দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিতরণ করা ঋণের কিস্তি আদায়ে গতি কম। ভালো গ্রাহকরা ঋণ শোধ করে চলেছেন। এই লম্বা সময়ে প্রণোদনার ঋণ ছাড়া কোনো ঋণ বিতরণও করেনি কোনো ব্যাংক।
তারপরও বছরের প্রথম ছয় মাসে মুনাফা অর্জনে চমক দেখিয়েছে সব ব্যাংক। কোনো কোনো ব্যাংক গত বছরের প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে।
নতুন বিনিয়োগ না থাকলেও চলতি ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ব্যাংকগুলো আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে। বলা যায়, ব্যাংকগুলো পরিচালন মুনাফায় এক রকম চমকই দেখিয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি ব্যাংক এখন পর্যন্ত অর্ধবার্ষিকী আয় ব্যয়ের যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত বছরের দ্বিগুণের বেশি আয় করেছে মার্কেন্টাইল ও সিটি ব্যাংক, আয় ৭০ শতাংশ বেড়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বেড়েছে ৭০ শতাংশ, ইউসিবির ৪১ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ২৪ শতাংশ এবং এনসিসি ব্যাংকের আয় বেড়েছে ২২ শতাংশ।
বরাবরের মতোই এবারও দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। এছাড়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট, মার্কেন্টাইল, এক্সিম, এনসিসি, ঢাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী, প্রিমিয়ার, শাহজালাল ইসলামী, যমুনা, এসআইবিএল ভালো পরিচালন মুনাফা পেয়েছে।
তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো গতকাল পর্যন্ত নিজেদের অর্ধবার্ষিকীর হিসাব চূড়ান্ত করতে পারেনি। এজন্য এ ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার চিত্র জানা সম্ভব হয়নি।
এখন, প্রশ্ন হচ্ছে করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে কোন যাদুবলে ব্যাংকের মুনাফায় এই জোয়ার?
নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো একটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি; ব্যাংকগুলোর কর্তা ব্যক্তিরা বেশ কিছু কারণ দেখিয়েছেন। সেই সঙ্গে হিসাবের ‘ম্যারপ্যাচের’ মুন্সিয়ানার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম খান চৌধুরী বলেন, ‘এই বছরে বৈদেশিক বাণিজ্যে ভালো ব্যবসা হয়েছে। যারা আগে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছিল, তারা ভালো মুনাফা পাচ্ছে। ওই মুনাফায় কর নেই, তা থেকে আলাদা প্রভিশনও রাখতে হয় না। এ ছাড়া শেয়ারবাজার থেকেও আয় বেড়েছে। এ ছাড়া ঋণ নতুন করে খেলাপি না হওয়ায় ব্যাংকের খরচ কমেছে।
‘সব মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে আমাদের ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে যাদের মুনাফা বেড়েছে, তাদেরও একই ধরনের ব্যবসা বেড়েছে।’
অবশ্য পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের জন্য চূড়ান্ত কিছু নয়। কারণ, এই মুনাফা থেকে ঋণের মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে হয়। এরপর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হবে। এরপরই চূড়ান্ত হবে নিট মুনাফা।
একদিকে করোনা, অন্যদিকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার ধাক্কা—দুই মিলিয়ে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় বিপর্যয় নেমেছিল ২০২০ সালের প্রথমার্ধে। যদিও বছর শেষে সে বিপর্যয় কিছুটা পুষিয়ে নিয়েছিল ব্যাংকগুলো।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, ‘পরিচালন ব্যয় কমানোর পাশাপাশি আমানতের সুদহার সর্বনিম্নে নামিয়ে আনার সুফলও পেয়েছে ব্যাংকগুলো। আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্সের কমিশন থেকে প্রাপ্ত আয় ও পুঁজিবাজার থেকে পাওয়া মুনাফার প্রভাব বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রতিফলিত হয়েছে।’
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের প্রান্তিক মুনাফায় হ্রাস বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলে ব্যাখ্যা দিতে হয়।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দেয়া ব্যাখ্যায় বলা হয়, নানা খাতে আয় বাড়ার পাশাপাশি ঋণের সঞ্চিতি সংরক্ষণে ছাড়ের কারণে তাদের মুনাফা বেড়েছে। এই ব্যাংকটির অর্ধবার্ষিকী মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে।
বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে। এটি শতকরা ১ শতাংশ থেকে শুরু করে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। করোনাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সঞ্চিতি সংরক্ষণে ছাড় দিয়েছে।
আহসান এইচ মনসুরের ব্র্যাক ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক মুনাফার হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ত্রৈমাসিক মুনাফার যে হিসাব তারা মার্চ শেষে দিয়েছিল, তাতে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় মুনাফা প্রায় দেড় গুণ হয়েছে।
এই ব্যাংকার বলেন, ‘আমরা (ব্র্যাক ব্যাংক) ৩৫০ কোটি টাকা প্রভিশন রেখেই ছয় মাসের হিসাব দেখিয়েছি।’
কোনো ব্যাংক যদি সঞ্চিতি সংরক্ষণ না করে মুনাফার হিসাব দেখায়, তাদেরকে বছর শেষে সঞ্চিতি রাখতে গেলে হিসাব করতে হবে। তখন মুনাফায় চমক নাও থাকতে পারে বলে মনে করেন এই ব্যাংকার।
তবে করোনাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংরক্ষণ না করার সুযোগ রাখলেও ব্যাংকগুলো সেটি সংরক্ষণ করেনি, এমন নয়।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘সিটি ব্যাংকের ২০২০ সালের পরিচালন মুনাফা থেকে আমরা অতিরিক্ত ১৭০ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) করেছি। চলতি বছরও পরিচালন মুনাফা থেকে ২০০ কোটি টাকা বাড়তি সঞ্চিতি রাখতে চাই। দেশের অন্য ব্যাংকগুলোরও একই পন্থা অনুসরণ করা দরকার।’
তিনি মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের জন্য বড় বিষয় নয়। এখন সময় হলো সম্পদের গুণগত মান ঠিক রেখে মূলধনের ভিত শক্তিশালী রাখা।
‘আর ব্যাংক কখনই স্বল্পমেয়াদি কোনো ব্যবসা নয়। গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস অটুট রেখে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকাই যে কোনো ব্যাংকের বড় সফলতা।’
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম তুলে ধরেছেন ব্যাংকের সৃষ্টিশীলতার বিষয়টিকে। তিনি বলেন, ‘গত বছর অর্থনীতিতে করোনার অভিঘাত ছিল পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। মৃত্যু ও সংক্রমণের তুলনায় মানুষ আতঙ্কিত ছিল বহুগুণ।
‘গত এক বছরে করোনার সঙ্গে বিশ্ববাসী অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছে। এ কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হলেও মানুষের মনের আতঙ্ক অনেকটা কেটে গেছে। গত ছয় মাসে অর্থনীতি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে শুরু করেছিল। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার চিত্র তারই জানান দিচ্ছে।’
‘তবে সম্প্রতিক সময়ে আবার যেভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে, সেটি অর্থনীতি ও ব্যাংকের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে,’ বলেন এই ব্যাংকার।
আরও একটি ঘটনা ঘটেছে গত দুই বছরে। ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করতে গিয়ে আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার বেঁধে দেয়া হয় ৬ শতাংশ। কিন্তু এখন চার শতাংশের মতো নেমেছে এই সুদহার। আর ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে ৭ থেকে ৯ শতাংশে। অর্থাৎ ব্যাংক যে অর্থ খরচ করে টাকা সংগ্রহ করে, তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা নেয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে। এটিও মুনাফা বাড়ার একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কোন ব্যাংকের মুনাফা কত
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই কোনো ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। পরিচালন মুনাফা কোনো ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। এ মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণ ও কর-পরবর্তী মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
ইসলামী ব্যাংক জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে।
২০২০ সালের প্রথমার্ধে পূবালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল ৩৯৯ কোটি টাকা। চলতি বছর একই সময়ে ব্যাংকটি ৫০৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছে।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৫০৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। গত বছর একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩৯৯ কোটি টাকা।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৪৮৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংক এশিয়া। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩৫০ কোটি টাকা।
সাউথইস্ট ব্যাংক চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৪৭২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। গত বছর একই সময়ে ব্যাংকটি ৩৪৮ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফায় ছিল।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৫৮ কোটি টাকা। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে যা ছিল ২৪৩ কোটি টাকা।
ইসলামী ধারার এক্সিম ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ৩৪৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। গত বছর একই সময়ে ২৩৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফায় ছিল ব্যাংকটি।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে এনসিসি ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৩১৫ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে ব্যাংকটি ২৭৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল।
২০২০ সালের প্রথমার্ধে ২৬৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করা ঢাকা ব্যাংক এ বছর ৩১০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে পরিচালন মুনাফায় ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১৮৬ কোটি টাকা। এ বছরের প্রথমার্ধে তা ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ৩১০ কোটি, যমুনা ব্যাংক ২৮৫ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ২২৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে চলতি বছরের প্রথমার্ধে। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক চলতি বছরের প্রথমার্ধে পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ২৮০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভালো পরিচালন মুনাফা করেছে ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোও। এনআরবিসি ব্যাংক ১৫০ কোটি, মধুমতি ব্যাংক ১২৭ কোটি, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসবিএসি) ৮০ কোটি ও মেঘনা ব্যাংক ৭০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে।
২০২০ সালের প্রথমার্ধে এ ব্যাংকগুলোর মধ্যে এনআরবিসি ৯১ কোটি ও মধুমতি ১২৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল। এসবিএসি ও মেঘনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল যথাক্রমে ৭০ ও ১২ কোটি টাকা।
উদ্বেগও আছে
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর কিছু ঝুঁকিও দেখছেন। তিনি মনে করেন, সরকার প্রণোদনার এক লাখ কোটি টাকার যে ঋণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করেছে, সেগুলো ফিরে পাওয়া কঠিন হবে।
তিনি বলেন, ‘এই ঋণগুলো আদায় হবে কি না-তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। একটার পর একটা ছাড় দিয়েই চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কোনো ঋণই আদায় করতে পারবে না ব্যাংকগুলো।
‘সে কারণে ব্যাংকগুলোর জন্য সামনে মহাবিপদ আছে বলে আমি মনে করি। খারাপ ব্যাংকগুলো এই সংকটে টিকে থাকবে কী না-সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।’
কিছু কিছু ব্যাংকের হিসাব নিয়েও সংশয়ের কথা জানালেন তিনি। বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এই ছয় মাসের হিসাবের ক্ষেত্রে একুয়াল বেসড অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। অনেক ব্যাংক প্রভিশনিং না করেই হিসাব দেখিয়েছে। পরিচালন ব্যয়সহ অন্য অনেক ব্যয়ও হিসাবে ধরেনি। অর্থাৎ যে টাকাটা পকেটে আসেনি, সে টাকাটাও মুনাফার হিসাবে ধরেছে। বছর শেষে যখন প্রভিশন করতে হবে, তখন ব্যাংকগুলো ধরা খাবে।
‘তবে ভালো ব্যাংকগুলো খুব একটা সমস্যা হবে না। খারাপ ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হবে।’
আরও পড়ুন:নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে পারিবারিক গাছ থেকে পাড়া নারকেল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষে নারীসহ আটজন আহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে সেলিম মিয়া নামে গুরুতর আহত একজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সেলিম মিয়ার ভাই মজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, পৌর শহরের টেংগাপাড়া এলাকায় বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ও বৃহস্পতিবার সকালে দুই দফা সংঘর্ষে আটজন আহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে নিজেদের পারিবারিক গাছ থেকে নারকেল পাড়েন সেলিম। সেই নারকেল অপর তিন ভাই মজনু মিয়া, ফজলুর রহমান ও আজিজুল হকের বাসায় ভাগ করে দেন, তবে ভাগ কম বেশি হওয়ায় কারণে ভাতিজারা সেলিমের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করেন। একপর্যায়ে সেলিমকে তারা মারধর করে সামান্য আহত করেন।
এ ঘটনায় ওই রাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরদিন সকালে সেলিম দোকানে গেলে তার হাতে ও পিঠে ক্ষুরের আঘাতে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
আহত সেলিমের পক্ষের লোকজন জানায়, অপর তিন ভাই ও ভাতিজারা মিলে সেলিম ও তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির ও শ্যালিকার ওপর হামলা চালান।
এদিকে সেলিমের বড় ভাই ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে নারকেল নিয়ে ভাতিজারা সেলিমকে কিছুটা হেনস্তা করে। আমরা রাতে বিষয়টা সমাধান করব ভেবেছি, কিন্তু রাতে বড়কাশিয়া থেকে সেলিমের আত্মীয়রা এসে বাড়িতে ঢুকে নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষুর ও রামদা দিয়ে কোপানো শুরু করে। এতে আমাদের পক্ষের চারজন গুরুতর আহত হয়। ক্ষুরের আঘাতে রাজিমুলের পেট বের হয়ে গেছে। হাত কেটেছে একজনের।
‘নিজেদের লোকজনের এমন রক্তাক্ত অবস্থা দেখে আমাদের ঘরের ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে মারধর করতে গেলে তারা ঘরের দরজা লাগিয়ে ফেলে। সেলিম ছাড়া অন্যদের মারধরের ঘটনা সাজানো। এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকেও মামলার আবেদন করা হচ্ছে।’
এদিকে রাতের ঘটনায় সেলিম মিয়া বাদী হয়ে মজনু মিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পরে সকালে মজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলায় মজনু মিয়া নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন:ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে এটাই বিএনপির নেতাদের প্রথম বৈঠক।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাইকমিশনারের বারিধারার বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের তিন নেতা। এ সময় হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার দুজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বৈঠকের কারণ উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশন লিখেছে, হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনৈতিক কৌশল বুঝতে দলটির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ওই লেখায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঙ্গে হাইকমিশনার সারাহ কুকের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. সুলতান নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১৬ নম্বর ক্লাস্টার থেকে পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা ছিলেন।
ভাসানচর থানার ওসি কাওসার আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারে বসবাস করতেন। ১১৬ নম্বর ক্লাস্টারের খালি জায়গায় তিনি সবজি চাষ করতেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বাবাকে দেখতে না পেয়ে তার ছেলে ওই ক্লাস্টারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বাবার গলা কাটা মরতেজ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় অন্য ক্লাস্টারের লোকজন এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি কাওসার আহমেদ জানান, পেছনের দিক থেকে গলা কেটে এই রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ তাদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হৃদরোগে আক্তান্ত ডা. পারভেজ রেজা কাকনের শারীরিক খোঁজ-খবর নিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি অসুস্থ কাকনের শারীরিক ও পারিবারিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, বাংলাদেশে অতীতে কখনোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা দলীয় প্রতীকে শুরু করেছে।
‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বর্জনের পর তারা বুঝতে পেরেছে যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা হলে দেশের সামাজিক কাঠামোটা ভেঙে যাবে। তারা নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া এবং এই সরকার ও তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। তবে গ্রাম-গঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কে যাবে কে যাবে না সেটা তো বিএনপি দলীয়ভাবে দেখতে পারে না।’
মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার হামলা-মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এসব করে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনেও তারা দেশের মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিতে পারেনি।
‘ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যায়নি। কারণ এই ভোটের ওপর তাদের আস্থা নেই।’
মঈন খান বলেন, ‘দল গোছানো ও সংগঠন পুনর্গঠন করা চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতি কোনো কাপড় নয় যে, সাজিয়ে গুছিয়ে আলনা বা আলমারিতে রাখা যায়। সরকারকে বলবো- প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে আদর্শের রাজনীতিতে ফিরে আসুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন:আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার দলটির এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে তা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে চান উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হোক। সে কারণে দল চায় যে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিজ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা যেন এই নির্বাচনে অংশ না নেন।’
‘আজ (বৃহস্পতিবার) দলের একটি বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে বিষয়টি জানান। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং জেলা-উপজেলায় তা জানাতে শুরু করেছি।’
এবার স্বতন্ত্র মডেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বলয় নিজেদের কব্জায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। দলের হাইকমান্ড এই নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দেয়ার নির্দেশনা দিলেও এসবে কান দিচ্ছেন না তারা।
কোনো কোনো সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। নিজ দলের প্রভাবশালীদের এমন হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে তৃণমূলে নানামুখী বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিজেদের পরিবারের দখলে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। ভোটের মাঠে স্বজনদের জিতিয়ে আনতে নানামুখী কৌশল অবলম্বন শুরু হয়েছে। এতে তৃণমূলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
দলীয় সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এবং একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক দলীয় ও দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। কেউ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করলে তাদেরকে শো-কজ, সতর্কতা, তলবসহ বর্তমান দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর করার স্বার্থে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরকে নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
বিএনপি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ তৈরি হয়।
জাতীয় নির্বাচনের মাস তিনেকের মাথায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় বিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এর রেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পড়তে শুরু করেছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন কাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এবার চার পর্বে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ২১ মে হবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
মন্তব্য