গ্রামীণফোনের অব্যবহৃত সিম বিক্রির সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেন বিটিআরসি একক সিদ্ধান্তে এই সিম বিক্রির সুযোগ দিল, সেটা জানতে সম্প্রতি বিটিআরসিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয় টানাপোড়েন।
এর মধ্যেই সোমবার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার জানান, গ্রামীণফোনর নতুন-পুরোনো সব ধরনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
এ ঘটনায় হতাশা জানিয়ে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের এমন অবস্থান দেশে ডিজিটালাইজেশন এজেন্ডা ও গ্রাহকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি।
মন্ত্রণালয়-বিটিআরসি টানাপোড়েন যেভাবে
গ্রামীণফোন লিমিটেডের সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়া পর্যন্ত সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ রাখতে ২৮ জুন নির্দেশনা দেয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। পরদিন ২৯ জুন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় বিটিআরসি।
এর তিন মাস পর ১৮ সেপ্টেম্বর বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র সংবাদমাধ্যমকে জানান, গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মূলত এরপরই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিটিআরসির টানাপোড়েন শুরু হয়।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেন বিটিআরসি একক সিদ্ধান্তে সিম বিক্রির সুযোগ দিল, তার কারণ জানাতে গত ১৯ অক্টোবর নোটিশ দেয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ শরিফুল ইসলামের সই করা ওই নোটিশে বলা হয়, ‘বিটিআরসি কর্তৃক গ্রামীণফোন লিমিটেড-এর রিসাইকেল করা ১৩ লাখ সিম বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়েছে মর্মে জানা যায়। গ্রামীণফোন লিমিটেড-এর সিম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এই বিভাগের অনুমোদন ব্যতীত বিটিআরসি কর্তৃক এককভাবে এই অনুমতি দেওয়ার কারণ এই বিভাগকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
বিষয়টি নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও ক্ষোভ জানান। তিনি ২ নভেম্বর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একদম সহজ হিসাব। মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, বিটিআরসি সেই নিষেধাজ্ঞা অনুসারে গ্রামীণফোনের সব সিম বিক্রি বন্ধ করেছে। এরপর তারা যেটা করেছে সংগত কারণেই তাদের এর কারণ দর্শাতে নোটিশ দেয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিটিআরসি যেটা বলছে, গ্রামীণফোন পুরোনো সিম বিক্রি করছে। কিন্তু কথা হলো গ্রামীণফোন পুরোনো গ্রাহকের কাছে পুরোনো সিম বিক্রি করছে না। তারা বিক্রি করছে নতুন গ্রাহকের কাছে। এখন নতুন গ্রাহকের কাছে যদি গ্রামীণফোন সিম বিক্রি করে, তাহলে মান্ত্রণালয় যে কনসেপ্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেই কনসেপ্টেরই ভায়োলেশন হয়।’
‘আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। আমরা নিম্ন কোনো কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা সেটা বাস্তবায়ন করেছে। সেই নির্দেশের কোনো ব্যতিক্রম করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই করতে হবে।’
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই সোমবার মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিটিআরসি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে পারব না। আমি যা বলার গতকালের অনুষ্ঠানেই বলেছি। আপনার যদি আমার বক্তব্য প্রয়োজন হয় তাহলে গতকালের অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যই লিখে দেন।’
রোববারের ওই অনুষ্ঠানে দেয়া বিটিআরসি চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
গ্রামীণফোনের সব ধরনের সিম বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারণটি হচ্ছে, যেদিন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয় সেদিন সেখানে নেটওয়ার্ক ভালো ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সেটা প্রত্যক্ষ করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমাদের সচিবকে ফোন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এর আগেও প্রচুর অভিযোগ ছিল এবং এখনও আছে। সেবার মান খারাপ। আদালতে রিটও ছিল। এগুলো বিবেচনায় মন্ত্রী গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রি বন্ধের জন্য বলেছিলেন।‘
তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোনের ৩৪ লাখ গ্রাহক কমেছে। তবে বাজারে তাদের চাহিদা আছে। গত সেপ্টেম্বরে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে পুরোনো সিম বিক্রির যে অনুমতি দিয়েছিল, সেটা আবার প্রত্যাহার করা হয়েছে।
হতাশ গ্রামীণফোন
বিটিআরসির অবস্থান পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন গ্রামীণফোনের হেড অফ এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন মোহাম্মাদ হাসান।
এতে বলা হয়, ‘গ্রাহকদের চাহিদার কারণে প্রাক-অনুমোদিত নম্বর বিক্রির অনুমতি দেয়ার আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
‘গ্রাহকদের পক্ষ থেকে, গ্রামীণফোন এই সিদ্ধান্তে গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা বিশ্বাস করি যে এটি দেশের ডিজিটালাইজেশন এজেন্ডার জন্য এবং গ্রাহকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি।’
তবে তিনি বলেন, ‘আমদের নতুন-পুরোনো সিম বিক্রি বন্ধ থাকলেও সিম রিপ্লেস অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি তার নামের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন করা সিম হারিয়ে ফেললে তিনি তার নম্বর তুলতে পারবেন। এতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।’
আরও পড়ুন:ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জাতিসংঘের স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাতিসংঘের স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে মেয়র আতিকুল ইসলামের মনোনয়নের বিষয়টি জানানো হয়। পরে সম্মতি প্রদান করলে ডিএনসিসি মেয়রকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে চূড়ান্তভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। খবর বাসসের
জাতিসংঘের মহাসচিব তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, আন্তঃসরকার ও জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারের সম্পৃক্ততা জোরদার করার ক্ষেত্রে এই উপদেষ্টা পরিষদের সময়োপোযোগী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং আধুনিক শহর গড়তে স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে এই উপদেষ্টা পরিষদ করণীয় বিষয় নির্দিষ্টকরণে ভূমিকা রাখবে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, উপদেষ্টা পরিষদ স্থানীয় এবং আঞ্চলিক সরকারের সংশ্লিষ্টতা এবং কার্যকর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেবে, সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য, আমাদের বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় সংশোধনে ভূমিকা রাখবে। জাতীয় পর্যায়ে যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ এবং জাতীয় লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারগুলির ধারাবাহিকভাবে যে ভূমিকা পালন করা উচিত এবং বৈশ্বিক পদক্ষেপেও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যগণ অবদান রাখবে।
উল্লেখ্য এই উপদেষ্টা পরিষদে মোট সদস্য ১৫ জন। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে দুইজন সদস্য হলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এবং ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের মেয়র অ্যাবি বিনায়। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে-ইউরোপ থেকে তিন জন, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে তিনজন, উত্তর আমেরিকা থেকে দুইজন, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয় অঞ্চল থেকে তিনজন, মধ্য প্রাচ্য ও মধ্য আফ্রিকা থেকে দুইজন।
সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান পৌঁছেছে।
সড়কপথে চালানটি নেয়ার জন্য শুক্রবার ভোর থেকে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শিথিল করা হয়। বন্ধ রাখা হয় বাস চলাচল।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় শুক্রবার দুপুর সোয়া একটার দিকে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো প্রবেশ করে বলে নিশ্চিত করেন পাবনার এসপি আকবর আলী মুনসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে সড়কপথে রওনা হয় ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো। পথে গাজীপুরে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে কিছুক্ষণ থেমে থাকে। পরে সেখান থেকে সাতটার দিকে গাড়ি পাবনার দিকে রওনা দেয়।
ঢাকা থেকে রূপপুর পর্যন্ত সড়কে ফাঁকে ফাঁকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশি তল্লাশি চৌকি বসানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাশিয়া থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান।
একটি সূত্র জানায়, রূপপুর প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের কাছে আগামী ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এ ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।
দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বড় প্রকল্প পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। রাশিয়া থেকে ঋণ সহায়তা পেয়েছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে। দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দেশের ভাবমূর্তি আরও জোরদারে আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সময় বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এমন নির্দেশনা দেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের ভাবমূর্তি আরও উন্নত করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, পেশাদারত্ব, সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন।’
বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, শহিদ মিনার ও বঙ্গবন্ধু কর্নারসহ দূতাবাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দূতাবাসে পৌঁছালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী প্রথমে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সালে এই চ্যান্সারি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ২০০০ সালে নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সালাউদ্দিনসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় পরিবারের সঙ্গে মায়ের জন্মদিন পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মায়ের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি।
ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘ভার্জিনিয়ায় আমার গলফ ক্লাবে পরিবারের সঙ্গে মায়ের জন্মদিনের নৈশভোজ।’
ছবিতে দেখা যায়, শেখ হাসিনার দুই পাশে পরিবারের অন্য সদস্যরা। পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন জয়। জন্মদিনে তারা একসঙ্গে রাতের খাবার খান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দেশে নেয়া হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, বাদ আসর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
একই সঙ্গে সকালে মেরুল বাড্ডায় বৌদ্ধ মন্দিরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে ও বেলা ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করে। এসব কর্মসূচিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে তার দল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পৌঁছান। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক মিশন প্রাঙ্গণ ও দূতাবাসের কর্মীদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দেশটির এ অবস্থানের কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি এক সাংবাদিক মিলারের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত পিটার হাস তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। শুধু তার নিরাপত্তাই নয়, এমনকি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি। তার এ উদ্বেগ যথার্থ। কারণ বর্তমান সরকারের অধীনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতের ওপর কয়েকটি হামলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন কি না, তাও জানতে চাওয়া হয় মিলারের কাছে।
উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ দূতাবাস বা সেখানকার কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিশদ আলোচনায় যাচ্ছি না। আমি বলব যে, আমাদের কূটনৈতিক কর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা আমাদের কাছে অবশ্যই সর্বোচ্চ গুরুত্বের বিষয়…কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেশন অনুযায়ী, সব কূটনৈতিক মিশন প্রাঙ্গণের সুরক্ষা এবং কোনো কর্মীর ওপর হামলা প্রতিহতের বিষয়টি নিশ্চিতে সব কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে স্বাগতিক দেশগুলোকে।
‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং আমরা আমরা আশা করব যে, (বাংলাদেশ) সরকার দেশটিতে থাকা আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) পাশাপাশি সব বিদেশি মিশন ও কর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আরও পড়ুন:সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথে দেশ এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথে আমরা এগিয়ে যাব অগ্রগতির দিকে, উন্নয়নের দিকে। দেশ ধাবিত হবে সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে। আমার সেই অগ্রযাত্রায় শামিল হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে ইছামতি নদীতে নৌকাবাইচ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নৌকাবাইচ আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির একটি অনন্য ঐতিহ্য। বাংলার প্রতিটি আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে লোকসংস্কৃতির অমূল্য উপাদান। এসব লোকসংস্কৃতি সঠিকভাবে লালন করা গেলে এগুলো বিশ্ব সংস্কৃতি ও সাহিত্যেরও অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাঙালি বীরের জাতি। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি। তিনি বাংলার মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। জেল-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন।
‘স্বাধীনতার পর দেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাঙালিকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ শুরু করেছিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি সংবিধানও আমাদের উপহার দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্রের ষড়যন্ত্রের কারণে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা জাতির পিতাকে হারাই। এটা ছিল জাতি হিসেবে আমাদের চরম ব্যর্থতা।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সকল মেগা প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ হয়েছে। জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘পাবনার উন্নয়নে নতুন গতি এসেছে। ২০০৮ সালে পাবনায় মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এতদিনে কোনো হাসপাতাল ছিল না। আজ সকালেই পাবনার ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণকাজের শুভসূচনা করা হয়েছে।
‘পাবনা থেকে ঢাকা রেল চলাচল এ মাসেই শুরু করার কথা থাকলেও প্রশাসনিক ও কারিগরি কারণে তা সম্ভব হয়নি, তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তা শুরু হবে। এ ছাড়াও ইছামতি নদী সংস্কার ও পুনরায় খননের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাবনায় ৫০০ শয্যা হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
আরও পড়ুন:পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়ামের প্রথম চালানটি সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এটি এরই মধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।
নিরাপত্তার জন্য শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে সড়কপথে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম আসবে। যেহেতু পাবনা-ঢাকা রুটে অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়, এ জন্য যানজট নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার স্বার্থে শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, তবে আরিচা-কাজিরহাট হয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় যান চলাচল করতে পারবে।
পাবনার ঢাকাগামী বাস কাউন্টারে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, টিকেট বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
দায়িত্বরত কর্মচারীরা জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউরেনিয়াম আসবে। এ জন্য বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাশিয়া থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান।
একটি সূত্র জানায়, রূপপুর প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের কাছে আগামী ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এ ইউরেনিয়াম জ্বালানি হস্তান্তর করবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।
দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বড় প্রকল্প পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। রাশিয়া থেকে ঋণ সহায়তা পেয়েছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে। দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য