নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় ১৫ দিন আগে ঘটেছিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় ৫২ প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর জানা যায় কারখানার অধিকাংশ শ্রমিকই ছিল শিশু।
এরপর বের হয়ে এসেছে নারায়ণগঞ্জে এমন হাজারো ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা চলছে শিশুদের দিয়েই। এসব শিশুর বয়স ৮ বছর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও নারায়ণগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গড়ে ওঠা কারখানায় অল্প বেতনে কাজ করছে শিশুরা।
সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর কিছু কারখানার বিরুদ্ধে শ্রম আইনে আদালতে মামলা করলেও তার সংখ্যা নগণ্য। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, মামলার বেশি পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা নেই তাদের।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, কেমিক্যাল, হোসিয়ারি কারখানাসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে শিশুরা কাজ করে, সেগুলোর অধিকাংশতেই নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। সরু গলিতে গড়ে ওঠা কারখানার ভবনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ।
আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মতো রাস্তাই নেই অনেক কারখানার সামনে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটলে হতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানি।
নারায়ণগঞ্জে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জেলায় নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে ৩ হাজার ৪৫০টি। তবে নিবন্ধন ছাড়াই চলছে কয়েক হাজার কারখানা। এর মধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি ও উকিল পাড়া এলাকায় দুই হাজারের বেশি হোসিয়ারি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০টি কারখানা পরিদর্শন করেছেন সংস্থাটির পরিদর্শকরা। সেখানে অনেক কারখানায় শিশুদের কাজ করতে দেখেছেন তারা।
তবে শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানোয় শ্রম আইনে মামলা হয়েছে মাত্র ২৫টি কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে।
শুধু হোসিয়ারি কারখানা নয়, বেকারি, ভবন নির্মাণ, কেমিক্যাল কারখানা, লোহার সামগ্রী তৈরির কারখানা, স্টিল মিল, ববিন ফ্যাক্টরি, ডাইং কারখানা, জুতার কারখানা, মেটাল কারখানা, চুনাপাথর কারখানা, প্লাস্টিক পণ্যের কারখানা, সাবান ও ডিটারজেন্ট তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন বেভারেজ ও কাচের কারখানাতে শ্রমিকদের পাশাপাশি কাজ করছে শিশুরা।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শক ফারহানা কবির নিউজবাংলাকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ হলে কারখানার কর্তৃপক্ষকে অধিদপ্তর থেকে সনদ দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন ছাড়া যেসব কারখানা রয়েছে তার মধ্যে বেশির ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক কারখানা শিশুদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে।
‘আমরা এমন ২৫টি কারখানামালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। অনেক কারখানার মালিককে নোটিশ করেছি। কিন্তু তাতেও কারখানামালিকরা শিশুদের নিয়োগ বন্ধ করেননি।’
নয়ামাটি, উকিলপাড়াসহ নগরীর টানবাজার এলাকা ঘুরে এর সত্যতা মিলেছে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি পরিবেশে শিশুদের হোসিয়ারি ও কেমিক্যাল কারখানাগুলোতে কাজ করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব কারখানায় কাজ করে তারা।
নগরীর টানবাজার এলাকায় দাহ্য পদার্থের দোকানেও শিশুদের কাজ করতে দেখা গেছে।
ঘিঞ্জি পরিবেশে ছয়তলা একটি ভবনের তিনতলার হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করে ১০ বছরের মোহাম্মদ মাসুদ। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখার পর পরিবারের অভাবের কারণে কারখানায় কাজ শুরু করে সে। এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে দেড় হাজার টাকা বেতনে তাকে নেয় কারখানাটির মালিক।
মাসুদ বলে, ‘মালিক যা কাম দেয়, তাই করি। সকালে কারখানায় আসি, রাতে যাই। কারখানার গলিটা অন্ধকার, তাই ভয় লাগে।’
তার সঙ্গে আরও কয়েকজন শিশুকে ওই কারখানায় কাজ করতে দেখা যায়।
পাশের আরেকটি পাঁচতলা ভবনের চারতলার কারখানায় কাজ করে আব্বাস উদ্দীন নামের এক শিশু। তার বাড়ি বরিশালে। দুই বছর আগে এই কারখানায় ২ হাজার টাকা বেতনে কাজ নেয় শিশুটি। তার সঙ্গেও রয়েছে কয়েকজন শিশু।
নয়ামাটির একটি কারখানায় কাজ করা চট্টগ্রামের ৮ বছরের শিশু মোবারক হোসেনের বেতন মাসে দেড় হাজার টাকা।
সে বলে, ‘বাপ নাই, মায় অন্যের বাসায় কাম (গৃহকর্মী) করে। বড় ভাইও হোসিয়ারিতে কাম করে। আমি হোসিয়ারিতে থাকি, মেসে খাই। বিল্ডিংয়ের শেষ মাথায় আমাগো বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি। ওপরে কাম করতে ডর করে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকা একটি কারখানার মালিক সাইদুর রহমান বলেন, ‘গ্রাম থেকে শহরে আসার পর অভাবের কারণে শিশুরা কাজে লাগে। কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিশুদের কারখানার কাজে আনা হয়।
‘তাদের মাসিক বেতন কম দেয়া যায়। তা ছাড়া চা আনানো থেকে শুরু করে সব কাজই করানো যায়। এ কারণে অধিকাংশ কারখানায় কমপক্ষে দুজন করে শিশু কাজ করে।’
কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন শিশুদের কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবার যে গতি হবে ওদেরও একই গতি হবে। তবে আমরা ওদের বেশি খেয়াল রাখি।’
যেভাবে নিয়োগ হয় শিশুদের
সংসারে অভাব অনটন থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে সপরিবারে আসেন অনেকে। ঘর ভাড়া করে থাকেন শহরের বিভিন্ন এলাকায়। নিজেরা নানা কাজে যোগ দেয়ার পর শিশুসন্তানকেও কাজে লাগিয়ে দেন মা-বাবা।
পাশের বাড়ির প্রতিবেশী, বাড়ির মালিক, পূর্ব পরিচিত, স্বজন ও বিভিন্ন কারখানার মালিকরা খোঁজ পেলে বাড়ি থেকে কারখানায় কাজে নিয়ে যায় শিশুদের।
অল্প বেতনে শিশুদের নিয়োগ
প্রাপ্ত বয়স্ক একজন শ্রমিককে মাসিক বেতন দিতে হয় কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা। তাই অধিকাংশ কারখানার মালিক সহকারী হিসেবে বেছে নেন শিশুদের।
শুরুতে তাদের দেয়া হয় দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। বছর পার হলে পাঁচ টাকা করে মাসিক বেতন বাড়ে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করানো হয় তাদের। মাঝখানে ১ ঘণ্টার ছুটি থাকে খাবারের জন্য।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিশুরা
অলিগলি ও সরু পথের পাশে থাকা অধিকাংশ বহুতল ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিস নোটিশ দিলেও গা করেন না কারখানার মালিকরা।
এ ছাড়া কারখানাগুলো কাছাকাছি হওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগের জন্য সড়কে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। এতে শর্টসার্কিট থেকে যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে কারখানায়।
ভবনগুলোর অবস্থা খারাপ। নিম্নমানের সামগ্রী ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অনুমোদন ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে এগুলো। কারখানার জন্য কোনো রকমে তৈরি করা ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে যেকোনো সময়।
ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন নিউজবাংলাকে জানান, নয়ামাটি ও উকিলপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অনেক দুর্বল। আশপাশে কোনো পুকুর বা পানি সংগ্রহের জায়গা নেই।
একটি গলিতে শত শত কারখানা। আবার বড় ভবনগুলোর সিঁড়িও একটা। তাই আগুন লাগলে তা অনেক ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
কারখানা ও ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকবার নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, অনেক কারখানায় শিশুরাও কাজ করে। কেমিক্যাল কারখানাতেও আছে। আমরা এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সভায় বলেছি। সেখানে সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও ছিলেন।’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘শিশুদের কারখানায় নিয়োগ দেয়া বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে কারখানা বন্ধ ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা করা না হলে যেকোনো দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া নিউজবাংলাকে জানান, নয়ামাটিতে অনেক শ্রমিক কাজ করে। তাদের পরিদর্শকরা সেখানে গিয়ে শিশুদের কাজ করতে দেখায় একাধিক কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
তিনি দাবি করেন, তাদের মামলা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ, তাদের এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা নেই। তবে জেলা প্রশাসনকে অনেকবার জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, শিশুদের দিয়ে কাজ করানো অবৈধ। শিশুদের শ্রমিক বানিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করাচ্ছে কলকারখানা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য