টেম বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি দেশের টোল ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা সময়, জ্বালানি ও মানবসম্পদের অপচয় হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ এই সেবার আওতায় যুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর a2i (এটুআই) কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং নতুন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে সংযুক্তির কাজ অব্যাহত রয়েছে।
এই টোল কালেক্টর ব্যতীত নন স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীরা দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছভাবে টোল পরিশোধ করতে পারবেন—যা বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহিদ ৫৮ টি পরিবার এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ ১৯টি পরিবারের সদস্যদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ লক্ষ টাকা করে, মোট ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, "শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। ঐতিহাসিক শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আজকের এই স্বীকৃতি তারই প্রমাণ।" শহীদ পরিবারদেরকে স্বীকৃতি দিতে পেরে সরকার গর্বিত উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন ইতিহাস থেকে যেনো কেউ ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরের শহীদদের নাম মুছতে না পারে, এজন্য শাপলা চত্বরেই খোদাই করে লেখা হবে শহীদদের নাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন,"শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের আর্থিক সহায়তা প্রদান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ।" এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মোদি বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, "স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এই মহতী উদ্যোগে সারা বাংলার আলেম সমাজ সম্মানিত হয়েছে। "
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান জনাব মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি জনাব নুরুল হক নুর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া।
‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য ও সংস্কারের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি আরও বলেন, এটি ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই দলিল মৌলিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ২০২৬ সালের নির্বাচনের পথে দেশটি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়।
অনুষ্ঠানে মিলারের উপস্থিতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত বহন করে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ লক্ষ্যে ইইউ কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এসব উদ্যোগ গণতান্ত্রিক চর্চা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি ইইউর প্রতিশ্রুতির অংশ। সূত্র: বাসস
ইতালির রোমে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব খাদ্য ফোরাম ২০২৫-এ যোগ দিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান ও অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি উইং) ড. মো. মাহমুদুর রহমান।
উপদেষ্টার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ফোরামে দেশের কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সদস্য দেশসমূহের সাথে বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করবে। সফরকালে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা ইতালির ইন্টেরিয়র মিনিস্টার এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতালির রোমস্থ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য এ ফোরাম ১০ অক্টোবর শুরু হয়ে চলবে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। সূত্র: বাসস
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করে মোট ১২ টি নতুন কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক গতকাল একটি সরকারি আদেশ জারী করা হয়েছে। কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগ দু’টির বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে জনবল বৃদ্ধি এবং নতুন ১২টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে ৩৭৩টি ক্যাডার পদ এবং ৩,২২৪ টি নন-ক্যাডার পদসহ মোট ৩,৫৯৭টি পদ নতুনভাবে সৃজন করা হয়েছে।
কর জাল সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে স্বনির্ভরতা অর্জন, সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি পরোক্ষ কর ব্যাবস্থাকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং মন্ত্রি পরিষদ বিভাগসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক অনুমোদন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক উক্ত আদেশ জারী করা হয়। উক্ত আদেশ অনুযায়ী ৩ পর্যায়ে ৫টি নতুন মূল্য সংযোজন কর কমিশনারেট, ৪টি নতুন কাস্টমস হাউস এবং ৩ টি বিশেষায়িত দপ্তর সৃজন করা হলো।
নতুন ১২ টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন ছাড়াও উক্ত সরকারি আদেশের মাধ্যমে বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিটসমূহের সম্প্রসারণ, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাস্টমস কার্যক্রম এবং কাস্টমস ও ভ্যাট গোয়েন্দা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।
কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের ফলে পরোক্ষ কর আহরণ কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
-জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আগামীর স্বপ্নপূরণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য প্রস্তুতি লাগবে।
তিনি বলেন, যোগ্য হয়েই সুযোগ্য স্থানে অধিষ্ঠিত হতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র সংসদের আয়োজনে ১ম এমডিসি জাতীয় স্কুল, কলেজ ও আন্তঃমাদ্রাসা বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্রান্ড ফিনালে ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা একটি স্থানে আসতে পেরেছি। এখানেই শেষ নয়, আরো বহুদূর যেতে হবে। এই পথ পাড়ি দিতে কোনো বাঁধা আসলে আমাদেরকে থেমে গেলে চলবে না। সকল বাঁধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।’
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. খালিদ বলেন, সকল ভেদাভেদ ও মতপার্থক্য ভুলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে সুযোগ এসেছে সেটাকে পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। এ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে আমাদেরকে বহুবছর সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি সকলকে কালেমা তায়্যেবার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান।
পরে উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী দলের সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উল্লেখ্য, তিন মাসব্যাপী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ৫৪টি প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
স্কুল ক্যাটেগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুগদা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রানারআপ হয়েছে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
কলেজ ও উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে নটর ডেম কলেজ চ্যাম্পিয়ন এবং মনিপুর স্কুল ও কলেজ রানারআপ হয়েছে।
মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা চ্যাম্পিয়ন এবং বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মাদানীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. শামসুল আলম, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সাঈদ, ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি আবু সাদিক কায়েম, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রফেসর নুরুন্নবী মানিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য