বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল জব্বার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং'-এর ‘সুপার সাইক্লোন’ হিসেবে আঘাতের আশঙ্কার তথ্য দেখেছেন।
আবদুল জব্বার সোমবার সপরিবার আশ্রয় নেন সাইক্লোন শেল্টারে। সুপার সাইক্লোনের চেয়ে তিন ভাগ কম গতির (ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার) ঝড় আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের প্রতি অনেকটাই আস্থা হারিয়েছেন জব্বার।
আবদুল জব্বার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বইন্যার (সিত্রাং) আগে যে দাপাদপি চলছে ফেসবুক-মিডিয়ায় হ্যাতে মনে হইছিল কেয়ামতের আলামত। ফেসবুকে খালি দেহি এই আইতেছে সিত্রাং বইন্যা, সিডরের চাইতেও নাকি বেশি শক্তি। মোরা তো এহন খবরাখবর ফেসবুক ইউটিউবেই বেশি দেহি।
‘দ্যাশ ও ভারতের বাংলা মিডিয়াগুলাও তো খবর কইছে, বাংলাদেশে এত বড় বইন্যা আর জীবনেও আয় নাই (আসেনি)। ডরের চোডে গুষ্টি-জ্ঞাতি লইয়া আগেই গিয়া আশ্রয় নিছিলাম। এহন দেহি হুদাই আওয়াজ।’
উপকূলের মানুষ বলছে, ঝড় তৈরির আগেই তার মাত্রা বেশি দেখিয়ে প্রচার অথবা প্রকৃত মাত্রার চেয়ে বেশি সংকেত দেখানোর ফল দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক হতে পারে।
২০০৭ সালে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আঘাত করেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর। ওই ঝড়ের আগে মাঝারি মাত্রার অন্তত আরও দুটি ঝড়ে ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখানো হয়। এর ফলে উপকূলবাসীর মধ্যে তৈরি আস্থাহীনতার কারণে সিডরের মতো শক্তিশালী ঝড়ের প্রকৃত সংকেতকেও অনেকে গায়ে মাখেননি। সিডরে বড় ধরনের প্রাণহানির এটি অন্যতম কারণ।
বরগুনা সদরের নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম শফিকুজ্জামান মাহফুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিডরের সময়েও আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম। তখন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছিল।
‘এবার সিত্রাং নিয়ে ভয়াবহ প্রচার সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানুষ আতঙ্কিত হয়েছে। তবে ঝড়ের পর এখন উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিষয়টা কিছুটা বাঘ ও রাখালের গল্পের মতো হয়ে গেছে। এরপর মানুষ সহজে আর নিরাপদে যেতে চাইবে না।’
বরগুনা জেলা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর কবির মৃধা বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় সিত্রাং নিয়ে একটা হাইপ ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে কিছু গণমাধ্যমের খবরে সিত্রাংকে সুপার সাইক্লোন হিসেবে দেখানোয় সাধারণ মানুষ শঙ্কিত ছিল।
‘এসব নিউজ দেখে অনেক ফেসবুক ও ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটর কনটেন্ট তৈরি করেছেন। সব মিলিয়ে সিত্রাং একটি জুজুর ভয় তৈরি করছিল মানুষের মাঝে। তবে মানুষ বাস্তবটাও দেখেছে। এতে করে তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা আর নিরাপদে যেতে চাইবে না।’
একই ধরনের কথা বলছেন, বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ এলাকার ফয়সাল মাহামুদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো এক সপ্তাহ আগে থেকে শুনছি ২০০ কিলোমিটারের বেশি বেগে ঘূর্ণিঝড় আসছে। ভয়ে স্কুলের ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তবে একটু ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টি ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি। সাত দিন আগে থেকে টিভিতে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানান দিচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, কী দিয়ে কী ভুয়া খবর প্রচার করা হয় বুঝি না।’
বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী এলাকার শিক্ষক রবিন মিত্র বলেন, উদ্ভট সব খবরাখবরে ভরে গিয়েছিল। মিডিয়াগুলো প্রচার করলে সিডরের থেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আসছে। কিন্তু তেমন কিছুই তো দেখলাম না। এ রকম খবর প্রচার করলে তো মানুষজন পরে নিরাপদ আশ্রয়ও যেতে চাইবে না।’
সিত্রাংয়ে বাতাসের গতি অনেক কম হলেও দেশের ১১ জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের বেশির ভাগই প্রাণ হারিয়েছেন গাছচাপায়। উপকূলবাসী বলছেন, সুপার সাইক্লোন হলে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল ব্যাপক।
‘সুপার সাইক্লোন’-এর তথ্যের উৎস কোথায়
বঙ্গোপসাগরে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের দিকে সৃষ্ট লঘুচাপ থেকে সুপার সাইক্লোন সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রথম ফেসবুকে জানান কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
বাংলাদেশ সময় ৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি পোস্ট তিনি 'ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে দেন। এতে তিনি লেখেন (বাক্য ও বানান অপরিবর্তিত), ‘অক্টোবর মাসের ১৮ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি সুপার-সাইক্লোন সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম বা সংক্ষেপে জিএফএস।
‘সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি নিম্নচাপে পরিণত হবে ১৭ ই অক্টোবর যা ১৮ ই অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে। সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে সিত্রাং (থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম)।’
ওই পোস্টে পলাশ লেখেন, ‘সর্বশেষ পূর্বাভাষ অনুসারে সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি সুপার সাইক্লোনের শক্তি অর্জন করতে পরে। অর্থাৎ, বাতাসের গতিবেগ ঘূর্ণিঝড় সিডর কিংবা আম্পানের মতো হতে পারে (ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত)। অক্টোবর মাসের ২৫ তারিখ আমাবস্যা। ফলে সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি যদি অক্টোবর মাসের ২২ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে স্থলভাগে আঘাত করে তবে যে স্থানে আঘাত করবে সেই স্থানের উপকূলীয় এলাকা লন্ড-ভণ্ড করে দিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।
‘সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি যে স্থানে আঘাত করবে সেই স্থানের উপকূলীয় এলাকায় ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে যদি উপকূলের আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার এর মধ্যে থাকে।’
ওই পোস্টের বরাতে দেশের মূলধারার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেসব প্রতিবেদনের লিংকও নিজের ওয়ালে দিয়েছেন পলাশ। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও সুপার সাইক্লোন হিসেবে সিত্রাং আঘাত করবে বলে প্রতিবেদন প্রচার করে। এসব প্রতিবেদনের বেশ কয়েকটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেন পলাশ।
সিত্রাংয়ের ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার কারণ ব্যাখ্যা করে সংবাদমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১১ অক্টোবর একটি পোস্ট দেন মোস্তফা কামাল পলাশ।
এতে তিনি লেখেন (বাক্য ও বানান অপরিবর্তিত), 'সাইক্লোনের বিভিন্ন নামকরণ করা হয় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ এর উপর ভিত্তি করে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের বায়ুচাপ যত কম হবে (সমুদ্র পৃষ্টে স্বাভাবিক বায়ুচাপ ১০০০ মিলিবার হিসাবে গণ্য করা হয়) ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্টি বায়ুর গতিবেগ তত বেশি হবে। বায়ুচাপের সাথে বায়ুর গতিবেগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। মাত্র ২ সপ্তাহ পূর্বে আমেরিকার ফ্লোরিডা উপকুলে আঘাত হেনেছিল হ্যারিকেন ইয়ান। হ্যারিকেন ইয়ান স্থল ভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫৫ মাইল বা ২৪৯ কিলোমিটার।
‘বাতাসের এই গতিবেগের কারণে হ্যারিকেনটিকে নামকরণ করা হয়েছে ক্যাটেগরি ৪ হ্যারিকেন হিসাবে। এই হ্যারিকেনটির বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টার আর মাত্র ২ মাইল কিংবা ৩ কিলোমিটার বেশি হতো তবে এই হ্যারিকেনটিকে ক্যাটেগরি ৫ হ্যারিকেন নামকরণ করা হতো। একই কথা প্রযোজ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট কোন ঘূর্ণিঝড় এর ক্ষেত্রে।
‘সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার উঠে ঘূর্ণিঝড়টির জীবনের যে কোন সময় সেটা মধ্য সমুদ্রের মধ্যেও হতে পারে কিংবা স্থলভাগে আঘাত করার সময়েও হতে পারে তবে ঘূর্ণিঝড়টিকে সুপারসাক্লোন হিসাবে নামকরণ করা হবে। ২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন আম্পান কিন্তু স্থলভাগে আঘাত করেছিল ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে। এর পরেও ঘূর্ণিঝড় আম্পানকে নামকরণ করা হয়েছে সুপার-সাইক্লোন হিসাবে কারণ সমুদ্রে থাকা অবস্থায় আম্পানের বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার।’
নিউজবাংলার বিরুদ্ধে ‘অপসাংবাদিকতার’ অভিযোগ
সিত্রাংয়ের ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হওয়ার আশঙ্কা জানাতে গিয়ে ‘আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের’ নাম উল্লেখ করেন পলাশ।
তিনি যে ওয়েবসাইটের অ্যানিমেশনের ছবি নিজের পোস্টে দিয়েছেন সেটির নাম ট্রপিকালটিডবিটস ডটকম। ড. লেভি কাওয়ান নামের একজন ‘স্বাধীন আবহাওয়াবিদ’ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছেন।
ওয়েবসাইটে ড. লেভি সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ২০০২ সাল থেকে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন পর্যবেক্ষণ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে পিএইচডি করেছেন তিনি।
ওয়েবসাইটের ল্যান্ডিংপেজে বলা হয়েছে গত এক সপ্তাহে কোনো ব্লগ পোস্ট করা হয়নি। আটলান্টিক অঞ্চলে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সক্রিয় থাকার সময়ে সাধারণত নিয়মিত পোস্ট করা হয়।
তবে সাইটের ফোরকাস্ট মডেলস সেকশনে গিয়ে ‘সুপার সাইক্লোন সিত্রাং’-এর সম্ভাব্য গতিপথের অ্যানিমেশন দেখা যায়।
ড. লেভি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ২০১২ সালে নিজের হোস্টেল কক্ষ থেকে ব্যক্তিগত ব্লগ হিসেবে সাইটটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজেই লিখেছেন, তার সাইক্লোন পূর্বাভাস মডেল কোনো আনুষ্ঠানিক বা সরকারি সংস্থার পূর্বাভাস নয়। পুরো সাইটটি নিছক শখের বশে করা এবং ক্রাউডফান্ডিংয়ে চলছে।
আমেরিকান টেকজায়ান্ট আইবিএমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়েদার চ্যানেলের ওয়েদার ডটকমে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ঘূর্ণিঝড় তৈরির আগেই এভাবে পূর্বাভাস দেয়ার মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
এই নিবন্ধে বলা হয়, সরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানের দেয়া আবহাওয়া পূর্বাভাসের মডেলের তথ্য এখন ইন্টারনেটে ব্যাপক সহজলভ্য। তার মানে এই নয় যে, এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় আগেই কোনো হারিকেনের উপকূলে আঘাতের পূর্বাভাস মডেল আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভালো ধারণা৷
এই নিবন্ধে এ ধরনের পূর্বাভাসের ত্রুটি তুলে ধরতে ড. লেভির ওয়েবসাইটেরই একটি বিভ্রান্তিকর মডেল জিআইএফ আকারে দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘নিচের অ্যানিমেশনটিতে আলাদা করে মডেলটি আটবার চালানোর ফল দেখা যাচ্ছে। এটি মূলত গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেমের (জিএফএস) মডেল যেটিকে ২২ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট সকাল পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা পরপর চালানো হয়েছে। প্রতিটি পূর্বাভাসই ৩১ আগস্ট রাত ২টার সময়কার।
‘অ্যানিমেশনে গাঢ় লালকে ঘিরে থাকা কালো বৃত্তগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় যে মডেলটি ক্রমশ তৈরি হতে থাকা পূর্ণাঙ্গ উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলো কোথায় তৈরি সেগুলো দেখাচ্ছে।’
তবে প্রতিবারই মডেলটি চালানোর সময় ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থানে ভিন্নতা দেয়া যায়।
ওয়েদার ডটকম বলছে, প্রতিদিন সুপার কম্পিউটারে জটিল অ্যালগরিদমের মাধ্যমে একাধিকবার পূর্বাভাসের মডেলগুলো চালানো হয়। তাপমাত্রা, চাপ, বাতাসের গতি ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বিচার করে অ্যালগরিদমে একেকবার একেক সূচকে পরিবর্তন ঘটে।
সুপার সাইক্লোন তৈরির প্রাথমিক পর্যায়েরও প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এ ধরনের সুপার কম্পিউটার জেনারেটেড মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ১০ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
আরও পড়ুন: এ মাসের মাঝামাঝিতেই কি সুপার সাইক্লোন ‘সিত্রাং’?
সে সময়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে জানান, চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী সামনে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে। তবে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
সাগরে লঘুচাপ তৈরির পর সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে অন্তত তিন থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় থাকার কথা। এর মধ্যে লঘুচাপ তৈরি হলেও মৌসুমি বায়ুর কারণে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারবে না।
মোস্তফা কামাল পলাশ তার প্রথম পোস্টে দাবি করেছিলেন, নিম্নচাপটি ১৭ অক্টোবর তৈরি হয়ে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাস্তবে সিত্রাংয়ের নিম্নচাপটি তৈরি হয় ২২ অক্টোবর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক সে সময় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এক মাসের পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এমন একটি লঘুচাপের কথা বলা আছে। তবে এত আগে (১০ অক্টোবর) এই সম্ভাবনা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’
সুপার কম্পিউটার জেনারেটেড মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে দেশে ও বিদেশে বিতর্কের ভিত্তিতে নিউজবাংলার প্রতিবেদন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান পলাশ। প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে তোলেন ‘অপসাংবাদিকতা’র অভিযোগ।
১১ অক্টোবর এ নিয়ে ফেসবুকে দুটি পোস্ট দেন পলাশ। প্রথমটিতে তিনি লেখেন, ‘আমার গত ১২ বছরের লেখালেখির জীবনে সবচেয়ে বড় অপ-সাংবাদিকতার স্বীকার হলাম আজকে। নিউজ বাংলা ২৪ ডট কম নামক একটি অনলাইন পোর্টালের Saugat Bosu নামক জনৈক স্টাফ রিপোর্টার এই অপ-সাংবাদিকতার জনক। অল্প বিদ্যা ভয়ংকর প্রবাদ বাক্যটির সার্থক উদাহরণ Saugat Bosu এর এই রিপোর্ট টি।’
তবে একই দিন অন্য একটি পোস্টে তিনি ফেসবুকে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সিত্রাংকে কেন সম্ভাব্য ‘সুপার সাইক্লোন’ হিসেবে প্রচার করছে তা নিয়েও অভিযোগ তোলেন।
সেই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি লক্ষ করেছি অনেক গণমাধ্যম আমার সাথে কথা না বলেই আমার ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া পোষ্ট থেকে তথ্য নিয়ে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করে সংবাদ প্রকাশ করতেছে কিংবা এমন সংবাদ শিরোনাম দিয়ে সেই সংবাদ প্রকাশ করতেছে যা আমার পোষ্টের কোথাও উল্লেখ করা হয় নি।
'আমি স্পষ্টত করে বলতে চাই যে আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলগুলো। কিন্তু আজ ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় নি। ফলে আপনারা যদি সংবাদের কাটতির জন্য এই রকম শিরোনাম দিয়ে প্রকাশ করে থাকেন যে সুপার সাইক্লোন ধয়ে আসতেছে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে তবে সেই সংবাদ শিরোনামকে এই মহুর্তে সঠিক বলা যাবে না। আপনাদের সংবাদ কাটতির জন্য দেওয়া মুখরোচক সংবাদ শিরোনামের জন্য অনেক মানুষ ভুল বুঝিতেছে কিংবা আমার পূর্বাভাস সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
‘আমি গণমাধ্যম কর্মীদের অনুরোধ করবো এমন কোন রকম মুখরোচক শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবেন যা আমার পোষ্টে উল্লেখ করি নি। বা আমার পোষ্টে উল্লেখিত তথ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায় না। সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে সংবাদের শিরোনাম হতে পারে নিম্নরূপ:
"আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি সুপারসাক্লোন এর সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে"।’
তবে এর আগে তিনিই সুপার সাইক্লোনের সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রশংসা করে সেগুলো নিজের ওয়ালে শেয়ার করেছিলেন।
নিউজবাংলার বিরুদ্ধে মোস্তফা কামাল পলাশ ‘অপসাংবাদিকতা’র অভিযোগ তুললেও ১১ অক্টোবরের পর আর কোনো পোস্টে সিত্রাংকে সম্ভাব্য সুপার সাইক্লোন হিসেবে উল্লেখ করেননি। ঝড়ের শক্তির মাত্রা পরদিনই কমিয়ে আনেন তিনি। ঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত হানার স্থান ও সময়েও আসতে থাকে পরিবর্তন।
১২ অক্টোবর একটি পোস্টে পলাশ লেখেন, ‘আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস (১২ ই অক্টোবর দুপুর ১২ টার মডেল রান) অনুসারে আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় "সিত্রাং" গত ২৪ ঘণ্টায় স্থল ভাগে আঘাতের স্থান আরও কিছুটা উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখে সকাল ৬ টার পর থেকে। অর্থাৎ গতকালের পূর্বাভাষ অপেক্ষা আরও ২ দিন পরে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে।
‘গতকালের পূর্বাভাস এর মতো আজকের পূর্বাভাসেও মডেলটি সম্ভব্য ঘুর্নঝড়টির যে শক্তি নির্দেশ করতেছে তা গতকালের পূর্বাভাস নির্দেশিত শক্তি অপেক্ষা কম। আজকের পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত করার সময় অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসাবে (সুপার-সাইক্লোনের নিচের স্তরের ঝড় হিসাবে)।’
পলাশ ১৩ অক্টোবরের একটি পোস্টে তার অনুসরণ করা মডেলের সীমাবদ্ধতার কথাও স্বীকার করেন। তিনি লেখেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় "সিত্রাং" সম্বন্ধে ১ টা ভালো ও ১ টা খারাপ সংবাদ আছে। ভালো সংবাদটি হলো আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস (১২ ই অক্টোবর দুপুর ১২ টার মডেল রান) অনুসারে আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় "সিত্রাং" এর শক্তি খুবই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম এর কথা নির্দেশ করতেছে (এর মানে এই না যে এই পূর্বাভাসের পরের পূর্বাভাসে আবারও শক্তশালি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই)।
‘আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত মডেলগুলোর পূর্বাভাস পরিবর্তন হতেই থাকবে নিয়মিত ভাবে। এছাড়া স্থল ভাগে আঘাত করার ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় এর আঘাত হানার স্থান ও শক্তির ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে।‘
পরদিন আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘মডেলগুলোর প্রতিটি পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড় এর স্থল ভাগে আঘাত করার স্থান, ঘূর্ণিঝড়ের শক্তির পরিবর্তন হতেই থাকবে শেষ পর্যন্ত। এছাড়া স্থল ভাগে আঘাত করার ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় এর আঘাত হানার স্থান ও শক্তির ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে।‘
ফেসবুকে ১৪ অক্টোবর একটি পোস্টে যে পূর্বাভাস দেন সেটি বাস্তবে ঘটেনি। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘দৃক নিউজে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে কারণ সহ ব্যাখ্যা করেছি কেন সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান ও নিকবার দীপপুঞ্জ থেকে পশ্চিমদিকে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মাঝামাঝি উপকূলের দিকে অগ্রসর হলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রকৃতির ঘূর্ণিঝড় হিসাবে স্থল ভাগে আঘাত করবে।’
তিনি লেখেন, ‘পক্ষান্তরে যদি সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি যদি আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জ থেকে যদি উত্তর দিকে বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকার দিয়ে অগ্রসর হলে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসাবে স্থল ভাগে আঘাত করবে। ঘর্নিঝড়টির শক্তি অনেকাংশে নির্ভর করবে ভারত নাকি বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে তার উপর।’
প্রকৃতপক্ষে সিত্রাং বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করলেও এটি ছিল সাধারণ মাত্রার একটি ঘূর্ণিঝড়, ঘণ্টায় যার সর্বোচ্চ গতি ৭৫ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জে।
১৬ অক্টোবরের পোস্টেও পলাশ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করতে পারে ভারতের উপকূলে। তিনি লেখেন, ‘আমেরিকা, জার্মানি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করতেছে যে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মাঝা-মাঝি উপকূল দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত হানার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।‘
ঘূণিঝড়ের পরিবর্তে নিম্নচাপ উপকূলে আঘাত হানতে পারে এমন পূর্বাভাসও দিয়েছেন প্রবাসী এই গবেষক। গত রোববার একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘একটা সুসংবাদ আছে। নিম্নচাপটি বর্তমানে যে স্থানে রয়েছে ও যে পথে এগোচ্ছে সেই পথে বায়ু শিয়ায়ের যে মান রয়েছে তা সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি আরও অনেক কমিয়ে দিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে স্থল ভাগে আঘাত করার সময় নিম্নচাপ হিসাবে আঘাত করতে পারে।‘
এভাবে বিভিন্ন সময়ে ঝড়ের অবস্থা, আঘাতের স্থান, সময় ও গতি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার পরেও পলাশের দাবি তিনিই প্রথম ৯ অক্টোবর সিত্রাং সম্পর্কে ‘সঠিক পূর্বাভাস’ দেন।
তার মন্তব্য নিয়ে প্রতিবেদনের ভুয়সী প্রশংসা করে একাধিক লিংক শেয়ার ও স্ট্যাটাস দিয়েছেন পলাশ। সবশেষ মঙ্গলবার এক পোস্টে তিনি তার বক্তব্য ছাপানোর জন্য পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘প্রায় গড ফাদারের ভূমিকায়’ নামার কথা লিখেছেন।
এই পোস্টে মোস্তফা কামাল পলাশ লিখেছেন, ‘আমি গত ১৭ দিনে দেওয়া ৩১ টি আপডেটের প্রায় প্রত্যেকটিত উল্লেখ করেছি ঘূর্ণিঝড় চিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা শুরু করবে ২৪ শে অক্টোবর দুপুর থেকে। গতকালে সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকাগুলোর সাংবাদিকদের ফোনে করে হাতে-পায়ে ধরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস বিজ্ঞপ্তি ভুল সেই বিষয়ে সংবাদ ছাপানোর জন্য পরিচিত সাংবাদিক ভাই-বন্ধুদের সাথে প্রায় গড ফাদারের ভূমিকায় নেমে পড়ি।’
তার মন্তব্য ছাপানো কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের নামও পলাশ উল্লেখ করেছেন ওই পোস্টে।
এর পাশাপাশি সুপার কম্পিউটার জেনারেটেড মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে নিউজবাংলায় ১০ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনকে আবারও ‘অপসংবাদিকতা’ আখ্যা দিয়েছেন পলাশ।
একজনের পোস্ট শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ভোর ৬ টার মধ্যে বাংলাদেশের ভূমি ত্যাগ করবে। চলুন এবারে ফিরে দেখি আমার পূর্বাভাস নিয়ে কেমন অপ-সাংবাদিকতা করেছে কোন সংবাদ মাধ্যম। এই অপ-সাংবাদিকতা করে দেশের মানুষের মাধ্বে দ্বিধা ঢুকিয়ে না দিলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর কারণে দেশব্যাপী আজ যে ক্ষত-ক্ষতি হলও বা এখনও হচ্ছে তার বিশাল একটি অংশ রক্ষা করা যেত।‘
অপেশাদার আচরণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা
সাগরে লঘুচাপ তৈরির দুই সপ্তাহ আগেই সুপার সাইক্লোনের আশঙ্কার প্রচারকে ‘বিভ্রান্তিকর ও অপেশাদার’ আচরণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সংবাদমাধ্যমকেও এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়া নিয়ে একমাত্র আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফোরকাস্টই গ্রহণযোগ্য। এর বাইরে আমরা যারা বিভাগীয় অধ্যাপক আছি তারাও আবহাওয়া নিয়ে রিসার্চ করি। আমাদের রিসার্চে ত্রুটিও থাকতে পারে, কারণ আমরা তো অধিদপ্তরের মতো টেকনোলজি ব্যবহার করি না।
‘আমরা রিসার্চ করি নিজেদের প্রয়োজনে, কিন্তু সেটাকে শতভাগ সঠিক ধরে প্রচার বা প্রকাশ করতে পারি না। আমরাও রিসার্চ করে দেখেছি যে ঝড়টির সুপার সাইক্লোন হওয়ার সুযোগ ছিল তাই বলে তো আমরা এগুলো ফেসবুকে লিখে দিইনি। আর তার চেয়ে বড় কথা আপনি ফেসবুকে যা খুশি তা লিখে দিয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে দিলেন এটা তো হতে পারে না।'
অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বলেন, 'কত মানুষ এই কয়দিন আতঙ্কে কাটিয়েছেন, কত মানুষের সম্পদ নিয়ে দুশ্চিন্তা গেছে এগুলো কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আপনার আমার কারোরই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই। আর আবহাওয়ার মতো প্রাকৃতিক ও পরিবর্তনশীল বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কোনো তথ্য প্রচার করা দায়িত্বহীনতা, একইসঙ্গে এসব বিশ্বাস করাও একই রকমের দায়িত্বহীনতা।
‘এই ঘটনায় যেটা হলো এর পরবর্তী প্রভাব আরও খারাপ হতে পারে- ওই যে বাঘ ও রাখালের গল্পের মতো। মানুষ সুপার সাইক্লোনের কথা শুনে যেভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, পরে দেখা যাবে বড় দুযোগকেও তারা উপেক্ষা করবেন।’
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আযম।
তিনি মনে করেন এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্যের ছড়াছড়ি হলে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ওপর। কারণ এমনিতেই তাদের মধ্যে ধারণা আছে ‘যেমন বলা হয় তেমন ঝড় আসে না।’
কাজী শফিকুল আযম বলেন, ‘এজন্য আমাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়েও কিছুটা অসুবিধায় পড়তে হয়। আমরা ঠিকমতো মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারে নিতে পারি না। এর ওপর এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হলে তো পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাবে।
‘তখন দেখা যাবে আরও বেশি মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে দুর্যোগের সময় নিজ বাসায় অবস্থান করবে। এতে প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি হবে। তাই আবহাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য সাধারণ কোনো সোর্স থেকে আসা উচিত নয়।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. শাহ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের আবহাওয়া নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যের বাইরে কোনো তথ্যই গ্রহণযোগ্য হবে না। আমাদের দেশের আবহাওয়া ফোরকাস্টের বিষয়গুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রী খোঁজখবর রাখেন। বাইরের দেশের কোনো ব্যক্তির কথায় যদি আমাদের দেশের আবহাওয়ার ফোরকাস্ট হয়ে যেত তাহলে দেশে এত টাকা খরচ করে টেকনোলজি স্থাপন আর আমাদের শ্রম দেয়ার কী দরকার ছিল!’
তিনি বলেন, ‘কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষকের বাংলাদেশের আবহাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো একদমই দায়িত্বহীন কাজ। এতে করে অনেক আগে থেকেই সাধারণ মানুষের মনে প্রভাব পড়েছে, ভীতি-আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
‘এসব ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমকেও আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবহাওয়া সম্পর্কে কোনো তথ্য পেলে তা অবশ্যই আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যাচাই করে নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের মতোই ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ পরিতাপের বিষয়, সেই বিএনপি মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ দিবস ১৭ এপ্রিল পালন করে না।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ‘নবম আওয়ার ওশান কনফারেন্সে’ যোগ দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নভোটেল এথেন্স হোটেল বলরুমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যে ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই ৭ মার্চও বিএনপি পালন করে না। এ থেকেই স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে বিএনপি কতটুকু বিশ্বাস করে তা প্রমাণ হয়।
মুজিবনগর দিবস স্মরণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার বৈদ্যনাথতলা অর্থাৎ বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের আগের মধ্যরাতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের কলকাতা প্রেসক্লাবে সমবেত হতে বলা হয়। গোপনীয়তার মধ্যে তাদেরকে পরদিন সকালে মুজিবনগরে পৌঁছানো হয় যেখান থেকে তারা সংবাদ পরিবেশন করেন।
এ সময় গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের আইনানুগ ও পরিশ্রমী জীবনের জন্য নিজের ও গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসার কথা জানিয়ে এই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ও সবাইকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে আহ্বান জানান মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সমবেতদের হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি জানান, গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সাথে বৈঠকে জানিয়েছেন যে, গ্রিস আরও ৬টি দেশে দূতাবাস খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
গ্রিস আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ত্রিশটিরও বেশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গ্রিস আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মাতুব্বরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স মোহাম্মদ খালেদ, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস নেতাদের মধ্যে গোলাম মওলা, হাজী আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল খালেক মাতুব্বর, আহসান উল্লাহ হাসান, শেখ আল আমিন, আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বর, রায়হান খান, মিজানুর রহমান আলফা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ মাসে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে গরম। চলতি বছরের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে বিভিন্ন জেলায়, যার ফলে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগছেন বিভিন্ন বয়সীরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, দেশের ছয়টি জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র দাবদাহ।
এমন বাস্তবতায় অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ সময়ে এমন গরম অস্বাভাবিক কি না। জবাবে খন্দকার হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাবনরমাল (অস্বাভাবিক) কোন সেন্সে বলবেন? আমাদের দেশে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রারও রেকর্ড আছে কিন্তু। এখন তো গ্রীষ্মকাল। মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রাটা কম হবে।
‘বৃষ্টিপাত যখনই বন্ধ হবে, তাপমাত্রাটা বাড়বে, তবে এখন তাপমাত্রা যেটা স্বাভাবিক কথার কথা, তার চাইতে বেশি আছে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা দুইটাই বেশি আছে স্বাভাবিকের চাইতে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি আছে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় এক থেকে দুই ডিগ্রি বেশি আছে।’
দুপুর দুইটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অ্যাকুওয়েদার ডটকম নামের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৫১ শতাংশ।
একই সময়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ।
তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার বিষয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুগতভাবে কিন্তু এপ্রিল মাসটা আমাদের উষ্ণতম মাস। এ সময়ে দিনের স্থায়িত্বটা বড় (বেশি)। সূর্য মাথার ওপর। তা ছাড়া বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত যে এলাকাগুলোতে, সেখানে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে।
‘আর যে জায়গাগুলোতে বৃষ্টিপাত নাই, সেই জায়গাগুলোতে কিন্তু আপনার তাপমাত্রার ইয়েটা বেশি হচ্ছে। গরমটা বেশি হচ্ছে।’
গরম বাড়ার পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ তুলে ধরে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে; গাছগাছড়া কমে যাচ্ছে। মানুষের এসি (এয়ার কন্ডিশনার), ফ্রিজ ব্যবহার বেশি হয়ে যাচ্ছে।’
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্লাইমেট চেঞ্জে (জলবায়ু পরিবর্তন) অবদান রাখছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ তো আছেই।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য