সাতক্ষীরায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় এক দোকানিকে জরিমানা করার পাশাপাশি জনসমক্ষে তার কম্পিউটার পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা নিয়ে চলছে আলোচনা।
শাটডাউনের মধ্যে রোববার বিকেলের এ ঘটনা ছড়িয়েছে ফেসবুকে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জব্দ করা মালামাল এভাবে পুড়িয়ে দিতে পারেন কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামানের দাবি, আইনের মধ্যে থেকেই তিনি কম্পিউটার পুড়িয়েছেন। আগামীতেও এ ধরনের অভিযান চলবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আবাদেরহাট এলাকায় টেলিকম ব্যবসায়ী রেজওয়ান সরদারের দোকানে রোববার অভিযান চালায় উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রেজওয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিকেল ৪টার দিকে আমার বাড়িতে বিদ্যুতের সমস্যার কারণে দোকানে সরঞ্জাম নিতে আসি। এ সময় দোকান খোলা দেখে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান আসেন। তিনি আমাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। এরপর আমার একমাত্র আয়ের উৎস দোকানে থাকা কম্পিউটারটি জব্দ করে জনসমক্ষে পুড়িয়ে দেন।’
তিনি বলেন, ‘এই কম্পিউটারের ওপর চলত আমার ছয় সদস্যের সংসার। দাদি, বাবা-মা, স্ত্রী নিয়ে আমার সেই সংসার এখন প্রায় অচল। লকডাউনে এমনিতেই খুব খারাপ অবস্থা, তার ওপর ব্যবসার কম্পিউটার পুড়িয়ে দেয়ায় আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
অভিযানের পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, রেজওয়ানের দোকানের কম্পিউটারে পর্নোগ্রাফি ছিল। এ জন্য সেটি জব্দ করে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯২ ধারা অনুযায়ী পুড়িয়ে ফেলা হয়।
অশ্লীল পুস্তকাদি বিক্রয়কেন্দ্রিক অপরাধ ও এ-সংক্রান্ত ক্ষেত্রে অপরাধের শাস্তির বিষয়টি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯২ ধারায় উল্লেখ রয়েছে। তবে ওই ধারা অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। দণ্ডবিধির এই ধারায় জব্দ করা আলামত ধ্বংসের কোনো বিধান নেই।
বিষয়টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামানকে জানানোর পর মঙ্গলবার তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ১২ ধারা অনুসারে তিনি কম্পিউটারটি পোড়ানোর আদেশ দিয়েছিলেন।
মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ অনুসারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময়ে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট সরকারি কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রদানের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে ১২ ধারায়।
১২ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে, উক্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর সংশ্লিষ্ট অপরাধ সংশ্লেষে তল্লাশি (search), জব্দ (seizure) এবং প্রয়োজনে জব্দকৃত বস্তু বিলিবন্দেজ (disposal) করিবার ক্ষমতা থাকিবে।’
আইন বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে ‘প্রয়োজনে জব্দকৃত বস্তু বিলিবন্দেজ (disposal)’ করার ক্ষমতা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের রয়েছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডিজপোজালের অর্থ জব্দ করা বস্তু তাৎক্ষণিকভাবে ধ্বংস করে দেয়া নয়। রেজওয়ানের কম্পিউটারে পর্নোগ্রাফি থাকলে সেগুলো ধ্বংসের আইনি এখতিয়ার রাখেন ম্যাজিস্ট্রেট, এর পরিবর্তে কম্পিউটার পুড়িয়ে দিয়ে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মনে করি কম্পিউটার পোড়ানো ঠিক হয়নি। মোবাইল কোর্ট এমনভাবে একটা জিনিস পুড়িয়ে দেবে বা ধ্বংস করে দেবে তা গ্রহণ করা যায় না।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিডিও যেখানে পাওয়া গেল, সেটা তো ধ্বংস করা যাবে না। কেউ ক্যামেরায় ছবি তুললে ক্যামেরা তো ভেঙে ফেলা যাবে না, বরং ক্যামেরার ছবিগুলো ধ্বংস করা যাবে। যে ম্যাটেরিয়ালটা সাবজেক্ট ম্যাটার, সেটার বাইরে কেন যাবেন। এটা তার (ম্যাজিস্ট্রেট) এখতিয়ার নাই।’
এ অবস্থায় আইনি প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘যার কম্পিউটার পুড়িয়েছে, তিনি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেওয়ানি মামলা করতে পারবেন।’
‘এ ক্ষেত্রে পদ্ধতি হলো, মোবাইল কোর্টে মামলাটি যখন নিষ্পত্তি হয়ে যাবে, সেটা তো আর লংটার্ম না, সামারি প্রসিডিং। তার কম্পিউটারটা যে জব্দ করা হয়েছে সেটার তো ডকুমেন্টে থাকবে। জব্দ তালিকা দেখিয়েই তিনি (রেজওয়ান) ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন।’
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেজওয়ানকে কম্পিউটার জব্দসংক্রান্ত কোনো নথি দেননি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান। তাকে কেবল এক হাজার টাকা জরিমানা করার একটি রসিদ দেয়া হয়েছে।
মোবাইল কোর্ট আইনের ১৪ ধারায় ‘সরল বিশ্বাসে কৃত কার্য রক্ষণ’ সংক্রান্ত সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধির অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত, বা কৃত বলিয়া বিবেচিত, কোন কার্যের জন্য কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সহিত সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো প্রকার আইনগত কার্যধারা রুজু করিতে পারিবেন না।’
এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কেউ কী করে আইনি প্রতিকার পাবেন, এমন প্রশ্নে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইনে তো আর সবকিছু লেখা থাকে না। আর এটা তো সরল বিশ্বাসে হয়েছে এমন কিছুও না।’
সাতক্ষীরার জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি ফাহিমুল হক কিসলু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কোনো বেআইনি দ্রব্য বা পণ্য পুড়িয়ে বা অন্য কোনোভাবে বিনষ্ট করতে গেলে আদালতের নির্দেশ থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত মামলা হতে হবে, সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থাকবেন। তারপর আদালত আলামত ধ্বংসের নির্দেশ দিলে তা ধ্বংস করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘কম্পিউটারে কোনো অশ্লীল ছবি বা ভিডিও থাকলে শুধু সেগুলো নষ্ট করা যেতে পারে। তাই বলে কম্পিউটার পুড়িয়ে দেয়া আইনসিদ্ধ নয়।’
আরও পড়ুন:মেহেরপুর সদর উপজেলার দফরপুর ও সোনাপুর গ্রামে বজ্রপাতের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন।
বজ্রপাতে একজন কৃষক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন দফরপুর গ্রামের প্রয়াত আবদুর রশিদের ছেলে রাফিজ ও সোনাপুর গ্রামের আবদুর রশিদ।
আকস্মিক বজ্রপাতে শুক্রবার তাদের মৃত্যু হয়।
বজ্রপাতে আহত হন সোনাপুর গ্রামের আবদুল মান্নান নামের কৃষক। তিনি বর্তমানে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার আগে আকস্মিক বৃষ্টি শুরু হয় মেহেরপুরের কিছু গ্রামে। ওই সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
সদর উপজেলার দফরপুর গ্রামের রাফিজ কবুতর পোষেন। তিনি মাঠে যান কবুতরের খোঁজে। সন্ধ্যার পর তার দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
অপরদিকে একই উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মাঠে কৃষিকাজ করছিলেন আবদুর রশিদ ও আবদুল মান্নান। ওই সময় আকস্মিক বজ্রপাতে আবদুর রশিদের মৃত্যু হয় ও আবদুল মান্নান আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি আমানুল্লাহ আল বারী বজ্রপাতে দুটি স্থানে দুজন নিহত ও একজন আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন:নাটোরে আলাদা ঘটনায় শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
নলডাঙ্গা উপজেলায় শুক্রবার সকালে বজ্রপাতে দুইজন এবং বড়াইগ্রাম উপজেলায় ডোবার পানিতে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়।
প্রাণ হারানো তিনজন হলেন নলডাঙ্গা উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে আবদুল মোমিন, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ক্ষুদ্র বিশা গ্রামের সাদেক আলীর ছেলে রায়হান আলী এবং নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁওয়ের সুমন মন্ডলের শিশুকন্যা সানজিদা খাতুন।
জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফাত হোসাইন জানান, নলডাঙ্গার হালতিবিলে নৌকায় করে শামুক আনতে যান কয়েকজন। ওই সময় বজ্রপাতে আবদুল মোমিন নামের একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হন আরও দুইজন।
তিনি জানান, একই সময়ে হালতিবিল সংলগ্ন মরা আত্রাই নদীতে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে রায়হান আলী নামে আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়।
এসপি আরও জানান, নাটোরের বড়াইগ্রামে বাড়ির পাশের ডোবার পানিতে পড়ে সানজিদা খাতুন নামে দুই বছর বয়সী শিশু মারা যায়। বাড়ির আঙিনায় খেলা করার একপর্যায়ে সবার অগোচরে ডোবায় পড়ে যায় শিশুটি।
আরও পড়ুন:নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় পূজার অঞ্জলি দিতে গিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলো হরিণধরা গ্রামের সঞ্জয় তালুকদার ও বাসন্তী তালুকদার দম্পতির মেয়ে ঋতু তালুকদার (১৮) এবং বিপ্লব তালুকদার ও রুপা চন্দ্র তালুকদার দম্পতির ছেলে অমিত তালুকদার (৮)।
ঋতু কলমাকান্দা সরকারি কলেজের বিএ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ছিলেন। অন্যদিকে অমিত হরিণধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। দুজন সম্পর্কে ফুফু (পিসি) ভাতিজা হন।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে হরিণধরা গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে পশ্চিমপাড়ায় একই পরিবারের ছয়জন মিলে দুর্গাপূজার অঞ্জলির উদ্দেশ্যে ছোট একটি নৌকায় করে বের হয়। পথে কালীবাড়ি খাল পার হওয়ার সময় নৌকাটি ডুবে যায়। ওই সময় চারজন সাঁতরে খালপাড়ে উঠলেও ঋতু তালুকদার ও অমিত তালুকদার উঠতে পারেনি।
পরে দুজনকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শামীম আরা নিপা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ফুফু ভাতিজার মৃত্যুর সংবাদে ওই গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মৃতের স্বজন স্বপন তালুকদার জানান, ঋতু তালুকদার সাঁতার জানত, কিন্তু ভাইপো অমিত তালুকদারকে বাঁচাতে গিয়ে দুজনই পানিতে তলিয়ে যায়। জীবিতদের আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন দুজনকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন জানান, খবর পেয়ে হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল থেকে শুক্রবার এক পর্যটকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যার পকেটে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে।
শহরের হোটেল-মোটেল জোনের মরিয়ম রিসোর্ট নামের আবাসিক হোটেল থেকে দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফয়জুল আজীম।
নিথর অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অমিত বড়ুয়া (৩২) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা এলাকার রণজিত বড়ুয়ার ছেলে।
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বরাতে ওসি ফয়জুল আজীম জানান, গত ৮ অক্টোবর সকালে অমিত বড়ুয়া কক্সবাজার ঘুরতে আসেন। তিনি রিসোর্টটির ১০৮ নম্বর কক্ষে ওঠেন। শুক্রবার সকালে তার হোটেল কক্ষ ছাড়ার কথা ছিল।
তিনি আরও জানান, বেলা ১১টার দিকে অমিত বড়ুয়ার অবস্থান করা কক্ষটি ছাড়ার বিষয়ে হোটেলের এক কর্মচারী কথা বলতে যান। ওই সময় সেটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকবার ডাকার পরও সাড়াশব্দ না পাওয়ায় হোটেল কর্মচারীর সন্দেহ জাগে। পরে তিনি বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, খবর পেয়ে বাহিনীর একটি দল কক্ষটির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে রশি দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই সময় তার পকেটে চিরকুট পাওয়া যায়।
তিনি জানান, চিরকুটটি খুলে পড়া সম্ভব হয়নি। তাই কী কারণে যুবক ‘আত্মহত্যা’ করেছেন এবং চিরকুটে কী লিখেছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি।
ফয়জুল আজীম জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে পুলিশ। তারপরও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে।
পুলিশ আরও জানায়, মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলায় ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষকরা। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রতি বছর শেরপুর জেলা খাদ্যে উদ্বৃত্ত হলেও এবার খাদ্য ঘাটতি হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শেরপুরের মানুষ। এবারের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক, বাড়িঘর, প্রাণিসম্পদ ও ফসলি জমি, তবে এখনও পানিবন্দি রয়েছে নিম্নাঞ্চলের অনেক পরিবার।
জেলায় দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষজন। খাদ্য উদ্বৃত্তের এ জেলার কৃষকরা এবার অর্ধেক ফসলও উৎপাদন করতে পারবে না।
অনেক কৃষকের দাবি, তার ঋণ নিয়ে আবাদ করেছেন। এখন সে ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইগাতীর কৃষক আমনচাষি কবির বলেন, ‘ঋণ নিয়ে আবাদ করছি। এহন তো সব শেষ। ঋণই বা কেমনে দিমু আর এ বছর পোলাপান নিয়া চলমু কেমনে।’
ঝুলগাঁওয়ের আমিনুল বলেন, ‘আবাদ তো করছি কর্জ কইরা। এহন পানির বিল কেমনে দিমু? ধান বেইচ্চা দেয়ার কথা আছিল।’
দড়িকালীনগর গ্রামের রমিজ মিয়া বলেন, ‘চড়া সুদে ঋণ নিয়া ৫০ বিঘা জমিতে আবাদ করছিলাম। ৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা আমরা কখনো দেহি নাই।
‘সব ধান শেষ আমার। এক ছটাক ধান বাড়ি নিয়া যাবার পামু না। আর ঋণ তো এহন বোঝা। কেমনে কী করি, আল্লাহ জানে।’
জেলার প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গরজরিপাড়ের হামিদুল বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়া শিম লাগাইছিলাম। বানের পানি সব শেষ করে দিছে।’
ধার-কর্জের মূলধন সব হারিয়ে দিশেহারা বলে জানান তিনি।
ঝুলগাঁওয়ের সামাদ মিয়া বলেন, ‘লাউ লাগাইছিলাম ৪ কাঠা জমিনে। সব পানির নিচে। আমরা সরকারি সহযোগিতা চাই। তা না হলে আর বাঁচন নাই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছিল। বন্যায় রোপা-আমন, সবজি ও আধা চাষে ৩২ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এবার ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬ টন চাল। ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১০ টন ধানক্ষেতের। জেলায় সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ‘অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলতি আমন আবাদের ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার হেক্টর, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বন্যায় প্রায় দুই লাখ কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার-বীজ দেয়া হবে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিন্দুদের কারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
খুলনার গল্লামারী হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দির ও বাগমারা গোবিন্দ মন্দির পরিদর্শন করে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আসিফ বলেন, ‘ধর্মকে ব্যবহার করে অতীতে বিভিন্ন দল রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে দেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেখানে সকল ধর্মের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করবে।’
উপদেষ্টা চট্টগামের একটি পূজামণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা ও সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দিরে সোনার মুকুট চুরি যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রশাসন দোষীদের আটক করেছে এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
গল্লামারী হরিচাঁদ মন্দিরে সাংবাদিকরা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম সংস্কার করে বিপিএলসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু আবু নাসের স্টেডিয়াম নয়, দেশের সকল স্টেডিয়াম খেলার উপযোগী করে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।’
আরও পড়ুন:চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার বিচার শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে শুক্রবার বিকেলে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এর আগে দেয়া বক্তব্যে আসিফ নজরুল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ও আমরা এই দেশে কেউ সংখ্যালঘু না। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক; সবার সমান অধিকার।
‘সবাই ধর্মের প্রতি সম্মান ও ভালবাসা নিয়ে থাকব ও শান্তিতে থাকবে। আমরা সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াব। দূর্গাপূজা অনুষ্ঠান যেন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন দেব ও সকল প্রকার সহযোগিতা করব।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে সিরাজগঞ্জে আসা হয়েছিল। আবারও এসে ভালো লাগছে। অনেক সুন্দর, সুশৃঙ্খলভাবে পাঁচ শতাধিক মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখনও কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই।
‘এখানে যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্বন্বয়করা রয়েছেন ও অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দল মিলে পূজার অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সাহায্য করছেন। সেনাবাহিনী,পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সবাই মিলে দিন ও রাত্রি পরিশ্রম করছেন। সবাই মিলে এক আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে। এটা দেখে খুবই আনন্দ লাগছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই, আগস্ট এই দেশে যে নৃশংস গণহত্যা হয়েছিল, এই বিচার আমরা অচিরেই শুরু করব। আমরা ন্যায়বিচার সম্পন্ন করতে ও নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আমি আগেই বলেছি সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়ে যাবে।
‘আমাদের প্রসিকিউশন টিম গঠিত হয়েছে এক মাস হয়ে গেল। ইনভেস্টিগেশন টিম গঠিত হয়েছে দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। প্রচুর আলামত পেয়েছি। তখন আমাদের অনেক দ্বিধা, অনেক প্রশ্ন দূর হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য