১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রথমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ সুগম করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর খুনিরা কে কোথায়, শুরু হয় তত্ত্বতালাশ। গঠন করা হয় একটি টাস্কফোর্স।
এই টাস্কফোর্সের সব খোঁজখবরের মূল সমন্বয়ক ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব অ্যাম্বাসেডর ওয়ালিউর রহমান। তার দুই হাত হিসেবে কাজ করেছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা এনএসআইয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক মশিউর রহমান ও পুলিশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট বা সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল হান্নান। আব্দুল হান্নান ছিলেন টাস্কফোর্সের প্রধান ইনভেস্টিগেটর।
কে কেথায় আছেন, সেই খোঁজ পেতে একটি বড় সময় গেছে টাস্কফোর্সের। সেটা ছিল প্রায় দুই বছরের একটা অভিযাত্রা। শুরুতে হাতে কোনো তথ্যই ছিল না। একেবারে শূন্য থেকে এই দলের সদস্যরা কয়েকটি মহাদেশ ঘুরে খুঁজে বের করেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অবস্থান।
কেবল তা-ই নয়, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে তারা ঘুরেছেন আশ্রয় দেয়া দেশগুলোতে। সেখানকার শাসকদের সঙ্গে করেছেন দেনদরবার। এসব করতে করতে ঝুঁকির মুখেও পড়েছেন কোথাও কোথাও। আততায়ীদের হাতে পড়েছেন। আবার কখনও পড়েছেন মরুঝড়ে। কখনও বিব্রত হয়েছেন অনৈতিক প্রস্তাবে। জীবন বাঁচাতে তারা পালিয়ে বেড়িয়েছেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে।
মশিউর রহমান ও আব্দুল হান্নান আজ বেঁচে নেই। বেঁচে আছেন ওই দলের একমাত্র সদস্য প্রধান সমন্বয়ক সাবেক সচিব অ্যাম্বাসেডর ওয়ালিউর রহমান। সেই সময়ের অভিজ্ঞতার কিছু অংশ তিনি তুলে ধরেছেন নিউজবাংলার কাছে।
ওয়ালিউর রহমানের বয়ান
‘আমি তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে কাজ করি। আমার সামনে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুটো অপশন দিলেন। এক হলো ‘ফরেন সেক্রেটারি’ হওয়া, অন্যটি হলো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খুঁজে দেশে ফিরিয়ে আনার কো-অর্ডিনেশনের দায়িত্ব পালন করা। আমি শেষটাই বেছে নিলাম। এবং প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, এই সুযোগ তো আমি আর পাব না। আমি এটাই নিতে চাই।
‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে দুটো কথা বললাম। এক হলো: আমি সব জায়গায় একা একা যেতে পারব না। আমি একা যাবও না। এটা ঠিকও হবে না। আপনি আমাকে একজন লোক দেন। যে আপনার বিশ্বস্ত। আর দ্বিতীয়টা হলো: এই যাত্রায় আপনি আমাকে ডেইলি অ্যালাউন্স বা ডিএ দেবেন না। কারণ সচিব হিসেবে তখন আমার ডিএ অনেক টাকা। বঙ্গবন্ধুর খুনি খোঁজার জন্য আমি কোনো ভাতা নিতে পারব না।
‘তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে সে সময়ের এনএসআইয়ের মহাপরিচালক মশিউর রহমানকে দিলেন সঙ্গী হিসেবে। তিনি খুবই দক্ষ ও হাই লেভেলের যোগাযোগসম্পন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছিলেন। মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ সজ্জন। এসব কাজে সজ্জন ব্যক্তি সঙ্গী হলে সুবিধা হয়।
‘আমাদের সব টাকা এলো প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে। অন্যদিকে প্রাথমিকভাবে মশিউর রহমান ছোট একটা অ্যামাউন্ট নিলেন তার তহবিল থেকে। আমাদের টিকিট আছে। তা দিয়ে সারা দুনিয়া আমরা বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করেছি। খেয়েছি। মোটামুটি ভালো হোটেলে থেকেছি।
‘আমাদের অবস্থা হলো, আমরা দেয়ালে দেয়ালে মাথা ঠুকেছি। আমাদের হাতে তো কিছু নেই। আমরা জানি না, আমরা যাদের খুঁজছি, তারা কোথায় আছে। তাই প্রথমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ওপর একটি বই বের করলাম, যেখানে হত্যাকাণ্ডের ডিটেইলস থাকল সচিত্র। এরপর সচিত্র খুনিদের বর্ণনা থাকল। এ ছাড়া ওয়ান্টেড নামে খুনিদের নিয়ে একটি পোস্টার বের করলাম। এরপর এই বই ও পোস্টার সারা বিশ্বের মিশন, হাইকমিশন, দূতাবাস, বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হলো। সবার কাছে আহবান জানানো হলো এই ঘৃণ্যতম খুনিদের সম্পর্কে তথ্য দিতে। তাদের ফিরিয়ে দিতে।
মিসরে ধূলিঝড়ের কবলে
‘আমাদের প্রথম টার্গেট লিবিয়ার বেনগাজি। সেখানে আমাদের কর্নেল গাদ্দাফির সঙ্গে বৈঠক ঠিক করা হলো। দিন-তারিখ ঠিক করা হলো।
‘আমাদের এই লিবিয়া অভিযানে সহায়তা করেছিলেন গাদ্দাফির হাউস স্পিকার অব পার্লামেন্ট আব্দুর রহমান আল শারগাম। তিনি আমার বন্ধু ছিলেন। আমি যখন রোমে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর, উনি তখন লিবিয়ার অ্যাম্বাসেডর। তিনি ভেরি এডুকেটেড ম্যান। একজন লেখক ও পণ্ডিত ব্যক্তি। আমি ঢাকা থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম।
‘তিনি আমাকে বললেন, তোমরা প্লেনে এসো না। এতে সবাই তোমাদের আসার খবর জেনে যাবে। এবং তোমাদের নামও জেনে যাবে।
‘সে ক্ষেত্রে সেখানে যেতে দুটো বিকল্প উপায়ের একটি নিতে হবে। হয় আমাদের মিসর হয়ে গাড়িতে করে যেতে হবে। না হয় কায়রো থেকে মাল্টা হয়ে স্টিমারে করে যেতে হবে। আল শারগাম আমাদের গাড়ি ও স্টিমারের রুট ঠিক করে দেন।
‘আমরা কায়রো থেকে ওনাকে ফোন দিলাম। উনি গাদ্দাফির সঙ্গে আমাদের মিটিংয়ের ডেট ঠিক করলেন। কথা হলো, আমরা যাব, উনি সবাইকে কল করবেন এবং খুনিদের আমাদের হাতে তুলে দেবেন। তখন ডালিমসহ সবাই বেনগাজিতে বড় একটি ঘাঁটি তৈরি করেছে।
‘আমরা প্রথমে কায়রো থেকে গাড়িতে করে রওনা হলাম। আমাদের বলা হয়েছিল, শীতের সময় ওয়েদার ভালো থাকে। সমস্যা হবে না। কিন্তু মরুভূমিতে ভয়ংকর মরুঝড় বা স্যান্ড স্টর্মের কারণে আমরা ফিরে আসতে বাধ্য হলাম। বলতে গেলে জীবন নিয়ে কায়রো ফিরতে সমর্থ হলাম। এরপর শারগামকে ফোন করে বললাম, আমরা মাল্টা যাচ্ছি।
অপারেশন মাল্টা
‘আমরা কায়রো থেকে মাল্টা পৌঁছলাম। ইউরোপের ছোট দেশ মাল্টা। ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র। অত্যন্ত ধনীদের কারবার সেখানে। আমরা সেখানে গিয়ে শারগামের পরামর্শে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করলাম।
‘মাল্টা একটা অদ্ভুত জায়গা। সারা পৃথিবীর যত স্পাই এজেন্সি আছে, তাদের সবাই এখানে আছে। মাল্টা হলো সেন্টার ফর অল দ্য স্পাইজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড।
‘আমরা খুবই নিম্নমানের একটা হোটেলে ছিলাম। যেখানে ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা ছিল না। খাওয়াদাওয়া তো নাই-ই। আমরা নাশতা না করেই কাটাতাম।
‘পাশাপাশি দুটো রুম নিয়েছি। তিন দিনের মতো ছিলাম সেই হোটেলে। সেখানে তখন আমাদের কোনো হাইকমিশন ছিল না। একজন ভারতীয় কনসাল জেনারেল ছিলেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং আমাদের আসার কারণ বললাম। তখন তিনিও জানলেন আমাদের ভেঞ্চারটা।
‘তিনিও একটু ঘাবড়ে গেলেন। বললেন, অ্যাম্বাসেডর, বি কেয়ারফুল। মাল্টাতে আপনাদের এক্সট্রিম কেয়ারফুল থাকতে হবে। কারণ আপনারা এখানে এসেছেন, কেন এসেছেন, সবাই তা জানে। দিস ইজ মাল্টা। এখানে গোপন বলে কিছু নেই। এখানে যা আন্ডারগ্রাউন্ড, তাই ওভারগ্রাউন্ড। আমি মশিউর রহমানের মুখের দিকে আর উনি আমার মুখের দিকে তাকালেন। কী করা যাবে, বুঝতে পারছিলাম না।
‘আমরা আমাদের হোটেলের নাম কাউকে বলিনি। আমরা কেবল শারগামের পরামর্শ ও রেফারেন্সে পুলিশ কমিশনারকে আমাদের মাল্টা আসার রিপোর্ট করেছিলাম।
‘আমাদের স্টিমার ঠিক হলো। টিকিট কাটা হলো। আমরা বিলাসবহুল জাহাজে লিবিয়া যাব। ত্রিপোলিতে। আমাদের গাদ্দাফির সঙ্গে মিটিং শিডিউল করা। কথা ছিল আমরা ওখানে গিয়ে পৌঁছাব। আব্দুল রহমান শারগাম লোকজন নিয়ে আমাদের রিসিভ করবেন। আমাদের তার নেতা গাদ্দাফির কাছে নিয়ে যাবেন। গাদ্দাফি তাদের (খুনিদের) ডাকবেন এবং আমাদের হাতে তুলে দেবেন, যতজন ওখানে আছে। ডালিম-টালিম সবাই তখন লিবিয়ায় থাকত।
‘আমরা সুন্দর স্টিমারে যাব। খুব সুন্দর কাজ করা। মাল্টা ধনী দেশ। লিবিয়াও তখন ধনী রাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়া আরামদায়ক জাহাজ।
‘যাত্রার আগের দিন রাত আড়াইটায় হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ। আমি দরজা খুললাম। আমি রাতপোশাক পরে আছি। দরজায় দাঁড়িয়ে স্বয়ং পুলিশ কমিশনার। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এত রাতে! আপনি এখানে কেন?
‘উনি বললেন, প্লিজ ডোন্ট আস্ক মি অ্যানি কোয়েশ্চেন মি. অ্যাম্বাসেডর। প্লিজ কাম কুইকলি। তিনি বললেন, আপনাদের খুন করার জন্য কেউ এখানে ভাড়াটে খুনি পাঠিয়েছে। দ্রুত আমার সঙ্গে বের হয়ে আসুন।
‘সময় ছিল না। আমি দ্রুত জুতা-কাপড় ব্যাগে ঢুকালাম। স্যান্ডেল পরেই বের হয়ে গেলাম। মশিউর ভাইকে জাগালাম। তিনি বললেন, শেভ হতে পারলাম না। আমি বললাম, রাখেন আপনার শেভ-টেভ। আগে জীবন বাঁচান।
‘আমরা গেলাম পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। সেখানে আমরা আগে গিয়েছি, যেদিন এসেছিলাম। হেডকোয়ার্টারের পেছনে সুন্দর একটি রেসিডেন্স আছে। দারুণ কিছু স্যুট। বিদেশি অতিথিদের জন্য। পুলিশ কমিশনার তার একটি আমাদের থাকার জন্য দিলেন। বললেন, এখানে থেকে রাত কাটাও। এখান থেকেই কাল তোমাদের ফিরে যেতে হবে ইতালির মিলান। নট টু রোম।
‘আমি বললাম, কমিশনার, মিলানের চেয়ে রোম আমার জন্য ভালো। সেখানে আমি অ্যাম্বাসেডর ছিলাম। আমি সেখানের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবাইকে চিনি। তারাও আমাকে চেনেন। আমি সেখানকার রাস্তাঘাট সব চিনি।
‘তিনি বললেন, তুমি ওখানকার সবাইকে চেন বলেই ওখানে যাবে না। পরের দিন উনি আমাকে বিমানে তুলে দিলেন। আমাদের যে টিকিট ছিল, তা বাদ। নতুন টিকিট করলেন, নতুন এয়ারলাইনসে। আমরা মিলানে পৌঁছলাম।
‘আমি কল করলাম অ্যাম্বাসেডর শারগামকে। তিনি বললেন, আমি সব জানি। আমি তোমাদের সব খবর জানি। আমি তোমাদের ফোন দিচ্ছি। কিন্তু তোমরা ধরছ না। (তখন তো মোবাইল ফোন নেই। উনি কল করছিলেন হোটেলের ফোনে। আমরা তো তখন দৌড়ের ওপর।) তোমরা আসতে পারছ না, সেটা আমি জানি। মাল্টায় কী হচ্ছে, ত্রিপোলি তা জানে। রশীদ খুনি পাঠিয়েছে, তা আমি লিডারকে (গাদ্দাফি) জানিয়েছি।
‘আমাদের অভিযান আল্টিমেটলি ব্যর্থ হলো। আমরা মিলান থেকে লন্ডন গেলাম। সেখানে আমাদের অসমাপ্ত কিছু কাজ ছিল। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে আমাদের কাজ ছিল। আমরা গেলাম যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আমরা সেখান থেকে এমআই-ফাইভ, এমআই-সিক্সকে সঙ্গে নিয়ে পৃথক একটি গাড়িতে গেলাম ৩০-৪০ মাইল দূরে নর্থ ইস্ট কেন্ট বলে একটি জায়গায়। সেখানে পাশাপাশি দুটো বাড়ি ছিল। এর একটি খুনিদের ঘাঁটি ছিল। তাদের ইউরোপের দুটি ঘাঁটির একটি ছিল মিলান, অপরটি এই লন্ডনে। লন্ডনের এই বাড়িতে তারা বছরে দুই-তিনটি মিটিং করত। সবাই এক হতো। মিলানেরটা আগেই আমি বন্ধ করেছিলাম ইতালির সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রোদির মাধ্যমে। এবার লন্ডনেরটা বন্ধ হলো। ওদের মবিলিটি বন্ধ হয়ে গেল।
‘আমরা মশিউর রহমানের মাধ্যমে এই বাড়ির খবর পেয়েছিলাম। তার অসম্ভব যোগাযোগ ছিল দুনিয়াজুড়ে। তিনি এই বাড়ি খুঁজে বের করলেন।
‘তিনতলা বাড়ি। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের লোকেরা গিয়ে প্রথমে দরজা ধাক্কাল। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করল। সব ঠিকঠাক আছে। বিছানা-বালিশ। কেউ তখন না থাকলেও বোঝা গেল এখানে নিয়মিত লোকজন আসে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড দুটো কাঠ নিয়ে এসে বাড়িটি সিলগালা করল। তারা লিখে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এই বাড়ি বাজেয়াপ্ত করছে। কেউ এখানে প্রবেশ করলে তা বিচারযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
পাশার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার চাইলেন মুগাবে
‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একজন আব্দুল আজিজ পাশা। তিনি তখন জিম্বাবুয়েতে জাঁদরেল ব্যবসায়ী। মুগাবে সরকারের খুব ঘনিষ্ঠজন তিনি। তাকে আনতে জিম্বাবুয়েতে গিয়েছিলাম আমরা। অভিজ্ঞতাটা মোটেও সুখকর ছিল না।
‘জিম্বাবুয়েতে তখন একটি মিশন ছিল। এখন নেই। তুলে আনা হয়েছে। তখন মিশনের দায়িত্বে ছিলেন বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। আমরা একটি মিটিং ঠিক করি প্রেসিডেন্ট রবার্ট গ্যাব্রিয়াল মুগাবের সঙ্গে।
‘প্রথমে তার সোশ্যাল সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করি। তিনি বললেন, অ্যাম্বাসেডর, কোনো ব্যাপারই না। কখন দেখা করতে চান? আমি বললাম, যখন সময় দেবেন। তিনি বললেন, যখন খুশি আসেন। তবে দেখুন, আমাদের তো একটা এনজিও আছে। সেখানে কিছু ডোনেশন দিন।
‘আমি বললাম, কত বলুন। আমরা তো টাকা নিয়ে আসি নাই। একেবারে মিনিমাম কত বলুন। তখন তিনি ৫ হাজার ডলার দাবি করে বসলেন। আমি বললাম, এত টাকা তো আমাদের কাছে নাই। আমরা টাকা বহন করি না। তখন তিনি বললেন, ঠিক আছে, যা দেবেন, দিন। আমি বললাম, এক হাজার ডলার দিতে পারব বড়জোর। তখন তিনি বললেন, এত কমে হবে না। তখন আমাদের হাইকমিশনারের কাছ থেকে নিয়ে তাকে দুই হাজার ডলার দিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে মেইল করলাম। প্রধানমন্ত্রীও দেরি না করেই আমাদের তা পাঠিয়ে দিলেন।
‘ভদ্রমহিলা এরপর রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। আমরা সহজেই সরাসরি প্রেসিডেন্ট মুগাবের কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। তিনি হাত মেলালেন। কফি অফার করলেন। এরপর বললেন, দেখুন, আপনারা কেন এসেছেন আমি জানি। ও (আজিজ পাশা) আমাদের কাছে আছে। আমরা ওকে দেখে রেখেছি। তাকে তো আমরা ছাড়তে পারব না।
‘আমি বললাম, দেখুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপনার কলিগ ছিলেন। আপনি তাকে চিনতেন। কমনওয়েলথে তার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার খুনিকে আপনারা সাপোর্ট করছেন। আশ্রয় দিচ্ছেন। এটা কি ঠিক? আপনি তাকে বিচারের জন্য ছাড়বেন না?
‘তখন মুগাবে বললেন, দেখুন, আমার ওয়াইফ মারা গেছেন। তার নামে একটি ওয়েলফেয়ার ফান্ড আছে। আপনারা সেই ফান্ডে কিছু টাকা দিন। আমি বললাম, আমরা টাকা নিয়ে আসিনি। আপনার সঙ্গে দেখা করতেই আমাকে টাকা দিতে হয়েছে। তিনি বললেন, এটা খুবই ছোট বিষয়। আমার মেয়ে আছে। সে কিছু কাজটাজ করে।
‘আমি বললাম, মিনিমাম কত লাগবে বলুন! তিনি বললেন, ১০ মিলিয়ন ডলার দিন, আমি তাকে (আজিজ পাশা) সেন্ড করব।
‘হারারেতে পাশাকে তারা সুন্দর বাড়ি করে দিয়েছিল। গাদ্দাফির কাছ থেকে উপহারের টাকায় ১০টা বাস কিনে দিয়েছিল। তিনি সেইগুলো চালাচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন বিনিয়োগকারী। জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে তিনি ধনী লোক।
‘আমি মুগাবেকে বললাম, দেখুন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আপনাকে চিঠি লিখেছেন। আপনি যখন পশ্চিমাবিরোধী বিদ্রোহ করেছিলেন, আমরা তখন আপনাকে সমর্থন করেছিলাম। তখন তিনি বললেন, দেখুন ৫ মিলিয়নের নিচে আমি তাকে আপনাদের হাতে তুলে দিতে পারব না।
‘আমরা বের হয়ে আসি এবং প্রধানমন্ত্রীকে জানাই, আমরা টাকা দিতে রাজি হইনি। তিনি বলেন, ঠিক আছে। এর দুই বছরের মধ্যে আজিজ পাশা মারা যায়।
কেনিয়াতেও মেলে হতাশা
‘কেনিয়ার অভিজ্ঞতা জিম্বাবুয়ের চেয়েও খারাপ। আমরা নাইরোবিতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্টেট মিনিস্টার, কতজনের সঙ্গে যে বসেছি! কিন্তু তারা শুরু থেকেই খুনিদের ফিরিয়ে দিতে নারাজ ছিল।
‘খুনিদের সঙ্গে তাদের প্রশাসনের বংশপরম্পরায় ব্যবসা ছিল। নাইরোবির সবাই ছিল করাপ্ট ম্যান। আমরা দেয়ালে মাথা ঠুকে কিছু করতে পারছিলাম না।
‘জিম্বাবুয়েতেও আমরা শিওর ছিলাম, মুগাবেকে টাকা দিতে রাজি হলে আজিজ পাশাকে ফেরত পেতাম। কিন্তু কেনিয়াতে কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হলো না।
‘ডালিম সেখানে চতুরতার সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি সেখানকার সিনেটর। তিনি কেনিয়ার পলিটিশিয়ান সিনেটর। মাল্টি-মিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী।’
আরও পড়ুন:লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।
গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।
গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।
এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।
আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।
তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।
ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।
১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।
সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।
এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’
স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’
বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।
কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।
রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।
সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।
একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।
তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।
স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।
ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।
মন্তব্য