রাজধানীর মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিন বছর আগে ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’ নামে শুরু হয় একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের যাত্রা। সামনে সিটি ব্যাংক ও কন্টিনেন্টাল কুরিয়ারের এজেন্টশিপের সাইনবোর্ড। সেই সঙ্গে বিকাশ ও রকেটের ডিজিটাল সার্ভিস পয়েন্টের ব্যানারও ঝোলানো।
২০১৮ সালে এই প্রতিষ্ঠান চালু করেন মো. উমর ফারুক, যার পৈত্রিক ঠিকানা নোয়াখালীর কবিরহাট। ধীরে ধীরে এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠে ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’। এলাকার প্রায় দেড় হাজার গ্রাহক নিয়মিত গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল দিতেন ফারুকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। বিল নেয়ার সময় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সিলসহ সংশ্লিষ্ট বিলের রশিদ সরবরাহ করতেন ফারুক।
তবে গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উধাও উমর ফারুক। এলাকায় তার প্রতিষ্ঠানের তিনটি দোকানের প্রতিটিতেই ঝুলছে তালা। এর পরপরই এলাকায় তিতাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে জানায়, বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের গ্যাসের বিল দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া। এ কারণে শুরু হচ্ছে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযান।
এরপরেই বেরিয়ে আসে উমর ফারুকের ভয়ঙ্কর প্রতারণার তথ্য। তার কাছে প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের জমা দেয়া বিল জমা হয়নি তিতাসে। একেকজনের বকেয়া পড়েছে দেড় থেকে দুই বছরের বিল। আনুমানিক হিসেবে এই সময়ে ১০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন ফারুক।
দিশেহারা গ্রাহকদের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে মিরপুর-২ মডেল থানায়। তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে, উমর ফারুকের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মার্কেন্টাইল ব্যাংকও বলছে, তাদের নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি করা হয়েছে। আর বিকাশ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে ব্যবহার করা ফোন নম্বরটি কোনো অনুমোদিত এজেন্টের নম্বর নয়।
কীভাবে এল ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স
মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে উমর ফারুক কীভাবে ব্যবসা শুরু করলেন, তা জানতে রোববার দিনভর এলাকায় অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারেক মোল্লার মোড় এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন ফারুক। তবে এর আগে ওই এলাকার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তার একটি ছোট দোকান ছিল। সেখানে তিনি সীমিত পরিসরে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা শুরু করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, ফারুক ২০১৮ সালের আগে যে ভবনের নিচতলায় ছোট একটি দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন, সেই ভবনের মালিকের বউকে বিয়ে করেন তিনি।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব আহম্মদপুরের ওই বাসার ঠিকানায় গিয়ে জানা যায়, ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ফারুকের পরিবার থাকে। সেখানে গেলে এক তরুণ নিউজবাংলাকে জানান, উমর ফারুক তার সৎ বাবা। তার বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে বিয়ে করেন ফারুক। এরপর থেকে ফারুক ও তার স্ত্রী এই ভবনে থাকেন না।
তারা কোথায় থাকেন জানতে চাইলে ওই তরুণ দাবি করেন, দুজনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকায় এ বাড়ির কেউ তাদের ঠিকানা জানেন না।
উমর ফারুকের স্থায়ী ঠিকানার তথ্য পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা গেছে, তার বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাটের চাপরাশির হাটে।
ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স-এর ওয়েবসাইটে ঢুকে যোগাযোগের একটি ফোন নম্বর পাওয়া যায়। সেখানে কল করা হলে জাকির হোসেন নামে একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গত সেপ্টেম্বর থেকে এই জানুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স এ চাকরি করেছি। বেতন না পাওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেই। তবে ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স এখনও আমার নম্বরটা ব্যবহার করছে।’
জাকির দাবি করেন, বকেয়া বেতন ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ তার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। তিনি জানান, শ্যামলীর ২ নং রোডে হাবিবি মসজিদের পাশে ফারুকের একটি অফিস আছে। সেখান থেকে বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ হতো।
জাকিরের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী, শ্যামলীর ২ নম্বর সড়কে গিয়ে নিউজবাংলা জানতে পারে, সেখানকার ৩৫/এফ ৬/এ ভবনের আট তলার একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও আট বছরের এক সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন উমর ফারুক। তবে সেখানে তার কোনো অফিস নেই।
ভবনের ব্যবস্থাপক সুলতান আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, তারাও ফারুকের প্রতারণার কবলে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘পুরো ভবনের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের বিল পরিশোধ করা হতো ফারুক সাহেবের মাধ্যমে। নিজেদের নতুন ফ্ল্যাটে উঠবেন জানিয়ে তিনি তাড়াহুড়া করে ১৫ জানুয়ারি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যান। এর পরদিনই আমরা জানতে পারি, বিল্ডিংয়ে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের তিন মাসে আড়াই লাখ টাকার বিল বকেয়া আছে।’
সুলতান আহমেদ জানান, এরপর তারা জরিমানাসহ দুই মাসের জন্য প্রায় দুই লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকা সামনের মাসে পরিশোধ করা হবে।
ভুক্তভোগীরা কী বলছেন
মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে উমর ফারুকের প্রতিষ্ঠানের সামনে রোববার বিল পরিশোধের কপি নিয়ে ভিড় করেন অসংখ্য গ্রাহক। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি তিনটি দোকান নিয়ে চলছিল ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স। প্রতিটি দোকানই এখন তালাবদ্ধ।
যার কাছ থেকে দোকান ভাড়া নেয়া হয়েছে সেই মোহাম্মদ করীম নিউজবাংলাকে জানান, জানুয়ারি মাসের ভাড়া পরিশোধ না করেই হঠাৎ উধাও হয়েছেন উমর ফারুক।
ভুক্তভোগী অন্তত ১৫ জন তিতাস গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তারা জানান, বিদ্যুৎ বা পানির বিলের ক্ষেত্রে ফারুক কোনো অনিয়ম করেননি, কারণ এ দুটি ক্ষেত্রে অপরিশোধিত বিলের হিসাব পরের মাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গ্রাহকের হাতে পৌঁছায়। এ কারণে শুধু তিতাসের গ্যাসের বিলের ক্ষেত্রেই জালিয়াতি করেছেন ফারুক।
মো. সুমন নামের এক গ্রাহক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গত ১১ মাস ধরে এখানে নিয়মিত গ্যাসের বিল দিয়েছি। টাকা দেয়ার পর বিলের কপিতে মাইক্যাশ এজেন্টের সিল এবং পরে ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্সের সিল ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সিল দেয়া হতো। ১১ মাসে এভাবে আমার জমা দেয়া টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।’
হৃদয় কাজী নামে আরেকজন গ্রাহকের গ্যাসের বিল বাকি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স এলাকায় প্রচার করেছিল তাদের মাধ্যমে সহজে বিল দেয়া যাবে। এই বিল জমা দেয়ার পর আমাদের রশিদে ব্যাংকের সিল দেয়া হতো।’
ফারুকের সঙ্গে তিতাসের যোগসাজস আছে অভিযোগ করে হৃদয় বলেন, ‘এতদিন ধরে বিল জমা দিই, সেটা যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ না পায় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে নোটিশ দিত বা লাইন বিচ্ছিন্ন করত। তারা কিন্তু সেটা করেনি, বরং যেদিন থেকে ফারুক উধাও হয়ে গেছে তার পর থেকেই তিতাস লাইন বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে।’
কামরুন নাহার নামে আরেকজন গ্রাহকের বিল বাকি পড়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। তিনি গত ১৫ মাস ধরে ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্সের মাধ্যমে বিল জমা দিয়েছেন। কামরুনের ক্ষোভও তিতাসের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘আজ যখন টাকা নিয়ে ভেগে গিয়েছে তখন তিতাস জানাচ্ছে যে, আমাদের বিল জমা হয়নি।’
এলাকার হাজী মো. আবু তায়েব নিউজবাংলাকে জানান, তার বকেয়া বিলের পরিমাণ ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘এখানে মূলত বিভিন্ন ভবনের মালিকেরা বিল জমা দিতেন। পানি ও বিদ্যুতের বিল এক মাস জমা দেয়া না হলে নোটিশ দেয়া হয়, তাই এই দুটি বিল ঠিকঠাক দিয়েছে ফারুক। তবে গ্যাসের বিলের জন্য সহজে নোটিশ দেয়া হয় না, তাই আমাদের এত দিনের বিল জমা না হওয়ার পরেও আমরা কোনো নোটিশ পাইনি।’
এলাকাবাসীর কয়েকজনের অভিযোগ, উমর ফারুককে দোকান ভাড়া নিতে সহায়তা করেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি। তার বাসাও ওই এলাকায়।
তবে এই অভিযোগের জবাবে রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তাকে (ফারুক) ভালোভাবে চিনি না। অনেক আগে উমর ফারুকের একটা দোকান ছিল আমার বাসার এখানে। সেখানে ফটোকপি আর প্রিন্টের কাজ করাতাম আমি। এরপর শুনি একটা ঝামেলার কারণে ওকে ওখান থেকে বের করে দেয়া হয়। তখন পুলিশও এসেছিল।
‘ফারুক যে বাসায় থাকত, সেখানে এক মহিলাকে বোন বলে পরিচয় দিত। পরে শুনেছি তাকে সে বিয়ে করেছে, কিন্তু তাদের ডিটেইলস আমি জানি না।’
সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা নিয়ে ফারুক ভেগে যাবে এমন আমি কখনও ভাবিনি। আমি জানতাম, তার শুধু ফটোকপি আর বিকাশের দোকান আছে। কয়েক বছর আগে যখন তাকে ওখান থেকে বের করে দেয়া হয়, তারপর অনেকদিন তাকে এলাকায় দেখা যায়নি। এরপর তাকে আবার ওই দোকানসহ দেখা যায়।’
ফারুকের দোকান ভাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার এমন কোনো পরিচয় নেই। যিনি ভাড়া দিয়েছেন, তিনি বলতে পারবেন কেন তাকে ভাড়া দিয়েছেন।’
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেছে নিউজবাংলা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, উমর ফারুক বা ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স নামে তাদের কোনো এজেন্ট নেই। অন্যদিকে, সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্সের দোকানের ব্যানারে ব্যবহৃত ০১৮৩৫০১০১০১ ফোন নম্বরটি কোনো বিকাশ এজেন্টের নামে নিবন্ধিত নয়। এই নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে তিতাসের মিরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের কেউ বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি। কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. রবিউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গত ২১ জানুয়ারি এই শাখায় যোগদান করেছি। আজই প্রথম ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্সের নাম শুনলাম। এর আগে যিনি আমার পদে ছিলেন তাকে বদলি করা হয়েছে।’
কতদিনের বিল না পেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিন মাস বকেয়া পড়লেই নোটিশ পাঠানো হয়। তবে মাঝে মাঝে টাকার অংকের উপর বিষয়টি নির্ভর করে।’
বিষয়টি নিয়ে কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন মোল্লার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন রবিউল ইসলাম।
তবে রাজস্ব বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন মোল্লাও বলেন, ‘আমি গত ২৭ জানুয়ারি এই জোনে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
ওই কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, ফারুকের প্রতারণার বিষয়ে তাদের কাছে সম্প্রতি কিছু অভিযোগ এসেছে, তবে এর আগে তারা ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম শোনেননি।
দুই থেকে দেড় বছরের বকেয়া বিলের পরেও তিতাস এর আগে কেন গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের উদ্যোগ নেয়নি- তেমন প্রশ্নের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ওই কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:সম্প্রতি ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইনের টাকা আত্মসাৎ ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, বিভিন্ন সময় হয়রানি, অশালীন কথাবার্তা ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিল মাঠকর্মী স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদনও করেছিলেন ভুক্তভোগী দাবি করা স্বাস্থ্যকর্মীরা।
তবে ঘটনার প্রায় এক মাস পর অভিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে উল্টো কর্তৃপক্ষের রোষাণলে পড়েছেন অভিযোগকারীরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে বদলির আদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অভিযোগকারীরা বলছেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করার কারণেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বদলির ব্যবস্থা করিয়েছেন। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তাদের বদলির আদেশ হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম ওই দুজনের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।
২৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে বদলির আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মইনুল হক খান। আদেশে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহারকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণিকে ফরিদপুরে বদলি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাঠকর্মীদের গরু-ছাগল মনে করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!
গত ২ সেপ্টেম্বর ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফাত আরার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণিসহ ৭৪ জন মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী। এদের সবার পক্ষে অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেন নাজমুন নাহার।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণি অভিযোগ করে বলেন, ‘আজ অফিসে আসার পর জানতে পারলাম আমাকে বদলি করা হয়েছে। কারণ আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ করেছিলাম। এজন্য ক্ষিপ্ত হয়ে উনিই এই বদলির অর্ডার করিয়েছেন।’
সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অশালীন বাক্য ব্যবহার ও করোনাকালে টিকা কার্যক্রমের সময় আমাদের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মাসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটা লিখিত আবেদন করেছিলাম। আমার মনে হয়, আমরা স্যারের বিরুদ্ধে যে আবেদন করেছিলাম, সেটার কারণেই বদলি করা হয়েছে। এছাড়া তো আর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে জানতে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফাত আরাকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি। ঢাকা জেলা সিভিল সার্জনের মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘এটা তো বলতে পারব না, কে বদলি করেছে। অভিযোগটা তো ডিজি স্যার বরাবর দিয়েছিল। এখন সেখানে কী হয়েছে, আমি বলতে পারব না এই মুহুর্তে। অনেক সময় ওখান থেকে কপি দেয়, আবার দেয় না।’
তবে অভিযোগের পর ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটি হয়েছে কি না- সে বিষয়েও তিনি জানেন না বলে জানান।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক বদলি। বহুদিন একটা জায়গায় থাকলে যেটা হয়।’
তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিরুদ্ধে করা অভিযোগের পর কোনো তদন্ত হয়েছে কি না- প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। বলেন, ‘সেই অভিযোগের তদন্ত হবে। সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দিনাজপুরের নদ-নদীগুলোর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের পুরোটাই প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ওইসব এলাকার ফসলের ক্ষেত।
জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের শীর্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী এই জেলার ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পানি নেমে গেলে দ্রুত এসব জমির ধান কেটে, মাড়াই করে, শুকিয়ে নিলে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলার নদ-নদীর পানি আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল ৩টায় পুনর্ভবা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপরে, আত্রাই নদীর বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচে ও ইছামতি নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দিনাজপুর সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা, হীরাহার, গোসাইপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমির প্রায় সবই পানিতে নিমজ্জিত। জমির ধান সবে পাকতে শুরু করেছে, এরই মধ্যে ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা। আদতেও জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না, এ নিয়ে তাদের মনে জমেছে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ।
শুধু ধান নয়, মরিচ, বেগুন, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতও ডুবেছে পানিতে। ফলে লাভ তো দুরাশা, সবজি চাষে যে খরচ ইতোমধ্যে হয়েছে, তাই তুলতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা।
এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা এলাকার মকবুল হোসেন। পানি বাড়ায় পুকুরের মাছ চলে গেছে। এদিকে যেটুকু জমিতে ফসল চাষ করেছিলেন, তাও তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক মকবুল হোসেন।
জানতে চাইলে একরাশ হতাশা ঝরল তার কণ্ঠে, ‘সব শেষ! আমি একেবারে পঙ্গু হয়ে গেছি। গরীব মানুষ; কিস্তি তুলে পুকুরে মাছ ছেড়েছিলাম, সব মাছ পালিয়ে গেছে; ফসলও পানির নিচে। কষ্টে গলা দিয়ে খাবার নামে না আমার। এখন কিস্তি দেব, নাকি খাব! পানি তো এখনও বাড়তেই আছে।’
কৃষক গোলজার হোসেন বলেন, ‘বিঘা পাঁচেক ধান লাগিয়েছিলাম। সব ধান ডুবে গেছে। সবজি ক্ষেতও পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবারই একই অবস্থা। এখন তো অনেক ক্ষতি। পাকা ধান, এসব ধান তো গাজে (অঙ্কুরোদগম হয়ে) নষ্ট হয়ে যাবে।’
শাহীন সুর আলম বলেন, ‘গত মৌসুমে ইরি (বোরো) ধানের আবাদ করে দাম পাইনি। সেই কারণে এবার আগাম জাতের ধানের আবাদ করেছিলাম। আর ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই কাটব, কিন্তু এর মাঝেই বন্যায় ডুবে গেল। এখনও তো পানি বাড়তেই আছে। ধান তো সব শেষ!’
সদর উপজেলার হীরাহার এলাকার সোহেল মিয়া বলেন, ‘নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছিলাম, ডুবে গেছে। ৩ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছিলাম, তাও ডুবে গেছে। কাঁচা মরিচের এক বিঘার ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এক বিঘা জমির বেগুনের ক্ষেতও নষ্ট হয়ে গেছে। চারদিকে এখন শুধু অন্ধকার দেখছি। সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করব, বুঝতেছি না।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘জেলার ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে, তবে ধীরে ধীরে পানি নেমে যাচ্ছে। যেসব ধান পাকা অবস্থায় আছে, পানি নেমে গেলে সেগুলো দ্রুত কেটে, মাড়াই করে যদি শুকিয়ে নেয়া যায়, তাহলে তেমন ক্ষতি হবে না।’
আরও পড়ুন:‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ঢাকার কেরাণীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ২০১৮ সালে। এর তিন বছর পর প্রায় ৫ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চুক্তির কয়েকদিন পর থেকেই শুরু হয় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের মেয়াদ মাত্র এক বছর হলেও তা পেরিয়ে গেছে দুই বছর। প্রকল্পের মেয়াদের দ্বিগুণ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নানা জটিলতায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় আটকে আছে অন্যান্য প্রকল্পের কাজও। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নতুন ক্যাম্পাস পেতে অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কেরাণীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের সীমানাপ্রচীর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশে মুজাহিদনগরের প্রবেশ মুখে জমি অধিগ্রহণ এবং সরকারি গাছ কাটা সংক্রান্ত জটিলতায় এখনও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের প্রাথমিক কাজও শুরু করতে পারেনি। একই অবস্থা ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পাশেও।
পদ্মা সেতু রেললাইনের পাশের এই জায়গায় অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও বড় বড় পুকুর থাকায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজও শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উত্তর পাশে মুজাহিদ নগরে প্রবেশের শুরুতেও এখনও শেষ হয়নি প্রাথমিক কাজ। পশ্চিম পাশে অধিকাংশ জায়গায় কাজ শেষ হলেও রাস্তার জন্য অনেক জায়গায় সীমানাপ্রচীর নির্মাণের কাজ বাদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জায়গায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হলেও এখনও ইট গাঁথুনির কাজ শেষ হয়নি।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, পৌনে পাঁচ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল এক বছর। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি হওয়ায় এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্প দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এই সময়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় আটকে আছে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের অন্যান্য কাজও।
সীমানাপ্রাচীরের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় মাটি ভরাট, প্রকৌশল ভবন নির্মাণসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণের কাজও শুরু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বার বার চিঠি দিলেও কাজে কোনো গতি আসছে না। এতে নতুন ক্যাম্পাস পেতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের দীর্ঘ দুই বছরে মাত্র ৬৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি এর পরিমাণ ৮০ শতাংশেরও বেশি। কাজে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ জটিলতার অজুহাত দিলেও তা মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, অধিগ্রহণ জটিলতায় ছিল মাত্র ১১ একর জমি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই বছরে বাকি জায়গার কাজও শেষ করতে পারেনি।
এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্ল্যানিং ভবন নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার না পাওয়ায় ক্ষোভে ধীরগতিতে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের টেন্ডার পেতে চুক্তির কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করলেও টেন্ডার না পাওয়ায় পরে কাজের গতি কমিয়ে দেয় ঠিকাদার। এতে এক বছরের প্রকল্পে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অগ্রগতি নেই।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগায় এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করার কথা ভাবছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তবে চুক্তির নিয়মানুযায়ী এক বছর মেয়াদি প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের ঠিকাদার আনোয়ার ব্যাপারী বলেন, ‘সীমানাপ্রাচীরের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ। মুজাহিদ নগরের পাশে কিছু এবং রেললাইনের পাশে এক হাজার ফিটসহ আর মাত্র সাড়ে চার হাজার ফিট বাকি আছে। জমি অধিগ্রহণের কিছু সমস্যা থাকায় আমাদের কাজে দেরি হচ্ছে।
‘অধিগ্রহণ শেষ হলেই মোটামুটি তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কাজে দেরি হওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ব্যয় বাড়ানোর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটা প্রস্তাব দেব ভাবছি।’ তবে ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের টেন্ডার না পাওয়ায় কাজে ধীরগতি কি না-এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ঠিকাদার আনোয়ার ব্যাপারী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১১ একর জায়গা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু ঝামেলা ছিল সে কারণে সেসব জায়গায় এখনও কাজ শুরু হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থাকায় অন্যান্য জায়গায়ও তারা কাজ করেনি। এজন্য আরও বেশি দেরি হয়েছে। অধিগ্রহণের ঝামেলা শেষের পথে, আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ করতে পারব।’
প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী এই প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির কোনো সুযোগই নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবেই ব্যয় বাড়াবে না।’
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দিয়ে আসছি। আমরা ঠিকাদারকে ডেকে পাঠাব। তারা যাতে দ্রুত কাজ শেষ করে সেজন্য আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব।’
আরও পড়ুন:গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি গ্রামের খালের (নালা) ওপর পাঁচ বছর আগে নির্মাণ করা হয় সেতুটি। চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য নির্মিত সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না তাদের। উপরন্তু তাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতুটি।
আর এখন কেউই সেতুটি নির্মাণের দায় নিচ্ছে না। ফলে যোগাযোগের সুবিধাবঞ্চিত রয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) বলছে, সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। আর এলজিইডি বলছে সেতুটি পিআইও অফিসের হতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেংরাকান্দি বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে সেতুটির অবস্থান, যার পশ্চিম দিকে শহীদের বাড়ি ও পূর্বে সুরমান আলীর বাড়ি।
শহীদের বাড়ির সামনের পাকা রাস্তা থেকে সুরমান আলীর বাড়ি পর্যন্ত ক্যানেলটি প্রায় ১০০ মিটার। এই ১০০ মিটার প্রস্থের নালার মাঝামাঝিতে আনুমানিক ১২০ ফুট মেইন ক্যানেলের (মূল নালা) মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি, যার উভয় পার্শ্বেই নেই অন্তত ৩৫ ফুট করে সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড)। এর পরের বাকি অংশে রয়েছে হেঁটে চলার সরু রাস্তা।
এ ছাড়া সেতুটিতে নেই অ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল ও উইং ওয়াল। কেবল দুই প্রান্তের স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এটি।
সংযোগ সড়কস্থলের দুই পাশেই তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মই (সাঁকো)। এর ওপর দিয়ে স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে ওঠানামা করছেন রোজ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই স্থানে পুরাতন একটি সেতু ছিল। সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহারে অনুপযোগী থাকার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে একই স্থানে নতুন করে সেতুটি করা হয়। এ সেতু তাদের কোনো কাজেই আসছে না; বরং বিভিন্ন দিক থেকে তাদের ভোগান্তি ও ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
তারা জানান, সেতু নির্মাণের পর একদিনও এই পথে যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। হেঁটে চলাচলের জন্য যে নামমাত্র সংযোগ সড়ক করা হয়েছিল, প্রথম বছরেই বন্যায় তার উভয় পাশ ধসে যায়। এর পরে সেখানে আর সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়নি। শুধু মানুষ পারাপারের জন্য এলাকাবাসীর চাঁদার টাকায় সেতুর সংযোগ সড়কে বাঁশ-কাঠের সাঁকো বানানো হয়েছে। এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষ।
অথচ সেতুটি বিভিন্ন দিক থেকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর পশ্চিমে রয়েছে এম এ সবুর দাখিল মাদ্রাসা, টেংরাকান্দি শিশু নিকেতন ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পারুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টেংরাকান্দি বাজার। পূর্বে রয়েছে টেংরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব টেংরাকান্দি হাফিজিয়া মাদ্রাসা।
শত শত শিক্ষার্থী এই সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি, পারুল, খোলাবাড়ি, খঞ্চাপাড়া এবং ফজলুপুর ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষের সহজে চলাচলের একমাত্র পথ এটি। খালের ওপর ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
জেলার প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের সেতুগুলো সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। এতে ৪০ লাখ থেকে অর্ধকোটি পর্যন্ত টাকার বরাদ্দ ধরা হয়। কোনো কোনো সময় এর ব্যয় বরাদ্দ আরও বেশিও ধরা হয়ে থাকে। এসব সেতুর কাজ বেশির ভাগই করে থাকে এলজিইডি। আর কিছু ত্রাণের ব্রিজ পিআইওয়ের দপ্তর করে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, ‘সেতুটি তো হাওয়ায় হয়নি, কেউ না কেউ তো করেছে। আজ হয়তো দায় নিচ্ছে না, তবে যে ডিপার্টমেন্টই করে থাকুক, তারা কাজটি অপরিকল্পিতভাবে করেছে। কেননা সেতুটি মেইন ক্যানেলের পুরোটা অর্থাৎ, ১২০ ফুটেই করা উচিত ছিল। এতে সঠিকভাবে পানি প্রবাহ হতো এবং ঝুঁকি অনেকটাই কমে যেত।’
তিনি জানান, সেতুতে অ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল করা হয়নি। সংযোগ সড়কের মাটি আটকানোর জন্য উইং ওয়ালও করা হয়নি, যার ফলে যতভাবেই সংযোগ সড়ক করতে মাটি দেয়া হোক না কেন, কোনোভাবেই সেখানে মাটি আটকানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘সেতুটির উচ্চতাও সঠিকভাবে করা হয়নি, যার কারণে বন্যার সময় সেতুর নিচের অংশে পানি স্পর্শ করার উপক্রম হয় বা স্পর্শ করে। ফলে সেতুর নিচ দিয়ে কোনো নৌযানও চলাচল করতে পারে না।’
মধ্যপারুল গ্রামের বিজয় সরকার বলেন, ‘আমরা স্থানীয়রা চাঁদা তুলে এই বাঁশের মই (সাঁকো) তৈরি করেছি। প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে হাজার হাজার মানুষ হেঁটে পারাপার হয়। তারা কোনো মোটরসাইকেল, ঘোড়ার গাড়ি বা কোনো মালামাল নিয়ে যেতে পারেনা।
‘মালামাল বহনে দুই মিনিটের রাস্তা ঘুরে যেতে হয় পাঁচ কিলোমিটার। তাতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি খরচ হয়।’
টেংরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম বলেন, ‘সেতুর উভয় পার্শ্বেই এই এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বৃদ্ধ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে, বাধ্য হয়ে এই পথে চলাচল করে। অনেক সময় তারা দুর্ঘটনার শিকারও হয়।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন ব্রিজ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য সইরুদ্দিন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘যতদূর মনে পড়ে চার থেকে পাঁচ বছর আগে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করে পিআইও অফিস। নির্মাণের পর থেকে সংযোগ সড়কের অভাবে কোনো যানবাহন এই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারেনি। বন্যার সময় এখানে প্রচুর পানি হয়, অনেক স্রোত হয়, রাস্তাও ধসে যায়।’
জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে সুরমানের বাড়ি থেকে শহীদের বাড়ির সামনে পর্যন্ত (ওই খালে) ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
ফুলছড়ি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শহীদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওইসব ফুটওভার ব্রিজ আমরা করি না, ব্রিজটা আমাদের নয়। ব্রিজটি এলজিইডির হতে পারে। তারপরও আমার সহকারী প্রকৌশলী মিজান এখানে দীর্ঘদিন ছিলেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
মোবাইল ফোনে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মিজানের (বর্তমান পিআইও) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সেতুটি তারা করেননি।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে না চেয়ে এলজিইডির ফুলছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি চিকিৎসাজনিত কারণে ছুটিতে আছি।’
একই দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এস্তামুল হক বলেন, ‘ওই সেতুটা আমরা করিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান স্যার বলার পর আমি ব্রিজটি দেখতে গিয়েছিলাম। দেখে মনে হয়েছে আমাদের কোনো প্রকল্পে করা নয় সেটা।
‘হয়তো অন্য কোনো ফান্ড থেকে কেউ করতে পারে। সেটা পিআইও অফিসও করতে পারে, আবার এলজিইডিও করতে পারে।’
তথ্য সংরক্ষণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা কত সালে হয়েছে, সেটি জানি না। ওই সময় আমি ছিলাম না। অডিট হয়ে গেলে বেশি দিনের পুরনো ফাইল আর সংরক্ষণ করা হয় না।’
সেতুটির জরুরি মেরামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওখানে নাকি পানির স্রোতের বেগ অনেক। ওখানে অ্যাপ্রোচ (সংযোগ সড়ক) দিলে সেটা থাকবে না। অযথা ইনভেস্ট করে লাভ হবে না। ব্রিজটি দেখে মনে হয়নি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
‘এলজিইডি থেকে করা হলে ওই রকম হতো না। ওখানে নতুন করে ব্রিজ করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ সম্পর্কিত একটি প্রপ্রোজাল (প্রস্তাব) পাঠাইছি।’
আরও পড়ুন:পাবনার সুজানগর উপজেলার হাটখালীতে স্কুলের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও নিয়োগ প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটখালীর নুরুদ্দিনপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির চারটি পদে আবেদনের জন্য গত ২৭ জুলাই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার আগে থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা করেন ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান ও তার সহযোগীরা।
তারা আরও জানান, অনৈতিক উপায়ে সহযোগীদের নিয়োগের চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরবর্তী সময়ে পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করেন ও বিদ্যালয়ের সামনে লোকজন দিয়ে নিজেই মানববন্ধন করান। এরপর শিক্ষা অফিস নিয়োগ স্থগিত করে।
স্কুলের সামনে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের নেতৃত্বে গত ১১ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন হয়। সেই মানববন্ধনের প্রতিবাদে পাল্টা মানববন্ধন করেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা জমি দিয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। গত দুই বছর আগে এমপিওভুক্ত হয়েছে। এরপর বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান, কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
‘এ ছাড়াও গত ইউপি নির্বাচনে আমরা তার পক্ষে নির্বাচন করিনি, আমাদের স্থানীয় একজন প্রার্থী ছিল। তার পক্ষে কাজ করেছিলাম। এসবের জন্য চেয়ারম্যান আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত।’
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি মানববন্ধন হচ্ছে। তখন মানববন্ধনের লোকজন আমাকে দাঁড় করিয়ে আমার কাছে অভিযোগ দেয়। তারা বলেন নিয়োগ নিয়ে স্কুলের জমি কেনার জন্য ২৪ লাখ টাকা নেয়া হচ্ছে, কিন্তু তারাও প্রমাণ করতে পারেনি, আমার কাছেও প্রমাণ নেই।
‘আমাকে ভোট করেনি আর সভাপতি হতে পারেনি বলে নিয়োগ বন্ধ করেছি, এমন কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যেখানে পরীক্ষা ও নিয়োগই হলো না, সেখানে দুর্নীতি হলো কীভাবে? তাদের দাবি যদি হতো নিয়োগ প্রক্রিয়াটা যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, কিন্তু তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পরীক্ষাটা বন্ধ করল। এতে আসলে বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হলো আরকি।
‘এখন আমার আর কী করার আছে? শিক্ষা অফিসও অনিবার্য কারণ দেখিয়ে নিয়োগ স্থগিত করল, কিন্তু তারা নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। এখন তারাই বলতে পারবে কেন তারা নিয়োগ বন্ধ করেছে।’
পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার রুস্তম আলী হেলালী বলেন, ‘আমার কাছে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছি।‘
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। তারপর যদি নিয়োগ দেয়ার মতো হয়, তাহলে ডিজির প্রতিনিধির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব।’
আরও পড়ুন:আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। চারপাশে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ দেখার ফুরসত নেই! সবকিছু থেকে গা বাঁচিয়ে চলাটাই হয়ে উঠেছে বাস্তবতা। তারপরও এই সমাজে কিছু মানুষ মানবতার সেবায় কাজ করে চলেছেন। তাদেরই একজন অমলেন্দু কুমার দাশ।
সিলেটের মৌলভীবাজারের বাসিন্দা অমলেন্দুর মানবিক কাজের ধরনটি অবশ্য আর দশজনের সঙ্গে মেলানো যাবে না। বিদেশের মাটিতে কারাবন্দি থাকা স্বজনকে মুক্ত করে তিনি হাসি ফুটিয়েছেন শত শত পরিবারে। আর সে সুবাদে আজ তার পরিচিতি ‘মানবিক মানুষ’ হিসেবে। ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ও বলেন অনেকে।
ভারতের কারাগারে বন্দি তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে দৌড়ঝাঁপ করে মুক্ত করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অমেলেন্দু দাশ। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি থাকা ভারতের ১৯ নাগরিককে মুক্ত করে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। আর এসব কাজ তিনি করেছেন স্বেচ্ছায় এবং নিজের বেতনের টাকা খরচ করে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ বাড়ন্তি গ্রামে অমলেন্দু কুমার দাশের জন্ম। তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। চাকরিটা তার জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। তবে এর বাইরে তার কর্মক্ষেত্রের ব্যাপ্তি বিশাল। সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি নানামুখী মানবিক কাজে নিজেকে যুক্ত করে রেখেছেন। লোকসাহিত্য ও গবেষণাধর্মী লেখালেখিসহ লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায়ও তিনি নিরলস কাজ করে চলেছেন।
অমলেন্দু কুমার জানান, ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবধি তিন শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্ত করে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মানবিক এসব কাজের পেছনে রয়েছে এক বৃদ্ধা মায়ের চোখের জল, অনেক বন্দির করুণ কাহিনী ও নীরব চাহনি।
ভারতের আসামের পাথারকান্দির জয়ন্তী বিশ্বাস ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। আদালত এক মাসের কারাদণ্ড দিলে তাদেরকে মৌলভীবাজার কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে সাজার মেয়াদ শেষ হলেও নানা প্রশাসনিক জটিলতায় মা ও ছেলে কারামুক্ত হয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় আসামের এমএলএ কৃষ্ণেন্দু পালের অনুরোধে অমলেন্দু দাশ প্রায় দুই মাস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করে তাদের মুক্তির আদেশ হাতে পান।
অবশেষে ১৬ মাসের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে মা ও ছেলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হন। নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সময়টাতে তাদের সেই আনন্দের বাঁধভাঙা কান্না হৃদয় ছুয়ে যায় অমলেন্দুর। আর মা-ছেলের ঘরে ফেরার সেই আনন্দ তাকে এমন মানবিক কাজে উদ্যোগী হতে উৎসাহিত করে।
অমলেন্দু পরবর্তী সময়ে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থাকা ভারতীয় নাগরিকদের খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। কাগজপত্র ঘেঁটে তিনি দেখতে পান, এখানে আটক ভারতীয় নাগরিকদের অনেকেরই কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যথোপযুক্ত উদ্যোগে অভাবে তারা এখানে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
নানা স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে প্রশাসনিক ঝামেলা মিটিয়ে তিনি এসব ভারতীয় নাগরিককে নিজ দেশে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এই বন্দিদের অনেকেই ১৪ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি ছিলেন।
এবার ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশিদের মুক্ত করে আনার পালা। তবে শুরুতে এসব বিষয় অমলেন্দুর দাশের অনেকটা অজানাই ছিল।
ভারতীয় নাগরিকদের কারামুক্ত করে নিজ দেশে পাঠাতে অমলেন্দু দাশের এই মহতী কাজ মিডিয়াতে প্রচার হলে ভারতেও সেসব খবর ব্যাপক প্রচার পায়। সেখানকার কয়েকজন সংবাদকর্মী ও সমাজসেবক অমলেন্দু কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে আসামের বিভিন্ন কারাগারে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
এমন খবর পাওয়ার পরপরই মানবিক বোধ থেকে তৎপর হয়ে ওঠেন অমলেন্দু। উভয় দেশের আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনে শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি বাংলাদেশের তিন শতাধিক নাগরিককে কারামুক্ত করে দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। তাদেরকে ফিরিয়ে দেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটানো স্বজনদের কাছে।
মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা অমলেন্দু কুমার দাশ বলেন, ‘মানবিক তাগাদা থেকে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় আমি এসব কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। নিজের চাকরির বেতনের টাকার একটা অংশ খরচ করে আমি কাজগুলো করে চলেছি।
‘বিপদাপন্ন মানুষগুলোর কান্না এবং বিপদমুক্তির পর তাদের মধ্যে যে আনন্দ ও স্বস্তি আমি দেখতে পাই সেটাই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। আর তা আমাকে এসব সব কাজে প্রেরণা যোগায়।’
অসহায় বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুবাদে অমলেন্দু দাশ সাধারণ মানুষের কাছে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর চোখে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘মহামানব’।
প্রসঙ্গত, এযাবৎকালের সবচেয়ে দর্শকনন্দিত টিভি অনুষ্ঠানগুলোর একটি ‘ইত্যাদি’তে হৃদয়ছোঁয়া মানবিক প্রতিবেদনে রয়েছে অমলেন্দুর মহৎ কাজগুলো। এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে নেত্রকোণায়, যা প্রচার হবে ২৯ সেপ্টেম্বর।
রাস্তার দুই পাশে সারি সারি অসংখ্য তালগাছ। জায়গার নাম ঘুঘুডাঙ্গা তাল সড়ক। প্রায় তিন কিলোমিটার এ রাস্তাজুড়ে তালগাছের নিছে বসেছে তালের পিঠা মেলা।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে শুক্রবার বিকেল থেকে তিন দিনব্যপী এ মেলা শুরু হয়। প্রথম দিনেই সেখানে সমাগম ঘটেছে হাজারো মানুষের।
শীত আসার আগমুহূর্তে প্রতি বছরই এ সময় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের আয়োজনে এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। দর্শনার্থীরা সড়কটির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি স্বাদ নিতে পারেন বাহারি সব তালের পিঠারও।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মেলার উদ্বোধন করেন। ওই সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক, নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ মোরশেদ।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, এ বছর তালের গোলাপ পিঠা, ঝিনুক পিঠা, মাংস পিঠা, পাটিসাপটা, তালের জিলাপি, তালের বড়া, ক্ষীর, তালের কফি, তালের আমতা, তালের নাড়ুসহ অন্তত ২৫ ধরনের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে এ মেলায়।
অন্যদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
সাপাহার উপজেলা থেকে আসা দোকানি ইসফাত জেরিন মিনা বলেন, ‘আমার স্টলে ১২ থেকে ১৫ রকমের পিঠা আছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।
‘অনেক মানুষের সমাগমও ঘটেছে পিঠা মেলায়। কেউ পিঠা খাচ্ছে, কেউ বা বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’
নিয়ামপুরের স্থানীয় দোকানি সেফালী বেগম বলেন, ‘আমার স্টলে আট থেকে ১০ রকমের তালের পিঠা আছে। কেউ স্টল ঘুরে দেখছেন আবার কেউ কিনে খাচ্ছেন পছন্দের পিঠাগুলো। তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন চলবে। আশা করছি অনেক মানুষ আসবে পিঠা খেতে।’
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দর্শনার্থীরাও। এমন মেলায় আয়োজন করায় তারাও খুশি।
নওগাঁ শহরের উকিলপাড়া থেকে মেলায় আসা আবদুল মান্নান জানান, অনেকদিন ঘুরাফেরা করা হয় না তার। তাই পিঠা মেলায় এসেছেন।
আরেক দর্শনার্থী লুবনা আক্তার বলেন, ‘আমিসহ আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে বদলগাছী থেকে এসেছি। আগে থেকেই জানতাম পিঠা উৎসব হবে। অনেক রকমের পিঠা।
‘বেশ কয়েকটি পিঠা খেয়েছি। দারুণ লেগেছে। সব মিলিয়ে আয়োজনটি অনেক সুন্দর।’
১৯৮৬ সালের দিকে স্থানীয় হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন তালগাছগুলো রোপণ করেছিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তার উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয়দের বজ্রপাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি শোভা বাড়ানো।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এখন অনেকেই পিঠা বাজার থেকে কিনে এনে খায়। এতে কোনো আনন্দ থাকে না।
‘ব্যস্তময় জীবনে এখন প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে পিঠা খাওয়ার উৎসব। প্রতি বছর বর্ণিল আয়োজনে এ সময়ে মেলা বসানো হয়। মূলত নতুন প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন ধরনের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের পিঠা পরিচিত করে দেয়ার জন্যই এমন আয়োজন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য